আসকার ইবনে শাইখ
আসকার ইবনে শাইখ (১০ মার্চ, ১৯২৫ - ১৮ মে, ২০০৯) একজন বিশিষ্ট বাংলাদেশি নাট্যকার,[১] গল্প লেখক, সংগঠক, অভিনেতা, গীতিকার, ভাষাসৈনিক, সাহিত্য সমালোচক, ইতিহাসবেত্তা ও শিক্ষাবিদ ছিলেন। আসকার ইবনে শাইখের প্রকৃত নাম মোহাম্মদ ওবায়েদুল্লাহ। আসকার ইবনে শাইখ তার ছদ্মনাম এবং এ নামেই তিনি পরিচিত।[২]
আসকার ইবনে শাইখ | |
---|---|
জন্ম | এম. আবদুল্লাহ ১০ মার্চ ১৯২৫ গৌরীপুর, ময়মনসিংহ, ব্রিটিশ ভারত |
মৃত্যু | ১৮ মে ২০০৯ ল্যাবএইড হাসপাতাল, ঢাকা, বাংলাদেশ | (বয়স ৮৪)
পেশা | নাট্যকার, সাহিত্যিক |
ভাষা | বাংলা |
জাতীয়তা | বাংলাদেশি |
নাগরিকত্ব | বাংলাদেশি |
শিক্ষা | স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি |
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় |
সাহিত্য আন্দোলন | বাংলা নাট্য আন্দোলন |
উল্লেখযোগ্য রচনাবলি | বিরোধ বিদ্রোহী পদ্মা |
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার | বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক |
সক্রিয় বছর | ১৯৪৭ - ২০০৬ |
প্রাথমিক জীবন
সম্পাদনাআসকার ইবনে শাইখ ১৯২৫ সালের ১০ মার্চ ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর থানার বোকাইনগর ইউনিয়নের মাইজহাটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। স্কুল জীবন থেকেই তার প্রচন্ড ঝোঁক ছিলো নাটকের প্রতি। ১৯৩৫ সালে ঈশ্বরগঞ্জ শহরের চরনিখলা মধ্য ইংরেজি স্কুলে অধ্যয়নকালেই অভিনয় শুরু করেন বিভিন্ন নাটকে। স্কুলে থাকাকালীন সিরাজের স্বপ্ন, বন্দীবীর প্রভৃতি নাটিকায় অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন পুরস্কারে পুরস্কিত হন। ১৯৪১ সালে ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় অবতীর্ণ হন। এরপর আনন্দমোহন কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক পাশ করেন। স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন ভাষা আন্দোলনের পথিকৃৎ সংগঠন তমদ্দুন মজলিসের সাথে জড়িত হন। এ সংগঠন থেকে ভাষা আন্দোলনের মুখপত্র 'সাপ্তাহিক সৈনিকে'র পাশাপাশি ১৯৫২ সালে প্রকাশ হতো মাসিক সাহিত্য পত্রিকা 'দ্যুতি'। তিনি আসকার ওবায়েদ নামে পত্রিকাটির সম্পাদনা করতেন আর তাকে সহযোগিতা করতেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, আবু হেনা মোস্তফা কামাল প্রমুখ।[৩][৪]
কর্ম জীবন
সম্পাদনাশাইখ পেশাগত জীবন শুরু করেন ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগে অধ্যাপনার মাধ্যমে। পেশা অধ্যাপনা হলেও নাটকে তার আগ্রহ তাকে এদেশের আধুনিক নাট্যজগতের ভিত্তিভূমিটি তৈরি করতে সহায়তা করে। তিনি ছিলেন একাধারে নাট্যকার, নাট্য সংগঠন পরিচালক, নির্দেশক, ও অভিনেতা। মঞ্চ, রেডিও, টেলিভিশন, সিনেমা সব মাধ্যমেই তিনি কাজ করেছেন।[৫][৬]
সাহিত্যকর্ম
সম্পাদনাআসকার ইবনে শাইখের প্রথম নাটক ‘বিরোধ'। ১৯৪১ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার পর প্রথম খসড়া রচনা করেন। তারপর নানা পরিবর্তনের মাধ্যমে ১৯৪৬ সালে শেষ করেন এবং ১৯৪৭ সালে আবদুল হাই মাশরেকীর সহায়তায় প্রকাশিত হয় কলকাতা থেকে। প্রকাশ করেন সওগাত পাবলিকেশন্সের মোহাম্মদ আলী।[৭] এছাড়াও রচনা করেছেন বিপুল সংখ্যক নাটক। শুধু সামাজিক নয়, এদেশের মানুষের গোটা ইতিহাসকেও তিনি রূপান্তর করেছেন তার নাট্যকর্মে।[৬][৮][৯]
সামাজিক নাটক
- বিরোধ (১৯৪৭)
- পদক্ষেপ (১৯৪৮)
- বিদ্রোহী পদ্মা (১৯৪৮)
- মৃত্যু-ক্ষুধা (১৯৫১, জাতীয় কবির মৃতু-ক্ষুধা উপন্যাসের একাংশের নাট্যরূপ)
- দুরন্ত ঢেউ (১৯৫১)
- শেষ অধ্যায় (১৯৫২)
- অণুবর্তন (১৯৫৩)
- বিল বাঁওড়ের ঢেউ (১৯৫৫)
- এপার ওপার (১৯৫৫)
- প্রতীক্ষা (১৯৫৭)
- প্রচ্ছদপট (১৯৫৮)
- দেওয়ানা মদিনা (১৯৬০)
- কবি চন্দ্রাবতী (১৯৬৫)
- লীলা-কঙ্ক (১৯৬৫)
- অতল সায়র (১৯৬৬)
- ইন্টারভিউ (১৯৮১)
- পদ্মগোখরা(১৯৮৮, জাতীয় কবির পদ্মগোখরা উপন্যাসের নাট্যরূপ)
- বয়াতীর ভিটা (২০০৬)
ঐতিহাসিক নাটক
- অগ্নিগিরি (১৯৫৮)
- তিতুমীর (১৯৫৭)
- রক্তপদ্ম (১৯৫৭)
- অনেক তারার হাতছানি (১৯৫৭)
- টিপু সুলতান (১৯৫৮)
- লালন ফকির (১৯৫৯)[১০]
- তাহ্মিনা (১৯৬৮)
- অশ্রুনির্ঝর (১৯৬৮)
- প্রতিধ্বনি (১৯৮০)
- মহাবিজয় (১৯৮০)
- আক্রান্ত যখন (১৯৮০)
- কর্ডোভার আগে (১৯৮০)
- রাজপুত্র (১৯৮০)
- রাজা-রাজ্য-রাজধানী (১৯৮১)
- মেঘলা রাতের তারা (১৯৮১)
- কন্যা জায়া জননী প্রথম খন্ড (১৯৮৭)
- কন্যা-জায়া-জননী ২য় খন্ড (১৯৮৭)
- স্বপ্ন সোনারগাঁও (২০০৬)
গীতিনাট্য
- চান্দের ভিটা (১৯৬১)
ঐতিহাসিক কাব্যনাট্য
- মীরজাফরের পালা
- দৌলত আলীর সন্তানেরা
কিশোর কাব্যনাটক
- দৃষ্টিফুল (১৯৬২)
- বাদুড় (১৯৬৩)
অনুবাদ নাটক
- দন্তচাপ (১৯৬৪)
গানের সংকলন
- নবজীবনের গান (১৯৫৯)
গল্প সংকলন
- কালো রাত তারার ফুল (১৯৮২)
প্রবন্ধ
- গবেষণাঃ বাংলা মঞ্চ নাটকের পশ্চাতভুমি (১৯৮৬)
- বাংলা সাহিত্যের ক্রমবিকাশ প্রসঙ্গে (১৯৯১)
ইতিহাস
- মুসলিম আমলে বাংলার শাসনকর্তা (১৯৮৬)
- ক্রুসেডের ইতিবৃত্ত (১৯৯৪)
অনুবাদ
- বৈষয়িক উন্নয়নের গতিপথে (১৯৬৩)
- উত্তরণ (১৯৬৪)
- কাজের দিনের ভোর (১৯৬৫)
- মার্কিন পুঁজিবাদ (১৯৬৬)
- আমেরিকার অর্থনৈতিক সাধারণতন্ত্র (১৯৬৭)
অপ্রকাশিত রচনাবলি
- সপ্তডিঙ্গা মধুকর (৭টি কিশোর গীতি-নাট্য)
- নদী নিরবধি (৭টি সামাজিক নাটক)
- বাংলাদেশের উদ্ভব কথা
- বাংলাদেশে ইসলামের উন্মেষ
- পলাশীর পথে ও মীরজাফরী নবাবী
পুরস্কার ও সম্মাননা
সম্পাদনা- বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৬১)
- একুশে পদক (১৯৮৬)
