আবু সালমান শাহজাহানপুরী
আবু সালমান শাহজাহানপুরী (৩০ জানুয়ারি ১৯৪০ — ২ ফেব্রুয়ারি ২০২১) একজন পাকিস্তানি ইসলামি পণ্ডিত, গবেষক এবং ইতিহাসবিদ ছিলেন। তিনি ভারতীয় উপমহাদেশের ঐতিহাসিক এবং রাজনৈতিক আন্দোলনের একজন কর্তৃপক্ষ হিসেবে বিবেচিত হন। তিনি ১৫০ টিরও বেশি বই রচনা করেছেন।
ডক্টর, অধ্যাপক আবু সালমান শাহজাহানপুরী | |
---|---|
জন্ম | তাসাদ্দুক হুসাইন খান ৩০ জানুয়ারি ১৯৪০ |
মৃত্যু | ২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | (বয়স ৮১)
উচ্চশিক্ষায়তনিক পটভূমি | |
মাতৃ-শিক্ষায়তন | |
অভিসন্দর্ভ | তাজকিরাহ খানওয়াদায়ে ওয়ালিউল্লাহ |
ডক্টরাল উপদেষ্টা | শাখী আহমেদ হাশেমী |
জীবন ও পেশা
সম্পাদনাআবু সালমান শাহজাহানপুরী ১৯৪০ সালের ৩০ জানুয়ারি যুক্তপ্রদেশের শাহজাহানপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার নাম রাখা হয় তাসাদ্দুক হুসাইন খান।[১][২] তাকে শাহজাহানপুরের মাদ্রাসা সাদিয়া এবং মুরাদাবাদের জামিয়া কাসেমিয়া মাদ্রাসা শাহীতে ভর্তি করানো হয়েছিল। ১৯৫০ সালে দশ বছর বয়সে তিনি পাকিস্তানে পাড়ি জমান।[৩] তারপর তিনি করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর এবং সিন্ধু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি গবেষণা সমাপ্ত করেন। তার পিএইচডি গবেষণার বিষয় ছিল সৈয়দ আহমদ খানের খানওয়াদায়ে ওয়ালিউল্লাহি’র সংকলন এবং অধ্যয়ন।[৪]
তিনি সরকারি জাতীয় কলেজ, করাচির একজন অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং ২০০২ সালে অবসর গ্রহণ করেন।[১] তিনি ভারতীয় উপমহাদেশের ঐতিহাসিক এবং রাজনৈতিক আন্দোলনের একজন কর্তৃপক্ষ হিসেবে বিবেচিত হন।[৫] তিনি করাচির আবুল কালাম আজাদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাথে যুক্ত ছিলেন এবং ২০১৪ সালে ইরান সোসাইটি এবং কলকাতায় মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইনস্টিটিউট অফ এশিয়ান স্টাডিজ আয়োজিত আবুল কালাম আজাদ সম্পর্কে একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে তার গবেষণাপত্র উপস্থাপনের জন্য তিনি ভারত সফর করেছিলেন।[৬] তার প্রবন্ধ শিবলী একাডেমির মাআরিফ, নদওয়াতুল মুসান্নিফীন, মদিনার বুরহান এবং চাত্তানে প্রকাশিত হয়।[২]
১৯৮৬ সালে কাসবা আলিগড় গণহত্যার সময় শাহজাহানপুরীর বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছিল। ২০১৯ সালের এক্সপ্রেস নিউজের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, এই ঘটনায় তার বিরল পাণ্ডুলিপি সহ শতাধিক রচনা পুড়ে যায়।[২]
আবুল কালামবাদ
সম্পাদনাআগা শোরিশ কাশ্মিরী ও গোলাম রাসুল মেহেরের পর শাহজাহানপুরী পাকিস্তানের একজন প্রধান “আবুল কালামবাদী” হিসেবে গণ্য হন।[৭] ১৯৫৭ সাল থেকে তার লেখালেখির শুরু এবং তার প্রথম নিবন্ধটি প্রকাশিত হয় আবুল কালাম আজাদের মৃত্যুর পর।[৮] তিনি আজাদের বিভিন্ন প্রবন্ধ সম্পাদনা করে তা প্রকাশের সুযোগ পেয়েছিলেন।[৭] তিনি আজাদের ‘ইন্ডিয়া উইনস ফ্রিডম ’ গ্রন্থের উর্দু অনুবাদের টীকা লিখেছিলেন।[৭] আজাদের উপর তার কাজ সমূহের মধ্যে রয়েছে: মাওলানা আবুল কালাম আজাদ: এক সিয়াসি মুতলা, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ: রাঁচি মে নজরবন্দি আওর উসকা ফয়জান, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ আওর খাজা হাসান নিজামি, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ কে চাঁদ বুজুর্গ এবং আবুল কালাম আজাদ আওর উনকে মাআসিরিন।[৯]
প্রকাশনা
সম্পাদনাতিনি ১৫০ টিরও বেশি বই রচনা করেছিলেন।[১] তার ৫০ টি বই কেবল আবুল কালাম আজাদ সম্পর্কে।[৮] তার প্রধান গবেষণা কর্ম হল হুসাইন আহমদ মাদানির রাজনৈতিক ডায়েরি যা হুসাইন আহমদ মাদানি কি ছিয়াসি ডায়েরি: আকবার ওয়া আফকার কি রোশনী মে নামে ৭ হাজারেরও বেশি পৃষ্ঠায় ৮ খণ্ডে প্রকাশিত হয়।[৪] তার অন্যান্য রচনাবলির মধ্যে রয়েছে:[১০]
- ইমামুল হিন্দ, তামিরে আফকার
- দেওয়ানে আহ
- তারিখে পাকিস্তান: আফকার ওয়া মাসায়েল
- মাওলানা মুহাম্মদ আলী জওহর আওর উনকি সাহাফাত
- আশফাকুল্লাহ খান শহীদ: জীবন ও কর্ম
- মাওলানা ওবায়দুল্লাহ সিন্ধি কি ইনকিলাবি মানসুব
- মাওলানা মুহাম্মদ আলী: সাওয়ানিহ ওয়া খিদমাত
মৃত্যু এবং উত্তরাধিকার
সম্পাদনা২০২১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তিনি করাচীতে মৃত্যুবরণ করেন।[৩] জমিয়ত উলামায়ে হিন্দের সভাপতি উসমান মনসুরপুরী ও সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ মাদানি তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছিলেন।
আখতারুল ওয়াইসী ও খালিক আনজুম “মাওলানা আবুল কালাম আজাদের গবেষক ডক্টর আবু সালমান শাহজাহানপুরী: জীবন ও একাডেমিক কর্ম” নামে তার একটি জীবনীগ্রন্থ রচনা করেছেন।[১১] মইনুদ্দীন আকিলের মতে, “শাহজাহানপুরী হলেন সেই আলেম যিনি ভারতীয় উপমহাদেশের জাতীয়তাবাদী ও ঐতিহাসিক আন্দোলনের উত্থান ও পতনের প্রখর পর্যবেক্ষক"।[৫]
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ শামসী, এনায়েত (২ ফেব্রুয়ারি ২০২১)। "দেড় শতাধিক বইয়ের লেখক আবু সালমান শাহজাহানপুরী মারা গেছেন"। এলার্ট নিউজ (উর্দু ভাষায়)। ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ ফেব্রুয়ারি ২০২১।
- ↑ ক খ গ মুবিন, রিজওয়ান তাহির (৫ মার্চ ২০১৯)। "গবেষণা থেকে কার্যত দূরে আছি, সম্পাদক হিসেবেও নাম আসা শোভনীয় নয় - ডক্টর আবু সালমান"। এক্সপ্রেস নিউজ (উর্দু ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২ ফেব্রুয়ারি ২০২১।
- ↑ ক খ "বিশিষ্ট উর্দু পণ্ডিত ও প্রাবন্ধিক আবু সালমান শাহজাহানপুরী ইন্তেকাল করেছেন"। এআরওয়াই নিউজ। ২ ফেব্রুয়ারি ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ২ ফেব্রুয়ারি ২০২১।
- ↑ ক খ আব্দুল্লাহ শামিম কাসেমি (২ ফেব্রুয়ারি ২০২১)। "আরও একটি রত্ন হারিয়ে গেল, আবু সালমান শাহজাহানপুরী আর নেই"। বাছিরাত অনলাইন (উর্দু ভাষায়)। ২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১।
- ↑ ক খ খান, উজাইরা (১৮ অক্টোবর ২০১০)। "ইতিহাস অন্য দৃষ্টিকোণে"। ডন পাকিস্তান। সংগ্রহের তারিখ ২ ফেব্রুয়ারি ২০২১।
- ↑ "মাওলানা আজাদের ১২৫ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আন্তর্জাতিক সেমিনার"। বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড। ২ সেপ্টেম্বর ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২ ফেব্রুয়ারি ২০২১।
- ↑ ক খ গ খালিদ হুমায়ুন (১৯ ডিসেম্বর ২০১২)। "আবু সালমান শাহজাহানপুরীর আবুল কালামবাদ"। দৈনিক পাকিস্তান (উর্দু ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২ ফেব্রুয়ারি ২০২১।
- ↑ ক খ "বিশিষ্ট গবেষক ও লেখক ড. আবু সালমান শাহজাহানপুরী ইন্তেকাল করেছেন"। দৈনিক জং (উর্দু ভাষায়)। ২ ফেব্রুয়ারি ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ২ ফেব্রুয়ারি ২০২১।
- ↑ জাভেদ আহমদ খুরশিদ (জানুয়ারি–জুন ২০১৯), "কিতাবিয়াত, তাসানিফ, মাকালাত ওয়া দিগার আজ আবু সালমান শাহজাহানপুরী", তেহসেল (৪): ২০০–২০৬
- ↑ "আবু সালমান শাহজাহানপুরীর ওয়ার্ল্ডক্যাট প্রোফাইল"। ওয়ার্ল্ডক্যাট ডট ওআরজি। ওয়ার্ল্ডক্যাট। সংগ্রহের তারিখ ২ ফেব্রুয়ারি ২০২১।
- ↑ "মাওলানা আবুল কালাম আজাদের গবেষক ডক্টর আবু সালমান শাহজাহানপুরী: জীবন ও একাডেমিক কর্ম"। ওয়ার্ল্ডক্যাট। সংগ্রহের তারিখ ২ ফেব্রুয়ারি ২০২১।
গ্রন্থপঞ্জি
সম্পাদনা- হুমায়ুন, খালিদ (১৯ ডিসেম্বর ২০১২)। "ডক্টর আবু সালমান শাহজাহানপুরী কি আবুল কালামিয়ান"। দৈনিক পাকিস্তান (উর্দু ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২ ফেব্রুয়ারি ২০২১।
- খুরশিদ, জাভেদ আহমদ (জানুয়ারি–জুন ২০১৯)। "গ্রন্থপঞ্জি: ডক্টর আবু সালমান শাহজাহানপুরীর রচনা, প্রবন্ধ এবং অন্যান্য"। ইদারা মাআরিফে ইসলামি: ১৯৯—২১৪। সংগ্রহের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১।
- আহমেদ, বিলাল (২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১)। "ড. আবু সালমান শাহজাহানপুরী তার একাডেমিক কাজের জন্য স্মরণীয়"। দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল। সংগ্রহের তারিখ ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১।