আবু আল-হাসান মুহাম্মদ ইবনে হাবিব আল-বাসরি আল-মাওয়ার্দী ( আরবি: أبو الحسن علي بن محمد بن حبيب البصري الماوردي الماوردي ল্যাটিন ভাষায় আল-বোয়াসেন (৯৭২-১০৫৮ খ্রি ) নামে পরিচিত , শাফি মাযহাবের একজন ইসলামী আইনবিদ। ধর্ম, সরকার, খেলাফত , জনসাধারণ এবং সাংবিধানিক আইন বিষয়ে তাঁর কাজগুলির জন্য সর্বাধিক স্মরণীয়। ইরানের নিশাপুরের কাছাকাছি বেশ কয়েকটি জেলা এবং বাগদাদের প্রধান বিচারপতি ছিলেন। আল-মাওয়ার্দী আব্বাসীয় খলিফা আল-কাইম এবং আল-কাদিরের কূটনীতিক হিসেবেও কাজ করেছিলেন। তিনি বুয়িদ আমিরদের সাথে আলোচনায় ছিল। তিনি "দ্য অর্ডিন্যান্স অফ গভর্নমেন্ট" গ্রন্থের জন্য সর্বাধিক পরিচিত। সরকারী অধ্যাদেশ, "আল-আহকাম আল-সুলতানিয়া ওয়াল-উইলিয়াত আল-দিনিয়া" তে তিনি খিলাফত সরকারের কার্যপ্রণলীর একটি বিস্তারিত সংজ্ঞা প্রদান করে।

আল-মাওয়ার্দী

আবু আল-হাসান মুহাম্মদ ইবনে হাবিব আল-বাসরি আল-মাওয়ার্দী
أبو الحسن علي بن محمد بن حبيب البصري الماوردي
আব্বাসীয় প্রধান বিচারক
অফিসে
১০০০ – ১০৫৮
আব্বাসীয় আব্বাসীয় কর্মকর্তা এবং কূটনীতিক
অফিসে
১০৩১, ১০৩৭,
১০৪২, ১০৪৩
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্ম
আলী

৯৭২
মৃত্যু২৭ মে ১০৫৮
(৩০ রবিউল আউয়াল ৪৫০ হিজরি)
ধর্মইসলাম
সন্তানহাসান
পিতামাতাহাবিব
যুগইসলামি স্বর্ণযুগ
(পরবর্তী আব্বাসীয় যুগ)
অঞ্চলইরাক
আখ্যাসুন্নী
ধর্মীয় মতবিশ্বাসহানাফি
প্রধান আগ্রহআকিদা, ইসলামি ধর্মতত্ত্ব,তাওহীদ,ইসলামী আইনশাস্ত্র
যে জন্য পরিচিতধর্ম, সরকার, খেলাফত এবং জনসাধারণ এবং সাংবিধানিক আইন নিয়ে কাজ করেন

জীবনী সম্পাদনা

আল-মাওয়ার্দী ৯৭২ খ্রিস্টাব্দে বসরাতে জন্মগ্রহণ করেন। কিছু লেখক দাবি করেন যে, তার পরিবার কুর্দি ছিল, [১] যা অস্পষ্ট প্রমাণিত নয় [২]

বিখ্যাত ঐতিহাসিক আল-খতিব আল-বাগদাদী (মৃত্যু: ৪৬৩/১০৭২) লিখেন তার বাবা একজন গোলাপজল বিক্রেতা ছিলেন। তিনি আবু আল ওয়াহিদ আল-সিমারীর কাছে ফিকাহ (ইসলামী আইনশাস্ত্র) নিয়ে পড়াশুনা করেন। পরবর্তীতে বাগদাদে তিনি বাসবাস শুরু করেন। সে সময় বসরা এবং বাগদাদ ছিল মুতাজিলা চিন্তাধারার কেন্দ্র। মুতাজিলাদের প্রতি সহানুভূতি থাকায় শাফিঈ আলেম আইনবিদ আল-সুবকি (মৃত্যু: ৭৫৬/১৩৫৫) আল-মাওয়ার্দীর সমালোচনা করেন। পরবর্তীতে তাকে বাগদাদের প্রধান কাদির পদে নিযুক্ত করা হয় এবং খিলাফতের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন চার বার তিনি খলিফা আল-কাইমের পক্ষে কূটনীতিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন (৪২২-১০৩১, ৪২৮/১০৩৭, ৪৩৪/৪০২৪ এবং ৪৩৫/1১০৪৩)। পরবর্তী খলিফা আল-কাদিরও আল-মাওয়ার্দিকে কূটনীতিক হিসেবে বুয়িদ আমিরদের সাথে আলোচনা করার জন্য পাঠান। তার উপর সরকারী অধ্যাদেশ "আল-আহলাম আস-সুলতানিয়াহ" গ্রন্থ লেখার দায়িত্ব দেয়া হয়। " তার অন্যান্য অনেক কাজের মধ্যে তাকে "দারুরা" তৈরির জন্যও কৃতিত্ব দেওয়া হয়। যাকে প্রয়োজনীয়তার মতবাদ বলা হয়। আল-মাওয়ার্দী

২৭ মে ১০৫৮ / ৩০ রবিউল আউয়াল ৪৫০ হিজরিতে বাগদাদে বৃদ্ধ বয়সে মারা যান। [৩]

বই সমূহ সম্পাদনা

  • আল-আহকাম আল-সুলতানিয়া ওয়াল-উইলিয়াত আল-দিনিয়্যা (সরকারের আদেশ)
  • কানুন আল ওয়াজারাহ (মন্ত্রীদের সম্পর্কিত আইন)
  • কিতাব নসিহাত আল-মুলক (শাসকদের জন্য আন্তরিক উপদেশ)
  • কিতাব আদব-আল-দুনিয়া ওয়াল-দীন (ধর্মে নৈতিকতা এবং বিশ্ব)
  • নবুয়তের ব্যক্তিত্ব[১]

কাজ সম্পাদনা

আল-মাওয়ার্দীর বই পুস্তকে সমূহে আমরা দেখতে পাই যে, তাই লেখা বই সমূহের বড় একটি অংশ ফিকহ সম্পর্কে এবং রাষ্ট্রপরিচালনা ও সরকার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত। তবে তার সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ হল ‘أدب الدين والدنيا’ (আদাবুদ দ্বীন ওয়াদ দুনিয়া)। এটা সমাজ গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে লেখা একটি বই,সমাজ বিজ্ঞানের থিওরী সম্পর্কে লেখা গুরুত্বপূর্ণ একটি বই।তার এই গ্রন্থের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল, মানুষকে সামগ্রিক ভাবে বুঝে তার পর পর্যায়ক্রমে মানুষ কীভাবে আকলী একটি সৃষ্টি হবে অথবা কিছু সম্ভাবনা নিয়ে দুনিয়ায় আসার পরে, তাকে দেওয়া সম্ভাবনা সমূহকে কীভাবে উন্নত করে দুনিয়াকে কীভাবে বিনির্মাণ করেছে এবং দুনিয়াকে বিনির্মাণ করার সময় কোন ধরনের সম্ভাবনাকে আবিষ্কার করেছে? সে যে সকল সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে নতুন সম্ভাবনাকে কীভাবে সৃষ্টি করেছে ? কোন কোন সম্ভাবনাকে মানুষ কাজে লাগাতে পারেনি এবং সেই সকল সম্ভাবনাকে কাজে না লাগানোর কারণে মানুষকে কোন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে? এই সকল বিষয়কে তিনি খুব সুন্দর ভাবে রূপায়ন করেছেন। তিনি তার এই গ্রন্থকে আকলের মাধ্যমে শুরু করেন। العقل الغريزي (আকলুল গারিযি ) العفل المكتسب (আকলুল মুকতাসাব) নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। এই ক্ষেত্রে তিনি বলেন, العفل المكتسب (আকলুল মুকতাসাব) মূলত العقل الغريزي (আকলুল গারিযি ) কে ব্যবহার করার মাধ্যমে অর্জিত হয়ে থাকে। এবং এটি এত বেশী সম্প্রসারিত ও বিস্তৃত হতে পারে যে, যার কোন সীমানারেখা নেই। অর্থাৎ মুকতাসাব আকলের কোন সীমানা নেই। তিনি বলেছেন যে, মানুষের আকলকে নির্দিষ্ট কিছু ফরম বা ধরনের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রাখা সম্ভব নয়। মানুষের আকল যে সম্প্রসারিত ও উন্নত হতে পারে এমন একটি বিষয় হিসেবে তিনি আকলকে তুলে ধরেন। এই দৃষ্টিকোন থেকে ভাষা এবং দ্বীন মানুষের আকলকে কীভাবে উন্নত ও বিস্তৃত করে, একই সাথে তাকে কীভাবে নতুন নতুন মাত্রা দান করে এই বিষয়কে সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন।

ফিকহ সম্পর্কে লেখা তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ হল ‘الحاوي الكبير’ (আল-হাবি উল কাবীর) গ্রন্থে উসূল ফিকহ নিয়ে বিস্তর আলোচনা করেছেন। সেই দৃষ্টিকোন থেকে উসূলে ফিকহের ক্ষেত্রেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ আলেমদের একজন।[৪]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Abul-Fazl Ezzati, The Spread of Islam: The Contributing Factors, ICAS Press (2002), p. 384
  2. Library of Congress: Rules for Governing. accessed September 2016.
  3. C. Brockleman"al-Mawardi" in the Encyclopedia of Islam 2, vol. 6, p. 869.
  4. গরগুন, প্রফেসর ড. তাহসিন। "আল মাওয়ার্দী ও তাঁর চিন্তাধারা"। ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা