আমার ফাঁসি চাই

মতিউর রহমান রেন্টু রচিত ১৯৯৯ সালের বই

আমার ফাঁসি চাই ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত মতিয়ুর রহমান রেন্টু রচিত বই।[][] বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে রচিত বইটিতে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চরিত্রের বিভিন্ন দিক বর্ণনা করা হয়েছে।[] ইতিহাস বিকৃতি এবং রাজনৈতিক বিতর্ক ছড়ানোর অভিযোগে শেখ হাসিনা সরকার কর্তৃক বইটি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।[][] পাশাপাশি মতিয়ুর রহমান রেন্টুকে সস্ত্রীক অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছিল।

আমার ফাঁসি চাই
বইয়ের প্রচ্ছদ
প্রথম সংস্করণের প্রচ্ছদ
লেখকমতিয়ুর রহমান রেন্টু
দেশবাংলাদেশ
ভাষাবাংলা
বিষয়বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট
প্রকাশকস্বর্ণ লতা ও বন লতা
প্রকাশনার তারিখ
২৬ মার্চ ১৯৯৯
মিডিয়া ধরনছাপা (শক্তমলাট)
পৃষ্ঠাসংখ্যা২৩৫
পরবর্তী বইঅন্তরালের হত্যাকারী প্রধানমন্ত্রী (২০০৩) 

পটভূমি

সম্পাদনা

১৯৮১ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত,[] প্রায় ১২ বছর ধরে শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত উপদেষ্টা হিসেবে কর্মরত মতিয়ুর রহমান রেন্টু দলের নেতা ও হাসিনার পরিবারের সদস্যদের অনিয়ম নিয়ে অভিযোগ করায় হাসিনা তাকে ও তার পরিবারকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। অবাঞ্ছিত ঘোষণার পর রেন্টু হাসিনার নেতিবাচক দিকগুলো নিয়ে বইটি লেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।[]

বিষয়বস্তু

সম্পাদনা

বইটিতে দাবি করা হয়েছে যে আওয়ামী লীগের পরিকল্পনায় জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়িত হয়েছিল।[] মোহাম্মদ হানিফকে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বানাতে দলটি ১.৩৭ কোটি টাকা খরচ করার কথা উল্লেখ রয়েছে। বইটিতে দাবি করা হয় যে খালেদা জিয়াকে হত্যা করতে নাগেশ্বরী নদীর ফেরির সারেংকে ৫০,০০০ টাকা দেওয়া হয়েছিল। বইটিতে দাবি করা হয়েছে যে শেখ হাসিনা লাশের খবর শুনলে খুশি হয়ে উঠতেন।[]

অভ্যর্থনা ও প্রতিক্রিয়া

সম্পাদনা

শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক বিরোধীদল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের মালিকানাধীন দৈনিক দিনকাল পত্রিকায় বইটির অংশ নিয়মিত প্রকাশ করা হলেও পরে বন্ধ রাখা হয়। পরবর্তীতে পত্রিকাটি ২০০০ সালের ২৬ জুনে "পাঠকবৃন্দ বইটির প্রকাশ অব্যাহত রাখতে পত্রিকা কর্তৃপক্ষকে টেলিফোনে অনুরোধ করে" বলে প্রকাশ করে।[] ২০০০ সালের ২৯ জুন সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করতে পারে কারণ দেখিয়ে হাসিনার সরকার বইটি নিষিদ্ধ করে।[১০] কলাম লেখক আব্দুল হান্নানের মতে জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ড নিয়ে বইটি করা দাবি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল কেননা তা অন্য কারো কাছ থেকে নেওয়া হয়নি বরং সরাসরি লেখক তুলে ধরেছেন।[] বদরুদ্দীন উমর বইটি নিষিদ্ধ করার প্রতিক্রিয়া হিসেবে এই কাজকে অগণতান্ত্রিক ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন যে মানুষের মাঝে বইটি নিয়ে আগ্রহ রয়েছে।[১১] খালেদা জিয়া বইটিতে লেখা শেখ হাসিনা দ্বারা তাকে হত্যা করার ইচ্ছার কথা পড়ার পর ধারণা করেন যে বিভিন্ন সময় তাকে একাধিক হত্যাচেষ্টার পেছনে হাসিনার হাত থাকতে পারে।[১২] অন্যদিকে শেখ হাসিনা বইটি প্রকাশের পেছনে খালেদা জিয়ার ষড়যন্ত্র আছে কিনা তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন পোষণ করেন।[১৩]

