আবহাওয়াবিজ্ঞান

আবহবিদ্যা

আবহাওয়া বিজ্ঞান হচ্ছে বায়ুমণ্ডলীয় বিজ্ঞানের একটি শাখা যার মধ্যে বায়ুমণ্ডলীয় রসায়ন ও বায়ুমণ্ডলীয় পদার্থবিজ্ঞান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এবং এটি আবহাওয়ার পূর্বাভাসের উপর গুরুত্ব প্রদান করে। আবহাওয়া বিদ্যা নিয়ে অধ্যয়নের বয়স সহস্রাব্দের বেশি হলেও আবহাওয়া বিদ্যার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত ঘটেনি। উনিশ শতকে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ নেটওয়ার্ক গঠনের পরে এই ক্ষেত্রে সামান্য অগ্রগতি হয়েছিলো। আবহাওয়ার পূর্বাভাসের পূর্বের প্রচেষ্টা গুলি মূলত ঐতিহাসিক তথ্যের উপর নির্ভর করে করা হতো। পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র সমূহ এবং বিশেষত কম্পিউটারের বিকাশের পর, বিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে আবহাওয়ার পূর্বাভাসের সক্ষমতা ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করে এবং এটি বিভিন্ন সূত্রের স্বয়ংক্রিয় সমাধানের মাধ্যমে আবহাওয়ার একটি মডেল তৈরির করার সুযোগ করে দেয়। আবহাওয়ার পূর্বাভাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হচ্ছে সামুদ্রিক আবহাওয়ার পূর্বাভাস যা সামুদ্রিক এবং উপকূলীয় সুরক্ষার সাথে সম্পর্কিত, যেখানে আবহাওয়ার প্রভাব গুলি বৃহৎ জলরাশির সাথে বায়ুমণ্ডলীয় মিথোক্রিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করে।

PRECIPITATION WARMEST QUARTER

ইতিহাস

সম্পাদনা
 
আবহাওয়া জনিত কারণে সূর্যের আলো একটি চক্রের মত মনে হচ্ছে

মানব সভ্যতার মাঝে বার্ষিক কালক্রমে বৃষ্টি অথবা বন্যার ভবিষ্যৎবাণী ব্যবহার হয়ে আসছে কৃষি যুগের সময় থেকে। শুরুর সময়টাতে পুরোহিতরা আবহাওয়া পূর্বাভাষ প্রদান করতেন, যার পুরোটা নির্ভর করত সে সময়ের জ্যোতির্বিজ্ঞান এর উপর। ব্যাবিলন সভ্যতার কিউনিফর্ম শিলালিপিতে বজ্র ও বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাষ সম্পর্কিত ধারণাগুলো লক্ষ করা যায়। ক্যালডীয়ার অধিবাসীরা ২২° জ্যোতিশ্চক্র ও ৪৮° জ্যোতিশ্চক্রের মাঝে পার্থক্য করেন । প্রাচীন ভারতীয় উপনিষদে মেঘ ও মৌসুমের কথা বর্ণিত রয়েছে। তেমনি কিছু নির্দিষ্ট আবহাওয়া পরিবর্তন সংক্রান্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিসর্জন দেওয়া সামবেদে উল্লেখ আছে। ৫০০ খ্রিস্টাব্দে বরাহমিহির রচনা করেন তার অন্যতম বই বৃহৎ-সমিথা, যা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণের প্রমাণসমূহ বহন করে । ৩৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এরিস্টটল তার বই Meteorology প্রকাশ করেন। তাঁকে আবহাওয়া বিজ্ঞানের জনক হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। তার অন্যতম আকর্ষণীয় অর্জন হচ্ছে পানিচক্র যার বর্ণনা তিনি ব্যাখ্যা করেন তার Meteorology বইটিতে।

২৫০ খ্রিষ্টপূর্বে অথবা ৩৫০ থেকে ২০০ খ্রিষ্টপূর্বের মাঝামাঝি সময়ে রচিত বই "অন দা উনিভারস" -এ উল্লেখ আছেঃ

 

"যদি অগ্নি স্ফুলিঙ্গও সদৃশ আলো ঝলকানো কিছু পৃথিবীর পৃষ্টে প্রচণ্ড গতিতে ছোটাছুটি করে তাকে বজ্রপাত বলা হয়। কিন্তু যদি এমন কিছু থাকে যা অনেক বৃহৎ আকৃতির ও আরো তীব্র এবং যার অর্ধেক অংশে আগুন দেখা যায় তাকে উল্কা বলা হয়। আর যদি এঁর পুরটা জুড়ে আগুন থাকে তাহলে সেটা হচ্ছে ধূম্র-পাত। সামগ্রিক ভাবে তাদের সবগুলোকেই বলা হয় বজ্রপাত বলা হয় কারণ সবগুলোই সমাপ্তিতে মাটিতে পতিত হয়। কখন-কখনও বজ্রের সাথে ধোঁয়া লক্ষ্য করা যায় তখন তাদের বলে ধূমায়িত বজ্র; আবার কখনও এটা বায়ুমণ্ডলে অতি দ্রুত বিক্ষিপ্ত হয়ে ছড়িয়ে পরে যা আর স্পষ্টভাবে দেখা যায়। অন্য সময়ে তাদের আড়াআড়ি ভাবে কয়েকটি শাখায় বিভক্ত হয়ে ছুটতে দেখা যায়, তখন তাদের দ্বিশৃঙ্গ-বজ্র বলা হয়। অত:পর যখন বজ্র ভূপৃষ্ঠে কোন কিছুর উপর পতিত হয় তাকে বজ্রপাত বলে।"

গ্রিক বৈজ্ঞানিক থিওফ্রাস্টাস আবহাওয়া পূর্বাভাষ সম্পর্কে একটি বই সংকলন করেন যার নাম হচ্ছে "বুক অফ সাইন্স" (বাংলাঃ লক্ষণসমূহের বই) । প্রায় ২০ শতাব্দী ধরে থিওফ্রাস্টাস এঁর কাজ আবহাওয়া ও আবহাওয়া পূর্বাভাষের উপর কর্তৃত্ব পূর্ণভাবে প্রভাব বিস্তার করে।[] ২৫ খ্রিস্টাব্দে খ্যাতিমান রোমান ভূগোলবিদ পম্পোনিয়াস মেলা আঞ্চলিক জলবায়ুগত পদ্ধতি প্রণয়ন করেন। [] তৌফিক ফাহাদ এঁর মত অনুযায়ী ৯০০ খ্রিস্টাব্দের সময়কালে, আল-দিনাওয়ারী রচনা করেন "কিতাব আল-নাবাত"(আরবিঃ كتاب النباتات) যাতে তিনি আলোচনা করেন আরবিও কৃষি বিপ্লবের সময়ে কৃষিকাজের উপর আবহাওয়া বিজ্ঞানের প্রভাব নিয়ে। তিঁনি বর্ণনা করেন আবহাওয়া বিজ্ঞান সংক্রান্ত বিষয়বস্তু সকল যেমন আকাশ, গ্রহ, নক্ষত্রপুঞ্জ, সূর্য, চন্দ্র ও চন্দ্র পর্যায় গুলি যা মৌসুম ও বৃষ্টি নির্দেশ করে এবং বায়ুমণ্ডলীয় বিষয়বস্তু যথাঃ বাতাস, বিদ্যুৎ, বজ্রপাত, তুষারপাত, বন্যা, উপত্যকা, নদী ও পুকুর ।[]

শুরুর দিকে আবহাওয়া পূর্বাভাষের সকল প্রচেষ্টা নির্ভর করত অনুমান ও ভবিষ্যৎবাণীর পাশাপাশি জ্যোতির্বিজ্ঞানের উপর। রবার্ট ফিটজরয় বৈজ্ঞানিক ও আনুমানিক ভবিষ্যৎবাণীকে আলাদা করার চেষ্টা করেছিলেন।[]

চাক্ষুষ বায়ুমণ্ডলীয় ঘটনার গবেষণা

সম্পাদনা

আরো জানুনঃ রংধনু, সন্ধ্যাবৃষ্টি

 
দিগন্তে গোধূলির আভা

টলেমি জ্যোতির্বিজ্ঞান পর্যবেক্ষণের পরিপ্রেক্ষিতে আলোর বায়ুমণ্ডলীয় প্রতিসরণ নিয়ে লিখেছিলেন। ১০২১ খ্রিস্টাব্দে, হাসান ইবনুল হায়সাম প্রমাণ করেছিলেন যে বায়ুমণ্ডলীয় প্রতিসরণ মূলত গোধূলির জন্য হয়ে থাকে; তিঁনি ধারণা করেছিলেন সূর্য যখন দিগন্তের ১৯° নিচে থাকে তখন থেকে গোধূলির সময় আরম্ভ হয়, তার ধারণার জ্যামিতিক নির্ধারণার মাধ্যমে তিনি অনুমান করেন যে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের সর্বোচ্চ উচ্চতা প্রায় ৪৯ মাইল বা ৭৯ কিলোমিটার।[]

আলবার্টাস ম্যাগনাস সর্ব প্রথম প্রস্তাব করেন যে প্রতিটি বৃষ্টির ফোটাই ছোট-ছোট গোলক আকৃতির। যার মানে রংধনুর উৎপন্ন হয়ে থাকে প্রতিটি ছোট ছোট বৃষ্টির ফোটার সাথে আলোর পরস্পর সংযোগের মাধ্যমে। রজার বেকন সবার প্রথম রংধনুর কৌণিক আকার নির্ধারণ করতে সক্ষম হন। তিনি বিবৃতি করেন যে রংধনুর শিখর কখনই দিগন্ত থেকে ৪২° থেকে অধিক হতে পারে না। ১৩শ শতাব্দীর শেষের দিকে ১৪শ শতাব্দীর শুরুর দিকে কামাল আল-দীন আল-ফারসি এবং ফ্রেইবার্গের থিওডোরিক সর্বপ্রথম রংধনু হওয়ার সঠিক ব্যাখ্যা দেন। থিওডোরিক উপরন্তু গৌণ রংধনু নিয়েও ব্যাখ্যা প্রধান করেন। ১৭১৬ খ্রিস্টাব্দে, এডমন্ড হ্যালি প্রস্তাব করেন মেরুপ্রভা হয়ে থাকে মূলত পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের চারপাশে চৌম্বকীয় প্রবাহের কারণে।

সরঞ্জাম এবং শ্রেণিবিন্যাসের মাপকাঠি

সম্পাদনা

আরও জানুনঃ সেলসিয়াস, ফারেনহাইট ও বিউফর্ট স্কেল

১৪৪১ সনে কোরিয়ার রাজা সেজং এর রাজপুত্র মুজং সর্ব প্রথম প্রমিত বৃষ্টি পরিমাপক যন্ত্র আবিস্কার করেন। সে বৃষ্টি পরিমাপক যন্ত্র কোরিয়ার সমগ্র জেসন রাজবংশে বিপণন করা হয়েছিল যেন কৃষকদের সম্ভাব্য ফসল উৎপাদনের উপর কর মূল্যায়ন করা সম্ভব হয়। ১৪৫০ সালে, লিওন বাতিস্তা আলবার্ট

স্থানিক মাপকাঠি

সম্পাদনা

মাইক্রোস্কেল

সম্পাদনা

এটি একটি স্কেল যার মাধ্যমে এক লক্ষ ভাগের এক ভাগ ছোট জিনিস মাপা যায়।

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "Weather: Forecasting from the Beginning"www.infoplease.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০২-০৭ 
  2. "Paleorama.com"archive.ph। ২০১২-০৯-০৬। Archived from the original on ২০১২-০৯-০৬। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০২-০৭ 
  3. "Meteorology"Wikipedia (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২২-০১-২২। 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা