যাইনুদ্দিন শাবান
আশরাফ যাইনুদ্দিন আবুল মাআলি শাবান ইবনে হুসাইন ইবনে নাসির মুহাম্মাদ ইবনে কালাউন, যিনি আশরাফ শাবান বা দ্বিতীয় শাবান নামে বেশি পরিচিত, ১৩৬৩ থেকে ১৩৭৭ সাল পর্যন্ত বাহরি রাজবংশের একজন মামলুক সুলতান ছিলেন। তিনি ছিলেন সুলতান নাসির মুহাম্মাদ (শা. ১৩১০-১৩৪১) এর নাতি। তার দুই পুত্র ছিল (মোট আটজনের মধ্যে) যারা তার স্থলাভিষিক্ত হন: মানসুর আলি এবং সালিহ হাজ্জি।[১]
আশরাফ শাবান | |||||
---|---|---|---|---|---|
মালিকুল আশরাফ | |||||
মিশরের সুলতান | |||||
রাজত্ব | ২৯ মে ১৩৬৩ – ১৫ মার্চ ১৩৭৭ | ||||
পূর্বসূরি | মানসুর মুহাম্মাদ | ||||
উত্তরসূরি | মানসুর আলি | ||||
জন্ম | ১৩৫৩/৫৪ | ||||
মৃত্যু | ১৫ মার্চ ১৩৭৭ (২৩-২৪ বছর বয়স) | ||||
সমাধি | |||||
বংশধর | মানসুর আলি আবু বকর আহমদ রমজান কাসিম মুহাম্মদ ইসমাঈল সালিহ হাজ্জি | ||||
| |||||
রাজবংশ | কালাউনি | ||||
রাজবংশ | বাহরি | ||||
পিতা | আমজাদ হুসাইন | ||||
ধর্ম | ইসলাম |
জীবনী
সম্পাদনাপ্রারম্ভিক জীবন এবং পরিবার
সম্পাদনাশাবান ১৩৫৩/৫৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন।[২] তার পিতা ছিলেন নাসির মুহাম্মাদের পুত্র আমজাদ হুসাইন (মৃত্যু ১৩৬৩),[২] তার অনেক ভাইয়ের বিপরীতে তিনি কখনো সুলতান হিসেবে রাজত্ব করেননি। শাবানের মা ছিলেন প্রাক্তন ক্রীতদাসী খাওয়ান্দ বারাকা (মৃত্যু ১৩৭২),[৩] যাকে আমজাদ হুসাইন বিয়ে করেছিলেন।[৪] শাবানের চার ভাই ছিল, অনুক (মৃত্যু ১৩৯০/৯১), ইব্রাহিম, আহমদ এবং জানিবাক (মৃত্যু ১৪২৮), এবং তিন বোন, জাহরা (মৃত্যু ১৩৭০), শাকরা (মৃত্যু ১৪০১) এবং সারা (মৃত্যু ১৪৩২)।[২]
রাজত্ব
সম্পাদনা১৩৬৩ সালের মে মাসের শেষের দিকে মামলুক শাসকরা, আমীর ইয়ালবুঘা উমারির নেতৃত্বে সিনিয়র আমিররা সুলতান মানসুর মুহাম্মাদকে অবৈধ আচরণের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত করেন এবং তার পরিবর্তে দশ বছর বয়সী আশরাফ শাবানকে তার পদে বসান।[৫] ইয়ালবুঘা এবং আমিররা আশরাফ শাবানকে এমন একজন ব্যক্তিত্ব হিসাবে দেখেছিলেন যাকে পরিচালনা করা সহজ হবে। ইয়ালবুঘা কৌশলে সুলতানের কার্যকর শাসক হয়ে ওঠেন।[৫] ১৩৬৬ সালের ডিসেম্বরে বেশ কয়েকজন সিনিয়র আমির এবং ইয়ালবুঘার নিজস্ব মামলুক তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করেন।[৬] বিদ্রোহের শুরুতে ইয়ালবুঘার মামলুকদের একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক তার প্রতি অনুগত ছিল। কিন্তু আশরাফ শাবান নিজের অধিকারে শাসন করতে চেয়েছিলেন, তাই বিদ্রোহীদের সমর্থন দিয়েছিলেন। তাই বাকিরাও বিদ্রোহে যোগ দেয়।[৬]
ইয়ালবুঘাকে তার মামলুকদের দ্বারা বন্দী ও হত্যা করার পর আশরাফ শাবান তাদের অনেককে আমির বানিয়েছিলেন, কিন্তু বেশিরভাগই চাকরি বা পৃষ্ঠপোষক ছাড়াই ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।[৬] সেই সময়ে আশরাফ শাবানের নিজস্ব মামলুক মাত্র ২০০ ছিল, যা ইয়ালবুঘার রাজত্বকালে তার প্রকৃত ক্ষমতার অভাবের জন্য হয়েছিল।[৭] ১৩৬৭ সালের জুনের মধ্যে ইয়ালবুঘার প্রাক্তন মামলুকরা মূলত আমির আসানদামুর নাসিরির চাকরিতে প্রবেশ করেছিল, যিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বী আমিরদের নিরপেক্ষ করেছিলেন।[৮]
১৩৬৭ সালের শেষের দিকে আসানদামুর এবং তার নতুন অর্জিত মামলুকরা আশরাফ শাবানের বিরুদ্ধে অগ্রসর হয়, কিন্তু পরাজিত হয়।[৯] বিদ্রোহটি প্রাক্তন সহশাসক আমির কাওসুনের ছেলে (মৃত্যু ১৩৪২) আমির খলিল ইবনে কাওসুন এবং নাসির মুহাম্মাদের কন্যা সমর্থন করেছিলেন, যিনি আশরাফ শাবান দ্বারা সেই বছরের শুরুতে আতাবেগ আসাকির (কমান্ডার ইন চিফ) নিযুক্ত হয়েছিলেন।[১০] খলিলকে সিংহাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আসানদামুর।[১০] সমসাময়িক মামলুক ঐতিহাসিক নুয়াইরি ইসকান্দারানির মতে, আশরাফ শাবানকে "সাধারণ মানুষ" উল্লেখযোগ্যভাবে সাহায্য করেছিল, যারা অনেক মামলুক বিদ্রোহীকে হত্যা করেছিল, "তাদেরকে মাটি কামড়াতে বাধ্য করেছিল"।[১১] আশরাফ শাবানের অনুগত কমান্ডার আমির আসানবুঘা ইবন আবু বাকরি এবং কুশতামুর মানসুরি দ্বারা সাধারণদের সমর্থন তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল, যাঁরা উভয়েই কায়রোর যুদ্ধ থেকে সরে এসেছিলেন এবং সাধারণ মানুষকে একা আসানদামুরের বাহিনীর সাথে লড়াই করার জন্য ছেড়ে দিয়েছিলেন।[১২] সাধারণরা আশরাফ শাবানের পক্ষপাতিদের পক্ষে জোয়ার ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিল এবং পরবর্তী আমিররা এবং রাজকীয় মামলুকরা যুদ্ধে ফিরে আসেন,[১২] বিদ্রোহীদের পরাজিত করেন এবং আসানদামুরকে গ্রেফতার করেন।[৯] বিদ্রোহের সময় তাদের আনুগত্য এবং মৌলিক সমর্থনের কারণে, আশরাফ শাবান তার শাসনামল জুড়ে সাধারণদের সাথে ভাল আচরণ করেছিলেন।[১২]
পরবর্তীতে ১৩৭৩ সালে ভবিষ্যতের সুলতান বারকুকসহ ইয়ালবুঘার প্রাক্তন মামলুকদের মধ্যে যারা বেঁচে ছিলেন, তাদের আশরাফ শাবানের মামলুকদের প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাসন থেকে কায়রোতে ফিরে যেতে দেওয়া হয়েছিল।[১৩] ১৩৭৩ সালের জুন/জুলাইয়ে আশরাফ শাবান এবং আমির উলজায় ইউসুফীর মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়।[১৪] সাধারণ মানুষ আবারও আশরাফ শাবানের অনুগতদের পাশাপাশি অস্ত্র তুলে নেয়।[১২] প্রায় এগারোটি সংঘর্ষের পর আশরাফ শাবান আমির আয়নাবাক ইয়ালবুগাভিকে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে ব্যবহার করে, উলজায়ের আমির এবং নিম্ন-পদস্থ মামলুকদের দলত্যাগের জন্য রাজি করান।[১৪] ওই বছরই উলজায় নিহত হন।[১৫] ১৩৭৪ সালে মিশরে একটি দুর্ভিক্ষ শুরু হয় যা দুই বছর স্থায়ী হয়। তার প্রজাদের উপর বোঝা প্রশমিত করার জন্য, আশরাফ শাবান দরিদ্রদের জন্য খাদ্য সরবরাহের প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছিলেন, প্রচেষ্টার আর্থিক দায়িত্ব তার আমির এবং কায়রোর সচ্ছল বণিকদের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছিলেন।[১৬]
১৩৭৬ সালের মার্চ মাসে, আশরাফ শাবান মক্কায় হজ যাত্রার জন্য রওয়ানা হন। তিনি মিশর ছেড়ে চলে গেলে, আয়নাবাক সুলতানের বিরুদ্ধে রাজকীয় মামলুক এবং বেকার মামলুকদের বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন।[১৪] এদিকে, আশরাফ শাবানের সাথে থাকা মামলুক প্রহরীও তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে।[১৭] আশরাফ শাবান পালানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু পরে তিনি আকাবায় বিদ্রোহীদের হাতে বন্দী হন।[১৮] আয়নাবাকের কাছ থেকে প্রতিশ্রুত পদোন্নতির বিনিময়ে আমির জারকাস সায়ফি ১৩৭৭ সালে আশরাফ শাবানকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন।[১৭] বিদ্রোহীরা আশরাফ শাবানের এক ছেলে মানসুর আলীকে তার উত্তরসূরি হিসেবে বসায়।
শাবানকে দারবুল আহমার এলাকায় তার মায়ের জন্য যে মাদ্রাসার নির্মাণ করেছিলেন তার একটিতে দাফন করা হয়েছিল, তার নিজের মাজার কমপ্লেক্সের কাজ কখনোই শেষ হয়নি।[১৯]
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Williams, pp. 16-17
- ↑ ক খ গ Bauden, Frédéric। "The Qalawunids: A Pedigree" (পিডিএফ)। University of Chicago। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০২-২৫।
- ↑ Harvard Middle Eastern and Islamic Review (ইংরেজি ভাষায়)। Center for Middle Eastern Studies, Harvard University। ১৯৯৪। পৃষ্ঠা 165।
- ↑ Al-Harithy, p. 332.
- ↑ ক খ Steenbergen 2011, p. 437.
- ↑ ক খ গ Steenbergen 2001, pp. 139–140
- ↑ Ayalon 2005, p. 63.
- ↑ Steenbergen 2001, p. 141.
- ↑ ক খ Steenbergen 2011, pp. 142–143.
- ↑ ক খ Levanoni 2006, p. 100.
- ↑ Steenbergen 2011, p. 143.
- ↑ ক খ গ ঘ Levanoni 1995, pp. 111–112.
- ↑ Steenbergen 2011, p. 145.
- ↑ ক খ গ Levanoni 1995, p. 103.
- ↑ Sabra, Adam (২০০০)। Poverty and Charity in Medieval Islam: Mamluk Egypt, 1250-1517। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 51। আইএসবিএন 9780521772914।
- ↑ Raphael, Sarah Kate (২০১৩)। Climate and Political Climate: Environmental Disasters in the Medieval Levant। Brill। পৃষ্ঠা 100। আইএসবিএন 9789004244733।
- ↑ ক খ Levanoni 1995, p. 104.
- ↑ Haarmann 1998, p. 68.
- ↑ Doris Behren-Abouseif (২০০৭)। Cairo of the Mamluks: A History of its Architecture and its Culture। The American University in Cairo Press।
গ্রন্থপঞ্জি
সম্পাদনা
- Levanoni, Amalia (১৯৯৫)। A Turning Point in Mamluk History: The Third Reign of Al-Nāṣir Muḥammad Ibn Qalāwūn (1310-1341)। Brill। আইএসবিএন 9789004101821।
- Levanoni, Amalia (২০০৬)। "Awlad al-nas in the Mamluk Army during the Bahri Period"। Wasserstein, David J.; Ayalon, Ami। Mamluks and Ottomans: Studies in Honour of Michael Winter। Routledge। আইএসবিএন 9781136579172।
- Ayalon, David (২০০৫)। "Studies on the Structure of the Mamluk Army"। Hawting, Gerald R.। Muslims, Mongols and Crusaders। Routledge।
- Haarmann, Ulrich (১৯৯৮)। "Joseph's Law–The Careers and Activities of Mamluk Descendants before the Ottoman Conquest of Egypt"। Philipp, Thomas; Haarmann, Ulrich। The Mamluks in Egyptian Politics and Society। Cambridge University Press। আইএসবিএন 9780521591157।
- Al-Harithy, Howayda (২০০৫)। "Female Patronage of Mamluk Architecture in Cairo"। Sonbol, Amira El Azhary। Beyond The Exotic: Women's Histories In Islamic Societies। Syracuse University Press। আইএসবিএন 9780815630555।
- Northrup, Linda S. (১৯৯৮)। "The Bahri Mamluk sultanate"। Petry, Carl F.। The Cambridge History of Egypt, Vol. 1: Islamic Egypt 640-1517। Cambridge University Press। আইএসবিএন 9780521068857।
- Rabbat, Nasser O. (১৯৯৫)। The Citadel of Cairo: A New Interpretation of Royal Mameluk Architecture। Brill। আইএসবিএন 9789004101241।
- Steenbergen, Jo Van (২০১১)। "On the Brink of a New Era? Yalbughā al-Khāṣṣakī (d. 1366) and the Yalbughāwīyah" (পিডিএফ)। Mamluk Studies Review। Middle East Documentation Center, The University of Chicago। 15: 117–152।
- Steenbergen, Jo Van (সেপ্টেম্বর ২০১১)। "The Amir Yalbughā al-Khāṣṣakī, the Qalāwūnid Sultanate, and the Cultural Matrix of Mamlūk Society: A Reassessment of Mamlūk Politics in the 1360s"। Journal of the American Oriental Society। American Oriental Society। 131 (3): 423–443। জেস্টোর 41380710।
- Caroline Williams, Richard Bordeaux Parker, Robin Sabin, Jaroslaw Dobrowolski, Ola Sei, Islamic Monuments in Cairo: The Practical Guide American Univ in Cairo Press, 2002 আইএসবিএন ৯৭৭-৪২৪-৬৯৫-০ আইএসবিএন ৯৭৮৯৭৭৪২৪৬৯৫১
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- উইকিমিডিয়া কমন্সে যাইনুদ্দিন শাবান সম্পর্কিত মিডিয়া দেখুন।
রাজত্বকাল শিরোনাম | ||
---|---|---|
পূর্বসূরী মানসুর মুহাম্মাদ |
মামলুক সুলতান ১৩৬৩–১৩৭৭ |
উত্তরসূরী মানসুর আলি |