আবেদ হোসেন খান
আবেদ হোসেন খান (১ এপ্রিল, ১৯২৯ - ২৯ এপ্রিল, ১৯৯৬) ছিলেন একজন বাংলাদেশী উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতশিল্পী, সেতার বাদক ও সুরকার। তার জন্ম হয় উপমহাদেশের অন্যতম এক সঙ্গীত পরিবারে। তিনি ১৯৭৩ সালে 'ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ সঙ্গীত নিকেতন' প্রতিষ্ঠা করেন। সঙ্গীতে অবদানের জন্য তিনি ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত একুশে পদক লাভ করেন।
আবেদ হোসেন খান | |
---|---|
জন্ম | |
মৃত্যু | ২৯ এপ্রিল ১৯৯৬ | (বয়স ৬৭)
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
পেশা | উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতশিল্পী, সেতার বাদক, সুরকার |
কর্মজীবন | ১৯৫০-১৯৯৬ |
উল্লেখযোগ্য কর্ম | সুর-লহরী (৩ খন্ড) |
সন্তান | শাহাদাত হোসেন খান (পুত্র) |
পিতা-মাতা | ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ (পিতা) উমর-উন-নেসা খানম (মাতা) |
আত্মীয় | আলাউদ্দিন খাঁ (চাচা) বাহাদুর হোসেন খান (ভাই) মোবারক হোসেন খান (ভাই) আফসানা খান (নাতনী) রুখসানা খান (নাতনী) |
পুরস্কার | একুশে পদক (১৯৮৫) শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার |
প্রাথমিক জীবন
সম্পাদনাআবেদ হোসেন ১৯২৯ সালের ১ এপ্রিল তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমান বাংলাদেশ) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামের এক সঙ্গীত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ একজন বরেণ্য উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতশিল্পী এবং মাতা উমার উন-নেসা খানম।[১] তার চাচা ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ উপমহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ। ছয় ভাইবোনের মধ্যে মোবারক সর্বকনিষ্ঠ। তার বড় তিন বোন আম্বিয়া, কোহিনূর, ও রাজিয়া এবং ছোট দুই ভাই প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ বাহাদুর হোসেন খান এবং সঙ্গীত গবেষক ও লেখক মোবারক হোসেন খান।[২]
পারিবারিক ঐতিহ্য অনুযায়ী ছেলেবেলা থেকে সঙ্গীত সাধনা করেছেন। দেশ বিভাগের পূর্ব থেকে তাঁর পিতার গান শিখানোর উদ্দেশ্যে কুমিল্লা জেলায় যাতায়াত ছিল এবং ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তাঁরা সপরিবারে সেখানে চলে যান।[২] আবেদ সেখানে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে স্নাতক পাস করেন।[১]
কর্মজীবন
সম্পাদনাআবেদ হোসেন ১৯৫০ সালে বাংলাদেশ বেতারের নিজস্ব শিল্পী হিসেবে যোগ দেন। বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনে তাঁর সুরকৃত গান প্রচারিত হত। তিনি চলচ্চিত্রের সঙ্গীতও পরিচালনা করেন। তিনি কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন কাদির রচিত উপন্যাস নদী ও নারী অবলম্বনে নির্মিত নদী ও নারী চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা করেন। তিনি ৩৬ বছর বাংলাদেশ বেতারে সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন এবং ১৯৮৬ সালে মুখ্য সঙ্গীত প্রযোজক পদে থাকাকালীন অবসর গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে চুক্তিভিত্তিতে আরো প্রায় ১০ বছর এই দায়িত্ব পালন করেন।[১]
বাংলাদেশ বেতারে ফজল-এ-খোদা রচিত ও আবেদ হোসেন খান সুরারোপিত দেশাত্ববোধক গান"যে দেশেতে শাপলা শালুক ঝিলের জলে ভাসে" অসম্ভব জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
আবেদ হোসেনের ৩ খণ্ডে রচিত সুর-লহরী গ্রন্থটি সঙ্গীত বিষয়ের পাঠ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত। তিনি ঢাকা সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম। ১৯৭৩ সালে তিনি উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে 'ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ সঙ্গীত নিকেতন' নামক সঙ্গীত একাডেমী প্রতিষ্ঠা করেন এবং মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।[১]
ব্যক্তিগত জীবন
সম্পাদনাআবেদ হোসেনের পুত্র শাহাদাত হোসেন খানও একজন গুনী সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব।[৩] তার দুই জমজ নাতনী আফসানা খান সেতার বাদক ও রুখসানা খান সরোদ বাদক।[৪]
মৃত্যু
সম্পাদনাআবেদ হোসেন ১৯৯৬ সালের ২৯ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন।[৫]
সম্মাননা
সম্পাদনা- উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত একুশে পদক, ১৯৮৫।
- বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার।
- বুলবুল ললিতকলা একাডেমি পুরস্কার।
- ইউনেস্কো ও সরকারী সঙ্গীত মহাবিদ্যালয় থেকে যুগ্মভাবে মরণোত্তর 'জাতীয় সঙ্গীত সম্মেলন সম্মাননা' ২০০২।
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ ঘ মোবারক হোসেন খান (৬ সেপ্টেম্বর ২০১৩)। "খান, ওস্তাদ আবেদ হোসেন"। বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মে ২০১৭।
- ↑ ক খ সারওয়ার, সাবিত (৭ জানুয়ারি ২০১৪)। "মোবারক হোসেন খান: তিতাস তীরের সঙ্গীতবিশারদ"। যায়যায়দিন। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মে ২০১৭।
- ↑ "সরোদের সুরে অন্যরকম কবিতাসন্ধ্যা"। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ১৫ মে ২০১৫। ৯ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মে ২০১৭।
- ↑ "আঙুলের ডগায় সুরমূর্ছনা"। দৈনিক যুগান্তর। ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মে ২০১৭।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "ওস্তাদ আবেদ হোসেন খান স্মরণে যন্ত্রসংগীত সন্ধ্যা"। দৈনিক কালের কণ্ঠ। ২০ মে ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মে ২০১৭।