ইবরাহিম আল-হামদি

উত্তর ইয়েমেনের রাষ্ট্রপতি

লেফটেনেন্ট-কর্নেল ইব্রাহিম আল-হামিদ (১৯৪৩ – ১১ ই অক্টবর ১৯৭৭) (আরবি: إبراهيم الحمدي) ছিলেন ইয়েমেন আরব প্রজাতন্ত্রের অভ্যুত্থান সেনাবাহিনী দলের প্রধান, যিনি রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান আল-ইরিয়ানী এর শাসন ক্ষমতাকে  ভূপাতিত করেছিলেন ১৩ই জুন, ১৯৭৪ সালে। অভ্যুত্থানের পর, তিনি সেনাপ্রধান হয়েছিলেন এবং দেশটির রাষ্ট্রনায়ক নিয়ুক্ত হয়েছিলেন। তার শাসনকালে তিনি কেন্দ্র সরকারের নিকট সমগ্র দেশ শাসনের ক্ষমতা অর্পণ করেন।  আর সকল উপজাতীয় ব্যবধান দূর করার কথা পরিকল্পনা করেন, এবং ইস্তেহারে ঘোষণা করেন যে, ইয়েমেনের মধ্যযুগের সমাজ ব্যবস্থার মত সবাই সমান। এছাড়াও তিনি সৌদি আরবের সাথে সর্ম্পক্য উন্নয়ন করেন।

ইবরাহিম আল-হামিদ
إبراهيم الحمدي
জন্ম১৯৪৩
মৃত্যু (1977-10-11) ১১ অক্টোবর ১৯৭৭ (বয়স ৪৬)
জাতীয়তাইয়েমেন ইয়েমেনি
পেশারাজনীতিবিদ

তার বেড়ে উঠা ও রাষ্ট্রপতি হওয়া সম্পাদনা

ইব্রাহীমের জন্ম হয়েছিল কাতাবাহ জেলায়, যার অবস্থান হল ঢাল গভর্নর, ইয়েমেন। তার বড় ভাই বলেন যে, ইব্রাহীম বাল্যকালে একদিন তার বাবা মুহাম্মাদ আল-হামিদের সাথে একটা পুকুর মাঠের পানিতে খেলছিল। যখন সে আরো পাড়ের কিনারে গেল, আর পানি স্পর্শ করল ও তার ছবি দেখতে পেল বদ্ধ পানির উপর, এরপর সে ঐ পানিতে পরা মানুষটাকে রক্ষা করতে চেষ্টা করতে লাগল এবং পানিতে ঝাঁপ দিল যাকে দেখেছিল তাকে বাচাতে। কারণ সে তার শৈশব-সরলতার জন্য নিজের প্রতিছবি দেখে বিভ্রান্ত হয়েছিল। তার পাকস্থলি পানিতে পূর্ণ হয়েগিয়েছিল, ভাগ্য ভালো ছিল যে পরিবারের সদস্যগণ সেখানে উপস্থিত ছিল তাকে রক্ষা করাজ জন্য।

তার সাবালকত্বে - বিশেষভাবে শৈশব কালে - তিনি তার নিরপক্ষ ন্যায়বিচারের জন্য তার বাবার সহযোগি হয়েছিলেন, আর সমস্ত ইসলামি আইন অধ্যায়ন করেছিলেন। যখন তিনি পাইলট হবার জন্য বিমান বিদ্যা কলেজে পড়ালেখা করতেন কিন্তু তিনি অধ্যায়ন শেষ করতে পারেন নাই, এবং তিনি ধারাবাহিক ভাবে কাজ করতে থাকেন তার বাবা সাথে একজন বিচারকের ন্যায়। সেটা ছিল ইমাম আহমেদ ইয়াহইয়া হামিদ আদ-দিন সাহেবের ঢামার এলাকায়। যেখানে বিভিন্ন বিস্ময়কর বিতর্কের উদ্ভব হয়েছিল এবং তিনি সেই সময়েও তার বুদ্ধিদক্ষতা দ্বারা সতর্ক্য ছিলেন।

এরপর তিনি হয়েছিলেন যুগের রাষ্ট্রনায়ক আব্দুল্লাহ আস-সাল্লাহ কমান্ডের সেনানায়ক, আর পূর্ব-পশ্চিম ও কেন্দ্রীয় প্রদেশের দায়িত্বশীল। ১৯৭২ সালে তিনি স্বরাষ্ট্র বিভাগের সহকারী প্রধানমন্ত্রী পদে উন্নিত হন। এরপর তিনি নিয়োগ পান আমফোর্সের উচ্চতর দায়িত্বশীল সেনাঅধিনায়ক হিসেবে। এরপর ১৯৭৪ সালের ১৩ই জুনে তিনি কর্মকর্তাদের মধ্যে নিজেকে একজন কার্যকরি সদস্য হিসেবে গড়ে তোলেন। যারা একটি শক্তিশালী সেনাবিহীনি গড়েতুলেছিল যেটি আব্দুর রহমান আল-ইরিয়ানীকে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ভূপাতিত করেছিল। যার কারণে ১৩ ই জুন ১৯৭৪ সালের সংশোধন আন্দলোনের পর রাষ্ট্রপতির সকল ক্ষমতা ও প্রজাতন্ত্রের মন্ত্রী পরিষদ, সামরিক শক্তির গুটি কয়েক জেনারেল এবং সিনিয়র কর্মকর্তার হাতে চলে আসে। উল্লেখ যোগ্য হলেন, আহমেদ ঘাসমী, ইয়াহইয়া মুতাওয়ক্কী, মুজাহিদ আবু সোওরাব, আলি আল-শিবাহ, হাম্মোদ পেদার, আলি আলিয়াহ, এইডি আবু মিয়াত, আলি আবু লোহুম এবং পরো যোগ দেন আব্দুল আজিজ আব্দুল ঘানী ও আব্দুল্লাহ আব্দুল আলিম।

১৩ই জুন ১৯৭৪ সালের সংশোধন অভ্যুত্থান আন্দলোন সম্পাদনা

 
হামিদ ও বিপ্লবের কিছু কর্মকর্তা তার রাষ্ট্রনায়ক থাকাকালীন (১৯৭৪-১৯৭৭)

ত্রয়োদশ সংশোধন আন্দলোন কর্নেল ইব্রাহীম হামিদের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়েছিল। হামিদের উদ্দেশ্য ছিল ইয়েমেনে সফল অভ্যুত্থানের পথ তৈরী করা ও পৈতৃক সম্পদ রক্ষা করা। তিনি প্রাথমিক ভাবে চাচ্ছিলেন উপজাতি এলাকা শান্ত করতে এবং আঞ্চলিক দ্বন্দ্ব মুক্ত করতে, যেমনটা পূর্ববর্তী প্রচলিত বিভিন্ন শাসক করেছিলেন। যদিও নিরাপত্তার বিষয়টি ছিল তার জন্য বড় উদ্বেগের কারণ। তিনি যদিও আর্থিক দিকটাকে সংস্কর করেছিলেন, তবুও পক্ষপাতিত্ব ও সুঘ লেনদেনের জন্য এটি বন্ধ হয়ে যায়। তিনি সংস্কর কমিশন গঠন করেন এটি সম্পদন করার জন্য, আর যার জন্য তিনি সংরক্ষণ করেন অনুমানিক দশ মিলিয়ন রিয়াল।

অধিকন্তু, তিনি শুরু করেন বৃহত্তর পরিকাঠামোর পরিকল্পনা, এক হাজার কিলোমিটার নোংরা সড়ককে পাকা করেন, এক হাজার বিদ্যালয় ভবন এবং শতাধিক ক্লিনিক ও স্বাস্থ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি উৎসাহি ব্যক্তি এবং অনেক অস্থানীয় বণিককে কৃষি বিভাগ ও স্থানীয় উৎপাদনে বিনিয়োগ করতে দিতেন। এই সময়কে বলা হয় ক্রমবর্ধমান উন্নয়নের ও সমৃদ্ধির যুগ।

গুপ্তহত্যা সম্পাদনা

আল-হামিদ হত্যার কোন আনুষ্ঠানিক ভাবে কোন তদন্ত হয় নি। দুই ফরাসি মহিলা নর্তকিও সেই সময় খুন হয়। হত্যাকারী চেয়েছিল হামিদীকে রং মেখে দিতে, আর মহিলাদের সাথে মনোরম তপ্ত রসায়ন করতে, যেন তিনি তার ভাই থেকে আলাদা হয়ে যান। আর এটা ওরা শেষ পর্যন্ত করেছিল। হামিদী তার আনুগত ও আত্মিয়দের নিকট থেকে আফিসিয়াল তদন্তের জন্য বের হলে সেখানেই খুন হন তিনি ও তার ভাই আব্দোল্লাহ; এমনটা বলছে বিশেষ কমান্ডার প্রতিনিধি দল আল-সাক্কাহ। ইয়েমেনি সেনাবাহিনীর একজন জেনারেল (নাসের আল জারবানী) এপ্রিল ২০১১ সালে শুহালী টেলিভিশন সাক্ষাৎকারের সময় বলেন, পরবর্তী রাষ্ট্রপতি আলী সালেহের নাম, ইব্রাহীম আল-হামিদের পরিকল্পিত হত্তার জন্য। আর তার দেখা 33 বছরের মধ্যে সবচেয়ে জঘন্য ও পূর্বপরিকল্পিত গুপ্তহত্তা, জারদানির তথ্যমতে।

আল-হামিদের দেওয়ানি ও অর্থনৈতিক নীতি ইয়েমেনকে উন্নয়নে সাহায্য করেছে। ২১শ শতাব্দিতে শতাধিক স্কুল ভবন এগারোটি হাসপাতাল সুশ্রস্ত ২,০০০ অধিক রাস্তা নির্মাণ তার প্রমাণ। এছাড়াও তিনি সাম্যবাদি গণপ্রজাতন্ত্রীক ইয়েমেনের জন্য পরিকল্পনা করেছিলেন মার্ক্সবাদী বন্ধন উন্নয়ন করার মধ্য দিয়ে। ১১ ই অক্টবর ১৯৭৭ সালে খুন হয়েছিলে একাকী তার ভাইয়ের সাথে, এটাকে সৌদি আরবের নিহত এজেন্স বিশ্বাস করে, যে এটা আল-আহরাম গোষ্ঠির কাজ, যিনি সৌদি রাজতন্ত্রের উপর নির্ভর হয়ে পড়েছিলেন। যাদের লক্ষ ছিল খুব নিরাপত্তার সাথে ইয়েমেনকে একত্রিকরণ করবে। এইদিনে আল-হামিদের মৃতদেহ সবচেয়ে বেশি ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছিল।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

বহিসংযোগ সম্পাদনা

পূর্বসূরী
আব্দুর রহমান আল-ইরিয়ানী
President of North Yemen
1974–1977
উত্তরসূরী
আহমে আল-ঘাসমি