আর্থার ফিল্ডার

ইংরেজ ক্রিকেটার

আর্থার ফিল্ডার (ইংরেজি: Arthur Fielder; জন্ম: ১৯ জুলাই, ১৮৭৭ - মৃত্যু: ৩০ আগস্ট, ১৯৪৯) কেন্টের টনব্রিজ এলাকার প্ল্যাক্সটলে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ইংরেজ পেশাদার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা ছিলেন। ১৯০৪ থেকে ১৯০৮ সময়কালে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে কেন্টের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ফাস্ট বোলার হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, নিচেরসারিতে ডানহাতে ব্যাটিং করতেন পিপ ডাকনামে পরিচিত আর্থার ফিল্ডার।

আর্থার ফিল্ডার
১৯০৬ সালের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে আর্থার ফিল্ডার
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামআর্থার ফিল্ডার
জন্ম(১৮৭৭-০৭-১৯)১৯ জুলাই ১৮৭৭
প্ল্যাক্সটল, টনব্রিজ, কেন্ট
মৃত্যু৩০ আগস্ট ১৯৪৯(1949-08-30) (বয়স ৭২)
লাম্বেথ, লন্ডন
ডাকনামপিপ
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি ফাস্ট
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ১৪০)
১ জানুয়ারি ১৯০৪ বনাম অস্ট্রেলিয়া
শেষ টেস্ট১১ ফেব্রুয়ারি ১৯০৮ বনাম অস্ট্রেলিয়া
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯০০–১৯১৪কেন্ট
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ২৮৭
রানের সংখ্যা ৭৮ ২,৩২০
ব্যাটিং গড় ১১.১৪ ১১.৩১
১০০/৫০ ০/০ ১/২
সর্বোচ্চ রান ২০ ১১২*
বল করেছে ১,৪৯১ ৫২,০৮৬
উইকেট ২৬ ১,২৭৭
বোলিং গড় ২৭.৩৪ ২১.০২
ইনিংসে ৫ উইকেট ৯৭
ম্যাচে ১০ উইকেট ২৮
সেরা বোলিং ৬/৮২ ১০/৯০
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ৪/– ১১৯/–
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ২৮ জুলাই ২০১৮

১৯০০ থেকে ১৯১৪ সময়কালীন ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে কেন্টের পক্ষে খেলেছেন আর্থার ফিল্ডার। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে কেন্টের চারটি কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা বিজয়ে তিনি বিরাট ভূমিকা রেখেছেন।

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে দুইবার ইংল্যান্ড দলের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া সফরে যান। ১ জানুয়ারি, ১৯০৪ তারিখে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক ঘটে আর্থার ফিল্ডারের।

১৯০৭ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননা লাভ করেন আর্থার ফিল্ডার।

শৈশবকাল সম্পাদনা

১৮৭৭ সালে এক গোমস্তার সন্তানরূপে টনব্রিজের কাছাকাছি এলাকা প্ল্যাক্সটলে জন্মগ্রহণ করেন আর্থার ফিল্ডার। শৈশবকালেই খামারে কাজ করতে থাকেন।[১] ১৮৯৭ সালে ক্যাপ্টেন উইলিয়াম ম্যাককানলিসের নেতৃত্বাধীন কেন্টের অ্যাঞ্জেল গ্রাউন্ডে নব প্রতিষ্ঠিত টনব্রিজ নার্সারিতে যোগ দেন। এ প্রতিষ্ঠানটি ভবিষ্যতের পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে গড়ে তুলতে সফলভাবে পরিচালনা করতো ও ২০শ শতাব্দীর ঊষালগ্নে কেন্ট দলে যোগ দিতে প্রভূতঃ ভূমিকা রাখতো।[২][৩] এছাড়াও, মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) মাঠকর্মী হিসেবে ১৯০৪ সালে যোগ দিয়েছিলেন।[১]

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট সম্পাদনা

১৯০০ সালে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে আর্থার ফিল্ডারের। লেটনের কাউন্টি গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় তিনি কেন্টের সদস্যরূপে এসেক্সের মুখোমুখি হয়েছিলেন।[৪] খেলায় তিনি উইকেটবিহীন অবস্থায় বোলিং কার্য পরিচালনা করেন। এছাড়াও, কোন রান তুলতে পারেননি।[৫] সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে ২৪৯টি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়েছিলেন তিনি। ২১.০২ গড়ে ১,২৭৭টি উইকেট পান। এ সময় চারবার কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা জয় করেছিল তার দল।[৬]

১৯০৩ সালে কেন্টের সাথে পুরোপুরি সম্পর্কচ্ছেদ ঘটান তিনি। তার পরিবর্তে দলে ফাস্ট বোলার বিল ব্রাডলি অন্তর্ভুক্ত হন। উইজডেনের মতে আর্থিক কারণে এ সম্পর্কচ্ছেদ ঘটেছিল।[৭]

