আজমেরী হক বাঁধন
আজমেরী হক বাঁধন (জন্ম: ২৮ অক্টোবর ১৯৮৩;[১] যিনি পর্দায় বাঁধন নামে পরিচিত) একজন বাংলাদেশী অভিনেত্রী ও মডেল। তিনি ২০০৬ সালে অনুষ্ঠিত সুন্দরী প্রতিযোগিতা লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টারে রানার-আপ হওয়ার মাধ্যমে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি রেহানা মরিয়ম নূর (২০২১) চলচ্চিত্রে অভিনয় করে ভীষন প্রশংসিত হন এবং কান চলচ্চিত্র উৎসবে দর্শকবৃন্দ উঠে দাড়িয়ে অভ্যর্থনা প্রদান করেন।
আজমেরী হক বাঁধন | |
---|---|
জন্ম | আজমেরী হক বাঁধন ২৮ অক্টোবর ১৯৮৩ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
অন্যান্য নাম | বাঁধন |
শিক্ষা | বি. ডি. এস. (দন্ত) |
মাতৃশিক্ষায়তন | বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ |
পেশা | অভিনেত্রী, মডেল এবং দন্ত চিকিৎসক |
কর্মজীবন | ২০০৬-বর্তমান |
উল্লেখযোগ্য কর্ম | রেহেনা মরিয়ম নূর (সিনেমা) |
উচ্চতা | ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি (১.৬৩ মিটার) |
দাম্পত্য সঙ্গী | মাশরুর হোসেন সনেট (বি. ২০১০; বিচ্ছেদ. ২০১৪) |
সন্তান | ১ |
প্রাথমিক জীবন সম্পাদনা
বাঁধন জন্মেছেন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে। তারা বাবা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ছিলেন।
শিক্ষাজীবন সম্পাদনা
বাবার কর্মসূত্রে স্কুল জীবনে রাজবাড়ী, ভোলাসহ বিভিন্ন জেলার ৭টি ভিন্নভিন্ন স্কুলে পড়েছেন তিনি। ২০০০ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন ঢাকার মনিপুর স্কুল ও কলেজ থেকে। ২০০২ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেন শহীদ আনোয়ার গার্লস স্কুল কলেজ থেকে। পঞ্চম শ্রেণি ও অষ্টম শ্রেণিতে তিনি সরকারি বৃত্তি লাভ করেন। ১৯৯৭ সালে তিনি সপ্তম শ্রেণিতে পড়েন। তিনি ২০০২-০৩ সেশনে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। তিনি মেডিকেলে পড়ার সময় প্রথম বর্ষে অ্যানাটমিতে সারা বাংলাদেশে ৪র্থ স্থান অধিকার করেন। ২০০৯ সালে তিনি চিকিৎসাবিদ্যায় সনদ অর্জন করেন। মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে মেডিকেল কলেজে আলোচিত ছিলেন বাঁধন। তিনি বিএমডিসি নিবন্ধিত একজন চিকিৎসক।
দাম্পত্য সংকট ও আইনি লড়াই সম্পাদনা
২০০৫ সালে দ্বিতীয় বর্ষে পড়াকালিন সময়ে ২০০৫-২০০৬ সালে প্রথম বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন। নানান শারীরিক ও পারিবারিক নির্যাতনের জন্য মনস্তাত্বিক সংকটের কারণে তিনি ২০০৫ সালে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন। ২০০৬ সালে লাক্স চ্যানেল আই সুন্দরী প্রতিযোগিতায় তিনি অংশ নেন। ২০১০-২০১৪ সময় তিনি মাশরুর সিদ্দিকী সনেটের সঙ্গে সংসার করেন। ২০১০ সালের ৬ই অক্টোবর বাঁধনের কন্যা সায়রা জন্মগ্রহণ করে। ২০১৪ সালে মাশরুর সিদ্দিকী সনেট মামলা করেন চাঁদাবাজি, প্রতারণা ও চরিত্রহীনতার অভিযোগে। প্রাক্তণ স্বামী মদ্যপ অবস্থায় মারধর করেন বাঁধনকে। ২০১৭ সালে কন্যা সায়েরার বয়স যখন ৬ বছর, তখন নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবদে মামলা ঠুকে দেন বাঁধন। মেয়ের অভিভাবকত্ব দাবি করেন। ২০১৮ সালের ৩০ এপ্রিল আদালতের রায়ে মেয়ের অভিভাবকত্ব পান বাঁধন।
সামাজিক ভূমিকা সম্পাদনা
তিনি সামাজিকভাবে বিভিন্ন অ্যাক্টিভিজমের সঙ্গে যুক্ত আছেন। নারী অধিকার, মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে তিনি সোচ্চার ভূমিকা পালন করছেন। ব্রিটিশ কাউন্সিল আয়োজিত ওয়াও ফেস্টিবলে তিনি নারী অধিকার ও সামাজিক পরিবর্তন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান তুলে ধরেন। ইউএন উইমেনের সামাজিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তিনি ম্যারিটাল রেপ বা বৈবাহিক ধর্ষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার বক্তব্য রাখেন।
‘আমি আক্ষরিক অর্থেই ধ্বংসস্তূপ থেকে ভাঙাচোরা অবস্থায় উঠে আসা এক মানুষ। যে জায়গা থেকে আমি এসেছি, আমার আশেপাশে কাউকে সে রকম জায়গা থেকে ফিরে উঠে দাঁড়িয়ে লড়ে বিজয়ী হতে দেখিনি। আমার জীবনে যা কিছু ঘটেছে, এরপর আমার আর হারানোর কিছু নেই। এ জন্যই হয়তো আমার ভেতর একটা ভীষণ মনোবল কাজ করে। আমি যা করি, মরিয়া হয়ে করি।’ (দৈনিক প্রথম আলোকে বাঁধন)
অভিনয় জীবন সম্পাদনা
বাঁধন ২০০৬ সাল থেকে তার কর্ম জীবন শুরু করেন। ২০১৬ সালে তিনি তীরন্দাজ, ডিবি, মেঘের পরে মেঘ, সহযাত্রী, এই কূলে আমি আর ওই কূলে তুমি, নীল নির্বাসন, ও রূপকথার মা ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করেন। এছাড়া তিনি আরএফএল ফার্নিচার ও কোকোলা নুডুলসের টেলিভিশন বিজ্ঞাপনে কাজ করেন।[২]
তার অভিনীত রেহানা মরিয়ম নূর (২০২১) চলচ্চিত্রটি কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয় এবং তার অভিনয় সমাদৃত হয়। স্ক্রিন ডেইলি লিখে, চলচ্চিত্রটিতে "আজমেরি হক বাঁধনের অভিনয়ের মধ্য দিয়ে এক ধরনের অব্যবস্থিত গতির বিস্তার ধরে রাখে।"[৩]
ব্যক্তিগত জীবন সম্পাদনা
বাঁধন ২০১০ সালে জানুয়ারি মাসে মাশরুর সিদ্দিকী সনেটকে বিয়ে করেন। ২০১০ সালের ৮ই সেপ্টেম্বর এই দম্পতির কন্যা সায়রা জন্মগ্রহণ করে। ২০১৪ সালের ২৬শে নভেম্বর বাঁধন ও সনেটের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।[৪]
কাজ সম্পাদনা
চলচ্চিত্র সম্পাদনা
- নিঝুম অরণ্যে (২০১০)
- রেহানা মরিয়ম নূর (২০২১)
- খুফিয়া (২০২৩)
নাটক সম্পাদনা
- বুয়াবিলাস
- শুভবিবাহ
- "নিয়তির লেখা"
- "এক মুঠো স্বপ্ন"
- "আগুন মুখো টিপ"
- "অদৃশ্য ভালোবাসা "
ধারাবাহিক নাটক সম্পাদনা
- চাঁদ ফুল অমাবস্যা
- বিজি ফর নাথিং
- এয়ারকম
- চৈতা পাগল
- রঙ
ওয়েব সিরিজ সম্পাদনা
পুরস্কার সম্পাদনা
- এশিয়া প্যাসিফিক স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ডসে (অ্যাপসা) সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার। রেহানা মরিয়ম নূর চলচ্চিত্রে রেহানা চরিত্রে অভিনয়ের জন্য।[৬]
আরও দেখুন সম্পাদনা
তথ্যসূত্র সম্পাদনা
- ↑ "আজমেরী হক বাঁধনের ইন্সটাগ্রাম পাতা"। ইন্সটাগ্রাম। ২৮ অক্টোবর ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ২২ নভেম্বর ২০২০।
- ↑ "আজমেরী হক বাঁধন এর ব্যস্ততা"। এবিসি নিউজ। ১৯ এপ্রিল ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২৮ এপ্রিল ২০১৮।
- ↑ "'Rehana': Cannes Review"। স্ক্রিন ডেইলি। সংগ্রহের তারিখ ৯ জুলাই ২০২১।
- ↑ "বিয়ে করলেন বাঁধন!"। আরটিভি অনলাইন। ২২ অক্টোবর ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২৮ এপ্রিল ২০১৮।
- ↑ "সৃজিতের নায়িকা বাঁধন"। Bangla Tribune। ২০২১-০৪-১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-২৬।
- ↑ এশিয়া প্যাসিফিক স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ডে সেরা অভিনেত্রী বাঁধন, যুগান্তর ১২ নভেম্বর ২০২১
বহিঃসংযোগ সম্পাদনা
- ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজে আজমেরী হক বাঁধন (ইংরেজি)