আগম

হিন্দু ধর্মীয় গ্রন্থের সংগ্রহ
(আগম (হিন্দুধর্ম) থেকে পুনর্নির্দেশিত)

আগম (সংস্কৃত: आगम) হল হিন্দু তান্ত্রিক সাহিত্যের একটি সংকলন।[] ‘আগম’ শব্দটির অর্থ প্রথা অথা ‘যা এসেছে’। আগম শাস্ত্রে সৃষ্টিতত্ত্ব, জ্ঞানতত্ত্ব, দার্শনিক মতবাদ, ধ্যান ও সাধনপদ্ধতি, চার যোগ, মন্ত্র, মন্দির নির্মাণের পদ্ধতি, পূজাপদ্ধতি এবং ষড়বিধ কামনাসিদ্ধির উপায় বর্ণিত হয়েছে।[] এই শাস্ত্র লিখিত হয়েছে তামিল[][]সংস্কৃত ভাষায়। আগম শাস্ত্রের আবির্ভাব আগে দক্ষিণ ভারত অঞ্চলে ঘটেছিল, পরে তার সংস্কৃতকরণ ঘটে।[]

আগম শাস্ত্রের তিনটি প্রধান শাখা হল শৈব, বৈষ্ণবশাক্ত। আগম প্রথাকে ক্ষেত্রবিশেষে তান্ত্রিক ধর্ম নামেও অভিহিত করা হয়,[] যদিও ‘তন্ত্র’ শব্দটির দ্বারা নির্দিষ্টভাবে শাক্ত আগমশাস্ত্রকে বোঝায়।[] আগম শাস্ত্র বিশালায়তন: ২৮টি শৈব আগম, ৭৭টি শাক্ত আগম (বা তন্ত্র) এবং ১০৮টি বৈষ্ণব আগম (বা পঞ্চরাত্র সংহিতা) এবং অসংখ্য উপ-আগম এই শাস্ত্রের অন্তর্গত।[]

আগম শাস্ত্রের উৎস ও কালপঞ্জি অস্পষ্ট। এই শাস্ত্রের মধ্যে কয়েকটি বৈদিক এবং অপরগুলি অবৈদিক।[] যোগ ও আত্মপোলব্ধির তত্ত্ব এই শাস্ত্রের অন্তর্গত। কোনও কোনও আগমে কুণ্ডলিনী যোগ আলোচিত হয়েছে।[১০] আবার সন্ন্যাস, দ্বৈত থেকে অদ্বৈত দর্শন পর্যন্ত নানা তত্ত্বও আগমের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কোনও কোনও গবেষকের মতে আগম শাস্ত্র বেদ-উত্তরকালীন, আবার কেউ কেউ মনে করেন এগুলি প্রাক্-বৈদিক যুগের শাস্ত্র যার রচনাকাল খ্রিস্টপূর্ব ১১০০ অব্দেরও পূর্বে।[১১][১২][১৩] অভিলেখ ও অন্যান্য প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণের ভিত্তিতে মনে করা হয়, খ্রিস্টীয় প্রথম সহস্রাব্দের মধ্যভাগে পল্লব রাজবংশের শাসনকালে আগম শাস্ত্রের অস্তিত্ব ছিল।[১৪]

গবেষকদের মতে, হিন্দু আগম শাস্ত্রের কিছু কিছু অংশ বেদের প্রামাণিকতাকে অস্বীকার করেন, আবার অন্য কয়েকটি অংশ নিজস্ব বক্তব্যকে বেদের প্রকৃত ব্যাখ্যা বলে প্রচার করে।[][১৫][১৬] শ্রমণ ধর্মমতগুলিতেও আগম শাস্ত্রের ধারণাটি প্রচলিত (যেমন বৌদ্ধ আগম, জৈন আগম ইত্যাদি)।[১৭][১৮] ইন্দোনেশিয়ার বালি হিন্দু ধর্মীয় ঐতিহ্যটি ‘আগম হিন্দুধর্ম’ নামে পরিচিত।[১৯]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Julius Lipner (2004), Hinduism: the way of the banyan, in The Hindu World (Editors: Sushil Mittal and Gene Thursby), Routledge, আইএসবিএন ০-৪১৫-২১৫২৭-৭, pages 27–28
  2. Mariasusai Dhavamony (2002), Hindu-Christian Dialogue, Rodopi, আইএসবিএন ৯৭৮-৯০-৪২০-১৫১০-৪, pages 54–56
  3. Indira Peterson (1992), Poems to Siva: The Hymns of the Tamil Saints, Princeton University Press, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-২০৮-০৭৮৪-৬, pages 11–18
  4. A Datta (1987), Encyclopaedia of Indian Literature: A-Devo, Sahitya Akademi, আইএসবিএন ৯৭৮-০-৮৩৬৪-২২৮৩-২, page 95
  5. Varadachari, Venkatadriagaram (১৯৮২)। Agamas and South Indian Vaisnavism (ইংরেজি ভাষায়)। Prof. M. Rangacharya Memorial Trust। 
  6. Wojciech Maria Zalewski (2012), The Crucible of Religion: Culture, Civilization, and Affirmation of Life, Wipf and Stock Publishers, আইএসবিএন ৯৭৮-১-৬১০৯৭-৮২৮-৬, page 128
  7. Mariasusai Dhavamony (1999), Hindu Spirituality, Gregorian University and Biblical Press, আইএসবিএন ৯৭৮-৮৮-৭৬৫২-৮১৮-৭, pages 31–34 with footnotes
  8. Klaus Klostermaier (2007), A Survey of Hinduism: Third Edition, State University of New York Press, আইএসবিএন ৯৭৮-০-৭৯১৪-৭০৮২-৪, pages 49–50
  9. PT Raju (2009), The Philosophical Traditions of India, Routledge, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-২০৮-০৯৮৩-৩, page 45; Quote: The word Agama means 'coming down', and the literature is that of traditions, which are mixtures of the Vedic with some non-Vedic ones, which were later assimilated to the Vedic.
  10. Singh, L. P. (2010). Tantra, Its Mystic and Scientific Basis, Concept Publishing Company. আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৮০৬৯-৬৪০-৪
  11. Guy Beck (1993), Sonic Theology: Hinduism and Sacred Sound, University of South Carolina Press, আইএসবিএন ৯৭৮-০-৮৭২৪৯-৮৫৫-৬, pages 151–152
  12. Tripath, S.M. (2001). Psycho-Religious Studies Of Man, Mind And Nature. Global Vision Publishing House. আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৮৭৭৪৬-০৪-১
  13. Drabu, V. N. (1990). Śaivāgamas: A Study in the Socio-economic Ideas and Institutions of Kashmir (200 B.C. to A.D. 700), Indus Publishing Company. আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৮৫১৮২-৩৮-৪. LCCN lc90905805
  14. Richard Davis (2014), Worshiping Śiva in Medieval India: Ritual in an Oscillating Universe, Princeton University Press, আইএসবিএন ৯৭৮-০-৬৯১-৬০৩০৮-৭, pages 12–13
  15. For examples of Vaishnavism Agama text verses praising Vedas and philosophy therein, see Sanjukta Gupta (2013), Lakṣmī Tantra: A Pāñcarātra Text, Motilal Banarsidass, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-২০৮-১৭৩৫-৭, pages xxiii-xxiv, 96, 158–159, 219, 340, 353 with footnotes, Quote: "In order not to dislocate the laws of dharma and to maintain the family, to govern the world without disturbance, to establish norms and to gratify me and Vishnu, the God of gods, the wise should not violate the Vedic laws even in thought – The Secret Method of Self-Surrender, Lakshmi Tantra, Pāñcarātra Agama".
  16. For examples in Shaivism literature, see T Isaac Tambyah (1984), Psalms of a Saiva Saint, Asian Educational Services, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-২০৬-০০২৫-৬, pages xxii-xxvi
  17. Helen Baroni (2002), The Illustrated Encyclopedia of Zen Buddhism, Rosen Publishing, আইএসবিএন ৯৭৮-০-৮২৩৯-২২৪০-৬, page 3
  18. Tigunait, Rajmani (1998), Śakti, the Power in Tantra: A Scholarly Approach, Himalayan Institute Press. আইএসবিএন ৯৭৮-০-৮৯৩৮৯-১৫৪-১. LCCN 98070188
  19. June McDaniel (2010), Agama Hindu Dharma Indonesia as a New Religious Movement: Hinduism Recreated in the Image of Islam, Nova Religio, Vol. 14, No. 1, pages 93–111

উল্লেখপঞ্জি

সম্পাদনা
  • Satguru Sivaya Subramuniyaswami (নভেম্বর ২০০৩) [1979]। "Glossary"Dancing with Shiva, Hinduism's Contemporary Catechism (Sixth সংস্করণ)। Kapaa, HI: Himalayan Academy। পৃষ্ঠা 755। আইএসবিএন 0-945497-96-2। ২০০৬-০৩-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৪-০৪