আবু রাফি (আরবি اَبو رافِع) রাসুল এর একজন বিখ্যাত সাহাবা ছিলেন । তিনি প্রথম যুগে হযরত আব্বাসের একজন দাস ছিলেন যিনি পরবর্তীতে রাফি বংশের প্রধান হন। হযরত আলীর রাজত্বকালে তিনি কুফার অর্থ সম্পাদক হোন। হাদীসের গ্রন্থসমূহে তার বর্ণিত ৬৮টি হাদীস পাওয়া যায়।

আবু রাফি
মুহাম্মাদের সাহাবা
জন্মআনু. ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দ
মক্কা, সৌদি আরব
মৃত্যুআনু. ৬৬০ খ্রিষ্টাব্দ
যার দ্বারা প্রভাবিতমুহাম্মাদ, আব্বাস, আলী
ব্যক্তিগত তথ্য
উল্লেখযোগ্য কাজমক্কা বিজয় অভিযান, খাইবারের যুদ্ধ, হুদাইবিয়ার সন্ধি
যে জন্য পরিচিতহাবশি দাস, মুহাম্মাদের খাদেম

নাম ও পরিচয় সম্পাদনা

হযরত আবু রাফির প্রকৃত নামের ব্যাপারে মতভেদ থাকলেও আসলাম নামটিই সর্বাধিক প্রসিদ্ধ।[১] আবু রাফে তার কুনিয়াত বা ডাকনাম। রাফি প্রথম যুগে একজন হাবশী দাস ছিলেন পরবর্তীতে রাসুল তাকে নিজ পরিবারের অন্তর্ভুক্ত করে নেন । আবু রাফে আব্বাসের দাস ছিলেন। তিনি রাফিকে রাসুলের খেদমতে পেশ করেন।

ইসলাম গ্রহণ ও হিজরত সম্পাদনা

কুরাইশরা একবার আবু রাফিকে ‍তাদের কোন একটি কাজে রাসুল (সা:) এর নিকট পাঠায়। রাসুল সা: কে দেখা মাত্র আবু রাফির অন্তর ইসলামের প্রতি ঝুঁকে পড়ে। আবু রাফি আরজ করলেন, ইয়া রাসুল(সা:) আমি আর ফিরে যাব না। তিনি বললেন: আমি দূতকে ঠেকিয়ে রাখিনা এবং প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করি না। এখন তুমি ফিরে যাও। এভাবে যদি কিছু দিন তোমার অন্তরে ইসলামের প্রতি আবেগ বিদ্যমান থাকে তাহলে চলে এসো। তখনকার মত তো তিনি ফিরে গেলে এবং কিছুদিন পর আবার ফিরে এসে ইসলাম গ্রহণ করেন। হযরত আবু রাফে অত্যাচারী কুরাইশ শক্তির ভয়ে বদর যুদ্ধ পর্যন্ত ইসলাম গ্রহণের কথা গোপন রাখেন। তাবরানী ইবন আব্বাস থেকে বর্ণনা মতে, হযরত আবু রাফে হিজরাতের ৫ম বছরে আহযাব যুদ্ধের সময় তাবরানী ইবন আব্বাস ও তার ভাই ফদল ইবন আব্বাসের মদিনায় হিজরত করেন । আবু রাফে তাদের গোলাম ছিলেন । [২] মদীনায় তিনি হযরত রাসূলে কারীমের সা: সাথে বসবাস করতে থাকেন।

মক্কা সফর সম্পাদনা

হিজরী সপ্তম সনে রাসুল (সা:) হুদাইবিয়ার সন্ধির চুক্তি অনুযায়ী মক্কায় গিয়ে "উমরাতুল কাদা" আদায় করেন। আবু রাফে এই সফরেও রাসুল(সা:) সঙ্গী ছিলেন। এই সফরে মক্কায় অবস্থানকালে রাসুল (সা:) এর সাথে হযরত মায়মুনার শাদী মুবারক অনুষ্ঠিত হয়। মক্কায় অবস্থানের মেয়াদ শেষ হলে হযরত রাসূলে কারীম(সা:) আবু রাফেকে মক্কায় রেখে ‘সারফে’ চলে যান। পরে আবু রাফে হযরত মায়মুনাকে নিয়ে ‘সারফে’ পৌঁছেন এবং সেখানেই বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়। তারপর সকলে মদীনায় প্রত্যাবর্তন করেন।[৩]

যুদ্ধে অংশগ্রহণ সম্পাদনা

হযরত আবু রাফে আলী নেতৃত্বে খাইবারের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে । (হায়াতুস সাহাবা-১/৫৪৬)[৪] হযরত রাসূলে রাসূলে কারীম(সা:) একটি বাহিনীকে হযরত আলী রা: নেতৃত্বে ইয়ামনে পাঠান তাতে আবু রাফে সঙ্গি ছিলেন। হযরত আলী(রা:) এর অনুপস্থিতিতে আবু রাফে সেই বাহিনীর নেতৃত্ব দান করেন।

রাসুলের খেদমতে রাফি সম্পাদনা

দাসত্ব থেকে মুক্তির পরও তিনি হযরত রাসূলে কারীমের সা: খিদমতের গৌরব হাতছাড়া করেননি। বিশিষ্ট সাহাবীরা বিভিন্ন সময় তার নিকট ভিড় করতেন রাসুল প্রাত্যহিক ক্রিয়া-কলাপ জানার জন্য । হযরত ইবন আব্বাস রা: একজন সেক্রেটারী সংগে করে তার কাছে আসতেন এবং জিজ্ঞেস করতেন, রাসুল (সা:) অমুক অমুক দিন কি কি কাজ করতেন ? আবু রাফে বলতেন আর সেক্রেটারী তা লিখে নিতেন। (আল ইসাবা-৪/৯২)[৫] রাসূল সা: যখন তাকে মুক্তি দেন, তখন আবু রাফের দু চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে থাকে। লোকেরা তাকে বলে, দাসত্ব থেকে মুক্তি পাচ্ছ, এতে কান্নার কি আছে! তিনি বললেন, আজ একটি সওয়াব আমার হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। এরপর থেকে যদিও তিনি আইনগত মুক্ত বা স্বাধীন হয়ে যান কিন্তু রাসুল ছেড়ে যাননি । আমরণ তিনি রাসুল সা: গোলাম বা দাস বলে নিজের পরিচয় দিতেন। ইসলাম দাস তথা দূর্বল শ্রেণীর লোকদের উন্নতির যে সুযোগ দান করেছে ।

দারিদ্রতা সম্পাদনা

আবু সুলাইম বর্ণনা করেছেন, একসময় হযরত আবু রাফে জীবনের এক পর্যায়ে দারুণ অভাব ও অর্থ কষ্টে পড়েন। এমনকি মানুষের কাছে হাত পেতে সদকাহ ও সাহায্য গ্রহণ করেছেন। তবে কখনো প্রয়োজনের অতিরিক্ত গ্রহণ করেননি। তার জীবনের এ পর্যায় সম্পর্কে রাসুল (সা:) ভবিষ্যদ্বাণী ছিল। আবু রাফে বলছেন একদিন রাসূল সা: তাকে জিজ্ঞেস করলেন: ‘ওহে আবু রাফে’, যখন তুমি দরিদ্র হয়ে যাবে তখন কেমন হবে? আবু রাফে বললেন, আমি কি সে অবস্থায় সাদকা গ্রহণ করবো? রাসূল সা: বললেন: হ্যা । তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আমার ‍দারিদ্র কখন আসবে? বললেন, আমার মৃত্যুর পরে। বর্ণনাকারী আবু সুলাইম বলেন, আমি তাকে দরিদ্র অবস্থায় দেখেছি এমনকি পথের ধারে বসে মানুষের কাছে সাদকা চাইতেও দেখেছি । বর্ণনাকারী আরো বর্ণনা করেন, আমি শেষ পর্যন্ত রাফিকে ধনী হিসেবে দেখেছি । [৬]

কুফার অর্থ সম্পাদক সম্পাদনা

তিনি ৮৫ বছর বয়সে নিজের বাড়ি বিক্রি করে হযরত আলী এর সাথে কুফায় চলে আসেন এবং আলী তাকে কুফার কোষাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োজিত করেন ।

মৃত্যু সম্পাদনা

ওয়াকেদীর মতে,হযরত আলীর খিলাফতের সময়ে ৯০ বছর বয়সে মদীনায় ইনতিকাল করেন। [১]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. আল ইসাবা- (৪/৬৭) 
  2. হায়াতুস সাহাবা- (১/৩৭৩) 
  3. সীরাতু ইবন হিশাম- (২/৩৭২) 
  4. হায়াতুস সাহাবা- (১/৫৪৬) 
  5. আল ইসাবা- (৪/৯২) 
  6. হায়াতুস সাহাবা- (২২৫৩-৫৪)