আমা (১৯৬৪-এর চলচ্চিত্র)

১৯৬৪ সালের নেপালি চলচ্চিত্র

আমা (নেপালি: आमा, অনুবাদ 'মা') হিরা সিং খত্রি'র প্রথম নির্মিত, ১৯৬৪ সালের নেপালি চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রটির কাহিনি লিখেন দূর্গা শ্রেষ্ঠ ও চৈত্য দেবী। চলচ্চিত্রটি নেপাল সরকারের তথ্য বিভাগের (প্রাক্তন রাজকীয় নেপাল চলচ্চিত্র কর্পোরেশন) ব্যানারে নেপালের তৎকালীন রাজা মহেন্দ্র বীর বিক্রম শাহ দেব কর্তৃক প্রযোজিত হয়েছিল। চলচ্চিত্রটির মূখ্য ভূমিকায় শিব শংকর ও ভুবন চন্দ থাপা ছাড়াও পার্শ্ব চরিত্র সমূহে বসুন্ধরা ভুষাল, হিরা সিং খত্রি এবং হরি প্রসাদ রিমল প্রমুখ অভিনয় করেছেন।আমা-তে সেনাবাহিনীর চাকরি ফেরত এক যুবকের কাহিনি চিত্রায়িত হয়েছে।

আমা
মূল শিরোনামआमा
পরিচালকহিরা সিং খত্রি
চিত্রনাট্যকারদূর্গা শ্রেষ্ঠ
চৈত্য দেবী
শ্রেষ্ঠাংশেশিব শংকর
ভুবন চন্দ থাপা
হরি প্রসাদ রিমল
বসুন্ধরা ভূশল
সুরকারভি বালসারা
নাতি কাজি
প্রযোজনা
কোম্পানি
তথ্য বিভাগ, নেপাল সরকার
মুক্তি
দেশনেপাল
ভাষানেপালি

রাজা মহেন্দ্র হিরালাল খত্রিকেআমা পরিচালনার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। মূলত ভারতের কলকাতায় চলচ্চিত্রটির গৃহমধ্যস্থ দৃশ্য ধারণ ও নির্মাণ পরবর্তী সম্পাদনা হয়েছিল। আমা নেপালে প্রযোজিত প্রথম নেপালি চলচ্চিত্র হিসেবে ১৯৬৪ সালের ৭ অক্টোবর মুক্তি পায়।

চলচ্চিত্রটি নেপালে মুক্তি পাওয়ার পর, দেশটিতে খুব দ্রুত জনপ্রিয় হয়। আমা ছায়াছবির সফল নির্মাণের পর নির্মাতা হিরা সিং খত্রি নেপাল সরকারের প্রযোজনায় হিজো আজা ভোলি (১৯৬৭) ও পরিবর্তন (১৯৭১) নামের আরো দুইটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন। ছায়াচিত্র দুইটি নেপালের জনগণকে দেশপ্রেমের বার্তা দেয়ার জন্য নির্মিত হয়েছিল। আমা নেপালি চলচ্চিত্রের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র হিসাবে বিবেচিত।

কাহিনিসংক্ষেপ সম্পাদনা

হরকা বাহাদুর একজন মদ্যপ ব্যক্তি যিনি তার স্ত্রীকে শারীরিক নির্যাতন করেন। হরকা তার সহধর্মিনীর কাছে মদ ছেড়ে দেয়ার প্রতিজ্ঞা করেন; তার একদিন বাদে, ঋণ শোধ করতে না পারায় তার বাড়ী দখল হয়ে যায়। সেদিন পরে, হরকা মদ্যপ হয়ে বাড়ী ফিরে তার স্ত্রীকে প্রহার শুরু করে, কিন্তু মেঘের বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় হরকার। হরকার মৃত্যুর পর তার পুত্র মান বাহাদুর (শিব শংকর) সেনাবাহিনীতে যোগদানের জন্য বাড়ী ছেড়ে যায়।

কয়েক বছর পর, মান বাহাদুর বিদেশী সেনাবাহিনীতে দুইবছর চাকরি করে বাড়ী ফিরে আসে, কিন্তু সে তার মা'কে খোজে পায়না। মায়ের মৃত্যুর কথা শুনে মান বাহাদুর নেপাল ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, কিন্তু তার প্রতিবেশীরা তাকে গ্রামে থেকে যেতে এবং সমাজের সেবা করার জন্য প্ররোচিত করে এবং তাকে যুক্তি পরামর্শ দিয়ে বোঝান যে, "মাতৃভূমির সেবা করা একজন মায়ের সেবা করার মতোই পুণ্যকর্ম"। মান বাহাদুর এতে রাজী হন এবং তার মাতৃভূমি নেপালের বর্ধমান অর্থনীতিকে সহায়তা করার জন্য নিজ গ্রামে থাকেন।

কুশীলব সম্পাদনা

আমা চলচ্চিত্রের অভিনয়শিল্পীদের তালিকা (ফিল্মস অব নেপাল হতে অভিযোজিত)[১] -

নির্মাণ সম্পাদনা

নেপালের তৎকালীন রাজা মহেন্দ্র নির্মাতা হিরা সিং খত্রিকে নেপালের পঞ্চায়েত ব্যবস্থার প্রচারের জন্য আমা চলচ্চিত্র নির্মাণের অনুরোধ করেছিলেন, হিরা সিং খত্রি সেসময় ভারতীয় চলচ্চিত্রে কাজ করতেন।[২] নেপালি চলচ্চিত্র বিকাশের প্রারম্ভিক দিনগুলিতে নেপালে চলচ্চিত্র পরিচালনা, পরিবেশনা এবং উপস্থাপনের জন্য পেশাদার কাঠামো ছিল না।[৩][৪] সেসময় নেপালে পেশাদার অভিনেতা না থাকায় পরিচালক হিরা নেপালি সঙ্গীত শিল্পীগীতিকার শিব শংকর এবং থিয়েটার অভিনেত্রী ভূবন চন্দকে অভিনয়ের জন্য বেছে নিয়েছিলেন।[৩] নির্মাতা হিরা, চলচ্চিত্রটির মূখ্য চরিত্রে শিব শংকরকে নির্বাচিত করেছিলেন, কারণ তিনি এই চরিত্রে অভিনেতা নেওয়ার ক্ষেত্রে স্বদেশকাতর ছিলেন।[৫] মূখ্য অভিনেত্রী ভুবন চন্দ থাপা, কাঠমন্ডু ক্রেজ-কে দেয়া এক স্মৃতিচারণায় বলেন,আমায় অভিনয়ের জন্য তিনি 'খুবই উত্তেজিত' ছিলেন। তিনি তার স্মৃতিচারণায় "এটি আমার জীবনের অন্যতম ঘটনা যা আমি কখনই ভুলতে পারি না" মর্মে এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন।[৫] ভুবন চন্দ অভিনয়ের জন্য তিনি ৫,০০০ রুপি (এপ্রিল,২০১৯-এর মান অনুযায়ী $৪৫.০১) পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন।[৫] তাকে চরিত্র দেয়ার জন্য পরিচালক হিরা চিত্রগ্রাহকের মতামত নিয়েছিলেন। সেসময় চিত্রগ্রাহক দেব, ভুবন চন্দের পক্ষে পরিচালককে ইতিবাচক সাড়া দেন। সুতরাং, ভুবন চন্দের চরিত্রটি নির্বাচনের ক্ষেত্রে চিত্রগ্রাহক ও পরিচালকের ভূমিকা ছিল।[৫] এই চলচ্চিত্রে অভিনয় করা সকলের জন্য এটা ছিল অভিষেক চলচ্চিত্র। এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে হরি প্রসাদ রিমল মাত্র ১৪ বছর বয়সে শিশুশিল্পী হিসেবে অভিষিক্ত হন।[৬]

তিন থেকে চার মাসের মধ্যে চলচ্চিত্রটির চিত্রগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছিল। প্রায় ছয় মাস সময় নিয়ে কলকাতায় নির্মাণ পরবর্তী সম্পাদনা করা হয়েছিল।[৫][৭] বেশীরভাগ চিত্র এক 'টেক'-এ ধারণ করা হয়েছিল।[১]

মুক্তি সম্পাদনা

আমা ১৯৬৪ সালের ৭ অক্টোবর কাঠমন্ডু উপত্যকা অঞ্চলে মুক্তি দেয়া হয়।[২] মুক্তির পর চলচ্চিত্রটি সাফল্য পেয়েছিল। ফিল্মস অব নেপাল-এর সুনিতার ভাষ্য অনুযায়ী "আমা চলচ্চিত্রটিকে নেপালি জাতি ঝড়ের বেগে গ্রহণ করেছিল"।[১] প্রথম চলচ্চিত্রে সাফল্যের পর, পরিচালক হিরা সিং খেত্রি, নেপাল সরকারের অর্থায়নে নেপালের জনগণকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে[৮] হিজো আজা ভোলি (১৯৬৭) ও পরিবর্তন (১৯৭১) নামের আরো দুইটি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছিলেন।[২][৯][১০] মুক্তির পর, এটির মুখ্য অভিনয় শিল্পীরা জনসাধারণের মাঝে জনপ্রিয় হয়েছিলেন।[১১] কাঠমান্ডু ফিল্মস, লিখেছিল "এটি (আমা) নেপালে চিত্রগ্রহণের ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা"।[৯]

সমালোচকদের প্রতিক্রিয়া সম্পাদনা

আমা চলচ্চিত্র সম্পর্কে বসনেপাল-এ বলা হয়েছে, "চলচ্চিত্রটির শিরোনাম চলচ্চিত্রটির জন্য ন্যায়সঙ্গত ছিল... আমা চলচ্চিত্রটি কী আশা করতে হবে এবং জনগণের প্রত্যাশা মেটানোর একটি ঝলক প্রকাশ করে; যা চলচ্চিত্রটির গল্পের মূলভাবের সাথে পুরোপুরি মিলে যায়। সমালোচকের মতে "আমা (চলচ্চিত্রটি) দর্শন প্রাপ্য"।[২] মাইগুল-এর ফিলিপ ক্রাইয়ান মার্শাল চলচ্চিত্রটি সম্পর্কে লিখেছেন, "আমা স্পষ্টতই একটি দেশ গঠনের হাতিয়ার" এবং চলচ্চিত্রটিতে "একজন মায়ের প্রতিচ্ছবি, জাতীয়তার, ঐক্যবদ্ধতার সার্বজনীন প্রতীক হিসেবে জাতীয়করণের মূলবিষয় এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল"।[১১]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Nepali Film – Aama (1964)" [নেপালি চলচ্চিত্র - আমা (১৯৬৪)]। ফিল্মস অব নেপাল (ইংরেজি ভাষায়)। ২৬ মে ২০০৯। ১৮ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ এপ্রিল ২০১৯ 
  2. "Aama, first movie produced in Nepal" [আমা, নেপালে প্রযোজিত প্রথম চলচ্চিত্র]। বস নেপাল (ইংরেজি ভাষায়)। ১৮ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ এপ্রিল ২০১৯ 
  3. মহারাজন, হর্ষ মান (১৯৭০)। "Machinery of state control: History of cinema censor board in Nepal" [দেশ নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ারঃ নেপালের চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের ইতিহাস]। বোধিঃ এন ইন্টারডিসিপ্লিনারি জার্নাল (ইংরেজি ভাষায়)। (১): ১৬৮–১৯০। আইএসএসএন 2091-0479ডিওআই:10.3126/bodhi.v4i1.5818  
  4. কোর্দেকি, অন্য। "Kollywood: The Essential Films of Nepal" [কলিউডঃ নেপালের অপরিহার্য চলচ্চিত্র সমূহ]। কালচার টিপ (ইংরেজি ভাষায়)। ৮ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-২২ 
  5. "For Every Mood and Every Move | First nepali actress: bhuwan chand" [প্রতিটি মনের ভাব ও পদক্ষেপের জন্য | প্রথম নেপালি অভিনেত্রী: ভুবন চন্দ]। কাঠমন্ডুক্রেজ.কম (ইংরেজি ভাষায়)। ৮ এপ্রিল ২০১৬। ১৮ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ এপ্রিল ২০১৯ 
  6. "Prominent Artist Rimal No More" [বিশিষ্ট শিল্পী রিমল আর নেই]। রাতোপতি (ইংরেজি ভাষায়)। ৩১ আগস্ট ২০১৮। ১৮ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ এপ্রিল ২০১৯ 
  7. "Development of Film City in Dolkha" [ডোলখায় চলচ্চিত্র নগরের উন্নয়ন] (পিডিএফ)নেপাল চলচ্চিত্র উন্নয়ন বোর্ড (ইংরেজি ভাষায়)। ১৭ এপ্রিল ২০১৯। ১৮ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। 
  8. "Hira Singh Khatri, director" [হিরা সিং খত্রি, পরিচালক]। ফিল্মস অব নেপাল (ইংরেজি ভাষায়)। ২০ এপ্রিল ২০১৫। ১৮ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ এপ্রিল ২০১৯ 
  9. "Filming in Nepal – The history of Nepal Filming Industry" [নেপালে চিত্রগ্রহণ – নেপাল চলচ্চিত্র শিল্পের ইতিহাস]। কাঠমন্ডু ফিল্মস (ইংরেজি ভাষায়)। ৭ ডিসেম্বর ২০১৭। ১৮ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ এপ্রিল ২০১৯ 
  10. পৌদেল, রাহাত (১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮)। "Talking Nepali movies" [নেপালি ছায়াছবির কথা বলছি]। মাই রিপাবলিকা (ইংরেজি ভাষায়)। ১৮ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ এপ্রিল ২০১৯ 
  11. "Close Up: Aama (Mother, 1965) …Nationalization, Modernization, and The State Cinema" [ক্লোজ আপ: আমা (মা, ১৯৬৫)… জাতীয়করণ, আধুনিকীকরণ এবং (নেপাল) দেশের চলচ্চিত্র]। মাইগুলঃ দ্য হিমালয়ান কমিউনিটি ম্যাগাজিননিউ ইয়র্ক। ১৮ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ এপ্রিল ২০১৯ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা