আরব আলী

বীর বিক্রম খেতাবপ্রাপ্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধা

আরব আলী (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ১৯৯৫) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে।[১]

আরব আলী
মৃত্যু১৯৯৫
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর বিক্রম

জন্ম ও শিক্ষাজীবন সম্পাদনা

আরব আলীর জন্ম সিলেট জেলার লতিফপুর গ্রামে। তার বাবার নাম মাহমুদ আলী এবং মায়ের নাম হারিছা বিবি। তার স্ত্রীর নাম বদরুননেছা। তাঁদের দুই ছেলে। [২]

কর্মজীবন সম্পাদনা

১৯৭১ সালে যশোর ইপিআর সেক্টর হেডকোয়ার্টারের অধীনে সীমান্ত বিওপিতে কর্মরত ছিলেন আরব আলী। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যুদ্ধে যোগ দেন। তিনি প্রতিরোধ যুদ্ধে আহত হন। ভারতে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে যুদ্ধ করেন ৮ নম্বর সেক্টরের বয়রা সাব-সেক্টর এলাকায়। গোয়ালহাটি, ছুটিপুর, বর্নি, গঙ্গাধরপুরসহ আরও কয়েক স্থানে সাহস ও বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা সম্পাদনা

যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার গঙ্গানন্দপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত কাশিপুরে ১৯৭১ সালের ২৭ বা ২৮ জুনের ঘটনা। শতাধিক পাকিস্তানি সেনা লরি ও জিপ গাড়ি করে সেখানে টহলে আসে। সেতুর পূর্ব প্রান্তে দূরে এক স্থানে গাড়ি রেখে হেঁটে সেতু অতিক্রম করে তারা ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন দিকে। আরব আলীরা যেখানে অ্যামবুশ করেছিলেন, সেখান দিয়ে যাচ্ছিল একদল পাকিস্তানি সেনা। সেনাদের দল তাঁদের অ্যামবুশের ভেতর আসা মাত্র গুলি শুরু করেন। এতে নিহত হয় চার-পাঁচজন। যুদ্ধের পর তারা আত্মগোপন করা পাকিস্তানিদের খুঁজতে বের হন। আরব আলী ও তার সহযোদ্ধা মোস্তফা কামাল (বীর প্রতীক) একটি পাটখেতের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দেখেন, এক স্থানে গাছের নিচে ছয়জন পাকিস্তানি সেনা। সেনারা তাঁদের উপস্থিতি টের পায়নি। সঙ্গে সঙ্গে গর্জে ওঠে তার ও সহযোদ্ধার অস্ত্র। নিহত হলো তিন পাকিস্তানি সেনা। তিনজন পালিয়ে গেল। আরব আলীরা তাদের খুঁজতে থাকেন। সেখানে কাছেই ছিল একটি পাকা বাড়ি। চারদিকে অনেক উঁচু দেয়াল। আরব আলী ও মোস্তফা কামালের সন্দেহ হলো, পাকিস্তানিরা ওই বাড়িতে লুকিয়ে থাকতে পারে। একটু পর ওই বাড়ির ভেতর হইচই। কিন্তু তারা দেয়াল টপকাতে পারছিলেন না। তখন আরব আলী উপুড় হয়ে বসলেন আর মোস্তফা কামাল তার পিঠের ওপর উঠে দেখেন ভেতরে পাকিস্তানি সেনা। তারা ওই বাড়িতে থাকা কয়েকজনকে জিম্মি করেছে। পরে তারা ওই পাকিস্তানি সেনাদের গুলি করেন। এর মধ্যে একজন ছিল লেফটেন্যান্ট। তার গায়ে গুলি লাগেনি। সে মরার মতো ভান করে পড়ে ছিল। আরব আলীর সহযোদ্ধা মোস্তফা কামাল তার কাছে যাওয়ামাত্র সে তাকে জাপটে ধরে। শুরু হয় দুজনের মধ্যে হাতাহাতি। এ সময় আরব আলী ছিলেন বাইরে। একটু পর তিনি গিয়ে দেখতে পান দুজনের হাতাহাতি। তিনি গুলিও করতে পারছেন না। কারণ, তাতে সহযোদ্ধার গায়ে গুলি লাগতে পারে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ওই পাকিস্তানি লেফটেন্যান্টকে তিনি গুলি করতে সক্ষম হন। সেদিন মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে অসংখ্য পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। এর আগে আরব আলীসহ তার অধিনায়ক খবর পেলেন একদল পাকিস্তানি সেনা কাশিপুরে আসছে। কাশিপুর তাঁদের আওতার মধ্যে। অধিনায়ক বললেন পাকিস্তানি সেনাদের অ্যামবুশ করতে। মুক্তিযোদ্ধারা তৈরিই ছিলেন। তারা বেশির ভাগ ইপিআরের। কয়েকটি দলে বিভক্ত ছিলেন তারা। একটি দলের নেতৃত্বে আরব আলী। সীমান্তসংলগ্ন ক্যাম্প থেকে তারা দ্রুত রওনা হলেন কাশিপুরে। সেখানে আছে একটি সেতু। আরব আলী তার দল নিয়ে অবস্থান নিলেন ওই সেতুর পশ্চিম প্রান্তে। একটু পর সেতুর পূর্ব প্রান্তে হাজির হলো একদল পাকিস্তানি সেনা। তারা সেতু অতিক্রম করে নিশ্চিন্তে হেঁটে যেতে থাকে পশ্চিম দিকে। কল্পনাও করেনি মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতি। গুলির আওতায় আসামাত্র গর্জে উঠল আরব আলীর দলের সবার অস্ত্র। নিমেষে হতাহত হলো বেশ কজন পাকিস্তানি সেনা। আকস্মিক আক্রমণে হকচকিত ও ভীতসন্ত্রস্ত পাকিস্তানিরা যে যেভাবে পারল, পজিশন নিয়ে শুরু করল পাল্টা আক্রমণ। যুদ্ধ চলল অনেকক্ষণ। তারপর রণে ভঙ্গ দিয়ে পাকিস্তানিরা পালিয়ে গেল। যারা পালাতে পারল না, তারা আশপাশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করল। [৩]

পুরস্কার ও সম্মাননা সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ০৬-১০-২০১১[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449 
  3. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ১৭১। আইএসবিএন 9789843338884 

বহি:সংযোগ সম্পাদনা