আমিরানি (আগ্নেয়গিরি)
আমিরানি (ইংরেজি: Amirani) হল বৃহস্পতির প্রাকৃতিক উপগ্রহ আইয়োর একটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি। এটি আইয়োর অগ্রণী গোলার্ধে অবস্থিত এবং এটির স্থানাংক ২৪°২৮′ উত্তর ১১৪°৪১′ পশ্চিম / ২৪.৪৬° উত্তর ১১৪.৬৮° পশ্চিম.[১] এই আগ্নেয়গিরিটি সমগ্র সৌরজগতের বৃহত্তম সক্রিয় লাভা প্রবাহের জন্য দায়ী। এই আগ্নেয়গিরির সাম্প্রতিক লাভা প্রবাহগুলি আইয়োর অন্যান্য আগ্নেয়গিরির লাভা প্রবাহগুলিকেও নগন্য প্রতিপন্ন করেছে।[২]
১৯৭৯ সালের মার্চ মাসে ভয়েজার ১ কর্তৃক গৃহীত আলোকচিত্রগুলিতে এই আগ্নেয়গিরিটিকে প্রথম পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল।[৩] সেই বছরই পরে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন জর্জিয়ান অগ্নিদেবতা আমিরানির নামানুসারে এটির নামকরণ করে।
গঠন ও ভৌত বৈশিষ্ট্য সম্পাদনা
আমিরানি আগ্নেয়গিরিটি বৃহস্পতি গ্রহের প্রায় সমবয়সী, অর্থাৎ প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন বছর পুরনো। এটিকে ঘিরে রয়েছে গিশ বার প্যাটারা।[৪] অভিঘাত গহ্বরের পর্বতগুলির মধ্যে আমিরানি একটি জমে যাওয়া সালফিউরিক লাভা ক্ষেত্রের কেন্দ্রে অবস্থিত। এই লাভা ক্ষেত্রটি গড়ে উঠেছে একটি অর্ধবৃত্তাকার, ৩৭ কিলোমিটার প্রশস্ত আগ্নেয় গহ্বর দ্বারা। এই গহ্বরটি একটি সংকীর্ণ প্রণালীর মাধ্যমে যুক্ত হয়েছে একটি ৩৩০ কিলোমিটার মিশ্র লাভা প্রবাহের সঙ্গে। আমিরানি প্রবাহক্ষেত্রের দক্ষিণার্ধটি ঘিরে রয়েছে ব্যাসাল্ট ও সিলিকার দ্বারা গঠিত উজ্জ্বল সালফার ডাইঅক্সাইড (SO2) বিকীর্ণ প্রক্ষেপের একটি সাদা উদ্গীরণ স্তম্ভ, যা উদ্গীরণের সময় জমে যায় এবং মাটিতে পতিত হয়।[৫]
উদ্গীরণ সম্পাদনা
গ্যালিলিও মহাকাশযান থেকে পর্যবেক্ষিত সাম্প্রতিক লাভা প্রবাহগুলি পাঁচ মাসেরও কম সময়ের মধ্যে আইয়োর আনুমানিক প্রায় ৬২০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা আবরিত করেছে, যা বিগত ২১ বছরে হাওয়াইয়ান আগ্নেয়গিরি কিলাউয়া কর্তৃক লাভা প্রবাহ দ্বারা আবরিত এলাকার প্রায় ছয় গুণ। আমিরানি আগ্নেয়গিরিটি পৃথিবীর ঢালাকৃতি আগ্নেয়গিরির বৈশিষ্ট্যগুলি বহন করে। এই ধরনের আগ্নেয়গিরির উদ্গীরণের ফলে পাহোহো-ধাঁচের লাভা প্রবাহ সৃষ্টি হয় এবং প্রচুর পরিমাণে প্রধানত ব্যাসাল্টীয় উপাদান ও সালফার-সমৃদ্ধ লাভা উৎপাদিত হয়।[৬] এটির ভূতাত্ত্বিক কার্যকলাপের কারণ বৃহস্পতির প্রভাবান্বিত জোয়ার-সংক্রান্ত বল। আমিরানির উদ্গীরণগুলি নিয়ন্ত্রিত হয় বৃহস্পতিকে কেন্দ্র করে উপগ্রহটির কক্ষপথের দ্বারা। আইয়োর পৃষ্ঠভাগে সর্বাধিক ১,৬৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় আগ্নেয়গিরিটির অগ্ন্যুৎপাত ঘটে, যার গড় তাপমাত্রা -৯৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।[৭] আমিরানি থেকে কয়েক বছর ধরে একনাগাড়ে অগ্ন্যুৎপাতের ফলে লাভা প্রবাহ দ্বারা আইয়োর পৃষ্ঠভাগ আবরিত হয়। এই ধরনের ঘটনা পৃথিবীর আগ্নেয়গিরিগুলিতে ঘটতে দেখা যায় না।
নামের উৎস সম্পাদনা
খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০-২০০০ অব্দের জর্জিয়ান পৌরাণিক নায়ক আমিরানির নামানুসারে আগ্নেয়গিরিটির নামকরণ করা হয়েছে। আমিরানিকে গ্রিক টাইটান প্রোমেথিউসের জর্জিয়ান প্রতিরূপ মনে করা হয়। উল্লেখ্য, প্রোমেথিউসের নামেও আইয়োতে একটি আগ্নেয়গিরির নামকরণ করা হয়েছে। কথিত আছে, শিকারের মহাদেবী ডালির পুত্র আমিরানি তাঁর সংস্পর্শে আসা সকলকে ধাতুর ব্যবহার শিখিয়ে ঈশ্বরকে অবমাননা করেছিলেন। শাস্তি হিসেবে আমিরানিকে ককেসাসের খাড়া পাহাড়ে শিকল দিয়ে বেঁধে মৃত্যুর অপেক্ষায় ফেলে রেখে যাওয়া হয়। আমিরানি যখন নিজেকে মুক্ত করার জন্য ছটফট করতেন, তখন একটি ইগল পাখি এসে প্রতিদিন তাঁর যকৃৎ আক্রমণ করত।[৮]
তথ্যসূত্র সম্পাদনা
- ↑ "Amirani"। Gazetteer of Planetary Nomenclature। International Astronomical Union (IAU) Working Group for Planetary System Nomenclature (WGPSN)। ২০০৯-০৪-০৯। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৬-২৭।
- ↑ "Archived copy"। ২০১২-০৬-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১১-১৩।
- ↑ Smith, B. A.; ও অন্যান্য (১৯৭৯)। "The Jupiter system through the eyes of Voyager 1"। Science। 204 (4396): 951–972। এসটুসিআইডি 33147728। ডিওআই:10.1126/science.204.4396.951। পিএমআইডি 17800430। বিবকোড:1979Sci...204..951S।
- ↑ Davies, A. (২০০৭)। "Prometheus and Amirani: effusive activity and insulated flows"। Volcanism on Io: A Comparison with Earth। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 208–216। আইএসবিএন 978-0-521-85003-2।
- ↑ "39th LPSC Main Page"। www.lpi.usra.edu। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-১২-১৪।
- ↑ Lopes, Rosaly M C; Kamp, Lucas W; Smythe, William D; Mouginis-Mark, Peter; Kargel, Jeff; Radebaugh, Jani; Turtle, Elizabeth P; Perry, Jason; Williams, David A (২০০৪-০৫-০১)। "Lava lakes on Io: observations of Io's volcanic activity from Galileo NIMS during the 2001 fly-bys"। Icarus। Special Issue: Io after Galileo। 169 (1): 140–174। ডিওআই:10.1016/j.icarus.2003.11.013। বিবকোড:2004Icar..169..140L।
- ↑ "Io: Facts about Jupiter's Volcanic Moon"। Space.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-১২-১৪।
- ↑ "Georgia: Past, Present, Future..."। rustaveli.tripod.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-১২-১৪।
আরও পড়ুন সম্পাদনা
- Keszthelyi L.; McEwen A. S.; Phillips C. B.; ও অন্যান্য (২০০৭)। "Geologic mapping of the Amirani–Gish Bar region of Io: Implications for the global geologic mapping of Io" (পিডিএফ)। Icarus। 186 (1): 204–217। ডিওআই:10.1016/j.icarus.2006.08.023। বিবকোড:2007Icar..186..204W। ২০১৪-০৮-০৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা।