আমির ইবন রাবিয়া (মৃত্যু - ৩২ হিজরি) মুহাম্মদ (সা.) এর একজন খ্যাতনামা সাহাবা ছিলেন, যিনি বদর,উহুদখন্দকের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং তিনি একজন হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবী[১]

আমির ইবনে রাবিয়া
মুহাম্মাদের সাহাবা
জন্মহিময়া গোত্র, মদিনা, ইয়েমেন
মৃত্যু৬৫৬ খ্রিস্টাব্দ
মদিনা
যার দ্বারা প্রভাবিতমুহাম্মাদ, উমর
পিতামাতা
  • রাবিয়া (পিতা)
উল্লেখযোগ্য কাজবদর, উহুদ ও খন্দকের যুদ্ধে অংশগ্রহণ, হাদিস বর্ণনা

নাম ও বংশ পরিচয় সম্পাদনা

আমির ইবন রাবীয়া এর মূলনাম আমির এবং ডাকনাম আবু আবদিল্লাহ । তার পিতার নাম রাবীয়া কিন্তু ইতিহাসে মাতার নাম জানা যায়না ।উমার ইবনে খাত্তাব তাকে খুব ভালোবাসতো তাই,উমার তাকে ছেলে হিসেবে গ্রহণের প্রস্তাব দেয় কিন্তু তার পিতা রাজি হননি । এ কারণে প্রাথমিক জীবনে এই সাহাবী আমের ইবনুল খাত্তাব (খাত্তাবের পুত্র আমের) নামে পরিচিত ছিলেন।

বর্ণিত রয়েছে যে, হযরত উমারের "বাইতুল মাকদাস" সফরের সময় হযরত আমের তার সফরসঙ্গী ছিলেন। যে বছর হযরত উসমানকে স্বীয় স্থলাভিষিক্ত করে হযরত উমার হজ্জে যান, সঙ্গে আমেরও ছিলেন।

ইসলাম গ্রহণ ও হিজরত সম্পাদনা

রাসূল আল আরকাম ইবন আবিল আরকামের বাড়ীতে আশ্রয় নেয়ার পূর্বে ইসলামের সেই সূচনাপর্বেই আমির ইবনে রাবীয়া ইসলাম গ্রহণ করেন । তিনি নিরাপত্তার সন্ধানে দুইবার ‍হাবশায় হিজরত করেন। প্রথমবার আমির স্ত্রী লায়লাকে মক্কায় রেখেই হাবশায় হিজরত করেন এবং পরবর্তীতে মক্কায় এসে পুনরায় স্ত্রীকে নিয়ে হাবশায় হিজরত করেন ।[২]

এবং তারা হাবশা থেকে মক্কায় ফিরে আসেন । আবার মক্কা থেকে সস্ত্রীক মদিনায় হিজরত করেন । ইবন ইসহাকের মতে,মুহাজির সাহাবাদের মধ্যে সাবু সালামা সর্বপ্রথম মদীনায় হিজরত করেন,তারপর আমের ইবন রাবীয়া তারপর আবদুল্লাহ ইবন জাহাশ।[৩] যদিও অনেকেই এই ক্রমান্বয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন । তবে সবাই একমত রয়েছে যে, তার স্ত্রী হযরত লায়লা মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতকারী প্রথম মহিলা।

যুদ্ধে অংশগ্রহন সম্পাদনা

তিনি বদর,উহুদ ও খন্দকের যুদ্ধে সফলভাবে অংশগ্রহণ করেন । তাছাড়া ছোট ছোট অভিযানেও তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন । তার পুত্র আবদুল্লাহ ইবনে আমির নিকট এইসকল যুদ্ধের বর্ণনা করতেন বলে ইতিহাসবিদগণ তার জীবনীতে উল্লেখ করেছেন ।

হযরত উসমানের খিলাফতের শেষ দিকে যখন প্রথম ফিতনা ও আত্মকলহ চরমরূপ ধারণ করে তখন হযরত আমের নির্জন বাস গ্রহণ করেন। দিন-রাত নিজেকে গৃহবন্ধী করে আল্লাহর ইবাদতে নিজেকে মশগুল রাখতেন ।এমনকি সাহাবাদের বর্ণনামতে উসমান খিলাফত চলাকালে তাকে বাইরে বের হতে দেখা যায়নি । এভাবেই তিনি অতিরিক্ত পরিশ্রমের ফলে অসুস্থ হয়ে পরেন ।

বর্ণিত একটি হাদিস সম্পাদনা

আমের ইবন রাবীয়া থেকে বর্ণিত,

আরবের এক ব্যক্তি তার নিকট আসে। আমের তার প্রতি যথেষ্ট সম্মান প্রদর্শন করেন। লোকটি সে কথা রাসূলুল্লাহর কাছে বর্ণনা করে। সে আবার ফিরে এসে আমেরকে বলে, আমি রাসূলুল্লাহর কাছে এমন একটি উপত্যকার মালিকানা চেয়েছি, যার থেকে উত্তম উপত্যকা আরবে দ্বিতীয়টি নেই। আমি ইচ্ছা করেছি তার কিছু অংশ আপনাকে দান করবো। যা আপনার ও আপনার পরবর্তী প্রজন্মের কাজে আসবে। আমের বললেনঃ তোমার ঐ জমির কোন প্রয়োজন আমার নেই। এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে কুরআনের এ আয়াতটি নাযিল হয়ঃ "মানুষের হিসাব নিকাশ নিকটবর্তী হয়েছে অথচ এখনও তারা অমনোযোগী হয়ে প্রত্যাখ্যান করে চলেছে"।[৪]

আমের বলেন, এ আয়াত আমাদেরকে দুনিয়ার প্রতি নির্মোহ করে তোলে।[৫]

মৃত্যু সম্পাদনা

গৃহবন্ধী অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং হযরত উসমানের শাহাদাতের কয়েকদিন পর ইনতিকাল করেন । অতিরিক্ত নির্জনতা অবলম্বনের জন্য তার অসুস্থতা ও মৃত্যুর তারিখ ভালোমত জানা যায়না । তবে মুসয়াব ইবন যুবাইর বলেনঃ আমের ৩২ হিজরিতে মারা যান। আবু উবাইদার মতে তার মৃত্যুসন হিজরী ৩৭। ওয়াকিদী বলেন, হযরত উসমানের শাহাদাতের অল্প কিছুদিন পর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।[৬]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. সাহাবাদের জীবনকাহিনী, ড. মুহাম্মাদ আবদুল মাবুদ 
  2. হায়াতুস সাহাবা - (১/৩৫৬) 
  3. হায়াতুস সাহাবা - (১/৩৬৩) 
  4. সূরা আল আম্বিয়া - ০১ 
  5. (আল ইসাবা-২/২৫১-৫২) 
  6. আল ইসাবা - (২/ ২৪৯)