আল ফারুক (বই)

শিবলী নোমানীর বই

আল ফারূক (উর্দু: الفاروق‎‎) ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা উমর ইবনুল খাত্তাবকে নিয়ে রচিত শিবলী নোমানীর একটি উর্দু জীবনী সাহিত্য। এটি ১৮৯৯ সালে দুই খণ্ডে প্রকাশিত হয়। অপূর্ব শৈলীর বাক্য বিন্যাসের পাশাপাশি তথ্য নির্ভরতায় এটি সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা অর্জনে সক্ষম হয়েছে।[১] ঘটনা প্রবাহের প্রেক্ষাপটে বুদ্ধিভিত্তিক যুক্তির নির্ভরতাকে গ্রন্থটি রচনার মানদণ্ড হিসেবে গ্রহণ করে লেখক উমরকে নিয়ে পশ্চিমা সমালোচকদের আপত্তি সমূহ খণ্ডন করেছেন।[১] তিনি ইসলামের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে গড়ে উঠার পিছনে উমরের যেসব ব্যক্তিগত ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, নিষ্ঠা ও ইসলামের প্রতি দায়বদ্ধতার পাশাপাশি প্রশাসনিক ও সাংগঠনিক সক্ষমতা ছিল তা অনুসন্ধান করেছিলেন।[২] বইটির প্রথম খণ্ডে তিনি উমরের জীবন চরিত্র ঘটনা প্রবাহ উল্লেখ করেন এবং দ্বিতীয় খণ্ডে উমরের খিলাফতের শাসন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলাবোধ এবং সামাজিক অবকাঠামোর বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরেন।[১] নোমানী তার রচনা সমূহের মধ্যে এই গ্রন্থটিকে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করতেন।[১] তার এই গ্রন্থটি উর্দু জীবনী সাহিত্যের একটি যুগান্তকারী গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত।[২]

আল ফারুক
মূল সংস্করণের প্রচ্ছদ
লেখকশিবলী নোমানী
মূল শিরোনামالفاروق‎‎
অনুবাদক
দেশব্রিটিশ ভারত
ভাষাউর্দু
বিষয়উমর ইবনুল খাত্তাব
ধরনজীবনী
প্রকাশিত১৮৯৯
প্রকাশকনামি ছাপাখানা, কানপুর
ইংরেজিতে প্রকাশিত
১৯০০
মিডিয়া ধরনমুদ্রিত গ্রন্থ (শক্তমলাট)
পৃষ্ঠাসংখ্যা৩৯৫
আইএসবিএন৯৭৮-৯৬৪৮২৮৭১৯৬ (উর্দু ২০১২ সংস্করণ)
ওসিএলসি১১৩৮১১৭১৯৪
২৯৭.০৯
এলসি শ্রেণীডিএস২৩৮.ইউ৫ এস৫২৪ ২০০৭
পূর্ববর্তী বইআল মামুন 
পরবর্তী বইসীরাতুন নোমান 
ওয়েবসাইটshibliebooks.com
২০২০ সালে পাকিস্তানের রিফাহে আম থেকে বইটির একটি অডিও পাঠ প্রচারিত হয়।

বর্ণনা সম্পাদনা

এই গ্রন্থে শিবলী অপূর্ব শৈলীর বাক্য বিন্যাস ছাড়াও পশ্চিমা সমালোচকদের জবাব দিয়েছেন। ফলে গ্রন্থটি তথ্য নির্ভর হিসেবে সকলের কাছে গৃহিত হয়েছে। গ্রন্থটি রচনায় শিবলীর মানদন্ড ছিল ঘটনা প্রবাহের প্রেক্ষাপটে বুদ্ধিভিত্তিক যুক্তির নির্ভরতা। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা উমরের শাসনামলের কঠোরতার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ আলোচনায় পূর্ববর্তী লেখকদের লেখনীতে তুলনামূলক অনেক কম, যা পরবর্তী গ্রন্থগুলোতে অনেক বেশি দেখা যায়। পরবর্তী লেখকগণ তার জীবনী আলোচনায় তার শাসনের কঠোরতার বিষয়টি তুলে ধরে তাকে স্বভাবজাত কঠোরতায় বিশেষায়িত করেছেন। অমুসলিম জিম্মিদের প্রতি খলিফা উমর যে আচরণ অবলম্বন করেন, পশ্চিমা লেখকগণ তাতে আপত্তি আছে বলে উল্লেখ করেন। শিবলী তার গ্রন্থে দেখিয়েছেন, তৎকালীন জিম্মিদের প্রতি উমরের আদেশ শুধু শাসনতান্ত্রিক জাতীয় শৃঙ্খলাবোধের নিমিত্তেই ছিল। এতে খাটো বা নিঁচু করে দেখার কিছুই নেই। রাসুল (স.) এর মুত্যুর পর খলিফা নির্বাচনে সকল সাহাবাদের সমবেত হওয়ার ঘটনা সম্পর্কে অনেক ভ্রান্ত ধারণা ছড়িয়ে আছে। খিলাফত নির্বাচনের নীতিমালার উপর গুরুত্ব আলোচনায় শিবলী প্রমাণ করেছেন, ঐ সময়ে খলিফা নির্বাচন স্বার্থসিদ্ধির জরুরী ছিল। কারণ, তা না হলে ন্যায় ও ইনসাফি শাসন ব্যবস্থায় কুচক্রি লোক স্বার্থসিদ্ধির হীন চক্রান্ত চালিয়ে যেত এবং ইসলামী শাসন ব্যবস্থার ক্ষতি হয়ে যেত।[১]

অনুবাদ সম্পাদনা

 

১৯০০ সালে গ্রন্থটির প্রথম খণ্ডের ইংরেজি অনুবাদ করেন জাফর আলী খান। দ্বিতীয় খণ্ডের ইংরেজি অনুবাদ করেন মুহাম্মাদ সেলিম যা ১৯৫৭, ১৯৬২ ও ১৯৬৭ সালে যথাক্রমে প্রকাশিত হয়। ১৯২৮ সালে উমর রাদা এর তুর্কি অনুবাদ করেন, যা ইস্তাম্বুল থেকে প্রকাশিত হয়। আফগানিস্তানের বাদশাহ মুহাম্মদ নাদির শাহ বইটির ফার্সি অনুবাদ করেন, যা কাবুল থেকে প্রকাশিত হয়।[২] এর বঙ্গানুবাদ করেন মুহিউদ্দীন খান।[৩]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

উদ্ধৃতি সম্পাদনা

  1. মাহমুদ ২০১৬, পৃ. ৫২–৫৫।
  2. ইয়াকুব ২০২০, পৃ. ৯।
  3. হায়দার, আবুল কাসেম (২ ডিসেম্বর ২০২১)। "মাওলানা মহিউদ্দীন খান (রহ:)-এর অমর কীর্তি কী"দৈনিক ইনকিলাব 

গ্রন্থপঞ্জি সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা