আবদুল খালেক (পীর)

শিক্ষাবিদ ও ইসলামি পণ্ডিত

আবদুল খালেক ছিলেন একজন সমাজ সংস্কারক, ইসলাম প্রচারক, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক, সুফিতত্ত্ববিদ, রাজনীতিবিদ ও লেখক। তিনি ১৮৯২ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির ত্রিপুরা জেলার ছতুরা গ্রামে (বর্তমানে বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলায় অবস্থিত) জন্মগ্রহণ করেন।

মওলানা
আবদুল খালেক
ছতুরাভী
ব্রাহ্মণবাড়িয়া দক্ষিণ-পূর্ব মুসলিম আসনের
পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য
কাজের মেয়াদ
১৯৫৪ – ১৯৫৫
গভর্নরচৌধুরী খালিকুজ্জামান
ইস্কান্দার মির্জা
মুহাম্মদ শাহাবউদ্দিন
মুখ্যমন্ত্রীএ কে ফজলুল হক
আবু হোসেন সরকার
পূর্বসূরীআসন স্থাপিত
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম১৮৯২
ত্রিপুরা জেলা, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যু২ এপ্রিল ১৯৫৫(1955-04-02) (বয়স ৬২–৬৩)
ঢাকা, পূর্ববঙ্গ, পাকিস্তান অধিরাজ্য
সমাধিস্থলছতুরা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা
নাগরিকত্বপাকিস্তান
রাজনৈতিক দলস্বতন্ত্র
সন্তান২ ছেলে
বাসস্থানবকশি বাজার, ঢাকা
প্রাক্তন শিক্ষার্থীকুমিল্লা হুচ্ছামিয়া মাদ্রাসা
ঈশ্বর পাঠশালা
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
পেশাঅধ্যাপক, অনুবাদক, ইসলামি পণ্ডিত
ব্যক্তিগত তথ্য
ধর্মইসলাম
আখ্যাসুন্নি
শিক্ষাজামায়াতে উলা
কলাবিদ্যায় স্নাতক
কলাবিদ্যায় স্নাতকোত্তর
ক্রমছতুরা শরীফ
মুসলিম নেতা
এর শিষ্যছদর উদ্দিন আহমদ শহীদ, আবু বকর সিদ্দিকী
যাদের প্রভাবিত করেন

শিক্ষা জীবন

সম্পাদনা

অধ্যাপক মওলানা আব্দুল খালেক ১৯১৩ সালে কুমিল্লার হোচ্ছামিয়া মাদ্রাসা থেকে জামায়াতে উলা (ফাযিল) পরীক্ষায় ফার্স্ট ক্লাসে উত্তীর্ণ হন। এরপর ১৯১৪ সালে কুমিল্লা ঈশ্বর পাঠশালায় ভর্তি হয়ে ১৯১৮ সালে এনট্রান্স (এস.এস.সি) এবং ১৯২০ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে এফ.এ (এইচ.এস.সি) পরীক্ষায় ফার্স্ট ক্লাসে পাশ করেন। ১৯২২ সালে বি.এ ডিগ্রিও ফার্স্ট ক্লাসে সম্পন্ন করেন।

১৯২৫ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফারসি ভাষা ও সাহিত্যে এম.এ পরীক্ষায় ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়ে ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে গোল্ড মেডেল লাভ করেন। পরে, তিনি ১৯২৬ সালে আরবি ভাষা ও সাহিত্যে এম.এ ডিগ্রিও ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়ে অর্জন করেন।

কর্মজীবন

সম্পাদনা

তিনি ফেনী কলেজের ফারসি বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ, লেডি ব্রাবোর্ন কলেজ এবং ঢাকা ইডেন গার্লস কলেজের অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯২৫ থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান করেন।

তিনি ভারতের ফুরফুরা শরীফের পীর মাওলানা আবু বকর সিদ্দিকীর প্রধান খলিফা ছিলেন। ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তিনি ইসলাম প্রচার করতেন।

তিনি নূর মুহাম্মদ নিজামপুরীর খলিফা ছিলেন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের স্বাধীনতার পর দেশটির সংবিধানে ইসলামি আইন অভিযোজনের জন্য তা’লীমাতে ইসলামিয়া বোর্ড গঠিত হয়েছিল। তিনি এর সদস্য ছিলেন।[]

১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন খ্যাত পূর্ববঙ্গ প্রাদেশিক আইনসভা নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে যুক্তফ্রন্ট ও মুসলিম লীগের প্রার্থীকে পরাজিত করে নির্বাচিত হন।[]

মাওলানা আব্দুল খালেক বহু গ্রন্থ প্রণয়ন করেছেন। তাঁর রচিত বিখ্যাত গ্রন্থগুলোর মধ্যে "সিরাজুস সালিকীন" এবং "সাইয়্যেদুল মুরসালীন" অন্যতম। এছাড়াও তিনি "মুনাব্বেহাত"-এর বাংলা অনুবাদ করেন এবং "গুনচা-ই ফারসি" ও "দুররাতুল আদাব" রচনা করেন যা একসময় কলকাতা শিক্ষাবোর্ডের পাঠ্যপুস্তক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

ব্যক্তিগত জীবন

সম্পাদনা

তার দুই পুত্র সন্তান। বড় সন্তান মরহুম আবদুল কুদ্দুছ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ছিলেন। আরেক সন্তান মরহুম মোশাব্বের হোসেন কাউছার।[] তার নাতি জাহিদ কুদ্দুস বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চেয়ারম্যান ছিলেন।[]

মৃত্যু ও কিংবদন্তি

সম্পাদনা

তিনি ২ এপ্রিল ১৯৫৫ সালে ঢাকার বখশী বাজারে নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর পর ছতুরায় তার মাজার শরীফ প্রতিষ্ঠিত হয়, যা বর্তমানে ছতুরা দরবার শরীফ কমপ্লেক্স নামে পরিচিত।

জনশ্রুতি ও অনুসারীদের বিশ্বাস অনুযায়ী ছতুরা শরীফে অবস্থিত পুকুরে আবদুল খালেকের মৃত্যুর পর তার বাড়িতে থাকা পানি মেশানোর পর থেকে সেই পুকুরের পানি পান করলে রোগমুক্তি ঘটে থাকে।[]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. আহমেদ, মাসুক (৬ মে ২০২১)। "মর্দে মুজাহিদ সূফী নূর মুহাম্মাদ নিজামপুরী (র.) : জীবন ও অবদান"পরওয়ানা 
  2. "নির্ব্বাচনের ফলাফল"। দৈনিক আজাদ। ১৮ মার্চ ১৯৫৪। পৃষ্ঠা ৫। 
  3. "ছতুরা দরবার শরীফের মাহফিলে মানুষের ঢল"দৈনিক ইনকিলাব। ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৬ নভেম্বর ২০২৪ 
  4. "ছতুরা দরবার শরীফের মাহফিল সোমবার"আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া। ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫। 
  5. "আখাউড়ায় পুকুরের পানি পানেই রোগমুক্তির দাবি! চিকিৎসকরা বলছেন ভিন্ন কথা"যমুনা টিভি। ২৭ মে ২০২৩।