আমানউল্লাহ খান

আফগানিস্তানের আমির এবং বাদশাহ

আমানউল্লাহ খান (পশতু: أمان الله خان, দারি: أمان الله خان, উর্দু: أمانالله خان, জুন ১৮৯২ – ২৫ এপ্রিল ১৯৬০) ছিলেন আফগানিস্তানের শাসক। ১৯১৯ থেকে ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি আফগানিস্তান শাসন করেছেন। তিনি প্রথমে আমির এবং ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দের পর থেকে বাদশাহ হিসেবে শাসন করেছেন।[২] তৃতীয় ইঙ্গ-আফগান যুদ্ধের পর আফগানিস্তান ব্রিটিশ প্রভাবমুক্ত স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি প্রয়োগে সক্ষম হয়। তাঁর শাসনামলে বেশ কিছু রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের প্রচেষ্টা দেখা যায়। তিনি পাশ্চাত্য কায়দায় আফগানিস্তানকে আধুনিক করার প্রচেষ্টাকারী প্রথম আফগান শাসক। তবে হাবিবউল্লাহ কালাকানি ও তার অনুসারীদের জনপ্রিয় উত্থানের ফলে তাঁর এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ জানুয়ারি আমানউল্লাহ খান ক্ষমতা ত্যাগ করে পালিয়ে প্রথমে ব্রিটিশ ভারত, পরে ইউরোপে চলে যান। ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সুইজারল্যান্ডের জুরিখে মৃত্যুবরণ করেন, তাঁর দেহ আফগানিস্তানে ফিরিয়ে এনে জালালাবাদে তাকে সমাধিস্থ করা হয়।

আমানউল্লাহ খান
غازي امان الله خان
আফগানিস্তানের বাদশাহ[১]
আফগানিস্তানের আমির
রাজত্ব২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯১৯ – ১৪ জানুয়ারি ১৯২৯
পূর্বসূরিনাসরুল্লাহ খান
উত্তরসূরিইনায়েতউল্লাহ খান
জন্ম১ জুন ১৮৯২
পাঘমান, আফগানিস্তান আমিরাত
মৃত্যু২৫ এপ্রিল ১৯৬০(1960-04-25) (বয়স ৬৭)
জুরিখ, সুইজারল্যান্ড
সমাধি
দাম্পত্য সঙ্গীসুরাইয়া তারজি
বংশধরশাহজাদী আমিনা শাহ্

শাহজাদী আবেদা বিবি
শাহজাদী মেলিহা
যুবরাজ শাহজাদা রহমাতুল্লাহ
শাহজাদা সাইফুল্লাহ
শাহজাদা হিমায়াতুল্লাহ
শাহজাদী আদিলা
শাহজাদা এহসানুল্লাহ
শাহজাদী ইনদিয়া

শাহজাদী নাজিয়া
রাজবংশবারাকজাই
পিতাহাবিবউল্লাহ খান
মাতাসারওয়ার সুলতানা বেগম

প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

আমানউল্লাহ খান ১৮৯২ খ্রিষ্টাব্দের ১ জুন কাবুলের নিকটবর্তী পাঘমানে জন্মগ্রহণ করেছেন। তিনি আমির হাবিবউল্লাহ খানের তৃতীয় পুত্র। আমানউল্লাহ খান কাবুলের গভর্নর হন। সেনাবাহিনী ও কোষাগার তার নিয়ন্ত্রণে ছিল। অধিকাংশ উপজাতীয় নেতাদের সমর্থন তিনি পেয়েছিলেন।

রুশ বিপ্লবের পর রাশিয়া ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে স্বাধীনতা অর্জ‌নের জন্য আমানউল্লাহ খান এই সুযোগ কাজে লাগান। ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দের ৩ মে আফগানিস্তান ব্রিটিশ ভারতের উপর হামলা চালায়। এর ফলে তৃতীয় ইঙ্গ-আফগান যুদ্ধ শুরু হয়। প্রাথমিক সাফল্যের পর যুক্তরাজ্য প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী নিয়ে ব্যস্ত থাকায় যুদ্ধ দ্রুত স্থগিত হয়। ১৯১৯ এর শেষের দিকে যুদ্ধবিরতি হয়। এরপর আফগানিস্তান সম্পূর্ণ ব্রিটিশ প্রভাব মুক্ত হয়।

সংস্কার সম্পাদনা

আমানউল্লাহ খান প্রথমদিকে আফগানিস্তানে জনপ্রিয় ছিলেন। তিনি এই প্রভাব কাজে লাগিয়ে দেশকে আধুনিক করতে চেয়েছিলেন। দেশে ছেলে ও মেয়ে উভয়ের জন্য নতুন স্কুল খোলা হয় এবং শতাব্দীপ্রাচীন নারীদের পোশাকের নিয়ম শিথিল করা হয়। তিনি ইউরোপএশিয়া উভয়ের সাথে বাণিজ্য বৃদ্ধি করেছিলেন। তার শ্বশুর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ তারজির নির্দেশনায় তিনি আধুনিক সংবিধানের ব্যাপারে অগ্রসর হন। এতে নাগরিক অধিকার ও ব্যক্তি স্বাধীনতার কথা বলা হয়। তার স্ত্রী রাণী সুরাইয়া তারজি নারীদের ক্ষেত্রে তার নীতিতে ভূমিকা পালন করেছেন। তবে দ্রুত আধুনিকীকরণের ফলে সমাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে খোস্ত বিদ্রোহ দমন করা হয়। তিনি ভারত ও ইউরোপে অনেক বাহাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করেন। এসব স্থান থেকে আনা বইগুলো কাবুল গ্রন্থাগারে রক্ষিত রয়েছে। তার এসকল সংযোগ তার ক্ষমতা ত্যাগের সময় অভিযোগ হিসেবে কাজ করেছে।

