আনোয়ারুর রহমান খান

বাংলাদেশি জ্যোতির্বিজ্ঞানী

অধ্যাপক ড. আনোয়ারুর রহমান খান যিনি এ আর খান নামেই বেশি পরিচিত (জন্ম: ১৯৩২ - মৃত্যু: ২৫ মে, ২০১৫) বাংলাদেশের অন্যতম পথিকৃৎ ও বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা এবং দেশে বিজ্ঞান চর্চা ও বিশেষ করে জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার প্রসারে কাজ করেছেন। [১]

আনোয়ারুর রহমান খান (এ আর খান)
ষষ্ঠ আব্দুল জব্বার জ্যোতির্বিজ্ঞান কর্মশালায় বক্তব্যরত আনোয়ারুর রহমান খান
জাতীয়তাবাংলাদেশি
নাগরিকত্ব বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণজ্যোতির্বিজ্ঞানী

জন্ম ও শিক্ষাজীবন সম্পাদনা

এ আর খানের জন্ম ১৯৩২ সালে ঢাকার বিক্রমপুরে। ১৯৫৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে তিনি স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।

কর্মজীবন সম্পাদনা

এ আর খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৬০ সালে কলম্বো পরিকল্পনার ফেলো হিসেবে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ফিজ়িক্যাল ল্যাবরেটরি ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাভেন্ডিশ গবেষণাগারে গবেষক হিসেবে কাজ করেন। পরে ১৯৬২ সালে লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজে যোগদান করেন এবং সেখান থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করে দেশে ফিরে আসেন। এরপর প্রথমে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ ও পরে ফলিত পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে (অধুনা বৈদ্যুতিক ও বৈদ্যুতিন প্রকৌশল বিভাগ) অধ্যাপনা করেন। এ আর খান দেশে বিজ্ঞান চর্চা ও বিশেষ করে জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার প্রসারে ১৯৭৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের বাসভবনের গ্যারেজে প্রতিষ্ঠা করেন অনুসন্ধিৎসু চক্র বিজ্ঞান সংগঠন। পাশাপাশি তিনি গড়ে তোলেন বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি। ১৯৯৫ ও ২০১১ সালে বাংলাদেশের হিরণ পয়েন্ট ও পঞ্চগড় থেকে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ পর্যবেক্ষণ দলের নেতৃত্ব দেন। গ্রামীণ বিজ্ঞান শিক্ষকদের মানোন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতি ও বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশনের যৌথ আয়োজন সত্যেন বসু বিজ্ঞান শিক্ষক ক্যাম্পের সূচনা করেন। ১৯৭৬ সাল থেকে তিনি বিভিন্ন দৈনিকের জন্য রাতের আকাশ-চিত্র তৈরি করে দিতেন।[২] ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশে হ্যালির ধূমকেতু পর্যবেক্ষণের জন্য গঠিত জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন তিনি। ইউনেস্কো ২০০৯ সালকে আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান বছর হিসেবে পালন করে, পারিতে (Paris) জ্যোতির্বিজ্ঞান বর্ষের উদযাপনের উদবোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। [৩] ১৯৯২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে অবসর নেওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের বিজ্ঞান ও জ্যোতির্বিদ্যা চর্চার প্রসারে নিরলস কাজ করেছেন। তিনি ছিলেন বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য, অনুসন্ধিৎসু চক্রের সভাপতি, বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশন ও বাংলাদেশ ঘুড়ি ফেডারেশনের সভাপতি। সম্পাদনা করেছেন বিজ্ঞান সাময়িকী, পরিচালনা করেছেন ঢাকা বেতারে শিক্ষার্থীদের জন্য বিজ্ঞানবিষয়ক অনুষ্ঠান। পরিবেশ আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলেন। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্বীকৃত জর্নালে প্রকাশিত তাঁর লেখা গবেষণাপত্রের সংখ্যা ২০টিরও বেশি। [৪][৫]

মৃত্যু সম্পাদনা

এ আর খান ২০১৫ সালের ২৫ মে বাংলাদেশ সময় ভোর পাঁচটার দিকে লন্ডনের সেন্ট মেরি হাসপাতালে মারা যান। মৃত্যুকালে এ আর খানের বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. প্রতিবেদক, নিজস্ব। "জ্যোতির্বিজ্ঞানী এ আর খান আর নেই"Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-১১ 
  2. "দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ"। ২৭ মে ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মে ২০১৫ 
  3. প্রতিবেদক, নিজস্ব। "মৃত্যুর আগেও তারা দেখে গেলেন তিনি"Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-১১ 
  4. প্রতিবেদক, নিজস্ব। "ব্যতিক্রমী মানুষ ছিলেন অধ্যাপক এ আর খান"Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-১১ 
  5. "বিজ্ঞানমনস্ক তারুণ্যের প্রেরণা জ্যোতির্বিদ এ আর খান | কালের কণ্ঠ"Kalerkantho। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-১১