আলেয়া

বাংলা লোককাহিনীর বস্তু

আলেয়া এক ধরনের বায়ুমণ্ডলীয় ভৌতিক আলো যা রাতের অন্ধকারে জলাভূমিতে বা খোলা প্রান্তরে দেখা যায়।[১][২][৩] মাটি থেকে একটু উঁচুতে আগুনের শিখা জ্বলতে থাকে। ইংরেজি এবং মার্কিন লোককাহিনীতে একে will-o'-the-wisp (/ˌwɪl ə ðə ˈwɪsp/) বলে।

আলেয়া

আলেয়া সৃষ্টি নিয়ে নানা মত রয়েছে। লোককথায় একে ভৌতিক আখ্যা দেওয়া হলেও বিজ্ঞানীরা মনে করেন গাছপালা পচনের ফলে যে মার্শ গ্যাসের সৃষ্টি হয় তা থেকে আলেয়ার উৎপত্তি। যেহেতু মিথেন গ্যাসের আপনা আপনি জ্বলার ক্ষমতা নেই তাই আগুন শুরুর কারণ হিসেবে তাঁরা দাহ্য ফসফিন (PH3) ও ফসফরাস ডাইহাইড্রাইড (P2H4) গ্যাসকে চিহ্নিত করেন।[৪] কেউ মনে করেন বাঁশ বা শুকনো কাঠের ঠোক্করে যে স্ফুলিঙ্গ তৈরি হয় তা থেকেই এই মার্শ গ্যাসে আগুন লাগে।

আলেয়া যে ভাবে তৈরি হয় সম্পাদনা

সাধারণত পাহাড়ি পাদদেশ অঞ্চলে এসব দামসম্পন্ন বিল বেশি চোখে পড়ে। পাহাড় বা বনাঞ্চলের পত্রঝড়া গাছের পাতা বসন্তে মাটিতে পড়ে। গ্রীষ্মে তা শুকিয়ে পচনের জন্য প্রস্তুত হয়। বর্ষার জলে এই পাতা পচে পাহাড়ি ঢলে হাওর, বিলের তলায় গিয়ে জমে। পাতা পচা পলি বিলের কেন্দ্রবিন্দুতে এক ধরনের বালুহীন পলিস্তর তৈরি করে। বর্ষাকালে রাতের বেলায় বিলের জলে যে ভূতের আগুন বা আলেয়ার আলো দেখা যায় তা আসলে, এই পাতা পচা পলিমাটি থেকে উৎপন্ন মিথেন গ্যাস বাতাসের সংঘর্ষে জ্বলে ওঠার কারণে তৈরি হয়। ধারণা করা হয়, বিলের তলার এই পলিস্তর গভীর পলিস্তর বিশিষ্ট দাম তৈরি হতে হাজার হাজার বছর লাগে। যেসব স্থানে দাম গড়ে উঠে তার নিচে পাহাড়ি উঁচু ভূমির ঝরণা ধারার একটি মুখ্যম প্রবাহ স্থানে এসব দামের উৎপত্তি। এই ঝরণা জলের প্রবাহই দামে কাদাকে জলমগ্ন রাখে।

জীবনানন্দ দাশ তার প্রথম কাব্য সংকলন ঝরা পালক-এ 'আলেয়া' নামক একটি কবিতায় লেখেন:[৫]

"প্রান্তরের পারে তব তিমিরের খেয়া
নীরবে যেতেছে দুলে নিদালি আলেয়া!"

আলেয়াতে থাকা ফসফরাস ডাইহাইড্রাইড (P2H4) গ্যাসটি বায়ুর সংস্পর্শে এলে জ্বলে ওঠে। ফলে অন্যান্য গ্যাসগুলি (অর্থাৎ মিথেন এবং ফসফিন) একই সাথে নীল শিখাসহ জ্বলতে থাকে। বায়ুপ্রবাহের ফলে জ্বলন্ত গ্যাসটি গতিশীল হয়। এটিই হল আলেয়া।

আলেয়া কোনো ভৌতিক ব্যাপার নয়। তবুও গ্রাম বাংলার অধিকাংশ মানুষ বিশ্বাস করে এটি অশরীরীদের কাজ।

আলোর কথিত স্থান সম্পাদনা

আমেরিকা সম্পাদনা

কানাডা

বায় ডে সালুর (Bais de Chaleurs) জ্বলন্ত জাহাজ, নিউ ব্রাউন্সউইক

সেন্ট লুই লাইট, সাস্কটচেওয়ান

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

মিসৌরির সেনাথ আলো

ব্রাগ রোডের ভুতুড়ে আলো (লাইট অফ সারাটোগা), টেক্সাস

ব্রাউন পাহাড়ের আলো, নর্থ ক্যারোলিনা

গুরডন লাইট, আরকানসাস

হরনেট ঘোস্ট লাইট, মিসৌরি-ওকলাহোমা স্টেট লাইন

ম্যাকো আলো, নর্থ ক্যারোলিনা

মারফা আলো, টেক্সাস

দা পৌল্ডিং লাইট, আপার মিশিগান

আর্জেন্টিনা এবং উরুগুয়ে

লুস মালা

এশিয়া সম্পাদনা

ভারত

চির বাতি, কচ্ছ জেলা, গুজরাত

জাপান

ওনিবি, জাপান

থাইল্যান্ড

নাগা আগুনপিন্ড, মেকং, থাইল্যান্ড

বাংলাদেশ

সুন্দরবন , সাতক্ষীরা , চট্টগ্রাম , পাহাড়ি অঞ্চল ও বন অঞ্চল

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Banglar Bhoot: Creatures of the beyond"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-১০-৩১। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০১-২০ 
  2. "Paranormal activity: 10 Indian haunted locations that'll chill your bones"http://www.hindustantimes.com/ (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৬-০৭-১২। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০১-২০  |সংবাদপত্র= এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)
  3. Schmidt, Ron। "Aleya Ghost Lights in the marshes of West Bengal, India"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০১-২০ 
  4. Joris Roels & Willy Verstrae (২০০১)। "Biological formation of volatile phosphorus compounds" (পিডিএফ)Bioresource Technology। Elsevier। 79: 243–250। ডিওআই:10.1016/S0960-8524(01)00032-3পিএমআইডি 11499578। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০০৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জানুয়ারি ২০১৮ 
  5. "আলেয়া - উইকিসংকলন একটি মুক্ত পাঠাগার"। ২০১৯-০৪-১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০১-২০