আনন্দরাম ঢেকিয়াল ফুকন

লেখক

আনন্দরাম ঢেকিয়াল ফুকন (ইংরেজি: Anandaram Dhekial Phukan; অসমীয়া: আনন্দৰাম ঢেকিয়াল ফুকন) অসমীয়া ভাষা আন্দোলনকারীর মধ্যে অন্যতম প্রধান ব্যক্তি ছিলেন। তার আপ্রাণ চেষ্টার ফলে অসমে বাংলা ভাষার পরিবর্তে অসমীয়া ভাষার প্রচলন হয়। তিনি অসমীয়া সাহিত্যের অন্যতম প্রাচীন সাহিত্যিক।

আনন্দরাম ঢেকিয়াল ফুকন
জন্ম২৪-০৮-১৮২৯ সন
গুয়াহাটি, অসম
মৃত্যু১৬-০৬-১৮৫৯ চন
ছদ্মনামআনন্দরাম ঢেকিয়াল ফুকন
পেশাসহিত্যিক
ভাষাঅসমীয়া
জাতীয়তাভারতীয়
নাগরিকত্বভারতীয়

জন্ম ও শিক্ষাজীবন সম্পাদনা

১৮২৯ সালে অসমের গুয়াহাটি মহানগরের এক সম্রান্ত পরিবারে তার জন্ম হয়।[১] তার পিতা হলিরাম ঢেকিয়াল ফুকন আহোম সাম্রাজ্যের বিষয়া পদে নিযুক্ত ছিলেন। হলিরাম ঢেকিয়াল ফুকন অসম বুরঞ্জী ও কামাখ্যা যাত্রা পদ্ধিত নামক দুইটি পুস্তক বাংলা ভাষায় রচনা করেন। আনন্দরাম ঢেকিয়াল ফুকনের দুইবছর বয়সে পিতৃবিয়োগ হয়। পাঁচ বৎসর বয়সে উমানন্দ টোলে তার নামভর্তি করানো হয়। তার ঠাকুরদা পরশুরাম ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণে আপত্তি করেছিলেন যদিও আনন্দরাম তা অবজ্ঞা করে ১৮৩৫ সনে গুয়াহাটি ইংরেজি বিদ্যালয়ে নামভর্তি করেন।[১] জেম্‌স মেথিউ ও জেনকিন্সের তত্বাবধানে তিনি ইংরেজি শিক্ষার অধ্যয়ন করেন। ১৮৪১ সালে দুই ইংরেজ বিষয়া খরচ বহন করে তাকে ইংরেজি উচ্চ শিক্ষার জন্য কলকাতায় পাঠান। সেইসময়ে উন্নত যাতায়ত ব্যবস্থা না থাকায় জলপথে নৌকা করে কলকাতা পৌছান। কলকাতার কালুপথে ঘড় ভাড়া করে তিনি হিন্দু কলেজ থেকে অধ্যয়ন গ্রহণ করেন। দুই বৎসর কলকাতায় অধ্যয়ন গ্রহণের পর তিনি পুনরায় গুয়াহাটি চলে আসেন। গুয়াহাটি থাকাকালীন অবস্থায় তিনি সুধী বৃন্দ থেকে ইংরেজি, উর্দু ও ফার্সি ভাষার শিক্ষা গ্রহণ করেন।

বিবাহ ও কর্মজীবন সম্পাদনা

১৮৪৬ সালে পশুপতির ফুকনের কন্যা মাহেন্দ্রী দেবীকে বিবাহ করেন। তিনি গুয়াহাটিতে আইনের অধ্যয়ন করেন ও প্রথম অসমীয়া আলোচনী আরুনোদয়ে নিয়মীতভাবে লেখা আরম্ভ করেন। ১৮৪৭ সালে তাকে খাটা পরগনার সেটেলমেন্ট অফিসার পদে নিযুক্ত করা হয়। পরের বছর তাকে মুন্সিফ পদে পদোন্নতি করে নলবারীতে স্থানান্তর করানো হয়। নলবারী থাকাকালীন সময়ে তিনি হিস্ট্রি অফ ইংল্যান্ড নামক পুস্তক রচনা করেন। ১৮৪৯ সনে তিনি সহকারী আয়ুক্তের পরীক্ষায় উর্ত্তীন হয়ে বিজনী রাজ এস্টেটে দেওয়ান পদে নিযুক্ত হন। সেই পদে থাকার সময়ে তিনি এস্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন নামক পুস্তক রচনা করেন। তারপর তিনি নগাঁও জেলা ও গোয়ালপারা জেলার সদরের উপ-সহকারী আয়ুক্তের পদে কার্য নিবাহ করেন। এই সময়ে রচনা করেন তিনি সদরের মামলার নিষ্পত্তি। ১৮৫২ সালে তাকে বরপেটার উপ-সহকারী আয়ুক্ত ও উপায়ুক্ত রুপে নিযুক্তি দেওয়া হয়।

অসমীয়া সাহিত্যে অবদান সম্পাদনা

মাত্র ১৭ বৎসর বয়সে আনন্দরাম ঢেকিয়াল ফুকন প্রথম লেখা আরম্ভ করেন। তিনি সর্বপ্রথম অরুনোদয়ে লেখেন। সেই সময়ে অসমের বিদ্যালয়ে শিক্ষার মাধ্যম ছিল বাংলা ভাষা। তিনি অসমীয়া ভাষায় অসমীয়া লরার মিত্র মানক পুস্তক রচনা করে। শিবসাগর থেকে প্রকাশিত করে অসমের বিভিন্ন অসমীয়া মাধ্যমের বিদ্যালয়ে তা প্রেরন করা হত। ১৮৫৩ সনে ব্রিটিশ গভর্নর মোফাট মিলস্ অসমে আগমনের সময় আনন্দরাম অসমের বিদ্যালয়ে অসমীয়া ভাষা প্রচলনের যুক্তি প্রকাশ করেন। মোফাট মিলস্ তার যুক্তির সমর্থন করেছিলেন বলে জানা যায়। ১৮৫৫ সালে তিনি 'A few remarks on the Assamese language, and on the Vernacular education in Assam' নামক পুস্তক রচনা করেন। শিবসাগর থেকে পুস্তকটি ১০০টি কপি ছাপানো হয় ও বেংগল সরকার সহ ভারতের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কার্য্যালয়ে পাঠানো হয়। অসমে বাংলা ভাষার বিরোধের জন্য পুস্তকটি যথেষ্ট অবদান বহন করেছিল। অসমীয়া ভাষা ছাড়াও ভারতের বিভিন্ন ভাষা যেমন বাংলা, হিন্দি ইত্যাদিতে থাকা তার অশেষ জ্ঞান এই পুস্তকের মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছিল।

মৃত্যু সম্পাদনা

১৮৫৯ সালে মাত্র ৩০বছর বয়সে আনন্দরাম ঢেকিয়াল ফুকনের মৃত্যু হয়।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা