আবু ইউসুফ (জন্ম: ১৯৩৭ - মৃত্যু: ৩ জুলাই, ১৯৯৯) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে।[]

আবু ইউসুফ
জন্ম১৯৩৭
মৃত্যু৩ জুলাই, ১৯৯৯
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর বিক্রম

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

সম্পাদনা

আবু ইউসুফের জন্ম নেত্রকোণা জেলার পূর্বধলা উপজেলার কাজলা গ্রামে। তার বাবার নাম মহিউদ্দিন তালুকদার এবং মায়ের নাম আশরাফুননেছা। তার স্ত্রীর নাম ফাতেমা ইউসুফ। তার এক ছেলে। আবু ইউসুফ আবু তাহের বীর উত্তমের ভাই। তারা চার ভাই খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। []

কর্মজীবন

সম্পাদনা

পাকিস্তান বিমানবাহিনীর প্রকৌশল শাখায় চাকরি করতেন আবু ইউসুফ। ১৯৭১ সালে প্রেষণে সৌদি আরবে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সেখান থেকে পালিয়ে লন্ডনে যান। আগস্ট মাসে ভারতে এসে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। প্রথমে যুদ্ধ করেন ছয় নম্বর সেক্টরে এবং পরে ১১ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেন তিনি। জামালপুরের কামালপুর (১৪-১৫ ও ২৭-২৮ নভেম্বর), বকশিগঞ্জ ও জামালপুর যুদ্ধসহ আরও কয়েক স্থানে প্রত্যক্ষ যুদ্ধ করেন। কামালপুর মুক্ত করার পর মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী জামালপুরের দিকে মার্চ করে। আবু ইউসুফ মিত্রবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার ক্লেয়ার ও কর্নেল ব্রারের সঙ্গে হেলিকপ্টারে করে মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর অবস্থানে এসে জামালপুর যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর পক্ষে নেতৃত্ব দেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

সম্পাদনা

১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর গাজীপুর জেলার অন্তর্গত কালিয়াকৈর-টাঙ্গাইল জেলার মৌচাকে দিক দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী যৌথভাবে কামালপুর, জামালপুর মুক্ত করার পর ঢাকার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। মুক্তিবাহিনীর একটি দলের নেতৃত্বে ছিলেন আবু ইউসুফ। এই সময় ওই অঞ্চলে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনারা ঢাকার দিকে পশ্চাদপসরণ শুরু করে। ময়মনসিংহে ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর শক্ত প্রতিরক্ষা অবস্থান। দায়িত্বে ছিল ব্রিগেডিয়ার আবদুল কাদের খান। সামরিক কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ময়মনসিংহে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনারা ঢাকার দিকে রওনা হয়। টাঙ্গাইলে এসে তারা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়। তিন দিন পর ব্রিগেডিয়ার আবদুল কাদের তার বাহিনী নিয়ে উপস্থিত হয় গাজীপুরের কলিয়াকৈরে। এদিকে তাদের আগেই বিভিন্ন পথ দিয়ে ওই এলাকায় পৌঁছে যায় মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী। ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর একটি দল মৌচাকের ঠেঙ্গার বান্দ্রের কাছে অবস্থান নেয়। মুক্তিবাহিনীর একটি দলের নেতৃত্বে ছিলেন আবু ইউসুফ। রাতে তারা সেখানে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। সেই রাতেই আবদুল কাদের খান তার বাহিনীর একাংশ নিয়ে সেখানে পৌঁছে। সকালে তারা আবু ইউসুফের দলের কাছে বন্দী হয়। সহযোদ্ধাদের সঙ্গে আবু ইউসুফ প্রতিরক্ষা অবস্থানে ছিলেন। সকাল হলেই তারা রওনা হবেন ঢাকার অদূরে। ভোর হওয়ার আগেই বেশির ভাগ উঠে পড়লেন। শীতের দিন হওয়ায় চারদিকে কুয়াশা। বেশি দূর দেখা যায় না। এমন সময় তাদের প্রতিরক্ষা অবস্থানের পাশের জঙ্গলে শোনা গেল শব্দ। আবু ইউসুফের মনে হলো জঙ্গলের ভেতর কেউ আছে। সহযোদ্ধাদের নির্দেশ দিলেন, দ্রুত গোটা এলাকা ঘেরাও করার। তারপর কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকলেন জঙ্গলের দিকে। নিঃশব্দে জঙ্গলে ঢুকেই তার চক্ষু চড়কগাছ। দেখতে পেলেন ভেতরে অনেক পাকিস্তানি সেনা। কেউ শুয়ে, কেউ বসে। মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতি কেউ টের পেল না। আবু ইউসুফ দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলেন, এদের আত্মসমর্পণ করাতে হবে। তাদের বুঝতে না দিয়ে প্রথমে নিজেদের নিরাপদ অবস্থান সংহত করলেন। তারপর অস্ত্র উঁচিয়ে চেঁচিয়ে বললেন, ‘হ্যান্ডস আপ।’ হকচকিত পাকিস্তানি সেনারা সবাই হাত তুলে দাঁড়িয়ে গেল। তিনি নির্দেশ দিলেন আত্মসমর্পণের। পাকিস্তানিরা আত্মসমর্পণ করতে থাকল। একজনকে দেখে আবু ইউসুফ চমকিত হলেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার আবদুল কাদের খান তার হাতের মুঠোয়। নীরবে তাদের কাছে আত্মসমর্পণ করল। []

পুরস্কার ও সম্মাননা

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ২৮-১২-২০১১[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৪৭৭। আইএসবিএন 9789843351449 
  3. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ৩১৭। আইএসবিএন 9789843338884 

বহি:সংযোগ

সম্পাদনা