ইসলাম ধর্মমতে আরশ (আরবী: العرش‎) হচ্ছে আল্লাহর সব থেকে বড় সৃষ্টি। মুসলমানগণ বিশ্বাস করেন আল্লাহ তার ক্ষমতার নিদর্শন স্বরূপ আরশ সৃষ্টি করেছেন।

কুরআন সম্পাদনা

কুরআনের ২৫ জায়গায় আরশের উল্লেখ আছে। কুরআনের কয়েকটি আয়াতের (বাক্য) সম্ভাব্য অনুবাদ হল,

"নিশ্চয় তোমাদের রব আল্লাহ। যিনি আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে, তারপর আরশে উঠেছেন। তিনি সব বিষয় পরিচালনা করেন। তার অনুমতি ছাড়া সুপারিশ করার কেউ নেই। তিনিই আল্লাহ, তোমাদের রব। সুতরাং তোমরা তাঁর ইবাদাত কর। তারপরও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না?"[১]

তিনিই আসমান ও যমীন ছয় দিনে তৈরী করেছেন, তাঁর আরশ ছিল পানির উপরে, তিনি তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে চান যে, তোমাদের মধ্যে কে সবচেয়ে ভাল কাজ করে। আর যদি আপনি তাদেরকে বলেন যে, "নিশ্চয় তোমাদেরকে মৃত্যুর পরে জীবিত ওঠানো হবে, তখন কাফেরেরা অবশ্য বলে এটা তো স্পষ্ট যাদু!"[২]

"সুতরাং আল্লাহ্‌ মহিমান্বিত, প্রকৃত মালিক, তিনি ছাড়া কোন (সত্য) উপাস্য নেই; তিনি সম্মানিত ‘আরশের অধিপতি।"[৩]

"আর আপনি ফেরেশতাদেরকে দেখতে পাবেন যে, তারা 'আরশের চারপাশে ঘিরে তাদের রবের সপ্ৰশংস পবিত্ৰতা ও মহিমা ঘোষণা করছে। আর তাদের মধ্যে বিচার করা হবে ন্যায়ের সাথে এবং বলা হবে, সকল প্রশংসা সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহর প্রাপ্য।"[৪]

আল কোরআনে আল্লাহর সিংহাসন বা কুরসি সম্পর্কে সুরা বাকারায় আয়াতুল কুরসি নাজিল হয়েছে। এই আয়াতে আল্লাহর নাম আল-হাইয়্যু, আল-কাইয়ুম[৫] এর কথা বলা হয়েছে।

হাদিস সম্পাদনা

হাদিসে আছে, ইসলামের নবী মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন, প্রতি নামাজের পর যে ব্যক্তি আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে তার পুরস্কার জান্নাত[৬] এবং এটা পাঠ করলে শয়তানের হাত থেকে পরিত্রাণ লাভ করা যায়।.[৭] হাদিস থেকে জানা যায় আরশ মঞ্জিলের অবস্থান সর্বোচ্চ জান্নাত 'জান্নাতুল ফিরদাউস'এর উপরে।[৮]

মুসলিম পণ্ডিতদের অভিমত সম্পাদনা

কিছু মুসলিম, যেমন আছারীসালাফিগণ বিশ্বাস করেন, আল্লাহ আরশকে তার ক্ষমতার নিদর্শ‌ন ও বাসস্থান উভয় হিসেবে সৃষ্টি করেছেন;[৯][১০][১১], কিছু মুসলিম, যেমন অধিকাংশ সুফিআশআরী-মাতুরিদীগণ বিশ্বাস করেন যে, আল্লাহ শুধুমাত্র তার ক্ষমতার নিদর্শ‌ন হিসেবে আরশকে সৃষ্টি করেছেন, বাসস্থান হিসেবে নয়;[১২] [১৩][১৪][১৫]। আবার অনেকে একে রূপক হিসেবে বর্ননা করেন, এবং অনেকে বলেন, মুমিনের অন্তর হচ্ছে আল্লাহর আরশ (قلب المؤمن عرش الله), যা সালাফী মুসলিম পণ্ডিতদের দ্বারা সমালোচিত একটি বিষয়।[১৬]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. আল-কুরআন, সুরা ইউনুস, আয়াত ৩
  2. আল কুরআন, সূরা হুদ, আয়াত ৭
  3. আল-কুরআন, সুরা আল-মুমিনুন, আয়াত ১১৬
  4. আল কোরআন, সুরা আজ-জুমার, ৩৯ নং সুরা, আয়াত ৭৫
  5. Book 004, Number 1768: (Sahih Muslim) 
  6. Sunnan Nasai’i al Kubra, (6/30), At-Tabarani; Al-Kabeer (8/114) 
  7. Saheeh Al Bukhari - Volume 3, Book 38, Number 505 
  8. Saheeh al-Bukhaari (#2581) 
  9. Rifai, Sayyid Rami Al (২০১৬)। The Light Of Allah In The Heavens and The Earth: The Creation Of The Atom (24:35) and The Physics Of Spirituality (ইংরেজি ভাষায়)। Sunnah Muakada। 
  10. Elias, Jamal J. (১৯৯৫)। The Throne Carrier of God: The Life and Thought of 'Ala' ad-dawla as-Simnani (ইংরেজি ভাষায়)। SUNY Press। আইএসবিএন 9780791426111 
  11. al-Din, Khwajah Kamal (১৯৬৩)। The Islamic Review (ইংরেজি ভাষায়)। Woking Muslim Mission and Literary Trust। 
  12. The Creed of Imam Al-Tahawi 
  13. Die Welt des Islams (ইংরেজি ভাষায়)। D. Reimer। ২০০৩। 
  14. Shahrur, Muhammad (২০০৯)। The Qur'an, Morality and Critical Reason: The Essential Muhammad Shahrur (ইংরেজি ভাষায়)। BRILL। আইএসবিএন 9789047424345 
  15. Yılmaz, Hakkı। The Division By Division English Interpretation of THE NOBLE QUR’AN in The Order of Revelation (ইংরেজি ভাষায়)। Hakkı Yılmaz। পৃষ্ঠা 566। 
  16. জাব্বার, আব্দুননূর ইবন আব্দুল (৭ এপ্রিল ২০১৫)। আকীদাহ্ সম্পর্কিত কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ মাস’আলাহ্ - বাংলা - আব্দুননূর ইবন আব্দুল জাব্বার (পিডিএফ)। ইসলামহাউজ.কম। পৃষ্ঠা ৭। সংগ্রহের তারিখ ৬ জানুয়ারি ২০২৩