ইন্দুভূষণ রক্ষিত

ভারতীয় চিত্রশিল্পী

ইন্দুভূষণ রক্ষিত (৪ জানুয়ারি, ১৯১০ — ১ ডিসেম্বর, ১৯৯৩) ছিলেন বেঙ্গল স্কুল শিল্পীদের দ্বিতীয় প্রজন্মের অন্তর্গত নব্য বঙ্গীয় চিত্ররীতির একজন শিল্পী ও প্রশিক্ষক। []

ইন্দুভূষণ রক্ষিত
জন্ম(১৯১০-০১-০৪)৪ জানুয়ারি ১৯১০
মৃত্যু১ ডিসেম্বর ১৯৯৩(1993-12-01) (বয়স ৮৩)
পেশাচিত্রশিল্পী
পিতা-মাতাভূপতিনাথ রক্ষিত (পিতা)
বসন্তকুমারী দেবী (মাতা)

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন

সম্পাদনা

ইন্দুভূষণ রক্ষিতের জন্ম বৃটিশ ভারতের অধুনা পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার বোদরা গ্রামে। বিদ্যালয়ের পাঠ শেষে চোদ্দ বৎসর বয়সে ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রথমে ইন্ডিয়ান আর্ট স্কুলে ভর্তি হন। পরে দু বছরের পার্সি ব্রাউনের অধ্যক্ষতাকালে তিনি কলকাতার সরকারি আর্ট স্কুলে প্রবেশ করেন এবং যামিনীপ্রকাশ গঙ্গোপাধ্যায় ও অধ্যক্ষ মুকুল দের তত্ত্বাবধানে তিনি চিত্রবিদ্যায় শিক্ষা লাভ করেন। শিল্পী সত্যেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে তিনি পেন্টিংএর কাজ শেখেন [] এবং তৃতীয় বর্ষের ছাত্র থাকাকালীন কলেজ লাইব্রেরী র দেওয়ালে একটি ফ্রেস্কো এঁকেছিলেন। তিনি আর্ট ও আইকনোগ্রাফিতে পারদর্শিতা অর্জন করেন। ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে কলেজ ডিপ্লোমা লাভ করেন।

কর্মজীবন

সম্পাদনা

ইন্দুভূষণ কর্মজীবন শুরু করেন স্কটিশ চার্চ কলেজের মহিলা বি টি বিভাগের চারুকলার শিক্ষকতা দিয়ে। তারপর তীর্থপতি ইনস্টিটিউশন, ইন্ডিয়ান সোসাইটি অব ওরিয়েন্টাল আর্ট, ভারতীয় ভূতাত্ত্বিক জরিপ তথা জিয়োলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া এবং ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ তথা আর্কিয়োলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ায় কাজ করা পর রমেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর অধ্যক্ষতাকালে ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে সরকারি আর্ট কলেজে ইন্ডিয়ান পেন্টিং বিভাগে লেকচারারের পদে যোগ দেন। ওই বছরেই বিভাগীয় প্রধান সত্যেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবসরের পর তিনি প্রধান হন [] এবং ষোল বৎসর অধ্যাপনার পর ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে অবসর গ্রহণ করেন। []

স্বাধীনতার পর ভারতের লোকসভার প্রথম অধ্যক্ষ গণেশ বাসুদেব মাভালঙ্কার আগ্রহে তিনি সংসদ ভবনে এক ফ্রেস্কো আঁকার সুযোগ পান। পুরনো কেল্লাকে পশ্চাতে রেখে শের শাহ সুরি পেন্ট করেন। তার বহু শিল্পকর্ম সরকারি আর্ট কলেজ, রবীন্দ্র ভারতী সোসাইটি এবং নেপাল সরকারের সংগ্রহে রক্ষিত আছে। গ্রাম ও শহরের সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে তিনি বহু ছবি এঁকেছেন এবং প্রশংসা লাভ করেন। তার বিশেষ আকর্ষণ ছিল পৌরাণিক ও ঐতিহাসিক বিষয়গুলোর প্রতি। 'অমৃতবাজার পত্রিকা', 'আনন্দবাজার পত্রিকা', ' ভারতবর্ষ', প্রবাসী', হিন্দুস্থান স্টান্ডার্ড প্রভৃতি পত্রিকায় তার বহু ছবি প্রকাশিত হয়েছে। বাংলার লোকশিল্প ও ভারতীয় চিত্রকলা নিয়ে তিনি বহু নিবন্ধ লিখেছেন। মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গার মূর্তির উপর আইকনোগ্রাফিক প্রতিবেদন প্রবন্ধাকারে 'রূপলেখা' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সাহিত্যে ও সঙ্গীতেও তিনি অনুরাগী ছিলেন।

জীবনাবসান

সম্পাদনা

ইন্দুভূষণ রক্ষিত ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দের ১ ডিসেম্বর কলকাতায় প্রয়াত হন।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯ পৃষ্ঠা ৬২,৬৩, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
  2. "অবনীন্দ্র-নন্দলাল ধারায় পতাকাবাহী"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৩-২০