আংস্ট (জার্মান ভাষা - Angst; আক্ষরিক অর্থ - আতঙ্ক বা ভয়) হল জার্মান ঔপন্যাসিক ও ছোটগল্পকার স্তেফান ৎসোয়াইক রচিত একটি বিখ্যাত বড়গল্প বা নভেলা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অব্যবহিত পূর্ববর্তী জার্মান মধ্যবিত্ত সমাজের পটভূমিতে রচিত এই গল্পটি লেখা হয় ১৯১৩ সালে[১][২], কিন্তু এর প্রথম প্রকাশকাল ১৯২০ সাল[২][৩]

আংস্ট (Angst)
১ম সংস্করণ
লেখকস্তেফান ৎসোয়াইক
মূল শিরোনামAngst
দেশসুইৎজারলান্ড, অস্ট্রিয়াজার্মানি
ভাষাজার্মান
প্রকাশকভিলিয়ামস ভেরলাগ, জুরিখ
প্রকাশনার তারিখ
১৯২০

সারসংক্ষেপ সম্পাদনা

ইরেনা ভাগনার, এক মধ্যবয়স্কা (প্রায় ত্রিশ) মধ্যবিত্ত আট বছরের বিবাহিতা দুই সন্তানের জননী রমণী, এই গল্পের প্রধান চরিত্র। তার একজন গোপন প্রেমিক আছে। বুর্জোয়া মধ্যবিত্ত জীবনের নিস্তরঙ্গ দৈনন্দিকতার তীব্র একঘেয়েমি থেকে মুক্তির স্বাদ পেতে রোমাঞ্চের খোঁজেই তার এই প্রেমিকচয়ন। কিন্তু যখনই সে সেই প্রেমিকের সাথে একান্তে সময় কাটিয়ে বেরিয়ে আসে, এক তীব্র আতঙ্ক এসে তার সর্বশরীর ও সত্ত্বা গ্রাস করে - যদি তার স্বামী কোনওভাবে জেনে যায় তার এই মিথ্যাচরণ। একদিন প্রেমিকের সাথে একান্তে সময় কাটিয়ে যখন সে তার অ্যাপার্টমেন্ট ছেড়ে বেরিয়ে আসছে, সিঁড়ির তলায় বাড়ি থেকে বেরনোর দরজার মুখে তার সাথে দেখা হয়ে যায় এক কুৎসিত মহিলার। সে ইরেনার পথ আটকে দাঁড়িয়ে অভিযোগ করে, ইরেনা তার প্রেমিককে তার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে। মহিলার নাছোড় অভিযোগের মুখে কার্যত দিশেহারা বোধ করে ইরেনা তার ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে হাতের মুঠোয় যা টাকা উঠে আসে তাই দিয়ে কোনওরকমে পালিয়ে বাঁচে। বাড়ি ফিরে সে একটি চিঠিতে তার প্রেমিককে জানায় আর সে তার সাথে দেখা করতে পারবে না। কিন্তু প্রেমিক তার উত্তরে বিধ্বস্ত বোধ করে যে আবেগময় চিঠি লেখে, তাতে তার সিদ্ধান্ত টলে যায় ও সে তার সাথে এক নিকটস্থ কাফেতে দেখা করবে বলে ঠিক করে। দেখা হলে সে তাকে তার এই অদ্ভুত আচরণের কারণ সম্বন্ধে কিছুই জানায় না, শুধু তাকে প্রেমিকসুলভ এক প্রবল উদ্বেগের মধ্যে রেখে দিয়ে রোমান্সের খেলায় সেই মুহূর্তে বিজয়গর্বে বাড়ি ফিরে আসে। কিন্তু বাড়ির দরজার মুখে আবার সেই মহিলার মুখোমুখি হয়ে মুহূর্তে তার সব গর্ব উবে যায় ও আগের সেই তীব্র আতঙ্ক এসে তাকে গ্রাস করে। সে বুঝতে পারে মহিলা তার নাম, পরিচয়, বাসস্থান, সব কিছুই জানে। ফলে স্বামীর কাছে তার পৌঁছে যাওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা। নিজের কাছে সেইমুহূর্তে যা টাকাকড়ি ছিল সবকিছু দিয়ে সে কোনওরকমে মহিলাকে তখনকার মতো বিদেয় করে ঘরে ফিরে আসে ও তারপর তিনদিন আর ঘর ছেড়ে বেরোয় না। তার এই অদ্ভুত আচরণ সকলেরই চোখে পড়ে।

