ইন্দিরা চক্রবর্তী

ইন্দিরা চক্রবর্তী একজন ভারতীয় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, বিদ্বান এবং পরিবেশবিদ।[১] জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ক্ষেত্রে তার অবদানের জন্য ২০১৪ সালে ভারত সরকার তাকে পদ্মশ্রী প্রদান করে। এটি ভারত সরকারের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার।[২]

ইন্দিরা চক্রবর্তী
জন্ম
মাতৃশিক্ষায়তনরাজাবাজার বিজ্ঞান কলেজ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
পেশাজনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ
পুরস্কারপদ্মশ্রী
এডোউরডো সৌমা পুরস্কার
ইন্দিরা গান্ধী প্রিয়দর্শিনী পুরস্কার
ইউএসএফ গ্লোবাল লিডারশীপ অ্যাওয়ার্ড

জীবনী সম্পাদনা

পুষ্টির ঘাটতি বেশিরভাগ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে একটি গুরুতর জনস্বাস্থ্যের উদ্বেগ। ভারতে লৌহের ঘাটতি, ভিটামিন এ এর ​​ঘাটতি এবং আয়োডিনের ঘাটতিজনিত সমস্যা জনস্বাস্থ্যের জন্য সর্বাধিক জরুরি সমস্যা। এছাড়াও, জিঙ্কের ঘাটতি, ফ্লোরোসিস এবং ফ্লোরাইডের ঘাটতির কারণে দাঁতের সমস্যা উদ্বেগের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র, লিখেছেন ডাঃ ইন্দিরা চক্রবর্তী[৩]

ইন্দিরা চক্রবর্তীর বাড়ি পশ্চিমবঙ্গ। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণরসায়ন বিষয়ে পিএইচডি অর্জন করেছেন।[৪] তারপরে তিনি দ্বিতীয় ডক্টরাল ডিগ্রি (ডিএসসি) অর্জন করেছেন।[১][৫] তিনি ভারত এবং বিশ্বব্যাপী খাদ্য সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্যকর শিল্প নিয়ে জড়িত এবং ৩০টি গবেষণা প্রকল্পে অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দুটি প্রকল্প, শিশুদের জন্য বিশ্ব সম্মেলন ও ক্ষুধা প্রকল্পের সাথেও জড়িত ছিলেন।[১] এছাড়াও তিনি জাতিসঙ্ঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সাথে কাজ করেছেন। তিনি আন্তর্জাতিক মহিলা জাদুঘর এর একজন বৈশ্বিক কাউন্সিল সদস্য।[১] আন্তর্জাতিক মহিলা জাদুঘর এর সাথে সাক্ষাৎকারে তিনি মেয়েদের পুষ্টি সমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন। ভারতে মেয়েদের অপুষ্টিজনিত রোগের মধ্যে অ্যানিমিয়া প্রধান। মেয়েদের অপুষ্টির সমাধান হিসেবে তিনি নারী শিক্ষার উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তার মতে, মেয়েদের শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমেই ভারতে পুষ্টিসহ পরিবেশ, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি এবং জীবনযাত্রার উন্নতি ঘটবে।[৬]

ইন্দিরা চক্রবর্তী কর্তৃক পরিচালিত কিছু গবেষণা ভারত সরকারকে নীতিগত পরিবর্তন এবং নতুন উদ্যোগের দিকে পরিচালিত করেছে।[৭] যেমন- কলকাতার রাস্তার বিক্রেতাদের উপর পরিচালিত একটি গবেষণা। তিনি ভারত সরকারের সাথে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক উদ্যোগের ক্ষেত্রে কাজ করেছেন। তিনি পুষ্টি ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ক কয়েকটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংগঠনের সাথে কাজ করেছেন। ইন্দিরা চক্রবর্তী বহু গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত রয়েছে। যেমন:

• প্রধান উপদেষ্টা - জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ, পশ্চিমবঙ্গ সরকার[৫][৮][৯]

• সদস্য - জাতীয় পানীয় জল ও স্যানিটেশন কাউন্সিল, ভারত সরকার[৫]

• বোর্ডের সদস্য - আন্তর্জাতিক বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, জাতিসংঘ বিশ্ববিদ্যালয়[১][৫][১০]

• প্রাক্তন সদস্য - ভারত খাদ্য সুরক্ষা ও মানদণ্ড কর্তৃপক্ষ, ভারত সরকার[১][৫]

• প্রাক্তন আঞ্চলিক পরিচালক, দক্ষিণ এশিয়া - পুষ্টি আন্তর্জাতিক উদ্যোগ - আন্তর্জাতিক উন্নয়ন গবেষণা কেন্দ্র[১][৫]

• প্রাক্তন পরিচালক এবং ডিন - ভারত সরকার স্বাস্থ্য ও জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ভারত সরকার[১][১][১][৫]

• প্রাক্তন পরিচালক - চিত্তরঞ্জন জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট, ভারত সরকার[১][১][৫]

• প্রাক্তন আঞ্চলিক উপদেষ্টা - দক্ষিণ পূর্ব এশীয় আঞ্চলিক কার্যালয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা[১][৫]

• আঞ্চলিক সমন্বয়কারী - স্ট্রিট ফুড এশীয় কার্যালয় - খাদ্য ও কৃষি সংস্থা[১]

• সম্মানসূচক বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা - সম্প্রদায় সমর্থন ও বিকাশ ফাউন্ডেশন [১][৪]

• পরামর্শদাতা - শিশুদের জন্য বিশ্ব সম্মেলন - বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা[১]

প্রকাশনা সম্পাদনা

ইন্দিরা চক্রবর্তী একটি বই এবং ২৫০টিরও বেশি নিবন্ধের লেখক।[১১] জাতীয় ফোরামে এবং আন্তর্জাতিক জার্নালে তার অনেক লেখা প্রকাশিত হয়েছে।[১][৩][৭][৮][৯]

পুরস্কার ও সম্মাননা সম্পাদনা

 
পদ্মশ্রী

জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ক্ষেত্রে তার অবদানের জন্য ২০১৪ সালে ভারত সরকার ইন্দিরা চক্রবর্তীকে পদ্মশ্রী প্রদান করে।

খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ইন্দিরা চক্রবর্তীকে প্রথম এডোউরডো সৌমা পুরস্কার প্রদান করেছে।[১০] তিনি সর্বভারতীয় জাতীয় ঐক্য পরিষদ এর ইন্দিরা গান্ধী জাতীয় প্রিয়দর্শিনী পুরস্কার অর্জন করেছেন।[১০] দক্ষিণ ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।[৭] এটি বিশ্ববিদ্যালয়টির সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক সম্মাননা। তিনি The Multimedia Encyclopedia of Women in Today's World এ স্থান পেয়েছেন।[৪] ভারত সরকার ২০১৪ সালের সাধারণতন্ত্র দিবসের সম্মাননায় তাকে অন্তর্ভুক্ত করে তার অবদানের স্বীকৃতি দিয়েছিল।[২]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "International Museum of Women"। International Museum of Women। ২০১৪। ২ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ নভেম্বর ২০১৪ 
  2. "Padma 2014"। Press Information Bureau, Government of India। ২৫ জানুয়ারি ২০১৪। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০১৪ 
  3. Indira Chakravarty, R K Sinha (২০০২)। "Prevalence of micronutrient deficiency based on results obtained from the national pilot program on control of micronutrient malnutrition."Nutr. Rev.6 (5): 553–558। 
  4. Mary Zeiss Stange & Carol K. Oyster & Jane E. Sloan (২০১৩)। The Multimedia Encyclopedia of Women in Today's World, Second Edition। Sage Publications। আইএসবিএন 9781452270388 
  5. "BIS" (পিডিএফ)। BIS। ২০১৪। ২ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ নভেম্বর ২০১৪ 
  6. "View Story | International Museum of Women"exhibitions.globalfundforwomen.org। ২০২০-১২-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-০২ 
  7. "University of South Florida"। University of South Florida। ৮ আগস্ট ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ২ নভেম্বর ২০১৪ 
  8. "Britannia" (পিডিএফ)। Britannia। ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২ নভেম্বর ২০১৪ 
  9. "Food and Agriculture Organization (UN)" (পিডিএফ)। Food and Agriculture Organization (UN)। ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২ নভেম্বর ২০১৪ 
  10. "United Nations University"। United Nations University। ২০১৪। ২ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ নভেম্বর ২০১৪ 
  11. Indira Chakravarty (১৯৭২)। Saga of Indian Food A Historical and Cultural Survey। Sterling Publishers। পৃষ্ঠা 183। এএসআইএন B0000CQ98Q 

আরও পড়ুন সম্পাদনা