আমাসিয়া শান্তি চুক্তি

আমাসিয়া শান্তি চুক্তি (ফার্সি: پیمان آماسیه, "পেইমান-এ আমাসিয়েহ"; তুর্কি: Amasya Antlaşması, "আমাসিয়া আন্তলাসমাসি") ছিলো ১৫৩২-৫৫ এর উসমানীয়-সফবীয় যুদ্ধের পর সফবীয় সাম্রাজ্যের শাহ তাহমাস্প এবং উসমানীয় সাম্রাজ্যের সুলতান সুলাইমান এর মধ্যকার আমাসিয়া শহরে ২৯ মে, ১৫৫৫ খ্রিস্টাব্দে স্বাক্ষরিত একটি শান্তি চুক্তি।

আমাসিয়া শান্তি চুক্তি
১৫৫৫
১৫৫৫ খ্রিস্টাব্দে সফবীয় সাম্রাজ্যউসমানীয় সাম্রাজ্যের মধ্যে আমাসিয়ায় করা শান্তি চুক্তি।
সুলাইমানের উসমানীয়–সফবীয় যুদ্ধ (১৫৩২–১৫৫৫) অভিযান তাকে উপসাগরে প্রবেশের সুযোগ দেয় এবং উসমানীয় সাম্রাজ্যের পূর্বদিকে স্থিতিশীল সীমান্ত তৈরি করে।

এই চুক্তি ইরান ও উসমানীয় সাম্রাজ্যের মধ্যে সীমান্ত নির্ধারিত করেছিলো এবং চুক্তিত পর দুটি সাম্রাজ্যের মাঝে বারো বছরের জন্য শান্তি বজায় ছিলো। এই চুক্তির মাধ্যমে আরমেনিয়া এবং জর্জিয়াকে দুটি সাম্রাজ্যের মাঝে সমান ভাগে ভাগ করে দেওয়া হয়। উসমানীয়দের হাতে আসে পশ্চিম আরমেনিয়া, পশ্চিম কুর্দিস্তান, এবং পশ্চিম জর্জিয়া (পশ্চিম সামসখে সহ)। অন্যদিকে পূর্ব আরমেনিয়া, পূর্ব কুর্দিস্তান এবং পূর্ব জর্জিয়া (পূর্ব সামসখে সহ) ইরানের কাছে থেকে যায়।[] উসমানীয় সাম্রাজ্য বাগদাদ সহ ইরাকের অধিকাংশ জায়গা দখলে পায় যা তাদেরকে পারস্য উপসাগরে প্রবেশে সুযোগ পায়। এবং পারসিকরা তাদের প্রাক্তন রাজধানী যুদ্ধবিধ্বস্ত তাবরিজ এবং ককেসাসের অন্যান্য উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলগুলো যেমন দাগেস্তান তথা বর্তমান আজারবাইজান ধরে রাখতে সক্ষম হয়।[][][] লিখি পর্বতমালা ধরে দুই সাম্রাজ্যের মাঝে সীমান্ত প্রতিষ্ঠা করা হয় যা আরমেনিয়ার ভেতর দিয়ে প্রবেশ করে পারস্য উপসাগরের জগ্রোস পর্বতমালার পশ্চিম ঢাল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে পূর্ব ও পশ্চিম জর্জিয়াকে পৃথক করেছিলো।

পূর্ব আনাতোলিয়ায় এর ফলে অনেক নিরপেক্ষ অঞ্চল সৃষ্টি হয় যেমন এরজুরুম, শাহরিজোর এবং ভান[] কারস অঞ্চলটিকে নিরপেক্ষ ঘোষণা করা হয় এবং এর বিদ্যমান দুর্গগুলো ধ্বংস করে ফেলা হয়।[][]

এছাড়াও উসমানীয়রা পারসিক তীর্থযাত্রী বা হাজিদের মুসলিমদের পবিত্র শহর মক্কা সহ শিয়াদের ইরাকে অবস্থিত পবিত্র স্থানগুলোতে প্রবেশ ও ভ্রমণ নিশ্চিত করে।[]

১৬৩৯ সালের পরবর্তী জুহাবের চুক্তি অনুসারে ককেসাস অঞ্চলের সিদ্ধান্তমূলক বিভক্তিকরণ এবং উসমানীয়দের নিকট মেসোপটেমিয়ার অপরিবর্তনীয় হস্তান্তর হয়েছিলো।[]

এই চুক্তির আরেকটি শর্ত ছিলো যে সফবীয়দের প্রথম তিন রাশিদুন খলিফাদের অভিশাপ দেওয়ার ধর্মানুষ্ঠান সম্পন্ন করার প্রয়োজন ছিলো,[১০] আয়েশা এবং অন্যান্য সাহাবীরা (মুহাম্মদের সহচর) — এরা সবাই সুন্নিদের দ্বারা উচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত। এই শর্তগুলো ছিলো উসমানীয়-সফবীয় চুক্তির একটি সাধারণ শর্ত,[১১] এবং এই ক্ষেত্রে এটি ছিলো তাহমাস্পের জন্য অপমানজনক।[১২]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Mikaberidze, Alexander (২০১৫)। Historical Dictionary of Georgia (2 সংস্করণ)। Rowman & Littlefield। পৃষ্ঠা xxxi। আইএসবিএন 978-1442241466 
  2. The Reign of Suleiman the Magnificent, 1520–1566, V.J. Parry, A History of the Ottoman Empire to 1730, ed. M.A. Cook (Cambridge University Press, 1976), 94.
  3. Mikaberidze, Alexander Conflict and Conquest in the Islamic World: A Historical Encyclopedia, Volume 1. ABC-CLIO, 31 jul. 2011 আইএসবিএন ১৫৯৮৮৪৩৩৬২ p 698
  4. A Global Chronology of Conflict: From the Ancient World to the Modern Middle East, Vol. II, ed. Spencer C. Tucker, (ABC-CLIO, 2010). 516.
  5. Ateş, Sabri (২০১৩)। Ottoman-Iranian Borderlands: Making a Boundary, 1843–1914। Cambridge: Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 20। আইএসবিএন 978-1107245082 
  6. Mikaberidze, Alexander Conflict and Conquest in the Islamic World: A Historical Encyclopedia, Volume 1. ABC-CLIO, 31 jul. 2011 আইএসবিএন ১৫৯৮৮৪৩৩৬২ p 698
  7. Mikaberidze, Alexander (২০১৫)। Historical Dictionary of Georgia (2 সংস্করণ)। Rowman & Littlefield। পৃষ্ঠা xxxi। আইএসবিএন 978-1442241466 
  8. Shaw, Stanford J. (1976), History of the Ottoman Empire and modern Turkey, Volume 1, p. 109. Cambridge University Press, আইএসবিএন ০-৫২১-২৯১৬৩-১
  9. Феодальный строй ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০০৯-০৪-২৬ তারিখে, Great Soviet Encyclopedia (রুশ ভাষায়)
  10. Andrew J Newman (১১ এপ্রিল ২০১২)। Safavid Iran: Rebirth of a Persian Empire। I.B.Tauris। পৃষ্ঠা 46। আইএসবিএন 9780857716613 
  11. Suraiya Faroqhi (৩ মার্চ ২০০৬)। The Ottoman Empire and the World Around It (illustrated, reprint সংস্করণ)। I.B.Tauris। পৃষ্ঠা 36, 185। আইএসবিএন 9781845111229 
  12. Bengio, Ofra; Litvak, Meir, সম্পাদকগণ (৮ নভে ২০১১)। The Sunna and Shi'a in History: Division and Ecumenism in the Muslim Middle East। Palgrave Macmillan। পৃষ্ঠা 60। আইএসবিএন 9780230370739 

আরো পড়ুন

সম্পাদনা
  • Atçıl, Zahit (২০১৯)। "Warfare as a Tool of Diplomacy: Background of the First Ottoman-Safavid Treaty in 1555"। Turkish Historical Review10 (1): 3–24। ডিওআই:10.1163/18775462-01001006 
  • Allouche, Adel (২০১৫)। "Amasya, Treaty of" । Fleet, Kate; Krämer, Gudrun; Matringe, Denis; Nawas, John; Rowson, Everett। Encyclopaedia of Islam, THREE। Brill Online। আইএসএসএন 1873-9830 
  • Köhbach, M. (১৯৮৯)। "AMASYA, PEACE OF"Encyclopaedia Iranica, Vol. I, Fasc. 9। পৃষ্ঠা 928। 
  • McLachlan, Keith (২০০০)। "BOUNDARIES i. With the Ottoman Empire"Encyclopaedia Iranica, Vol. IV, Fasc. 4। পৃষ্ঠা 401–403।