আবুল হাশেম খান (বীর প্রতীক)

বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধা

আবুল হাশেম খান (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ১৯৮৬) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। [১]

আবুল হাশেম খান
মৃত্যু১৯৮৬
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক

জন্ম ও শিক্ষাজীবন সম্পাদনা

আবুল হাশেম খানের পৈতৃক বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার সৈয়দাবাদ গ্রামে। তবে তার বাবা স্থায়ীভাবে বাস করতেন আখাউড়া উপজেলার আখাউড়া ইউনিয়নের (বর্তমানে পৌরসভা) দেবগ্রাম গ্রামে। তার বাবার নাম বাদশা মিয়া এবং মায়ের নাম আমেনা খাতুন। তার স্ত্রীর নাম রাজিয়া বেগম। তাদের এক মেয়ে ও এক ছেলে।

কর্মজীবন সম্পাদনা

আবুল হাশেম খানের চাকরি করতেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেওয়ার পর ২ নম্বর সেক্টরের অধীনে যুদ্ধ করেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা সম্পাদনা

রাতে মাঠ প্রান্তর কুয়াশাচ্ছন্ন এবং অন্ধকার। এ বাধা উপেক্ষা করে মুক্তিযোদ্ধারা এগিয়ে যান। তারা কয়েকটি দলে বিভক্ত। মধ্যরাতে তারা সমবেত হন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সালদা নদী প্রতিরক্ষার তিন দিকে। আবুল হাশেম খান একটি দলের (কোম্পানি) উপদলের (প্লাটুন) নেতৃত্বে। একটু পর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থানে শুরু হয় গোলাবর্ষণ। গোলা আসে পেছন থেকে। মুক্তিযোদ্ধাদের গোলন্দাজ দল (মুজিব ব্যাটারি) কামানের গোলাবর্ষণ করে। ভারতীয় গোলন্দাজ দলও সীমান্ত এলাকা থেকে দূরপাল্লার গোলাবর্ষণ করে। শত শত গোলা এসে পড়ে পাকিস্তানি প্রতিরক্ষায়। গোলাবর্ষণের প্রচণ্ডতা ও তীব্রতা এমন যে অনেক দূরে থাকা আবুল হাশেমদের সবার পায়ের নিচের মাটি কেঁপে ওঠে। বিকট শব্দে কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার উপক্রম হয়। এত বড় প্রথাগত (কনভেনশনাল) আক্রমণ এর আগে সালদা নদীতে হয়নি। ব্যাপক গোলাবর্ষণে পাকিস্তানিদের প্রতিরক্ষা প্রায় তছনছ ও বেশির ভাগ বাংকার ধ্বংস হয়ে যায়। ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনারা। গোলাবর্ষণ শেষ হলে আবুল হাশেম সহযোদ্ধাদের নিয়ে আবার এগিয়ে যান। তাদের লক্ষ্য সালদা নদী এলাকার নয়নপুর দখল করা। দ্রুত তারা পৌঁছে যান লক্ষ্যস্থলের আনুমানিক ৪০০ গজ দূরে। ঝাঁপিয়ে পড়েন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ওপর। নিমেষে শুরু হয়ে যায় মেশিনগান, এলএমজি আর রাইফেলের অবিরাম গোলাগুলি। আবুল হাশেম ও তার সহযোদ্ধারা বিপুল বিক্রমে যুদ্ধ করেন। হতোদ্যম পাকিস্তানি সেনারা সকালে নয়নপুর থেকে পালিয়ে আশ্রয় নেয় সালদা রেলস্টেশনে। কিন্তু একটু পর তাদের ওপর শুরু হয় পাল্টা আক্রমণ। পুনঃ সংগঠিত পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ ছিল বেশ জোরালো। আবুল হাশেম সহযোদ্ধাদের নিয়ে সাহসিকতার সঙ্গে আক্রমণ প্রতিহত করেন। তার দলের অন্যান্য উপদলও আক্রমণ প্রতিহত করে। দুই পক্ষে তুমুল যুদ্ধ চলে। যুদ্ধ চলাবস্থায় একপর্যায়ে হঠাৎ গুলিবিদ্ধ হন আবুল হাশেম। তার পিঠে গুলি লাগে। এতে তিনি দমে যাননি। আহত অবস্থাতেই বিক্রমের সঙ্গে যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। কিন্তু বেশিক্ষণ পারেননি। অধিক রক্তক্ষরণে তিনি কিছুক্ষণের মধ্যেই নিস্তেজ হয়ে পড়েন। তখন সহযোদ্ধারা আবুল হাশেমকে ফিল্ড চিকিৎসাকেন্দ্রে পাঠান। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাকে পাঠানো হয় আগরতলায়। কিন্তু ক্রমে তার অবস্থার অবনতি হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি হাসপাতালে তাকে স্থানান্তর করা হয়। এখানে তার চিকিৎসা চলাকালে দেশ স্বাধীন হয়ে যায়। [২]

পুরস্কার ও সম্মাননা সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ২২-০৯-২০১২[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ১৮৮। আইএসবিএন 9789849025375 

বহি:সংযোগ সম্পাদনা