আহসানউল্লাহ মাস্টার

বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ

আহসানউল্লাহ ওরফে আহসানউল্লাহ মাস্টার (৯ নভেম্বর ১৯৫০ - ৭ মে ২০০৪) একজন বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সদস্য হিসাবে তিনি ১৯৯৬২০০১-এর জাতীয় সংসদে গাজীপুর-২ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ অবদানের জন্য তাকে (মরণোত্তর) স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২১ এ ভূষিত করা হয়।[১]

আহসানউল্লাহ ওরফে আহসানউল্লাহ মাস্টার
জন্ম(১৯৫০-১১-০৯)৯ নভেম্বর ১৯৫০
হায়দরাবাদ গ্রাম, গাজীপুর, বাংলাদেশ
মৃত্যু৭ মে ২০০৪
পেশারাজনীতিবিদ
সন্তান
সম্মাননাস্বাধীনতা পুরস্কার-২০২১

জন্ম সম্পাদনা

আহসানউল্লাহ মাস্টার জন্ম ১৯৫০ সালের ৯ নভেম্বর, তৎকালীন ঢাকা জেলার (বর্তমান গাজীপুর) পুবাইল ইউনিয়নের হায়দরাবাদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

শিক্ষা ও কর্মজীবন সম্পাদনা

আহসানউল্লাহর শিক্ষাজীবন শুরু হয় নিজ গ্রামের হায়দরাবাদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষাজীবন শেষ করে টঙ্গী উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন তিনি। আহসানউল্লাহ ১৯৬৫ সালে এসএসসি পাস করে তৎকালীন কায়েদে আযম কলেজে (বর্তমান শহীদ সোহরাওয়ার্দী সরকারি কলেজ) একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯৭০ সালে ডিগ্রি পাস করার পর আহসানউল্লাহ টঙ্গীর নোয়াগাঁও এম এ মজিদ মিয়া হাইস্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীকালে তিনি ওই বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক (১৯৭৭-১৯৮৪) ও প্রধান শিক্ষকের (১৯৮৪-২০০৪) দায়িত্ব আমৃত্যু পালন করেন। আহসানউল্লাহ মাস্টার টঙ্গী শিক্ষক সমিতির সভাপতি হিসেবে সক্রিয় ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধে অবদান সম্পাদনা

আহসানউল্লাহ মাস্টার ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার আগে তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে আটক ও নির্যাতিত হয়েছিলেন। ভারতের দেরাদুনের তান্দুয়া থেকে গেরিলা ট্রেনিং নিয়ে পুবাইল, টঙ্গী, ছয়দানাসহ বিভিন্ন জায়গায় গেরিলা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।[২]

১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ জয়দেবপুরের ক্যান্টনমেন্টের বাঙালী সৈন্যদের নীরস্ত্র করতে ঢাকা থেকে আসা পাকিস্তানি বাহিনীকে ব্যারিকেড দিয়ে বাধা দেয়ার জন্য জনতাকে উদ্বুদ্ধ করার কাজে তার ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।

রাজনৈতিক জীবন সম্পাদনা

১৯৬২ সালে হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশন-এর বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে রাজনীতিতে তার হাতেখড়ি। তখন তিনি ছাত্রলীগ করতেন। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুঘোষিত বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফা দাবি নিয়ে ছাত্রছাত্রীরা যখন রাজপথে, তখনো আহসানউল্লাহ সক্রিয়ভাবে আন্দোলনে অংশ নেন। ১৯৬৯ সালে ১১ দফার আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলেন তিনি।

১৯৮৩ সালের পুবাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচন থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদ—প্রতিটি নির্বাচনে তিনি জয়ী হয়েছেন বিপুল ভোটে। ১৯৮৮ সালে পুবাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালে গাজীপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

জাতীয় শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এর আগে তিনি ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এ ছাড়া আহসানউল্লাহ মাস্টার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) চেয়ারম্যান ছিলেন। তার জ্যেষ্ঠ ছেলে মো. জাহিদ আহসান রাসেল বর্তমানে জাতীয় সংসদের সদস্য, ছোট ছেলে জাবিদ আহসান সোহেল বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।

মৃত্যু সম্পাদনা

২০০৪ সালের ৭ মে গাজীপুর-২ আসনের আওয়ামী লীগের সাংসদ ও জাতীয় শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতি পদে আসীন থাকাকালীন সন্ত্রাসীদের ব্রাশফায়ারে নিহত হয়েছিলেন আহসানউল্লাহ মাস্টার। এ ঘটনার পরদিন তার ভাই মতিউর রহমান টঙ্গী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় ২০০৪ সালের ১০ জুলাই পুলিশ অভিযোগপত্র দায়ের করে। ঢাকার একটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ২০০৫ সালের ১৬ এপ্রিল ২২ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও ছয় আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। খালাস দেওয়া হয় দুই আসামিকে।[৩]

সম্মাননা সম্পাদনা

তার নাম অনুসারে গাজীপুর এর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এর সম্মান(স্নাতক) ছাত্র হল ও ডুয়েটের অডিটোরিয়ামের নাম করণ করা হয়েছে, এবং ২০১৩ সালে টঙ্গীতে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়াম নির্মিত হয়েছে[৪]। এড়াও টঙ্গিতে তার স্মৃৃৃৃতিতে শহীদ আহসান উল্লাহ মাষ্টার উড়াল সেতু ও শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল রয়েছে। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ অবদানের জন্য (মরণোত্তর) স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২১ এ ভূষিত করা হয়।[১][৫][৬]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "স্বাধীনতা পদক পাচ্ছেন ৯ ব্যক্তি ও ১ প্রতিষ্ঠান"www.kalerkantho.com। ৭ মার্চ ২০২১। 
  2. "গণমানুষের কাছের এক নেতা"www.prothom-alo.com। ৭ মে ২০১০। ৬ মে ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ এপ্রিল ২০১৮ 
  3. "আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলা যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত পাপ্পু সকালে জামিন পেলেন, দুপুরে তা স্থগিত"prothom-alo.com। ১৯ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ জানুয়ারি ২০১৪ 
  4. BanglaNews24.com। "ক্রীড়া ব্যক্তিত্বদের নামে স্টেডিয়াম"banglanews24.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-২৪ 
  5. "স্বাধীনতা পদক পাচ্ছেন ৯ ব্যক্তি ও ১ প্রতিষ্ঠান"দৈনিক কালের কণ্ঠ। ৭ মার্চ ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ৮ মার্চ ২০২২ 
  6. "'স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২১' পেলেন ৯ বিশিষ্টজন ও এক প্রতিষ্ঠান"দৈনিক ইত্তেফাক। ২০ মে ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ৮ মার্চ ২০২২