আলবার্ট ট্রট

অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার

আলবার্ট এডউইন ট্রট (ইংরেজি: Albert Trott; জন্ম: ৬ ফেব্রুয়ারি, ১৮৭৩ - মৃত্যু: ৩০ জুলাই, ১৯১৪) ভিক্টোরিয়ার অ্যাবটসফোর্ড এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত অস্ট্রেলীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা ও আম্পায়ার ছিলেন। অস্ট্রেলিয়াইংল্যান্ড উভয় দলের পক্ষেই টেস্ট ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন আলবার্ট ট্রট[]

আলবার্ট ট্রট
১৮৯০-এর দশকের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে আলবার্ট ট্রট
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নাম
আলবার্ট এডউইন ট্রট
জন্ম(১৮৭৩-০২-০৬)৬ ফেব্রুয়ারি ১৮৭৩
অ্যাবটসফোর্ড, ভিক্টোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া
মৃত্যু৩০ জুলাই ১৯১৪(1914-07-30) (বয়স ৪১)
হার্লেসডেন, মিডলসেক্স, ইংল্যান্ড
ডাকনামআলবার্তো, আলবাট্রট
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি অফ ব্রেক, মিডিয়াম/ফাস্ট-মিডিয়াম
ভূমিকানিচেরসারির ব্যাটসম্যান, আম্পায়ার
সম্পর্কহ্যারি ট্রট (জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা)
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ৭১/১১৬)
১১ জানুয়ারি ১৮৯৫ 
অস্ট্রেলিয়া বনাম ইংল্যান্ড
শেষ টেস্ট১ এপ্রিল ১৮৯৯ 
ইংল্যান্ড বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯০১–০২হকস বে
১৯০০–১৯০৪লন্ডন কাউন্টি
১৮৯৮ –১৯১০মিডলসেক্স
১৮৯৬ –১৯১১এমসিসি
১৮৯২–১৮৯৬ভিক্টোরিয়া বুশর‌্যাঞ্জার্স
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ৩৭৫
রানের সংখ্যা ২২৮ ১০,৬৯৬
ব্যাটিং গড় ৩৮.০০ ১৯.৪৮
১০০/৫০ ০/২ ৮/৪৪
সর্বোচ্চ রান ৮৫* ১৬৪
বল করেছে ৯৪৮ ৭১,৩৮৮
উইকেট ২৬ ১,৬৭৪
বোলিং গড় ১৫.০০ ২১.০৯
ইনিংসে ৫ উইকেট ১৩১
ম্যাচে ১০ উইকেট ৪১
সেরা বোলিং ৮/৪৩ ১০/৪২
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ৪/– ৪৫২/–
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ২৭ মে ২০১৭

১৮৯৯ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটার হিসেবে মনোনীত হন তিনি। ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয় যে, একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি লর্ডস প্যাভিলিয়নের উপর দিয়ে বলকে ফেলেছিলেন।[][] মাত্র দুইজন খেলোয়াড়ের একজন হিসেবে যোগিন্দার রাওয়ের সাথে তিনিও প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে একই ইনিংসে দুইবার হ্যাট্রিক করেন। সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে ৫টি টেস্টসহ ৩৭৫টি প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশ নেন। ৪১ বছর বয়সে কপর্দকহীন অবস্থায় আত্মহননের পথ বেছে নেন তিনি।

প্রারম্ভিক জীবন

সম্পাদনা

মেলবোর্নের অ্যাবটসফোর্ডে জন্মগ্রহণকারী ট্রট হিসাবরক্ষক অ্যাডলফাস ট্রট ও ম্যারি-অ্যান দম্পতির আট সন্তানের মধ্যে তৃতীয় ছিলেন।[][] তার বড় ভাই হ্যারি ট্রট টেস্ট ক্রিকেটার ছিলেন। তারা স্থানীয় ক্যাপুলেট ক্লাবে ছোটদের ক্রিকেটে অংশ নেন।[] এরপর তারা একত্রে অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট প্রতিযোগিতা শেফিল্ড শিল্ডে ভিক্টোরিয়ার প্রতিনিধিত্ব করেন।[]

খেলোয়াড়ী জীবন

সম্পাদনা

অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট ইতিহাসে ট্রটের ভূমিকা কল্পকাহিনীকেও হার মানায়। ভিক্টোরিয়ার পক্ষে মাত্র তিনটি প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশ নেয়ার পর টেস্ট আঙ্গিনায় ঝড় তুলেন। ১৮৯৪-৯৫ মৌসুমে এই স্টডার্টের নেতৃত্বাধীন সফরকারী ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে তার টেস্ট অভিষেক ঘটে। অ্যাডিলেডে অনুষ্ঠিত সিরিজের ঐ তৃতীয় টেস্ট তার বিস্ময়কর অভিষেকে রাউন্ড আর্ম বোলিং করে ৮/৪৩ লাভ করেন।[] ১০ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৩৮* ও ৭২* রানের দু’টো অপরাজিত ইনিংস উপহার দেন তিনি। অস্ট্রেলিয়া ৩৮২ রানের বিশাল ব্যবধানে বিজয়ী হয়। সিডনিতে অনুষ্ঠিত চতুর্থ টেস্টে এ ধারা অব্যাহত রেখেছিলেন। একমাত্র ইনিংসে করেন আবারও অপরাজিত ৮৫* রান। দলীয় অধিনায়ক জর্জ গিফেন তাকে বোলিং করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। হ্যারি ট্রট, চার্লি টার্নার ও জর্জ গিফেনের সুনিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে খুব সহজেই দুইবার স্বল্প রানে অল-আউট হয় ইংল্যান্ড দল। ইংল্যান্ড ইনিংস ও ১৪৭ রানে বিজয়ী হয়ে ২-২ সিরিজে সমতা আনে। মেলবোর্নের ৫ম টেস্টে তিনি অংশগ্রহণ করলেও ৬ উইকেটে জয় নিয়ে ইংল্যান্ড অ্যাশেজ সিরিজ বিজয়ী হয়।

আলবার্টের ভাই হ্যারি ট্রট ১৮৯৬ সালে ইংল্যান্ড সফরের জন্য অধিনায়কের দায়িত্ব পান। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পূর্ববর্তী সিরিজে ১০২.৫০ গড়ে রান তুললেও ঐ সফরের জন্য মনোনীত হননি। ফলশ্রুতিতে অস্ট্রেলীয় দলের সাথে একই জাহাজে চড়ে ব্যক্তিগতভাবে ইংল্যান্ডে যান।

ইংল্যান্ডে বসবাস

সম্পাদনা

ইংল্যান্ডে অবস্থানকালে ট্রট লর্ডসের গ্রাউন্ড স্টাফ হিসেবে যোগ দেন ও মিডলসেক্সের পক্ষে খেলার যোগ্যতা লাভ করেন। ১৮৯৬ সালে মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাবের পক্ষে খেলতে শুরু করেন। অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার ও টেস্ট আম্পায়ার জিম ফিলিপসের সহায়তায় ১৮৯৮ সালে মিডলসেক্সের পক্ষে খেলতে শুরু করেন। হাতের আঘাতের কারণে এক মাস খেলা থেকে দূরে থাকা স্বত্ত্বেও প্রথম মৌসুমেই ১০২ উইকেট তুলে নেন তিনি। এ সময় জে. টি. হার্নের সাথে স্মরণীয় বোলিং জুটি গড়েন।

লর্ড হকের তত্ত্বাবধানে ডিসেম্বর ১৮৯৮ থেকে এপ্রিল, ১৮৯৯ সময়কালে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। দক্ষিণ আফ্রিকা জাতীয় ক্রিকেট দলের বিপক্ষে দুইটি খেলায় অংশ নেন যা পরবর্তীতে টেস্ট খেলারূপে স্বীকৃতি লাভ করে। এরফলে চৌদ্দজন খেলোয়াড়ের একজনরূপে দুইটি দেশের পক্ষে টেস্ট খেলায় অংশ নেন। এছাড়াও ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়ার উভয় দেশের পক্ষে সর্বশেষ ক্রিকেটার তিনি। ক্রিকেট ইতিহাসে অসামান্য নজির স্থাপন করেন অস্ট্রেলিয়ার বিলি মিডউইন্টার, বিলি মারডক, জন ফেরিস, স্যামি উডস ও আলবার্ট ট্রট। তারা প্রত্যেকেই ইংল্যান্ডের পক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।

কাউন্টি ক্রিকেট

সম্পাদনা
পূর্ণাঙ্গ টেস্ট জীবনের বোলিং গড়
চার্লস ম্যারিয়ট (ইংল্যান্ড)
৮.৭২
ফ্রেডরিক মার্টিন (ইংল্যান্ড)
১০.০৭
জর্জ লোহম্যান (ইংল্যান্ড)
১০.৭৫
লরি ন্যাশ (অস্ট্রেলিয়া)
১২.৬০
জন ফেরিস (অস্ট্রেলিয়া/ইংল্যান্ড)
১২.৭০
টম হোরান (অস্ট্রেলিয়া)
১৩.০০
হ্যারি ডিন (ইংল্যান্ড)
১৩.৯০
আলবার্ট ট্রট (অস্ট্রেলিয়া/ইংল্যান্ড)
১৫.০০
মাইক প্রোক্টর (দক্ষিণ আফ্রিকা)
১৫.০২
জ্যাক আইভারসন (অস্ট্রেলিয়া)
১৫.২৩
টম কেন্ডল (অস্ট্রেলিয়া)
১৫.৩৫
অ্যালেক হারউড (অস্ট্রেলিয়া)
১৫.৪৫
বিলি বার্নস (ইংল্যান্ড)
১৫.৫৪
জন ট্রিম (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
১৬.১৬
বিলি বেটস (ইংল্যান্ড)
১৬.৪২

