আবদুল মোতালেব (বীর বিক্রম)

শহীদ আবদুল মোতালেব (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে।[]

আবদুল মোতালেব
মৃত্যু১৯৭১
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর বিক্রম

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

সম্পাদনা

আবদুল মোতালেবের জন্ম মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার পূর্বশ্রীকোল গ্রামে। তার বাবার নাম গোলাম ছরোয়ার মিয়া এবং মায়ের নাম আমিনা বেগম। তার স্ত্রীর নাম হাসিনা মোতালেব। তার এক ছেলে। []

কর্মজীবন

সম্পাদনা

পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন আবদুল মোতালেব। ১৯৭১ সালে এই রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল সৈয়দপুর সেনানিবাসে। ৩০ মার্চ রাতে তারা আক্রান্ত হন। তখন তারা বিদ্রোহ করে সেনানিবাস থেকে বেরিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

সম্পাদনা

দিনাজপুর জেলার অন্তর্গত মোহনপুরের অবস্থান ছিল জেলা সদর থেকে ১০ মাইল দূরে। সেখানে ছিল মোহনপুর সেতুর অবস্থান। ১৯৭১ সালের ২৭ এপ্রিল সেতু ধ্বংসের পর সেখানে ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিরোধযুদ্ধ করতে করতে সমবেত হন দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ীতে। তারা বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিলেন। ফুলবাড়ীতে সমবেত হওয়ার পর তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট তিনটি দলে বিভক্ত হয়। একটি দলের নেতৃত্বে ছিলেন আনোয়ার হোসেন (বীর প্রতীক)। এই দলে ছিলেন আবদুল মোতালেব। তারা ৯, ১০, ১১ ও ১৯ এপ্রিল বিভিন্নস্থানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। এরপর সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের কামারখালীতে অবস্থান নেন। সেখানে অবস্থানকালে মুক্তিযোদ্ধারা সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশের ভেতরে বেশ কয়েকটি অপারেশন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় সেদিন মুক্তিযোদ্ধারা ভারত থেকে এসে মোহনপুর সেতু ধ্বংস করেন। আবদুল মোতালেবসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা রাতের অন্ধকারে ভারতের ভূখণ্ড থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে প্রবেশ করেন বাংলাদেশের ভেতরে। তারা তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও ইপিআরের সদস্য। পায়ে হেঁটে এগিয়ে যেতে থাকলেন তারা। তাঁদের গন্তব্য ছিল মোহনপুর। সেখানে মোহনপুর সেতুর অবস্থান। সেই সেতু ধ্বংস করাই ছিলো মুক্তিযোদ্ধাদের লক্ষ্য। সেখানে কাছাকাছিই ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী। তারা আক্রমণ করতে পারে—সে জন্য মুক্তিযোদ্ধারা সেতু ধ্বংস ও যুদ্ধ করার প্রস্তুতি—দুটিই নিয়ে এসেছিলেন। সকাল হওয়ার আগেই তারা পৌঁছে গেলেন নির্দিষ্ট স্থানে। দ্রুত প্রতিরক্ষা অবস্থান নিলেন সেতুর আশপাশে। বিস্ফোরক দল তাদের কাজ শুরু করল। কিন্তু নানা কারণে দেরি হয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত কয়েক ঘণ্টার প্রচেষ্টায় তারা সফল হলেন। দিনের আলোয় বিকট শব্দে ধ্বংস হয়ে গেল সেতু। শব্দ পেয়ে কাছাকাছি থাকা পাকিস্তানি সেনারা গাড়িযোগে দ্রুত এসে তাঁদের আক্রমণ করল। মুক্তিযোদ্ধারা এ জন্য প্রস্তুতই ছিলেন। শুরু হলো প্রচণ্ড যুদ্ধ। মুক্তিযোদ্ধারা বিশেষত আবদুল মোতালেবসহ কয়েকজন সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাকলেন। কিন্তু পাকিস্তানি সেনারা অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত। গুলিবৃষ্টি ও অব্যাহত গোলাবর্ষণে ইপিআরের মুক্তিযোদ্ধারা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলেন। আবদুল মোতালেবদের দল মাটি কামড়ে অবস্থান ধরে রাখলেন। কিন্তু পাকিস্তানিদের আক্রমণের মাত্রা ক্রমেই বাড়তে থাকল। এ সময় শহীদ হলেন তার দুই সহযোদ্ধা। আহত হলেন তিন-চারজন। একটু পরে আবদুল মোতালেব নিজেও গুরুতর আহত হলেন। এতে তার প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকল। কয়েকজন সহযোদ্ধা তাকে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সরিয়ে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দিলেন। তাতেও রক্তক্ষরণ বন্ধ হলো না। তখন স্থানীয় গ্রামবাসীর সহায়তায় সহযোদ্ধারা উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে পাঠিয়ে দিলেন সীমান্তের ওপারের উদ্দেশে। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। পথিমধ্যেই তিনি মারা যান। সহযোদ্ধারা পরে তাকে ভারতের বাঙালপাড়ায় সমাহিত করেন । []

পুরস্কার ও সম্মাননা

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ:২৩-১০-২০১১"। ২০১৭-০৮-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৫-২৩ 
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449 
  3. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ১৭১। আইএসবিএন 9789843338884 

বহি:সংযোগ

সম্পাদনা