আব্বাস ইবনুল ওয়ালিদ

আব্বাস ইবনুল ওয়ালিদ ছিলেন একজন উমাইয়া আরব শাহজাদা ও সেনাপতি। তিনি খলিফা প্রথম আল-ওয়ালিদের পুত্র। তিনি আরব-বাইজেন্টাইন যুদ্ধের সময় একজন পরিচিত সামরিক নেতা। ৭৪০ এর দশকের মধ্যভাগে তিনি গৃহযুদ্ধের সাথে জড়িয়ে যান এবং বন্দী হন। ৭৫০ সালে বন্দী অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

আব্বাস ইবনুল ওয়ালিদ
মৃত্যু৭৫০
হারান
আনুগত্য উমাইয়া খিলাফত
কার্যকালআনুমানিক ৭০৭-৭২০ এর দশক
সম্পর্কপ্রথম আল-ওয়ালিদ (বাবা),
মাসলামা ইবনে আবদুল মালিক (চাচা)

জীবনী সম্পাদনা

আব্বাস ছিলেন খলিফা প্রথম আল-ওয়ালিদের পুত্র। তার শৈশব সম্পর্কে বেশি কিছু জানা যায় না। আরব ও বাইজেন্টাইন সূত্রে তার কর্মজীবনের বিস্তারিত বর্ণনার ক্ষেত্রে ভিন্ন রকম মত পাওয়া যায়।[১] ৭০৭ সালে তিয়ানার গুরুত্বপূর্ণ বাইজেন্টাইন দুর্গ অভিযানের সময় তিনি অংশ নিয়েছিলেন। এতে তিনি তার চাচা মাসলামা ইবনে আবদুল মালিকের পাশাপাশি আরব বাহিনীকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ৭০৭-৭০৮ এর শীতকালব্যপী শহরে দীর্ঘ অবরোধ করা হয়। বসন্তে বাইজেন্টাইনদের প্রেরিত অতিরিক্ত সেনাদল পরাজিত হওয়ার পর শহর আত্মসমর্পণ করে। যুদ্ধে আরবদেরকে পরাজয়ের মুখ থেকে ফিরে বিজয়ী হওয়ার ক্ষেত্রে আব্বাসের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে এমনটা আরব লেখকরা লিখেছেন।[১][২]

এই বছরগুলিতে বাইজেন্টাইন এশিয়া মাইনরে পরিচালিত বার্ষিক অভিযানগুলির প্রায় সবকয়টিতে আব্বাস অংশ নিয়েছেন। তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অভিযান ছিল ৭১২ সালে কিলিকিয়ার সেবাস্ট ও ৭১৩ সালে পিসিডিয়ার এন্টিওক অধিকার,[১][২] ৭২১ সালে পাফলাগোনিয়া অভিযান এবং ৭২২/৭২৩ সালের সিজা দুর্গ অধিকারের অভিযান। পাফলাগোনিয়া অভিযানে তিনি প্রায় ২০,০০০ জনকে বন্দী করেন বলা হয়ে থাকে।[৩] ইতিমধ্যে ৭২০ সালে তার চাচা মাসলামার সাথে তিনি ইরাকের গভর্নর ইয়াজিদ ইবনুল মুহাল্লাবের বিদ্রোহ দমনে অংশ নিয়েছেন।[১]

দ্বিতীয় আল-ওয়ালিদের শাসনামলের প্রথম দিকে আব্বাস খলিফার বিরোধিতা করতে অনিচ্চুক ছিলেন। তবে পরবর্তীতে দ্বিতীয় আল-ওয়ালিদের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানে অংশ নেন। এতে ওয়ালিদ অপসারিত হন এবং আব্বাসের ভাই তৃতীয় ইয়াজিদ খলিফা হন।[১] ইয়াজিদ ও তার উত্তরসূরি ইবরাহিম ইবনুল ওয়ালিদ উভয়েই দীর্ঘসময় সিংহাসনে ছিলেন না। দ্বিতীয় মারওয়ান খলিফা হওয়ার পর আব্বাসকে বন্দী করে হারানের কারাগারে আটক করা হয়। এখানে ৭৫০ সালে তিনি রোগাক্রান্ত হয়ে মারা যান।[১][২]

আনজার প্রতিষ্ঠা সম্পাদনা

 
আনজারে উমাইয়া প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ

বিকা উপত্যকায় আনজার শহর প্রতিষ্ঠার সাথে সাধারণত প্রথম আল-ওয়ালিদকে সম্পর্কিত করা হলেও থিওফানস দ্য কনফেসারসহ অন্যান্য সূত্র অনুযায়ী আব্বাস ৭১৪ সালের হেমন্তে শহরটি প্রতিষ্ঠা করেন। এশিয়া মাইনরের গ্রিক শ্রমিকদেরকে একাজে নিয়োজিত করা হয়। এছাড়াও নেস্টরিয়ান ও কপ্টিক কর্মী ও কারিগরদেরকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। ৭১৫ সালের শীতে কাজ বন্ধ হয়ে যায় এবং বসন্তে পুনরায় কাজ শুরু হয়। আনজারে একটি জামে মসজিদ ও একটি সরকারি আবাসস্থল (দার আল-ইমারা) নির্মিত হয়। প্রাচীন বালবিক শহরের সাথে নৈকট্যের কারণে এই শহর বিকা অঞ্চলের বিকল্প প্রশাসনিক কেন্দ্র হয়ে উঠে। কিন্তু ৭১৫ সালে প্রথম আল-ওয়ালিদ মারা যাওয়ার পর নতুন খলিফারা আব্বাসের প্রতি অণুকূল না হওয়ায় শহরে আব্বাসের পৃষ্ঠপোষকতা বজায় থাকেনি এবং শহরের ভবিষ্যত নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি।[৪]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

উৎস সম্পাদনা