১৯০৫ সালটি তার জন্য সুখকর ছিল না।[১][৭] এরপর অবশ্য ১৯০৬ সালে কেন্টের শীর্ষস্থানীয় উইকেট শিকারীতে পরিণত হন। ঐ মৌসুমে তার দল শিরোপা জয় করে। ২২ খেলার সবকটিতেই অংশগ্রহণ ছিল তার ও ১৫৮ উইকেট দখল করেন।[২] ফলশ্রুতিতে, ঘরোয়া ক্রিকেটে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯০৭ সালে দলীয় সঙ্গী কেনেথ হাচিংসকে সাথে নিয়ে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননা লাভ করেন।[৮]

ঐ মৌসুমে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে এক ইনিংসের ১০টির সবগুলো উইকেট লাভে সবিশেষ কৃতিত্ব দেখান। লর্ডসে জেন্টলম্যানের সদস্যরূপে প্লেয়ার্সের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ১০/৯০ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। খেলায় তিনি সর্বমোট ১৪ উইকেট পেয়েছিলেন।[১][৭] ১৯০৬ মৌসুমে ১৩বার ছয় বা ততোধিক উইকেট পান। কাউন্টির পক্ষে সর্বমোট ১৭২ উইকেট শিকার করেন।[১][৮] চারজন খেলোয়াড়ের একজনরূপে কেন্টের পক্ষে এক মৌসুমে দেড় শতাধিক উইকেট পেয়েছিলেন। ১৯০৭ সালে এ কৃতিত্বের পুণরাবৃত্তি ঘটান। ১৬ গড়ে ১৭২ উইকেট পেয়েছিলেন।[৭][৯]

মূলতঃ নিচেরসারির ব্যাটসম্যান ছিলেন আর্থার ফিল্ডার।[১০] তাস্বত্ত্বেও, প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে একমাত্র শতরান করেছেন অপরাজিত ১১২ রান তুলে। অ্যাম্বলকোটে অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় ওরচেস্টারশায়ারের বিপক্ষে ১১ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে এ কৃতিত্ব দেখান। দশম উইকেট জুটিতে বিখ্যাত ক্রিকেটার ফ্রাঙ্ক ওলি’র সাথে জুটি গড়ে ২৩৫ রান সংগ্রহ করেন। তন্মধ্যে, ওলি করেন ১৮৫।[৭] তাদের সংগৃহীত শেষ উইকেট জুটিতে এ সংগ্রহটি অদ্যাবধি কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের সর্বোচ্চ সংগ্রহ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।[১১] এ জুটি যখন মাঠে নামে তখনো প্রথম ইনিংসে ওরচেস্টারশায়ারের ৩৬০ রানের বিপরীতে কেন্ট দল ৩০ রানে পিছিয়ে ছিল। আউট হবার পর কেন্টের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৫৫৫। কেন্ট ইনিংস ব্যবধানে জয় পায়। টেড আর্নল্ডের বলে ওলি মুখে আঘাত পেলে রিটায়ার্ড হার্ট হতে বাধ্য হয়েছিলেন।[৭]

১৯১৪ সাল পর্যন্ত আর্থার ফিল্ডার কেন্ট দলের প্রধান খেলোয়াড় ছিলেন। ১৯০৯, ১৯১১ ও ১৯১৩ সালে শতাধিক উইকেট পেয়েছিলেন তিনি।[১২] ১৯০৯, ১৯১০ ও ১৯১৩ সালে কেন্টের চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা লাভে ব্যাপক অংশগ্রহণ করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে তার খেলোয়াড়ী জীবনের সমাপ্তি ঘটে। তবে, যুদ্ধের পর এমসিসি’র পক্ষে দুইটি প্রথম-শ্রেণীবিহীন খেলায় অংশ নিয়েছিলেন তিনি।[১৩]

টেস্ট ক্রিকেট সম্পাদনা

সফলতম মৌসুম কাটানোর পর ১৯০৩-০৪ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরের জন্য ইংল্যান্ড দলের সদস্যরূপে অন্তর্ভুক্ত হন।[১] সামগ্রীকভাবে এ সফরটি আর্থার ফিল্ডারের জন্য সুখকর হয়নি। দুইটি টেস্টে অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি। ১৯০৪ সালের নববর্ষে এমসিজিতে অনুষ্ঠিত অ্যাশেজ সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়।[১][৭][১৪]

১৯০৭-০৮ মৌসুমে দ্বিতীয়বারের মতো ইংরেজ দলের সাথে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। এ সফরের প্রথম চার টেস্টে অংশগ্রহণ ছিল আর্থার ফিল্ডারের। ২৫.০৮ গড়ে ২৫ উইকেট দখল করেন। এরফলে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ টেস্ট উইকেট শিকারীতে পরিণত হন।[১৫][১৬] সিডনিতে অনুষ্ঠিত ৫-টেস্ট সিরিজের প্রথমটিতে ৬/৮২ লাভ করলেও স্বল্প ব্যবধানে ইংল্যান্ড দল পরাভূত হয়।[১৭] কিন্তু, মেলবোর্নের দ্বিতীয় টেস্টে গুরুত্বপূর্ণ ১৮ রান তুলে শেষ উইকেট জুটিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এ টেস্টে তার দল মাত্র এক উইকেটের ব্যবধানে জয় পেয়েছিল।[১০]

খেলার ধরন সম্পাদনা

১৯০৭ সালে উইজডেন আর্থার ফিল্ডারকে নিজস্ব খেলার ধরনে কিছুটা আধুনিকরূপে আখ্যায়িত করে। অফ-স্ট্যাম্পের বাইরে অধিকাংশ সময় বল ফেলতেন।[১] সচরাচর আউট সুইং বল ফেলতেন, ব্যাটসম্যান থেকে বেশ দূরত্বে বলকে রাখতেন ও স্লিপ অঞ্চলে অবস্থানকারী ফিল্ডারদের কাছে ক্যাচ তালুবন্দী করতে ব্যাটসম্যানদেরকে উদ্বুদ্ধ করতেন।[৭][১৮] বলকে বাঁক খাইয়ে ব্যাটসম্যানের কাছে পর্যাপ্ত পেস নিয়ে ফেলতেন।[১][৭][৮] ক্রমাগত বোলিং করতে পারতেন ও দীর্ঘসময় ধরে বোলিং কার্য অব্যাহত রাখতেন।[১][৭]

ব্যক্তিগত জীবন সম্পাদনা

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে আর্থার ফিল্ডার বয়সের ভারে ন্যূহ ছিলেন। যুদ্ধকালীন তিনি কেন্ট পুলিশে স্পেশাল কনস্ট্যাবল হিসেবে যোগ দেন।[১৯]

৩০ আগস্ট, ১৯৪৯ তারিখে লন্ডনের লাম্বেথ এলাকায় অবস্থিত সেন্ট টমাস হাসপাতালে ৭২ বছর বয়সে আর্থার ফিল্ডারের জীবনাবসান ঘটে।[৭]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Arthur Fielder – Cricketer of the Year 1907, Wisden Cricketers' Almanack, 1907. Retrieved 2015-02-19.
  2. A brief history, Kent County Cricket Club. Retrieved 2016-02-19.
  3. Birley D (2013) A social history of British cricket p.183. Available online). Retrieved 2016-02-19.
  4. First-class matches played by Arthur Fielder, CricketArchive. Retrieved 2016-02-19.
  5. Scorecard – Essex v Kent in 1900, CricketArchive. Retrieved 2016-02-19.
  6. Arthur Fielder, CricInfo. Retrieved 2016-02-19.
  7. Obituary – Arthur Fielder, Wisden Cricketers' Almanack, 1949. Retrieved 2106-02-19.
  8. Wilde S (2013) "1907 Five cricketers of the year" in Wisden Cricketers of the Year: A Celebration of Cricket's Greatest Players, pp.58–60. (Available online)
  9. Most wickets in a season for Kent, CricketArchive. Retrieved 2016-02-06.
  10. Wiseman D (2002) Boxing Day in Melbourne (part 1), CricInfo, 2002-12-26. Retrieved 2016-02-19.
  11. Highest partnership for each wicket in County Championship, CricketArchive. Retrieved 2016-02-20.
  12. First-class bowling in each year by Arthur Fielder, CricketArchive. Retrieved 2016-02-20.
  13. Miscellaneous matches played by Arthur Fielder, CricketArchive. Retrieved 2016-02-20.
  14. Test matches played by Arthur Fielder, CricketArchive. Retrieved 2016-02-19.
  15. Marylebone Cricket Club in Australia 1907–08, CricketArchive. Retrieved 2016-02-19.
  16. Test bowling for England, Marylebone Cricket Club in Australia 1907-08, CricketArchive. Retrieved 2016-02-19.
  17. A rare old day, CricInfo, 2003-07-19. Retrieved 2016-02-19.
  18. Sengupta A (2014) Arthur Fielder — and the Bowlers, and Stumpers, Cricket Country, 2014-08-30. Retrieved 2016-02-20.
  19. Lewis P (2014) For Kent and Country, pp.35–36. Brighton: Reveille Press.

আরও দেখুন সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা