ইবরাহিম পাশা
ইব্রাহিম পাশা (তুর্কি: Kavalalı İbrahim Paşa; ১৭৮৯ –১০ নভেম্বর, ১৮৪৮ ) ছিলেন মুহাম্মাদ আলি পাশার জ্যেষ্ঠপুত্র এবং মিশর ও সুদানের ওয়ালি বা প্রশাসক। নিজের পিতার প্রতিষ্ঠিত মিশরীয় সেনাবাহিনীতে তিনি একজন সেনাপতি হিসেবে কাজ করেছেন। জীবনের শেষের দিকে মুহাম্মাদ আলির অসুস্থতার কারণে তিনি তার উত্তরসুরী হন। মিশর ছাড়াও পিতার শাসনাধীন সিরিয়া, হেজাজ, মুরিয়া, থাসোস ও ক্রিটও তিনি শাসন করেছেন। ইবরাহিম পাশা তার পিতার পূর্বে মারা যান। তিনি চার মাস শাসন করেছিলেন।
ইবরাহিম পাশা | |
---|---|
মিশর, সুদান, ফিলিস্তিন, সিরিয়া, হেজাজ, মুরিয়া, থাসোস, ক্রিটের ওয়ালি | |
রাজত্ব | ২ মার্চ ১৮৪৮ – ১০ নভেম্বর ১৮৪৮ |
পূর্বসূরি | মুহাম্মদ আলি পাশা |
উত্তরসূরি | প্রথম আব্বাস |
জন্ম | ১৭৮৯ ড্রামা, মেসিডোনিয়ার উসমানীয় প্রদেশ (বর্তমান গ্রিসের অংশ) |
মৃত্যু | ১০ নভেম্বর ১৮৪৮ কায়রো, মিশর এয়ালেত |
সমাধি | ১০ নভেম্বর ১৮৪৮ |
স্ত্রীগণ |
|
বংশধর | মুস্তাফা ফাজল পাশা মুহাম্মদ বে ইসমাইল পাশা আহমেদ রিফাত |
আরবি | إبراهيم باشا |
তুর্কি | Kavalalı İbrahim Paşa |
রাজবংশ | মুহাম্মদ আলি রাজবংশ |
পিতা | মুহাম্মদ আলি পাশা |
মাতা | এমিনা |
প্রারম্ভিক কর্মজীবন
সম্পাদনাকিছু মতানুযায়ী তিনি মুহাম্মদ আলির দত্তক পুত্র ছিলেন এবং তার মা ছিলেন একজন গ্রিক খ্রিষ্টান নারী।[১] এই মতানুযায়ী ইবরাহিম পাশার মাকে মুহাম্মদ আলি বিয়ে করেছিলেন এবং তিনি ইবরাহিম পাশাকে নিজ পুত্র হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন এবং উসমানীয় সংস্কৃতি ও মুসলিম বিশ্বাস অনুযায়ী বড় করেছেন। তবে এমন হতে পারে ইবরাহিম পাশার অমুসলিম পূর্বসূত্রীতা ঘটনা, এক জন অপমানিত ফরাসি কনসাল কর্তৃক গুজব হিসেবে ছড়ানো হয়েছিল ।[২]
স্বীকৃত মতানুযায়ী ইবরাহিম পাশা ১৭৮৯ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং তিনি মুহাম্মদ আলি ও আলির প্রথম স্ত্রীর সন্তান।[৩] এও জানা যায় যে তিনি উসমানীয় রুমেলিয়া প্রদেশের ড্রামা শহরের নিকটে নুসরাতলি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছেন। এই স্থান বর্তমানে গ্রিসের মেসিডোনিয়া অঞ্চলের অংশ।
১৮০৫ সালে তার বাবা মুহাম্মদ আলি মিশরের ক্ষমতা দখলের সময় ১৬ বছরের ইবরাহিম পাশাকে উসমানীয় কাপুদান পাশার কাছে জিম্মি হিসেবে পাঠানো হয়। উসমানীয় সুলতান কর্তৃক মুহাম্মদ আলি মিশরের ওয়ালি হিসেবে স্বীকৃতি লাভ ও মেজর জেনারেল আলেক্সান্ডার ম্যাকেনজি ফ্রেসারের নেতৃত্বে একটি ব্রিটিশ অভিযানকে পরাজিত করার পর ইবরাহিম মিশরে ফেরার অণুমতি পান।
১৮১৩ সালে মুহাম্মদ আলি আরব উপদ্বীপে সৌদিদের বিরুদ্ধে অভিযানে যাওয়র সময় ইবরাহিমকে উচ্চ মিশরের ক্ষমতা অর্পণ করা হয়। তিনি মামলুকদের বিরুদ্ধে লড়াই চালু রেখেছিলেন। ১৮১৬ সালে তিনি আরবে তার ভাই তুসুন পাশার স্থলাভিষিক্ত হন।
নজদে অভিযান
সম্পাদনাইবরাহিম পাশা আরব উপদ্বীপে প্রথম সৌদি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছিলেন। অভিযানে সৌদি রাষ্ট্রের পতন হয়। মরুভূমির মধ্য দিয়ে সৌদিদের শক্তঘাটি দিরিয়া পৌছানো কষ্টসাধ্য হলেও তিনি এখানে হামলা চালান। গোলন্দাজ বাহিনীর কারণে ইবরাহিম পাশা সুবিধাজনক অবস্থায় ছিলেন। ১৮১৮ সালের সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ তিনি সৌদি প্রধান আবদুল্লাহ ইবনে সৌদকে বন্দী করতে সক্ষম হন। আবদুল্লাহ ইবনে সৌদকে কনস্টান্টিনোপল পাঠানোর পর মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।
মুরিয়ায় অভিযান
সম্পাদনা১৮১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর ইবরাহিম পাশা কায়রো ফিরে সেন। ফেরার পর তিনি মিশরীয় সেনাবাহিনীকে ইউরোপীয় রীতিতে গড়ে তোলার দায়িত্বে থাকা ফরাসি কর্নেল সেভ কে (সুলাইমান পাশা) কার্যকর সমর্থন দেন। ১৮২৪ সালে সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ কর্তৃক মুহাম্মদ আলি মুরিয়ার গভর্নর হন। মাহমুদ চাইছিলেন যাতে গ্রীকদেরকে বিদ্রোহ দমনের জন্য প্রশিক্ষিত মিশরীয় বাহিনীকে ব্যবহার করা যায়। ইতিপূর্বে গ্রীকরা উসমানীয় বাহিনীকে পরাজিত করেছিল।
ইবরাহিমকে পেলোপনেসে একটি স্কোয়াড্রন ও ১৭,০০০ সৈনিকের একটি বাহিনী দিয়ে পাঠানো হয়। ১৮২৪ সালের ৪ জুলাই তারা যাত্রা করেন। তবে প্রথম কয়েক মাস তারা বেশিদূর অগ্রসর হতে পারেনি। গ্রিক ফায়ার শিপের হুমকি থাকায় তিনি মুরিয়ার দিকে আগাতে পারছিলেন না। গ্রিক নাবিকরা বেতনের দাবিতে বিদ্রোহ করার পর তিনি ১৮২৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি মোডন অবতরণ করতে সক্ষম হন। ইউরোপীয়দের হস্তক্ষেপের আগপর্যন্ত তিনি মুরিয়ায় ছিলেন।
গ্রীকদের তিনি খোলা মাঠের যুদ্ধে পরাজিত করেছিলেন। মিসোলোনগির অবরোধের ফলে ক্ষতি হওয়া সত্ত্বেও ১৮২৬ সালের ২৪ এপ্রিল তিনি এর সফল পরিসমাপ্তি ঘটান। কিন্তু মানি উপদ্বীপে তিনি পরাজিত হন। গ্রিক গেরিলারা তার বাহিনীকে পর্যুদস্ত করে। এ কারণে পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে তিনি এখানকার অনেককে বন্দী করে দাস হিসেবে মিশরে পাঠিয়ে দেন। এসকল পদক্ষেপের পর ইউরোপীয়রা হস্তক্ষেপ করে এবং ব্রিটেন, ফ্রান্স ও রাশিয়া নৌ বাহিনী পাঠায়। ইউরোপীয়দের বিজয়ের পর ইবরাহিম পাশা পিছু হটে আসেন।
সিরিয়ান অভিযান
সম্পাদনা১৮৩১ সালে মুহাম্মদ আলির সাথে উসমানীয়দের বিরোধের এক পর্যায়ে ইবরাহিমকে সিরিয়া জয় করার জন্য পাঠানো হয়। অবরোধের পর তিনি একর দখল করেন। এরপর দামেস্ক ও দখল করা হয়। ইবরাহিম পাশা এশিয়া মাইনর আক্রমণ করেন এবং উজিরে আজম রশিদ মুহাম্মদ পাশাকে কোনিয়ার যুদ্ধে পরজিত করেন।
কুতাহয়ার চুক্তির পর সিরিয়া মুহাম্মদ আলির হাতে আসে। অভিযানের পর ইবরাহিম সিরিয়ার গভর্নরের পদ পান। ফরাসি অফিসার বেফর্ট দা হাওটপল ১৮৩৪ থেকে ১৮৩৭ সাল পর্যন্ত সহায়তা করেছেন। তিনি ইবরাহিম পাশার সেনাপ্রধান ছিলেন।[৪]
১৮৩৮ সালে পুনরায় উসমানীয়দের সাথে মিশরের দ্বন্দ্ব্ব দেখা দেয়। ইবরাহিম পাশা নেজিবের যুদ্ধে উসমানীয়দের বিরুদ্ধে জয়ী হন। যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রীয় সাম্রাজ্য এসময় হস্তক্ষেপ করে। ফলে মিশরীয়রা সামনে অগ্রসর হয়নি। শেষপর্যন্ত ১৮৪১ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি সিরিয়া ত্যাগ করেন।
শেষ জীবন
সম্পাদনাইবরাহিম পাশা তার বাকি জীবন শান্তিতে অতীবাহিত করেছেন। তবে তার স্বাস্থ্য ভেঙে পড়েছিল। ১৮৪৬ সালে তিনি পশ্চিম ইউরোপ সফরে যান। তার পিতা মুহাম্মদ আলি শারিরীক ভাবে অক্ষম হয়ে পড়লে তাকে তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত করা হয়। জুলাই থেকে শুরু করে ১৮৪৮ সালের ১০ নভেম্বর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্বে ছিলেন।
সম্মাননা
সম্পাদনা- অর্ডার অফ গ্লোরি অফ টার্কি - ১৮১৭
- নাইট অফ দ্য অর্ডার অফ জোসেফ অফ টুসকানি - ১৮৪৫
- গ্র্যান্ড ক্রস অফ দ্য লিজিয়ন দা অনার - ১৮৪৫
- গ্র্যান্ড ক্রস অফ দ্য অর্ডার অফ দ্য টাওয়ার এন্ড সোর্ড, পর্তুগাল-১৮৪৬
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Maravelea, G.A.: "Sketch of the 1821 Revolution", Gamma Editions, Salonika 1959
- ↑ The New monthly magazine। Books.google.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৫-১৩।
- ↑ The Lebanon in turmoil, Syria and the powers in 1860: Book of the marvels of ... - Iskandar Abkāriyūs, Iskandar ibn Yaʻqūb Abkāriyūs। Books.google.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৫-১৩।
- ↑ Fawaz, Leila Tarazi। An occasion for war: civil conflict in Lebanon and Damascus in 1860। Books.google.com। পৃষ্ঠা 114। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৫-১৩।
- এই নিবন্ধটি একটি প্রকাশন থেকে অন্তর্ভুক্ত পাঠ্য যা বর্তমানে পাবলিক ডোমেইনে: চিসাম, হিউ, সম্পাদক (১৯১১)। "Ibrahim Pasha"। ব্রিটিশ বিশ্বকোষ (১১তম সংস্করণ)। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস।
গ্রন্থপঞ্জি
সম্পাদনা- See Edouard Gouin, L'Egypte au XIX' siècle (Paris, 1847); Aimé Vingtrinier, Soliman-Pasha (Colonel Sève) (Paris, 1886). A great deal of unpublished material of the highest interest with regard to Ibrahim's personality and his system in Syria is preserved in the British Foreign Office archives; for references to these see Cambridge Mod. Hist. x. 852, bibliography to chap. xvii.
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনাইবরাহিম পাশা জন্ম: ১৭৮৯ মৃত্যু: ১০ নভেম্বর ১৮৪৮
| ||
পূর্বসূরী মুহাম্মদ আলি পাশা |
মিশর ও সুদানের ওয়ালি ১৮৪৮ |
উত্তরসূরী প্রথম আব্বাস |