আবুল বরকত স্মৃতি জাদুঘর

জাদুঘর

আবুল বরকত স্মৃতি জাদুঘর (পুরো নাম ভাষা শহীদ আবুল বরকত স্মৃতি জাদুঘর ও সংগ্রহশালা) বাংলাদেশের ঢাকা জেলার পলাশীতে জহুরুল হক হলের ভেতরে অবস্থিত। ২০১২ সালের ১২ মার্চ জহুরুল হক হলের ভেতরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র আবুল বরকত নামে এই স্মৃতি জাদুঘর ও সংগ্রহশালার উদ্বোধন করেন ভাষাসৈনিক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি হাবিবুর রহমান।[১]

আবুল বরকত স্মৃতি জাদুঘর
মানচিত্র
স্থাপিত৩ অক্টোবর, ২০০৮ নির্মাণকাজ শুরু ।। ১৬ জুন, ২০০৯ নির্মাণকাজ শেষ।। ২৫ মার্চ, ২০১২ উদ্বোধন
অবস্থানজহুরুল হক হল, ঢাকা, বাংলাদেশ

শহীদ আবুল বরকত স্মৃতি জাদুঘর ও সংগ্রহশালা নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০০৮ সালের ৩ অক্টোবর। ২০০৯ সালের ১৬ জুন এর নির্মাণকাজ শেষ হয়।  ২০১২ সালের ২৫ মার্চ বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান জাদুঘর ও সংগ্রহশালাটি উদ্বোধন করেন।

মাত্র ৫ জন কর্মী নিয়ে জাদুঘর ও সংগ্রহশালার যাবতীয় কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়ে আসছে। দারুণ ছিমছাম এই জাদুঘরে প্রবেশ করলে কর্মীদের যত্নের ছাপ সহজেই চোখে পড়ে।

বর্ণনা সম্পাদনা

১৯২৮ সালে জন্ম নেয়া বরকত ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ভর্তি হন। ১৯৫১ সালে তিনি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৫২ সালের একশে ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানি পুলিশের গুলিতে তিনি শহীদ হন। আবুল বরকত স্মৃতি জাদুঘর পলাশীর মোড়ে জহুরুল হক হলে অবস্থিত। হলের পেছনের প্রবেশদ্বার দিয়ে ঢুকে হাতের বাম দিকে জাদুঘরটি পাওয়া যাবে। জাদুঘরে বরকতের ব্যক্তিগত ছবি, চিঠি, ব্যবহৃত জিনিসপত্র, মরণোত্তর একুশে পদক, বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ ছাড়াও ভাষা আন্দোলনের নানা সংগ্রহ আছে।।[২] দ্বিতীয় তলায় একটি পাঠাগার আছে যেখানে মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলনের ওপর বাংলাদেশে প্রকাশিত দলিল ও বইপত্র রক্ষিত আছে। দর্শনার্থীগণ রবি থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে জাদুঘর ঘুরে দেখতে পারবেন।

সংগ্রহ সম্পাদনা

স্মৃতিফলক পার হয়ে ভেতরে ঢোকার পরে দেয়ালে বিশাল ক্যানভাসে আঁকা ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস, ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ দাবিতে ছাত্রদের মিছিল। মিছিলে সরকারি বাহিনীর গুলিবর্ষণ। গুলিতে শহীদ ও তাদের স্মরণে প্রথম শহীদ মিনার এবং তারপর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, শ্রদ্ধাঞ্জলি ও প্রভাতফেরি। ডান পাশে নিদর্শন ও আলোকচিত্র। নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে ভাষাশহীদ আবুল বরকতের ব্যবহৃত একটি খেলনা, তিনটি কাপ-পিরিচ, বাবাকে লেখা বরকতের তিনটি চিঠি, বরকতের ডিগ্রির সনদ। সংগ্রহশালায় রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চের ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৫২ সালের আন্দোলন, ২১ ফেব্রুয়ারি বরকতের কবরে তার বাবা-মায়ের শ্রদ্ধাঞ্জলি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের প্রভাতফেরি, মাওলানা ভাসানী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রভাতফেরির ছবি, একুশের গানসহ নানা ঘটনার আলোকচিত্র রয়েছে।

দোতলায় রয়েছে লাইব্রেরি ও গবেষণা কর্মের নির্দিষ্ট স্থান। জাদুঘরের পরিচালকের আগ্রহে সেখানে রয়েছে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের অনেক বই এবং মূল্যবান অনেক দলিল। অনুমতি সাপেক্ষে তা ব্যবহার করতে পারেন আগ্রহী গবেষকরা।

[৩] জাদুঘর ও সংগ্রহশালাটি সর্ম্পকে কর্মরত প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা বলেন, ভাষা সংগ্রামে শহীদদের অবদানকে স্মরণ করতে ও সম্মান জানাতে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্মৃতি জাদুঘর ও সংগ্রহশালা করা হয়েছে। ময়মনসিংহের গফরগাঁতে শহীদ জব্বার, মানিকগঞ্জে শহীদ রফিক, নোয়াখালিতে শহীদ সালাম এবং ফেনীতে শহীদ শফিউরের নামে জাদুঘর আছে। যেহেতু আবুল বরকতের বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় এবং তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন, সেজন্য এখানে তার নামে জাদুঘর স্থাপিত হয়েছে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা