ইবনে নুবাতা (প্রচারক)

ইবনে নুবাতার পুরো নাম আবু ইয়াহিয়া আব্দ আর-রহীম ইবনে মুহাম্মদ ইবনে ইসমাইল আল-হুধাকী আল-ফারিকী। তিনি (মৃত্যু ৯৮৪/৫) একজন ইসলামী প্রচারক (খতীব) ছিলেন। তিনি তার খুতবা বা ধর্মীয় বক্তৃতার জন্য বিখ্যাত ছিলেন। তিনি হামদানী আমির সাইফ আদ-দাওলার আলেপ্পোর দরবারে কাজ করতেন।

ইবনে নুবাতা মাইয়াফারিকিনে হাধাবানী গোত্রের একটি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তবে তার জন্ম তারিখ সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। মধ্যযুগীয় জীবনীকাররা তার জন্ম তারিখ ৯৪৬ সাল বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু আধুনিক ঐতিহাসিকরা এই জন্ম তারিখকে ভুল বলে মনে করেন। [] তিনি আলেপ্পোর হামদানী আমির সাইফ আদ-দাওলার দরবারে কাজ করতেন। সাইফ আদ-দাওলা একজন যোদ্ধা এবং শিল্প ও সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বিখ্যাত ছিলেন। তখনকার আলেপ্পোর দরবার আরব বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ বুদ্ধিজীবীদের আকর্ষণ করত এবং আধুনিক ঐতিহাসিকরা এটিকে রেনেসাঁ যুগের ইতালির সঙ্গে তুলনা করেছেন। [] ইবনে নুবাতা ৯৮৪/৫ সালে তার নিজ শহরে মারা যান। []

তার খুতবাগুলো ছন্দোময় গদ্যে লেখা হতো। ঐতিহাসিক মারিউস কানার বলেন, এগুলো তিন ভাগে বিভক্ত ছিল : "(১) ঈশ্বরের প্রশংসা এবং নবীর জন্য প্রার্থনা; (২) ঈশ্বর এবং শেষ বিচারকে ভয় করার এবং নৈতিক ও ধর্মীয় আইন, বিশেষ করে জিহাদের বাধ্যবাধকতা পালন করার উপদেশ; (৩) ঈশ্বরের সাহায্য এবং আশীর্বাদের জন্য আবেদন, যা কুরআনের একটি আয়াত দিয়ে শেষ হয়"। []

নিয়মিত জুমার খুতবা ছাড়াও ইবনে নুবাতা বিশেষ উপলক্ষে খুতবা রচনা করতেন। বিশেষ করে তার পৃষ্ঠপোষক সাইফ আদ-দাওলার বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের জন্য খুতবা দিতেন। এই ‘জিহাদের খুতবা’গুলো তার সবচেয়ে জনপ্রিয় কাজ ছিল। এসব খুতবা শুধু ধর্মীয় বক্তব্যই ছিল না, বরং তৎকালীন রাজনৈতিক ঘটনার ইতিহাস বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। []

ত্রয়োদশ শতাব্দীর জীবনীকার ইবনে খাল্লিকান তাকে "সাধারণ সাহিত্য সম্পর্কিত সকল বিদ্যার পূর্ণাঙ্গ জ্ঞানী" বলে প্রশংসা করেছেন। এছাড়া তাকে "ঐশ্বরিক অনুগ্রহ" ও "সূক্ষ্ম প্রতিভা"র অধিকারী বলে বর্ণনা করেন। []

তার খুতবাগুলো তার ছেলে আবু তাহির মুহাম্মদ এবং নাতি আবুল-ফারাজের খুতবার সঙ্গে ১২২০-এর দশকে বই আকারে সংকলিত হয়। এর বিভিন্ন সংস্করণ টিকে আছে। যার মধ্যে ১৩১১ সালের বৈরুত সংস্করণ সবচেয়ে বিখ্যাত। []

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Canard 1971, পৃ. 900।
  2. Humphreys 2010, পৃ. 537–538।
  3. Ibn Khallikan 1843, পৃ. 110।