অবিচ্ছেদ্য আবরণী প্রোটিন

(ইনটিগ্রাল আবরণী আমিষ থেকে পুনর্নির্দেশিত)

অবিচ্ছেদ্য আবরণী প্রোটিন (ইংরেজি: Integral membrane protein, IMP) হচ্ছে জৈব ঝিল্লি'র সাথে স্থায়ীভাবে সংযুক্ত এক ধরনের আবরণী প্রোটিন (বা ঝিল্লি প্রোটিন)। সকল ট্রান্স-আবরণী প্রোটিন-ই (trans-membrane protein) আইএমপি এর অন্তর্ভুক্ত, কিন্তু সকল আইএমপি ট্রান্স-আবরণী প্রোটিন নয়।[১] কোন জীবের বংশাণুসমগ্রের নকশায় থাকা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রোটিন নিয়ে আইএমপি গঠিত হয়।[২] যেসব প্রোটিন ঝিল্লি অতিক্রম করে, সেগুলো চক্রাকার লিপিড দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে, তাদেরকে আবরণী প্রোটিনের সাথে প্রত্যক্ষ সংযোগে থাকা লিপিড হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। এসব লিপিডকে কেবল পরিষ্কারক (detergents), অপোলার দ্রাবক, অথবা কখনো কখনো বিকৃতকারক পদার্থ (denaturing agents) দ্বারা পৃথক করা যায়।

E= বহিঃকোষীয় স্থান; P= প্লাজমা ঝিল্লি; I= অন্তঃকোষীয় স্থান

গঠন সম্পাদনা

এক্স-রে কেলাসবিদ্যা অথবা নিউক্লীয় চৌম্বক অনুনাদ বর্ণালিবীক্ষণের মাধ্যমে, পারমাণবিক রেজোলিউশনে প্রায় ১৬০টি ভিন্ন ভিন্ন অবিচ্ছেদ্য আবরণী প্রোটিনের ত্রিমাত্রিক গঠন নির্ণয় করা হয়েছে। নিষ্কাশন এবং কেলাসকরণ কঠিন হওয়ার কারণে এগুলো নিয়ে গবেষণা বেশ দূরূহ বিষয়। এছাড়াও, প্রোটিন তথ্য ব্যাংকে (পিডিবি) অনেক আইএমপি’র পানিতে দ্রবণীয় প্রোটিন ডোমেইন[টীকা ১] এর গঠন কাঠামো সংরক্ষিত আছে। এদের আবরণের নোঙর হিসেবে বিদ্যমান  হেলিক্সসমূহকে, নিষ্কাশন ও কেলাসকরণের সুবিধার্থে অপসারণ করা হয়েছে।

আইএমপি-কে দুটি ভাগে বিভক্ত করা যায়:

  1. অবিচ্ছেদ্য পলিটপিক প্রোটিন (আন্তঃআবরণী প্রোটিন)
  2. অবিচ্ছেদ্য মনোটপিক প্রোটিন
 
গ্রুপ–I এবং গ্রুপ–II এর ট্রান্স–আবরণী প্রোটিনের দিকবিন্যাস বিপরীমুখী। গ্রুপ–I এর প্রোটিনগুলোর N–প্রান্ত দূরবর্তী পার্শ্বে এবং C–প্রান্ত সাইটোসল পার্শ্বে অবস্থান করে। গ্রুপ–II এর প্রোটিনগুলোর C–প্রান্ত দূরবর্তী পার্শ্বে এবং N–প্রান্ত সাইটোসল পার্শ্বে অবস্থান করে।

অবিচ্ছেদ্য পলিটপিক প্রোটিন সম্পাদনা

সবচেয়ে গতানুগতিক ধরনের আইএমপি হচ্ছে ট্রান্স–আবরণী (টিএম)প্রোটিন, যা সমগ্র জৈব ঝিল্লি জুড়েই বিস্তৃত থাকে। এক–পাকের আবরণী প্রোটিন মাত্র একবার ঝিল্লি অতিক্রম করে আসে, আর বহু–পাকের আবরণী প্রোটিন কয়েক পাক ঘুরে আসে। এক পাকের টিএম প্রোটিনকে টাইপ–১ হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করা যায়, যাদের অবস্থান এমন হয় যে তাদের কার্বক্সিল–প্রান্ত সাইটোসল অভিমুখী হয়ে থাকে; অথবা টাইপ–২ হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করা যায়, যেখানে অ্যামিনো–প্রান্ত সাইটোসল অভিমুখী থাকে। টাইপ–৩ প্রোটিনে, একটি পলিপেপটাইড এককের মধ্যেই একাধিক ট্রান্স–আবরণী ডোমেইন বিদ্যমান থাকে; টাইপ–৪ এ আবার কতগুলো পলিপেপটাইড একক সম্মিলিতভাবে একটি নালী পথের ভেতর দিয়ে ঝিল্লি অতিক্রম করে। টাইপ–৫ প্রোটিনসমূহ, সমযোজী বন্ধনে আবদ্ধ লিপিডের মাধ্যমে দ্বিস্তরী লিপিডের (lipid bilayer) সাথে সংযুক্ত থাকে। আর টাইপ–৬ প্রোটিনসমূহে ট্রান্স–আবরণী ডোমেইন এবং লিপিড নোঙর – উভয়ই বিদ্যমান থাকে।[৩]

অবিচ্ছেদ্য মনোটপিক প্রোটিন সম্পাদনা

অবিচ্ছেদ্য মনোটপিক প্রোটিনসমূহ এক পাশে ঝিল্লির সাথে সংযুক্ত থাকলেও সম্পূর্ণ দ্বিস্তরী লিপিডজুড়ে বিস্তৃত থাকে না।

প্রোটিনের গঠন নির্ণয় সম্পাদনা

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্‌থ (জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট) এর অধীনস্থ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ জেনারেল মেডিক্যাল সায়েন্সেস (জাতীয় চিকিৎসাবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট) এর আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত একটি প্রকল্প হচ্ছে প্রোটিন কাঠামো উদ্যোগ (Protein Structure Initiative, PSI)। এর অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে ত্রিমাত্রিক প্রোটিন কাঠামো নির্ণয় এবং আবরণী প্রোটিন-সহ কাঠামোগত জীববিজ্ঞানে প্রয়োগের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন কলাকৌশল উদ্ভাবন। হোমোলজি মডেলিং ব্যবহার করে, "লক্ষ্য" অবিচ্ছেদ্য প্রোটিনের অ্যামিনো অ্যাসিড অনুক্রম হতে, পারমাণবিক রেজোলিউশনের মডেল এবং সংশ্লিষ্ট সমগোত্রীয় প্রোটিনের একটি পরীক্ষামূলক ত্রিমাত্রিক কাঠামো গঠন করা যায়। লিগ্যান্ড-জি প্রোটিন-সংযোজিত সংবেদক (G-Protein-coupled Receptor, GPCR) এবং তাদের জটিল যৌগসমূহের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়াটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে।[৪]

ক্রিয়া সম্পাদনা

আইএমপি'র মধ্যে পরিবাহক (transporters), সংযোগকারী, নালীপথ, সংবেদক, উৎসেচক, কাঠামোগত ঝিল্লি-আবদ্ধকারী ডোমেইন, সঞ্চয় ও শক্তি পরিবহনের (ইংরেজি: transduction, প্রতিবর্ণীকৃত: ট্রান্সডাকশন[টীকা ২]) সাথে সংশ্লিষ্ট প্রোটিন, এবং কোষ সংসক্তি'র (cell adhesion) সাথে জড়িত প্রোটিনসমূহ অন্তর্ভুক্ত। পরিবাহকের শ্রেণিবিন্যাস পাওয়া যাবে পরিবাহক শ্রেণিবিন্যাস তথ্যশালা-তে (Transporter Classification Database)।[৫]

অবিচ্ছেদ্য আবরণী প্রোটিন (আইএমপি; এক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়ার আলোক-সংবন্ধনকারী কণা, ব্যাকটেরিওরহোডোপ্‌সিন) এবং দ্বিস্তরী লিপিড দ্বারা গঠিত ঝিল্লি'র মধ্যে সম্পর্কের একটি উদাহরণ নিম্নে উল্লেখ করা হয়েছে:

এক্ষেত্রে, অবিচ্ছেদ্য আবরণী প্রোটিন সম্পূর্ণ দ্বিস্তরী লিপিডকে সাতবার অতিক্রম করে আসে। প্রোটিনের যে অংশ দ্বি-স্তরের পানিবিদ্বেষী (hydrophobic) অঞ্চলে সংবদ্ধ থাকে, সেগুলো আল্‌ফা হেলিক্যাল এবং তা প্রধানত পানিবিদ্বেষী অ্যামিনো অ্যাসিড দ্বারাই গঠিত। প্রোটিনের  প্রান্ত সাইটোসলে থাকে, আর  প্রান্ত থাকে কোষের বাইরের অঞ্চলে। যে ঝিল্লি এই নির্দিষ্ট প্রোটিনটি ধারণ করে, তা সালোকসংশ্লেষণে অংশ নিতে পারে।[৬]

উদাহরণ সম্পাদনা

ইন্‌টিগ্রাল বা অবিচ্ছেদ্য আবরণী প্রোটিনের উদাহরণ:

আরও দেখুন সম্পাদনা

টীকা সম্পাদনা

  1. প্রোটিন শৃঙ্খলের যে সংরক্ষিত অংশটুকু শিকলের অবশিষ্ট অংশ হতে স্বাধীনভাবে বিবর্তন, ক্রিয়া এবং অস্তিত্বশীল থাকতে সক্ষম, তা প্রোটিন ডোমেইন হিসেবে পরিচিত
  2. জৈবপদার্থবিজ্ঞানে, একটি ইলেকট্রন (দাতা) হতে আরেকটি ইলেকট্রনে (গ্রহীতা) শক্তি স্থানান্তরিত হওয়া এবং যুগপৎভাবে শক্তি এক রূপ হতে ভিন্ন রূপে রূপান্তরিত হওয়ার প্রক্রিয়াকে ট্রান্সডাকশন বলা হয়।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Steven R. Goodman (২০০৮)। Medical cell biology। Academic Press। পৃষ্ঠা 37–। আইএসবিএন 978-0-12-370458-0। সংগ্রহের তারিখ ২৪ নভেম্বর ২০১০ 
  2. Wallin E, von Heijne G (১৯৯৮)। "Genome-wide analysis of integral membrane proteins from eubacterial, archaean, and eukaryotic organisms"Protein Science7 (4): 1029–38। ডিওআই:10.1002/pro.5560070420পিএমআইডি 9568909পিএমসি 2143985  
  3. Nelson, D. L., & Cox, M. M. (2008). Principles of Biochemistry (5th ed., p. 377). New York, NY: W.H. Freeman and Company.
  4. Fruchart-Marquer C, Fruchart-Gaillard C, Letellier G, Marcon E, Mourier G, Zinn-Justin S, Ménez A, Servent D, Gilquin B (সেপ্টেম্বর ২০১১)। "Structural model of ligand-G protein-coupled receptor (GPCR) complex based on experimental double mutant cycle data: MT7 snake toxin bound to dimeric hM1 muscarinic receptor."J Biol Chem286 (36): 31661–75। ডিওআই:10.1074/jbc.M111.261404পিএমআইডি 21685390পিএমসি 3173127  
  5. Saier MH, Yen MR, Noto K, Tamang DG, Elkan C (জানুয়ারি ২০০৯)। "The Transporter Classification Database: recent advances"Nucleic Acids Res.37 (Database issue): D274–8। ডিওআই:10.1093/nar/gkn862পিএমআইডি 19022853পিএমসি 2686586  
  6. "Integral membrane proteins"academic.brooklyn.cuny.edu। ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জানুয়ারি ২০১৫