বিতর্ক

সম্পাদনা

২২ জুন ২০০০ সালে বইয়ের লেখক তার বাড়ির নিকট একটি দোকানে আততায়ীদের নিকট গুলিতে আহত হোন। তিনি অভিযোগ করেন যে বইটি লেখার অপরাধে তাকে হত্যাচেষ্টা করা হয়।[]

২০০২ সালে শফিক আহমেদ সিদ্দিক আমার ফাঁসি চাই বই নিয়ে মতিয়ুর রহমান রেন্টুর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন। দীর্ঘ পাঁচ বছর শুনানি শেষে, ২০০৭ সালের ১৮ এপ্রিল ঢাকার একটি আদালত রেন্টুকে ১,০০,৩১,৯৯৮ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদানের রায় জারি করে। তবে ক্ষতিপূরণ পেতে ব্যর্থ হলে সিদ্দিক রেন্টুর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার জন্য ২০০৭ সালের ১০ আগস্ট একটি মামলা দায়ের করেন।[]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "Country passing thru judicial anarchy, says Fakhrul"দ্য ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস (বাংলাদেশ)। ৫ জুলাই ২০১৯। ২২ আগস্ট ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ আগস্ট ২০২৪ 
  2. "Dr Shafique files case for seizure of Rentu's property"দ্য ডেইলি স্টার (বাংলাদেশ)। ২০২১-০৭-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১২-০৩ 
  3. আহমদ, মুসতাক (৬ আগস্ট ২০২৪)। "নেত্রীর মন, জীবনের মায়া"ঢাকা পোস্ট। সংগ্রহের তারিখ ২২ আগস্ট ২০২৪ 
  4. খান, কিউ.এম. জালাল (৬ নভেম্বর ২০২০)। "Short View Of Certain Betrayals That Should Not Have Happened To BNP – OpEd"। ইউরেশিয়া রিভিউ। ১৯ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ আগস্ট ২০২৪ 
  5. "বাংলাদেশে নিষিদ্ধ বা বাজেয়াপ্ত হয়েছিল যেসব বই"ঢাকা পোস্ট। ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ২৩ আগস্ট ২০২৪ 
  6. "Rentu shot by assailants"। হলিডে (ইংরেজি ভাষায়)। ২৩ জুন ২০০০। 
  7. হান্নান, আব্দুল (৫ জুলাই ২০০০)। "'মত প্রকাশের স্বাধীনতার দাবিদাররা নীরব কেন'"। দৈনিক দিনকাল 
  8. "আমার ফাঁসি চাই"। দৈনিক দিনকাল। ২৩ জুন ২০০০। 
  9. "'আমার ফাঁসি চাই' গ্রন্থ ধারাবাহিক প্রকাশ পুনরায় চালু করতে বিপুল অনুরোধ"। দৈনিক দিনকাল। ২৮ জুন ২০০০। পৃষ্ঠা ৮। 
  10. মানবাধিকার চর্চা সম্পর্কিত প্রতিবেদন ২০০০প্রামাণ্য ভাষ্য, মানবাধিকার প্রতিবেদন ২০০০: যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দফতরযুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস, ঢাকা। ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০০১। পৃষ্ঠা ২৪। 
  11. উমর, বদরুদ্দীন (২১ মার্চ ২০০০)। "বইটি জনগণ পড়তে চান"। যুগান্তর 
  12. "খালেদা জিয়া"। যায়যায়দিন। ৮ আগস্ট ২০০০। পৃষ্ঠা ৩। 
  13. "শেখ হাসিনা"। যায়যায়দিন। ৮ আগস্ট ২০০০। পৃষ্ঠা ৩।