এই সময় আফগানিস্তানের বৈদেশিক নীতি মূলত সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে গ্রেট গেম নামে পরিচিত প্রতিদ্বন্দ্বীতাকে কেন্দ্র করে চালিত হত। প্রত্যেক পক্ষ এই অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারের জন্য আফগানিস্তানকে অনুগ্রহ দেখাত। আমানউল্লাহ খান সোভিয়েত বিমান নিয়ে সীমিত আকারের আফগান বিমান বাহিনী গঠন করেছিলেন।

ইউরোপ সফর সম্পাদনা

 
আমানউল্লাহ খান ও তুরস্কের রাষ্ট্রপতি মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক‌, আঙ্কারা, ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দ।
 
বার্লিন সফরের সময় রাষ্ট্রপতি হিন্ডেনবার্গ‌ের সাথে আমানউল্লাহ খান, ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দ।

১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে আমানউল্লাহ খান ইউরোপ সফরে যান। তিনি ও তার স্ত্রী করাচি থেকে যাত্রা করেছিলেন। যাত্রাপথে তারা কায়রোতে মিশরের বাদশাহ প্রথম ফুয়াদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। ইউরোপে তারা ইটালি, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, জার্মানি, ব্রিটেন, পোল্যান্ড সফর করেছেন এবং এসব দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানসহ অনেকের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দের ২ মে তারা সীমানা অতিক্রম করে সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রবেশ করেন।[৩]

বিদ্রোহ ও ক্ষমতাত্যাগ সম্পাদনা

ইউরোপ সফরের সময় তার শাসনের বিরোধিতা বৃদ্ধি পায়। জালালাবাদ থেকে একটি বিদ্রোহী দল রাজধানীর দিকে অগ্রসর হলে সেনাবাহিনীর অধিকাংশ এসময় প্রতিরোধ করার বদলে দলত্যাগ করে। ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ জানুয়ারী আমানউল্লাহ খান তার ভাই ইনায়েতউল্লাহ খানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে ব্রিটিশ ভারতে পলায়ন করেন। এর তিনদিন পর হাবিবউল্লাহ কালাকানি তার কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেন।

কালাকানির নয় মাসের শাসন নাদির খানের হাতে সমাপ্ত হয়। আমানউল্লাহ খান আফগানিস্তানে ফিরতে চেয়েছিলেন, তবে জনগণের মধ্যে সমর্থন কম ছিল, তাছাড়া নাদির শাহ বিভিন্ন প্রচারণার মাধ্যমে তার দেশে ফেরা বাধাগ্রস্ত করেন, যেকারণে তিনি ফিরতে পারেননি। তিনি ব্রিটিশ ভারত থেকে ইউরোপ চলে যান। ইউরোপে তিনি প্রথমে ইটালি ও পরে সুইজারল্যান্ডে আশ্রয় নেন।

মৃত্যু সম্পাদনা

 
জালালাবাদে আমানউল্লাহ খানের সমাধি

আমানউল্লাহ খান ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে সুইজারল্যান্ডের জুরিখে মারা যান। তার লাশ আফগানিস্তানে ফিরিয়ে এনে জালালাবাদ শহরে দাফন করা হয়। ক্ষমতাচ্যুতির পর তার সংস্কার কাজের খুব অল্প চালু ছিল।

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Royal Ark
  2. Poullada, L. B.। "AMĀNALLĀH"Encyclopædia Iranica (Online সংস্করণ)। United States: Columbia University 
  3. (পোলীয়) Paraskiewicz, Kinga (২০১৪)। Historyczna wizyta Amanullaha Chana króla Afganistanu w Europie (1927-1928) (The Historic visit of Amanullah Khan, King of Afghanistan, in Europe /1927-78/)আইএসবিএন ৯৭৮-৮৩-৭৬৩৮-৫৩২-৭: Księgarnia Akademicka। , pages 29-71; source of information on the route and the particular dates of visits to various countries.

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

আমানউল্লাহ খান
জন্ম: ১ জুন ১৮৯২ মৃত্যু: ২৫ এপ্রিল ১৯৬০
রাজত্বকাল শিরোনাম
পূর্বসূরী
হাবিবউল্লাহ খান
আফগানিস্তানের আমির
১৯১৯–১৯২৬
উত্তরসূরী
নিজে
আফগানিস্তানের বাদশাহ
পূর্বসূরী
নিজে
আফগানিস্তানের বাদশাহ
আফগানিস্তানের বাদশাহ
১৯২৬–১৯২৯
উত্তরসূরী
ইনায়েতউল্লাহ খান