আব্দুর রহমান (বুদ্ধিজীবী)

আব্দুর রহমান (১০ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৫ - ২ জুন ১৯৭১) ছিলেন রংপুরের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ কারমাইকেল কলেজের রসায়ন বিভাগের একজন প্রভাষক এবং একজন শহীদ বুদ্ধিজীবী[১] ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন ২ জুন তাকে হত্যা করা হয়।[২]

আব্দুর রহমান
বাংলাদেশ সরকার প্রণীত ১৯৯৮ সালের ডাকটিকিটে শহীদ বুদ্ধিজীবী আব্দুর রহমান
জন্ম
আব্দুর রহমান

১০ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৫
নাগেশ্বরী উপজেলা, কুড়িগ্রাম
মৃত্যু২ জুন ১৯৭১(1971-06-02) (বয়স ২৬)
রংপুর
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্বব্রিটিশ ভারত (১৯৪৫–১৯৪৭)
পাকিস্তান (১৯৪৭–১৯৭১)
পেশাশিক্ষকতা
কর্মজীবন১৯৬৭-১৯৭১
পরিচিতির কারণশিক্ষক এবং শহীদ বুদ্ধিজীবী

প্রাথমিক ও পারিবারিক জীবন সম্পাদনা

শহীদ বুদ্ধিজীবী আব্দুর রহমান ১৯৪৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার বাগডাঙ্গা নামক একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন একজন কৃষক এবং মা ছিলেন গৃহিণী। আব্দুর রহমান তার ছয় জন ভাইবোনের মধ্যে ছিলেন সবার বড়। কৃষক পরিবারের সন্তান হয়েও বাবার আপ্রাণ চেষ্টা এবং নিজের উদ্যমে তিনি উচ্চ শিক্ষিত হন।[১] এবং পড়াশোনা শেষ করে শিক্ষক হিসেবে পরবর্তীকালে যোগ দিয়েছিলেন রংপুর কারমাইকেল কলেজে।[১]

১৯৬৭ সালে আব্দুর রহমান নাগেশ্বরী উপজেলার অন্যতম ব্যক্তিত্ব সাইফুর রহমানের বড় কন্যা সাজেদা খাতুনের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। সাজেদা খাতুন ছিলেন স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। তাঁদের ঘরে দুই ছেলে ও এক মেয়ের জন্ম হয়।

শিক্ষা ও কর্মজীবন সম্পাদনা

আব্দুর রহমান তার নিজ গ্রামের বোডেরহাট প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি ১৯৬১ সালে নাগেশ্বরী দয়াময়ী পাইলট একাডেমী থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ম্যাট্রিক পাশের পর তিনি উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীতে ভর্তি হন রংপুরের কারমাইকেল কলেজে। ১৯৬৩ সালে কারমাইকেল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর ১৯৬৬ সালে আব্দুর রহমান রসায়নশাস্ত্রে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী নেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ১৯৬৭ সালে আব্দুর রহমান রংপুর কারমাইকেল কলেজে রসায়নশাস্ত্রের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন।[১]

হত্যা সম্পাদনা

শহীদ আব্দুর রহমান বরাবরই ছিলেন স্বাধীনতার পক্ষে।[২] মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য তিনি সবসময়ই তার ছাত্রদের উদ্বুদ্ধ করতেন।[২] পাকিস্তান বাহিনীর তীব্র অত্যাচারকালীন সময়ে তিনি তার স্ত্রী সন্তানদের নিজ গ্রামের বাড়ি অর্থাৎ বাগডাঙায় নিয়ে যান। বাড়িতে সকলের বারণ উপেক্ষা করে ২ জুন তিনি পুনরায় রংপুরের উদ্দেশ্যে রওনা করেন এবং পথিমধ্যেই রাজাকারবাহিনীর দৃষ্টিতে পড়েন।[১] রাজাকারবাহিনী তাকে আটক করে তুলে দেয় পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হাতে। পাক বাহিনী আব্দুর রহমানকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এরপর রংপুর শহরের অদূরে দমদমা বধ্যভুমিতে শহীদ বুদ্ধিজীবী আব্দুর রহমানকে সমাহিত করা হয়।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "শহীদ বুদ্ধিজীবী আবদুর রহমান"প্রথম আলো। ২৫ জুন ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুন ২০২১ 
  2. রশীদ হায়দার, সম্পাদক (১৯৯১)। স্মৃতি: ১৯৭১। পুনর্বিন্যাসকৃত দ্বিতীয় খণ্ড। বাংলা একাডেমী। আইএসবিএন 984-07-3351-6