আন্দুলবাড়ীয়া ইউনিয়ন
আন্দুলবাড়ীয়া ইউনিয়ন বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলার অন্তর্গত একটি ইউনিয়ন।[১]
আন্দুলবাড়ীয়া | |
---|---|
ইউনিয়ন | |
বাংলাদেশে আন্দুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২৩°২৮′৫০.৯৯৫″ উত্তর ৮৮°৫৩′৪৮.১৬৭″ পূর্ব / ২৩.৪৮০৮৩১৯৪° উত্তর ৮৮.৮৯৬৭১৩০৬° পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | খুলনা বিভাগ |
জেলা | চুয়াডাঙ্গা জেলা |
উপজেলা | জীবননগর উপজেলা ![]() |
প্রতিষ্ঠা | ১৯৬২ |
আয়তন | |
• মোট | ৩৬.২ বর্গকিমি (১৪.০ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (আদমশূমারী ২০১১ অনুযায়ী) | |
• মোট | ২৭,১৫২ |
• জনঘনত্ব | ৭৫০/বর্গকিমি (১,৯০০/বর্গমাইল) |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
পোস্ট কোড | ৭২২২ |
ওয়েবসাইট | প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট ![]() |
অবস্থান ও আয়তনসম্পাদনা
এই ইউনিয়ন টি ভৈরব নদের তীরে অবস্থিত। ১৯৬২ সালে এটি প্রথম স্থাপিত হয়। বর্তমান আয়তন ৩৬.২ বর্গ কিলোমিটার। .
প্রশাসনিক এলাকাসম্পাদনা
প্রায় ৩৬.২ বর্গ কিলোমিটার। হারদা, পাঁকা, অনন্তপুর, বাজদিয়া, কর্চাডাঙ্গা, বিদ্যাধরপুর, ঘুগরাগাছি, নিধিকুন্ডু, শাহাপুর, কুলতলা, নিশ্চিন্তপুর, ডুমুরিয়া এবং আন্দুলবাড়ীয়া এই ১৩ টি গ্রাম নিয়ে এই ইউনিয়ন।
ইতিহাসসম্পাদনা
সুলতানি আমলের (১৩৩৮ খ্রিঃ - ১৫৩৮ খ্রিঃ) বেশ কিছু নিদর্শন আবিষ্কারের পর ধারণা করা হয়, ছয়শ' বছর আগেই এই ইউনিয়নে বেশ কিছু প্রসিদ্ধ বাজার এবং স্থাপনা গড়ে উঠে। এখনো এলাকার বিভিন্ন স্থানে কিছু পুরাতাত্ত্বিক স্থাপনা দেখা যায়। খাঁজা পারেশ সাহেব এর মাজার ও ইবাদতখানা, কর্চাডাংগার মন্দিরতলা, মিস্ত্রি পাড়া ঈদগাহের প্রাচীন ইমারত এগুলি উল্ল্যেখযোগ্য।
অষ্টাদশ শতাব্দীতে বেশ কিছু নীলকর আন্দুলবাড়ীয়াতে আসে এবং কয়েকটি স্থানে নীলকুঠি স্থাপন করে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মতো এখানেও নীলকরেরা অবর্ননীয় অত্যাচার শুরু করে এবং চাষিদের নীল চাষে বাধ্যকরে। পরবর্তীতে দেশব্যাপি নীলকরদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আন্দোলনের ফলে নীল চাষ থেকে সাধারণ কৃষক মুক্তি লাভ করে। ১৯০৩ সালে প্রকাশিত "ব্যাপ্টিস্ট মিশনারি সোসাইটি- ওয়ান হান্ড্রেড এন্ড এলেভেন্থ রিপোর্ট" বইয়ে আন্দুলবাড়ীয়ার উল্লেখ আছে। জানা যায় ১৮০৪ সালে টি ডব্লিউ নর্লেজ ক্রিশ্চিয়ান মিশন নিয়ে আন্দুলবাড়ীয়াতে আসেন[২]।
স্বাধীনতা যুদ্ধে আন্দুলবাড়িয়াসম্পাদনা
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে আন্দুলবাড়ীয়া ৮ নং সেক্টরের অধীনে ছিল। পাকবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে এখানে একটি যুদ্ধ হয় যা আন্দুলবাড়ীয়ার যুদ্ধ নামে পরিচিত। এই যুদ্ধে ঘটনাস্থলেই শহীদ হন গ্রুপ কমান্ডার আনোয়ার হোসেন, হতাহত হন মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান সহ অনেকে[৩]।
১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহে পাকবাহিনী অস্ত্র এবং রসদ সহ রেলপথে আন্দুলবাড়ীয়া অতিক্রম করছিল। এ সময় মুক্তিযোদ্ধাদের পেতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে ট্রেনের তিনটি বগি ব্যপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ইঞ্জিন লাইনচ্যুত হয়। প্রায় ৫০ জন পাক সেনা হতাহত হয়। [৪]
'বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র- একাদশ খণ্ডে' (২রা ডিসেম্বর—যুদ্ধ বার্তায়) উল্লেখ আছে "মুক্তিবাহিনী জীবননগরের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আন্দুলবাড়ীয়াকে শত্রুমুক্ত করেছে। এটা বোঝা যাচ্ছে যে মুক্তিবাহিনীর প্রবল প্রতিরোধের মুখে শত্রুবাহিনী তাদের নবম ডিভিসনাল হেড-কোয়ার্টার যশোর থেকে মাগুরাতে স্থানান্তর করেছে"[৫]।
শিক্ষাসম্পাদনা
আন্দুলবাড়িয়া আশরাফিয়া আলিম মাদরাসা, নিশ্চিন্তপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, আন্দুলবাড়ীয়া বহুমুখি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আন্দুলবাড়ীয়া বহুমুখি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আন্দুলবাড়ীয়া কাওমী মাদ্রাসা এছাড়াও আরো অসংখ্য প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে এখানে।
অর্থনীতিসম্পাদনা
এ ইউনিয়নের অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। এখানে ধান, ভূট্টা, আলু, পাট সহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদিত হয়। মরিচ, ধনিয়া পাতা, হলুদ সহ বিভিন্ন মসলা, ডাল বীজ, তৈলবীজ ইত্যাদি ফসলের জন্য এই অঞ্চল প্রসিদ্ধ। বর্তমানে আময, কাঁঠাল এবং লিচুর পাশাপাশি পেয়ারা, পেঁপে, বরই, লেবু এবং ড্রাগন ফলের ব্যপক চাষ লক্ষ করা যাচ্ছে। পাশাপাশি সবজি চাষেও এখানকার কৃষকেরা সফলতার পরিচয় দিয়েছেন[৬] ।
দর্শনীয় স্থানসম্পাদনা
- খাঁজা পারেশ সাহেব এর মাজার ও ইবাদতখানা, আনুমানিক ছয়শ'ত বছরের পুরানো সূফী সাধকের মাজার এবং তার ইবাদতখানা[৭]।
- কর্চাডাংগার মন্দিরতলা, সুলতানি আমলে নির্মিত মন্দির[৮]
- মিস্ত্রীপাড়া ঈদগাহের প্রাচীন ইমারত
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিসম্পাদনা
- কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার
- প্রফেসর আমজাদ হোসেন খান, স্বনামধন্য চিকিৎসক এবং জার্নাল লেখক
- মাহমুদ হাসান খান বাবু, বিজিএমই'র সহ-সভাপতি এবং বিশিষ্ট শিল্পপতি ও রাজনীতিবিদ
k
- মাওলানা মোঃ আমজাদ হোসেন, সাবেক ইমাম, আন্দুলবাড়িয়া কেন্দ্রীয় বাজার মসজিদ।
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "ইউনিয়ন সমূহ"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। সংগ্রহের তারিখ ১১ জুলাই ২০১৬।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ THE ONE HUNDRED AND ELEVENTH ANNUAL REPORT OF THE COMMITTEE OF THE BAPTIST MISSIONARY SOCIETY; MARCH 1st, 1903
- ↑ "পাক-বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে দু'চোখ হারানো আব্দুল মান্নান আজও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি- সমাজের কথা"। ১৭ এপ্রিল ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯।
- ↑ BANGLADESH FORCES H.Q.. MUJIBNAGAR PUBLIC RELATIONS DEPARTMENT WAR BULLETIN
- ↑ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র- একাদশ খন্ড
- ↑ "জীবননগরে সবজিবীজ উত্পাদনে নীরব বিপ্লব- দৈনিক ইত্তেফাক"।
- ↑ "মাজার সম্পর্কিত- দৈনিক সময়ের সমীকরণ"।
- ↑ "চুয়াডাঙ্গার ইতিহাস রচনার সমস্যা ও সম্ভবনা, প্রফেসর আবদুল মোহিত- দৈনিক সময়ের সমীকরণ"।