ইফতেখার খান জানজুয়া

মেজর-জেনারেল ইফতেখার খান জানজুয়া, এইচজে এবং বার, এসপিকে, এসকিউএ (মৃত্যুঃ ৯ ডিসেম্বর ১৯৭১) ছিলেন আজ অবধি যুদ্ধে নিহত হওয়া পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সবচেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তাকে ১৯৬৫ সালের এপ্রিল মাসে ভারতের সঙ্গে সংঘটিত সেই 'কচ্ছের রণ' যুদ্ধের নায়ক বলা হয়, ঐ সময় তিনি ব্রিগেডিয়ার পদে ষষ্ঠ ব্রিগেডের অধিনায়ক হিসেবে যুদ্ধটিতে অংশ নেন এবং বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এর কয়েক মাস পরেই তিনি 'পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধ ১৯৬৫'-এ জড়িয়ে পড়েন। তিনি করুণভাবে ১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর হেলিকপ্টার দূর্ঘটনায় পতিত হন, এ সময় তিনি মেজর-জেনারেল পদবীতে ২৩ পদাতিক ডিভিশনের অধিনায়ক ছিলেন।

ইফতেখার খান জানজুয়া
মৃত্যুডিসেম্বর ৯, ১৯৭১ (কাশ্মীর)
আনুগত্যপাকিস্তান পাকিস্তান
সেবা/শাখা পাকিস্তান সেনাবাহিনী
কার্যকাল১৯৪৩-১৯৭১
পদমর্যাদামেজর জেনারেল
ইউনিটবেলুচ রেজিমেন্টের ১০ম ব্যাটেলিয়ন
নেতৃত্বসমূহ১০ম বেলুচ
৬ষ্ঠ ব্রিগেড
৬ষ্ঠ সাঁজোয়া ডিভিশন
২৩তম পদাতিক ডিভিশন
যুদ্ধ/সংগ্রামদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (উত্তর আফ্রিকা, সিসিলি, ইতালী এবং গ্রীস)
১৯৬৫ সালে কচ্ছের রণ
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ১৯৬৫
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ১৯৭১
পুরস্কারহিলাল-ই-জুরাত (এইচজে) এবং বার, সিতারা-ই-পাকিস্তান (এসপিকে), সিতারা-ই-কায়েদ এ আজম (এসকিউএ)

১৯৬৫ সালের যুদ্ধ

সম্পাদনা

১৯৬৫ সালের এপ্রিল মাসে ভারতীয় সামরিক বাহিনীর এক অনুশীলনে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৩১ এবং ৬৭তম পদাতিক ব্রিগেড পাকিস্তানি সীমার কাছাকাছি (করিম শাহী-কাভদা) চলে আসে। ভারতীয় বিমান বাহিনীর কিছু জঙ্গীবিমান এবং নৌবাহিনীর যুদ্ধবিমানবাহী জাহাজ আইএনএস বিক্রন্ত এবং অন্যান্য যুদ্ধ জাহাজ পাকিস্তানের জলসীমার কাছাকাছি চলে আসে। এপ্রিলের ৮/৯ তারিখে ভারতীয় এবং পাকিস্তানি সেনারা একটি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এই হামলা-পাল্টা হামলার অবস্থান ছিলো র‍্যান অব কচ্ছ এর কাছাকাছি ডিং এলাকায়। বাইরে থেকে বললে সিন্ধু-গুজরাত সীমান্ত। ২৩ এপ্রিল ব্রিগেডিয়ার ইফতেখার জানজুয়া ৪র্থ পাঞ্জাব রেজিমেন্টকে ঐ এলাকায় অভিযানের জন্য পাঠান। এর সঙ্গে সঙ্গে ৬ষ্ঠ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট এবং ২য় ফ্রন্টিয়ার ফোর্স রেজিমেন্টকেও পাঠানো হয় এবং সাথে একটি সাঁজোয়া ইউনিট (১২তম ক্যাভালরির একটি স্কোয়াড্রন) ও যায়। ঐ এলাকাটা ২৬ এপ্রিলের সন্ধ্যার মধ্যে পাকিস্তানি সৈন্যদের দখলে আসে।[][]

ঐ সামরিক অভিযানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সফলতা পেয়েছিলো। সেনাসদরে কর্মরত তৎকালীন সামরিক অভিযান পরিদপ্তরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার (পরে জেনারেল) গুল হাসান খান বলেছিলেন, "ভারতীয় সামরিক বাহিনীকে আমরা এমন গুঁতা দিয়েছিলাম যে তারা ওটি কখনো ভুলেনি।"[] রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান ব্রিগেডিয়ার ইফতেখারের ওপর খুশী হন এ অভিযানে সফল নেতৃত্ব দেবার জন্য। এই যুদ্ধে পরাজয় বরণ ভারতীয়দের জন্য অপমানজনক বিধায় ঐ একই বছরের আগস্টে তারা কাশ্মীরে হামলা করে যেটি বৃহৎ 'ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ১৯৬৫'তে রূপ নিয়েছিলো। ইফতেখার এই যুদ্ধে ষষ্ঠ সাঁজোয়া ডিভিশনের অধিনায়কের মর্যাদা পান মেজর-জেনারেল পদে যদিও তিনি একজন পদাতিক বাহিনীর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিলেন।[]

১৯৭১ সালের যুদ্ধ

সম্পাদনা

১৯৭১ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে ইফতেখার মেজর-জেনারেল পদেই ছিলেন। তার দায়িত্ব ছিলো ২৩তম পদাতিক ডিভিশনের অধিনায়কত্ব করা। তার ডিভিশনের দায়িত্ব ছিলো কাশ্মীরের 'চাম্ব' এলাকা দখল করা। ভারতের সঙ্গে ভয়াবহ যুদ্ধ হয়েছিলো চাম্ব এলাকায় এবং এ যুদ্ধ 'ব্যাটল অব চাম্ব' নামে পরিচিত ছিলো। ভারত এবং পাকিস্তান উভয় পক্ষেই ব্যাপক ক্ষয় হয়। জেনারেল জানজুয়া সেনাসদর থেকে নির্দেশপ্রাপ্ত হন চাম্ব এর দক্ষিণ দিক থেকে হামলা করার জন্য যদিও জানজুয়া আদেশ মানেননি, তিনি তার অধীনস্থ সৈনিকদের দ্বারা মান্ডিয়ালা সেতু দখল এবং তাওয়া এলাকার পশ্চিমাঞ্চল দখল করার পরিকল্পনা করেন।[]

পাকিস্তানের দূর্ধর্ষ সৈন্যরা অবশেষে মান্ডিওয়ালা, পল্লনওয়ালা এবং চক পণ্ডিত এলাকা দখলে সক্ষম হয়। ৯ ডিসেম্বর তারিখে ২৩তম ডিভিশনের সেনারা চাম্ব পুরোপুরি নিজেদের দখলে এনে ফেলে। জেনারেল ইফতেখার হেলিকপ্টারে করে চাম্বের ওপর দিয়ে যাচ্ছিলেন হঠাৎ করে ভারতীয় সেনাদের বিমানবিধ্বংসী কামানের গোলার আঘাত এসে লাগে হেলিকপ্টারটিতে।[] হেলিকপ্টারটি নিচে পড়ে যায় এবং জানজুয়া মারাত্মকভাবে পুড়ে যান, তাকে তৎক্ষণাৎ খরিয়ার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। যুদ্ধে অসামান্য বীরত্বস্বরূপ চাম্ব পাকিস্তানি সেনারা দখলে নিতে পেরেছিলো যদিও তারা তাদের জেনারেলকে হারিয়েছিলো।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. From Kutch to Tashkent: The Indo-Pakistan War of 1965 By Farooq Bajwa pg.77-80
  2. Pakistan Review, Volumes 1-4 by S. Ahmad, 1985 pg.20-21
  3. Quoted by Altaf Gauhar in 1965 War: Boomerang (possibly from The Nation, September 24, 1999) retrieved from Pakistan Link website [১] ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩০ অক্টোবর ২০০৬ তারিখে July 26, 2006
  4. "COVER STORY Remembering Our Warriors Brig (Retd) Shamim Yasin Manto S.I.(M), S.Bt Interview By A H AMIN"। ২০১৩-০৫-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৯-২৮ 
  5. "Archived copy"। ২০০৯-০৩-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-১২-২৪ 
  6. "News article in Jang"। ১২ মার্চ ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