- ইসলামিক ফাউন্ডেশন পুরস্কার (১৯৮৭)
- টেনিশিয়ান পুরস্কার (১৯৮৯)
মৃত্যু
সম্পাদনাআসকার ইবনে শাইখ ২০০৯ সালের ১৮ মে ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে মারা যান।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ আবদুন্ নূর (৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫)। "সমাদৃত নাট্যকার"। দৈনিক ইত্তেফাক। ঢাকা, বাংলাদেশ। সংগ্রহের তারিখ ৩১ জানুয়ারি ২০১৬।
- ↑ "আসকার ইবনে শাইখ এবং তাঁর জীবন"। দৈনিক ইত্তেফাক। ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫।
- ↑ আসকার রচনাবলি ৭। পৃষ্ঠা ৩০৪–৩০৫।
- ↑ "প্রফেসর আসকার ইবনে শাইখ এবং তাঁর জীবন ভাবনা"। দৈনিক ইনকিলাব। ৩০ মার্চ ২০১৭।
- ↑ "নাট্য ব্যক্তিত্ব ড. আসকার ইবনে শাইখ"। দৈনিক সংগ্রাম। ৩১ মার্চ ২০১৭। ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ ক খ "নাট্যকার ড. আসকার ইবনে শাইখের 'বিরোধ' নাটক"। দৈনিক সংগ্রাম। ২৯ জুন ২০১২। ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ মাহমুদ ইউসুফ (২৯ জুন ২০১২)। "নাট্যকার ড. আসকার ইবনে শাইখের 'বিরোধ' নাটক"। দৈনিক সংগ্রাম। ঢাকা, বাংলাদেশ। ২০ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ জানুয়ারি ২০১৬।
- ↑ "ঐতিহ্যের রূপকার"। দৈনিক যুগান্তর। ৩১ মে ২০১৩।
- ↑ "সমাদৃত নাট্যকার"। দৈনিক ইত্তাফাক। ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫। ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ ফখরুজ্জামান চৌধুরী (৩১ মে ২০১৩)। "ঐতিহ্যের রূপকার"। দৈনিক যুগান্তর। ঢাকা, বাংলাদেশ। সংগ্রহের তারিখ ৩১ জানুয়ারি ২০১৬।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- বাংলাদেশ টেলিভিশনের ২৫ বছর, রজত জয়ন্তী (১৯৬৪-১৯৮৯) উপলক্ষে বিশেষ সংকলন, ডিসেম্বর ১৯৮৯, পৃ ৭৩-৭৪
- আসকার রচনাবলী ১, আবিদ আজাদ ও মাহবুব হাসান সম্পাদিত, শিল্পতরু প্রকাশনী, ঢাকা, সেপ্টেম্বর ১৯৯২, পৃ ৪
- আসকার রচনাবলী ১, আবিদ আজাদ ও মাহবুব হাসান সম্পাদিত, শিল্পতরু প্রকাশনী, ঢাকা, সেপ্টেম্বর ১৯৯২, পৃ ১৬৩
- আসকার রচনাবলী ১, আবিদ আজাদ ও মাহবুব হাসান সম্পাদিত, শিল্পতরু প্রকাশনী, ঢাকা, সেপ্টেম্বর ১৯৯২, পৃ ১৯১-১৯২
- আসকার রচনাবলী ২, আবিদ আজাদ ও মাহবুব হাসান সম্পাদিত, শিল্পতরু প্রকাশনী, ঢাকা, সেপ্টেম্বর ১৯৯২, পৃ ১৩৫
- ড. আসকার ইবনে শাইখ, বাংলা নাট্যের পশ্চাতভূমি, সাতরং প্রকাশনী, একুশে ফেব্রুয়ারি ১৯৮৬, পৃ ৯৬
- আসকার রচনাবলী ১, আবিদ আজাদ ও মাহবুব হাসান সম্পাদিত, শিল্পতরু প্রকাশনী, ঢাকা, সেপ্টেম্বর ১৯৯২,, পৃ ১৯২-১৯৩
- ওবায়দুল হক সরকার, সেকালে আমাদের নাট্যচর্চা, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী, সেগুনবাগিচা, রমান, ঢাকা-১০০০, পৃষ্ঠা ৪৯-৫০