তথ্য: ক্রিকইনফো
যোগ্যতা: পূর্ণাঙ্গ টেস্ট জীবনে কমপক্ষে ১০ উইকেট।

১৮৯৯ ও ১৯০০ সালে অল-রাউন্ডার হিসেবে শীর্ষস্থানে আরোহণ করেন। ৩১ জুলাই, ১৮৯৯ তারিখে মন্টি নোবেলের বলে বর্তমান লর্ডস প্যাভিলিয়নের বাইরে বল পাঠিয়ে দেন।[]

ট্রটকে তার সময়কালে বৈশ্বিকভাবে সেরা অল-রাউন্ডার হিসেবে মনে করা হয়। বলের ভিন্নতার কারণে একজন ব্যাটসম্যান খুব কমই দ্বিতীয়বার একই ধরনের বলের মুখোমুখি হবার সুযোগ লাভ করতে পারতেন। সচরাচর ব্যবহৃত ব্যাটের তুলনায় আধা পাউন্ড বেশি ওজনের ৩ পাউন্ডের ব্যাট নিয়ে মাঠে নামতেন তিনি। প্রায়শই তার শক্তিশালী আঘাতের কারণে মিডলসেক্সের জয়ে সহায়তা করতেন।

ট্রট তার সামর্থ্য উজাড় করে দিতেন। ফিল্ডিংয়ের সময় তিনি বাউন্ডারি সীমানায় অবস্থান করতেন। এরফলে দর্শকদের সাথে তার নৈকট্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠে ও জনপ্রিয়তার তুঙ্গে আরোহণ করেন। ১৯০৭ সালে আর্থিক সুবিধা গ্রহণের খেলা আয়োজন করা হয়। ঐ খেলায় চার বলে চার উইকেট নেন তিনি। পরবর্তীতে ইনিংসের শেষদিকে আবারও হ্যাট্রিকের স্বাদ গ্রহণ করেন।[] খুব দ্রুত খেলা শেষ হয়ে যাবার ফলে প্রত্যাশা অনুযায়ী তেমন অর্থ তহবিলে জমা পড়েনি। এ প্রসঙ্গান্তরে মন্তব্য করেন যে, তিনি নিজেকে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করেছেন।[১০]

ব্যক্তিগত জীবন

সম্পাদনা

ক্রিকেট থেকে অবসর নেয়ার পর ট্রট দীর্ঘস্থায়ী অসুখে-বিসুখে ভুগতে থাকেন।[১১]

১৯১৪ সালে একটি লন্ড্রি টিকেটের পিছনে লিখে গেছেন যে, ওয়ারড্রব ও তার গৃহকর্ত্রীর জন্য ৪ পাউন্ড রেখে গেছেন। এরপর লর্ডসের খ্যাতনামা স্ট্রাইকের ১৫শ বার্ষিকীর একদিন পূর্বে মিডলসেক্সের উইলেসডেন গ্রীন এলাকায় নিজের গুলিতে আত্মহত্যা করেন তিনি।[১২]

দক্ষিণ আফ্রিকান বংশোদ্ভূত ইংরেজ ক্রিকেটার জোনাথন ট্রট নিজেকে হ্যারি ও আলবার্ট ট্রটের দূরসম্পর্কীয় আত্মীয়রূপে দাবী করেন।[১৩]

১৮৯৯ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটার হিসেবে মনোনীত হন।[১৪] ১৯০০ সালে টানটনে সমারসেটের বিপক্ষে ইনিংসের সবগুলো উইকেট লাভ করেন ১০/৪২।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Trott played three Test matches for Australia, and two for England. His highest score and best bowling both occurred for Australia.
  2. Frindall, Bill (২০০৯)। Ask BeardersBBC Books। পৃষ্ঠা 153আইএসবিএন 978-1-84607-880-4 
  3. Williamson, Martin (২০১০-০৬-১৯)। "Albert Trott's mighty hit"। ESPNCricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-২৪ 
  4. Pierce, Peter (১৯৯০)। "Trott, George Henry Stevens (1866–1917)"Australian Dictionary of Biography, Online EditionAustralian National University। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৪-০৮ 
  5. Haigh (2004), pp. 107–115
  6. CricketArchive Player Oracle, Retrieved 27 May, 2017
  7. "3rd Test: Australia v England at Adelaide, Jan 11–15, 1895"espncricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১২-১৩ 
  8. Scorecard, MCC v Australians, Lord's, 1899
  9. Scorecard, Middlesex v Somerset, Lord's, May 1907
  10. Indebted to James Seymour, ESPNcricinfo, 21 January 2006
  11. Obituary, Wisden, 1915
  12. Frith, David. "Albert Trott", The Cricketer, March 1973. Retrieved from www.cricinfo.com on 2 December 2008.
  13. Trott reveals Aussie connection, CricketArchive, 23 August 2009
  14. Cricketer of the Year, Wisden, 1899

আরও দেখুন

সম্পাদনা

আরও পড়ুন

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা

গ্যালারী চিত্র

সম্পাদনা