ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা

বাংলাদেশের ঢাকায় অবস্থিত বিলাসবহুল হোটেল

ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা হচ্ছে ঢাকার একটি বিলাসবহুল হোটেল, যেটি ঢাকার রমনায় অবস্থিত। এটি ছিল বাংলাদেশের প্রথম পাঁচ তারকা হোটেল। হোটেলটি চালু হয় ১৯৬৬ সালে ইন্টার-কন্টিনেন্টাল ডেকা নামে। এর স্থপতি ছিলেন উইলিয়াম বি.ট্যাবলার[১] বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনার সাক্ষী এই হোটেল। ১৯৭০-এর নির্বাচনের পর থেকে এতে অনেক রাজনৈতিক ঘটনা সংঘটিত হয়। ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আন্তজার্তিক রেড ক্রস এটিকে নিরপেক্ষ স্থান হিসাবে ঘোষণা করে।[২]

ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা
২০০৬-এর দৃশ্য (তৎকালীন শেরাটন হোটেল)
মানচিত্র
প্রাক্তন নামহোটেল ইন্টার-কন্টিনেন্টাল ঢেকা
ঢাকা শেরাটন
রূপসী বাংলা
সাধারণ তথ্য
ধরনহোটেল
অবস্থান১নং মিন্টো রোড, রমনা, ঢাকা, বাংলাদেশ
কার্যারম্ভ১৯৬৬; ৫৮ বছর আগে (1966)
অন্যান্য তথ্য
কক্ষ সংখ্যা২২৬
সংকলনের সংখ্যা২৫
২০১৬ সালে ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা।

অবস্থান সম্পাদনা

 
রাতের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল

হোটেলটির আশেপাশে শাহবাগ চত্বর, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা পার্ক, ঢাকা ক্লাব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতাল,বারডেম হাসপাতাল এবং বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর অবস্থিত।

পরিচালনার ইতিহাস সম্পাদনা

১৯৮৩ এর আগে পর্যন্ত ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল গ্রুপ এটি পরিচালনা করতো, যখন এটি শেরাটন নিয়ে নেয় তখন এর নাম হয় "শেরাটন ঢাকা হোটেল"। ২০১১ সালে শেরাটন ঘোষণা দেয় যে তারা তাদের কার্যক্রম শেষ করবে এবং বাংলাদেশ সরকারকে এটি পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে দিবে, তারপর এটির নাম হয় রূপসী বাংলা হোটেল।[৩] ২০১৩তে ঘোষণা করা হয় যে ICHG আবার ফিরে আসবে এবং এতে বড় ধরনের সংস্কার করে নতুনত্ব তৈরি করা হবে। যেটি ২০১৬ সালে ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা নামে চালু করার কথা ছিলো। [৪] তবে সংস্কারকাজ শেষে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় বৃহস্পতিবার ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সালে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এদিন সন্ধ্যায় ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মিশেলে সাজানো হোটেলটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। হোটেলটির এই সংস্কার কাজে ৬২০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।[৫]

অবকাঠামো সম্পাদনা

হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের বর্তমান অবকাঠামোয় রয়েছে ২২৬টি কক্ষ; যার মধ্যে রয়েছে ৪০ বর্গমিটার আয়তনের ২০১টি ডিলাক্স, প্রিমিয়াম ও এক্সিকিউটিভ কক্ষ, ৬০ বর্গমিটার আয়তনের পাঁচটি সুপিরিয়র স্যুইট, একই আয়তনের ১০টি ডিলাক্স স্যুইট, ৭৫ বর্গমিটার আয়তনের পাঁচটি ডিপ্লোমেটিক স্যুইট এবং ১৫০ বর্গমিটার আয়তনের পাঁচটি প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুইট। ইন্টারকন্টিনেন্টাল দুটি বলরুম ও সাতটি সভাকক্ষ ২১ হাজার বর্গফুটের। প্রধান বলরুমটির নাম রাখা হয়েছে রূপসী বাংলা।

মুক্তিযুদ্ধে গেরিলা অপারেশন সম্পাদনা

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ক্র্যাক প্লাটুন এই হোটেলে সফল অপারেশন পরিচালনা করে। পাকিস্তানি দখলদারদের অত্যাচারে দেশে যখন ধ্বংস আর মৃত্যুর বিভীষিকা, তখন বৈদেশিক সাহায্যের জন্য পাকিস্তানিরা বহির্বিশ্বে পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখানোর জন্য বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিদের ঢাকায় আমন্ত্রণ জানায়। ১৯৭১ সালের ৯ জুন তাদের ওঠার কথা ছিল হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় যখন বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি বহনকারী গাড়ি হোটেল গেটে পৌঁছায়, তখনই ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্যরা হোটেলে গ্রেনেড চার্জ করে। গ্রেনেডের আঘাতে বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিদের বহনকারী গাড়িটি ও হোটেলের প্রবেশপথ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঢাকার প্রথম গেরিলা অপারেশন ছিল এটি। এর মাধ্যমে বহির্বিশ্ব জেনে যায় ঢাকার কেন্দ্রস্থলেও বীর মুক্তিযোদ্ধারা ঢুকে পড়েছে। ফলে বাতিল হয়ে যায় বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তার কার্যক্রম। বীর মুক্তিযোদ্ধারা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ২য় সফল গেরিলা অপারেশন চালান ১৯৭১ সালের ১১ আগস্ট।[৬]

চিত্রশালা সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল কর্পোরেশন ডিজিটাল আর্কাইভ"। Neal Prince, AIA, ASID। 
  2. H.D.S. Greenway। "The War Hotels: Bangladesh"GlobalPost 
  3. "InterContinental returning to Dhaka"newstoday.com.bd। ২০১৬-০৩-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০১-২৩ 
  4. "Ruposhi Bangla ends operation"The Independent। Dhaka। ২ সেপ্টেম্বর ২০১৪। ২ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  5. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ অক্টোবর ২০১৮ 
  6. ক্র্যাক প্লাটুনের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা, একুশে টিভি ডট কম, ২৭ নভেম্বর ২০২১