ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া
ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (সংক্ষেপে ইউবিআই) ভারতের অন্যতম প্রধান রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্ক। বর্তমানে এই ব্যাঙ্কটি ত্রিস্তরীয় সাংগঠনিক ব্যবস্থাযুক্ত। এর প্রধান কার্যালয় কলকাতায় অবস্থিত। সারা ভারতে ব্যাঙ্কের ২৮টি আঞ্চলিক কার্যালয় এবং ১৪৫৩টি শাখা কার্যালয় রয়েছে। যদিও এই ব্যাঙ্কের প্রধান কার্যক্ষেত্র পূর্ব ভারত।
ধরন | রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্ক |
---|---|
শিল্প | অর্থনৈতিক বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক |
প্রতিষ্ঠাকাল | ১৯৫০, ভারত. |
প্রতিষ্ঠাতা | নরেন্দ্রচন্দ্র দত্ত |
সদরদপ্তর | কলকাতা |
প্রধান ব্যক্তি | এস. সি. গুপ্ত, চেয়ারম্যান ও এমডি |
ওয়েবসাইট | www.unitedbankofindia.com |
জন্মলগ্ন
সম্পাদনা১৯৫০ সালে কুমিল্লা ব্যাঙ্কিং কর্পোরেশন (নরেন্দ্রচন্দ্র দত্ত কর্তৃক ১৯১৪ সালে স্থাপিত), বেঙ্গল সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক (জে. সি. দাশ কর্তৃক ১৯১৮ সালে স্থাপিত), কুমিল্লা ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক (এল. বি. দত্ত কর্তৃক ১৯২২ সালে স্থাপিত) এবং হুগলি ব্যাঙ্ক (ডি. এন. মুখোপাধ্যায় কর্তৃক ১৯৩২ সালে স্থাপিত) নামক চারটি ব্যাঙ্কের মিলিত হয়ে ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া গঠন করে। ওই চারটি ব্যাঙ্কেরই প্রতিষ্ঠাতা চার বাঙালি। সবার আগে তৈরি হয় কুমিল্লা ব্যাঙ্কিং কর্পোরেশন। ১৯১৪ সালে কুমিল্লার আইনজীবী এন সি দত্ত পত্তন করেন কুমিল্লা ব্যাঙ্কিং কর্পোরেশনের। মাত্র ৩০০০ টাকা ছিল সম্বল। এর পর ১৯১৮ সালে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক জ্যোতিষচন্দ্র দাস তৈরি করেন বেঙ্গল সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক। ব্যাঙ্কিং ব্যবসায় অভিজ্ঞ কুমিল্লার ইন্দুভূষণ দত্ত ১৯২২ সালে স্থাপন করেন কুমিল্লা ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক। আর উত্তরপাড়ার জমিদার, স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং ধনেখালির তৎকালীন বিধায়ক ধীরেন্দ্রনারায়ণ মুখোপাধ্যায়ের হাতে ১৯৩২ সালে তৈরি হয় হুগলি ব্যাঙ্ক লিমিটেড, যার সদর দফতর ছিল ধর্মতলায়। নগেন্দ্রনাথ দত্তের পুত্র বটকৃষ্ণ দত্ত ১৯৩৭ সালে নিউ স্ট্যান্ডার্ড ব্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠা করেন সেটি প্রথমে ১৯৪৫ সালে কুমিল্লা ব্যাঙ্কিং কর্পোরেশনের সাথে যুক্ত হয়। এরপর দেশভাগের পর ১৯৫০ সালে ব্যাঙ্কগুলির সংযুক্তি ঘটে ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া গঠিত হয়। ১৯৬৯ সালে ১৯ শে জুলাই ব্যাঙ্ক জাতীয়করণের পর ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত বটকৃষ্ণ দত্ত ওই ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডাইরেক্টর পদে ছিলেন।[১]
সম্প্রসারণ
সম্পাদনা১৯৬১ সালে কটক ব্যাঙ্ক ও তেজপুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল ব্যাঙ্ক ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার সঙ্গে মিলিত হয়ে যায়। ১৯৬৯ সালের ১৯ জুলাই অন্য ১৩টি বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের সঙ্গে এই ব্যাঙ্ককেও ভারত সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত্ব করে। এই সময় ইউবিআই-এর মাত্র ১৭৪টি শাখা ছিল। ১৯৭১ সালে ইউবিআই হিন্দুস্তান মার্চেন্টাইল ব্যাঙ্ক এবং ১৯৭৬ সালে নারাঙ্গ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া অধিগ্রহণ করে।
২০০৯ সালের ৩০ মার্চ ভারত সরকার ইউবিআই-এর সংস্কার অনুমোদন করেছেন।[২]
পরিষেবা
সম্পাদনাপশ্চিমবঙ্গের যে সব অঞ্চলে ব্যাঙ্ক নেই, সেখানে শাখা খোলাই ছিল এর পরিষেবা সম্প্রসারণ কর্মসূচির অঙ্গ। এক সময়ে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা প্রায় ছিলই না। সুন্দরবনের মানুষের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে নদী। প্রত্যন্ত অঞ্চলে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার জন্য এক সময়ে নদীপথই ছিল সম্বল। আজ থেকে প্রায় ৪৪ বছর আগে নদীপথকে ব্যবহার করেই সেখানে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা চালু করেছিল ইউবিআই। দুটি ভ্রাম্যমাণ লঞ্চে ব্যাঙ্কের শাখা চালু করে তারা। সেগুলো বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে মানুষকে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা দিত। টাকা জমা দেওয়া, তোলা-সহ বিভিন্ন ব্যাঙ্কিং পরিষেবা দেওয়ার জন্য এই লঞ্চদুটিই ব্যাঙ্কের শাখা হিসাবে কাজ করত।
বিধানচন্দ্র রায় নিজেও ছিলেন ইউবিআই-এর গ্রাহক। এই ব্যাঙ্কের গ্রাহক তালিকায় আছেন নামকরা বহু মানুষ, যেমন দেশের প্রাক্তন চার রাষ্ট্রপতি ফখরুদ্দিন আলি আহমেদ, জৈল সিং, প্রতিভা পাটিল ও প্রণব মুখোপাধ্যায়। এ ছাড়া রয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু, প্রাক্তন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধী মতো ব্যক্তিত্ব। ফকরুদ্দিন আলি আহমেদের উদ্যোগেই ইউবিআই-এর রজত জয়ন্তী বর্ষ উপলক্ষে ১৯৭৬ সালে রাষ্ট্রপতি ভবনে ব্যাঙ্কের একটি শাখার উদ্বোধন হয়, যার পোশাকি নাম প্রেসিডেন্ট এস্টেট ব্রাঞ্চ। রাষ্ট্রপতি ভবনে এটাই কোনও ব্যাঙ্কের প্রথম শাখা। পরে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের আমলে রাষ্ট্রপতি ভবনেই আরও বড় জায়গায় শাখাটি স্থানান্তরিত করা হয়।
বাংলার ছোট-বড় শিল্প সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে ইউবিআই-এর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। রাজ্যের চা শিল্পে এই ব্যাঙ্কই সব থেকে বেশি ঋণ দিয়েছে। এক সময়ে ব্যাঙ্কের মোট ঋণের ৩০ শতাংশই পেত চা শিল্প। ঋণের আওতায় রয়েছে পাট শিল্পও। রাজ্যের বহু ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প এবং স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে নিজের পায়ে দাঁড় করাতে ইউবিআই-এর ভূমিকা কম নয়। ফুলের চাষ, কুমোরটুলির প্রতিমা শিল্প, তাঁত শিল্প, চিরুনি বা পিতলের জিনিস তৈরির মতো উদ্যোগকে চাঙ্গা করতেও এগিয়ে এসেছে ইউবিআই। এ রাজ্যের হিমঘরগুলিকেও বিমুখ করেনি। ঋণ নিয়ে ব্যবসা বাড়িয়েছে বড় মাপের অনেক শিল্প সংস্থাও। প্রথম যে বড় শিল্পগোষ্ঠীকে এই ব্যাঙ্ক ঋণ দেয়, সেটি হল টাটা গোষ্ঠী। তাদের একটি কাপড়ের মিল ইউবিআই-এর থেকে ঋণ নেয়। বিড়লা গোষ্ঠীর প্রথম যে দুটি সংস্থা ইউবিআইয়ের দেওয়া ঋণের তালিকায় আসে, তারা হল হিন্দ সাইকেল এবং ইন্ডিয়ান রেয়ন। কলকাতার গ্র্যান্ড হোটেল বা ওবেরয় গোষ্ঠী, বেঙ্গল কেমিক্যালস, বেঙ্গল এনামেল, সরস্বতী প্রেস, মার্টিন বার্ন, টিস্কো ইত্যাদি সংস্থার ব্যবসা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে ইউবিআই-এর ঋণের বড় ভূমিকা রয়েছে।
সংযুক্তিকরণ
সম্পাদনাপঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক, ওরিয়েন্টাল ব্যাঙ্ক অব কমার্স এবং ইউবিআই— তিনটি ব্যাঙ্ক মিলে তৈরি হবে নতুন একটি ব্যাঙ্ক। তার নামও হবে নতুন।[৩]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬ পৃষ্ঠা ২৪২, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
- ↑ "United Bank of India Gets Indian Government Boots"। ৮ এপ্রিল ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১০।
- ↑ "Bank on River"।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- Official website ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১ ডিসেম্বর ২০১০ তারিখে
- United Bank in tie-up with SBI MF