তৃতীয় দিন তাকে স্বামীর সাথে এক বলনাচের আসরে যেতে হয়, সেখানে সে নেশাগ্রস্তের মতো নাচে। কিন্তু নাচতে নাচতেই সে লক্ষ করে, তার স্বামী কেমন যেন অবিশ্বাসের চোখে তাকে দেখছে। বাড়ি ফিরে রাতে সে স্বপ্ন দেখে, সেই মহিলা এসে তার স্বামীর কাছে সবকিছু ফাঁস করে দিয়েছে। পরের দিন সে এক চিঠি পায়, যাতে তার কাছে ১০০ ক্রাউন (মুদ্রা) দাবি করা হয়। সে সাথে সাথে তা পত্রবাহককে দিয়ে দেয়। কিন্তু তাকে বিদায় করে সে যখন খাবার টেবিলে ফিরে আসে, দেখে তাড়াহুড়োতে সে সেই চিঠিটা খোলা অবস্থায় টেবিলের উপরই ফেলে রেখে গেছে। তাড়াতাড়ি সে সেটা তুলে নেয় ও পুড়িয়ে ফেলে। কিন্তু পরে তার স্বামীর কথাবার্তায় তার সন্দেহ হয়, সে নিশ্চয়ই কিছুটা আঁচ করতে পেরেছে। বিকেলবেলায় সে হাঁটতে বেরলে তার প্রেমিকের সাথে তার পথে দেখা হয়, কিন্তু এবার সে তাকে এড়িয়ে যায়। পরেরদিন সে আবার একটা চিঠি পায়, যেখানে এবার ২০০ ক্রাউন দাবি করা হয়েছে। এবারও সে কোনও আপত্তি না করে টাকাটা দিয়ে দেয়।

এরপর একদিন যখন সে বাড়ি ফেরে, দেখে তার স্বামী বাচ্চাদের সাথে খেলা করছে। খেলতে খেলতে বাচ্চা মেয়েটি ছেলেটির একটা খেলনা ভেঙে ফেলে। এর জন্য কে দোষী তা বুঝতে যখন সে তার স্বামীর সাথে কথা বলছে, আবার স্বামীর কথায় তার মনে হয়, স্বামী কিছুটা আন্দাজ করেছে। কিছুক্ষণ পর দরজায় ঘণ্টার শব্দে দরজা খুলে সে আবার সেই মহিলার দেখা পায়। এবার তার দাবি তার এনগেজমেন্ট রিং। প্রথমে সে কিছুতেই এটা দিতে চায়নি, কিন্তু ঠিক সেই সময় তার স্বামী সেখানে এসে পড়ায় তড়িঘড়ি তা দিয়ে মুক্তি পায়। পরের দিন সে শহরে বেড়াতে বেরোয়, কিন্তু সারাটা পথ তার কেবলি মনে হতে থাকে, তার স্বামী তাকে অনুসরণ করছে। শেষপর্যন্ত তার মাথায় একটা বুদ্ধি আসে। সে ঠিক করে, তার প্রেমিকের কাছে গিয়ে সে তাকে ঐ মহিলার সাথে কথা বলতে অনুরোধ করবে। কিন্তু যখন সে এতদিন পর আবার তার প্রেমিকের দরজায় এসে উপস্থিত হয়, সে আর তাকে চিনতে পারে না। ইরেনা বোঝে, সে ইতিমধ্যেই একজন নতুন প্রেমিকা জোগাড় করে নিয়েছে।

নিরুপায় বোধ করে সে কেমিস্টের দোকানে গিয়ে নিজেকে শেষ করার উদ্দেশ্যে কিছু বিষ সংগ্রহ করে। ঠিক সেই সময় তার স্বামী এসে উপস্থিত হয় ও তাকে বাড়ি নিয়ে যায়। এতদিনে সে জানতে পারে, পুরো বিষয়টিই সাজানো। তার স্বামীই তাকে তার ওই গোপন প্রেমিকের কাছ থেকে সরিয়ে আনার উদ্দেশ্যে একজন অভিনেত্রীকে ভাড়া করেছিল। তারফলেই তার এই দুর্দশা।

চরিত্রাবলী সম্পাদনা

এই উপন্যাসের মূল চরিত্র চারজন। এদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় নিচে দেওয়া হল -

  1. ইরেনা ভাগনার - উপন্যাসের মূল চরিত্র। সমগ্র গল্পটি একে ঘিরেই আবর্তিত হয়। আট বছরের বিবাহিতা ও দুই সন্তানের জননী। আধুনিকা ও ফ্যাশনেবল। বুর্জোয়া মধ্যবিত্ত জীবনের একঘেয়ে নিস্তরঙ্গতায় ক্লান্ত ও তার থেকে বেরিয়ে আসতেই অবৈধ প্রেমের রোমাঞ্চের সন্ধানী। আবার একই সাথে প্রতিষ্ঠিত মধ্যবিত্ত জীবনের নিশ্চিন্ততার আশ্রয় ছেড়ে বেরিয়ে আসতেও নারাজ। এই টানাপোড়েনই তার আতঙ্কের উৎস, ব্ল্যাকমেলিং'এর সামনে পড়ে যা অসহনীয় রূপ ধারণ করে ও গল্পকে এগিয়ে নিয়ে চলে।
  2. ফ্রিৎস ভাগনার - ইরেনার স্বামী। প্রতিষ্ঠিত পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধের প্রতিনিধি। গল্পের ঘটনাপঞ্জীর পিছনে আসল মাথা সেই, যদিও তা পাঠকের সামনে উন্মোচিত হয় একেবারে শেষে।
  3. ব্ল্যাকমেলার মহিলা - বড়সড় চেহারা ও নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ যুক্ত এই মহিলা ইরেনার বিপরীতে আশ্চর্য ঠাণ্ডা মাথার এক মহিলা। একেবারে শেষে তার অভিনেত্রী সত্ত্বার পরিচয় ফাঁসের আগে পর্যন্ত এডুয়ার্ডের প্রাক্তন প্রেমিকা ও ইরেনার প্রতি তার প্রবল জিঘাংসামূলক আচরণ ও ব্ল্যাকমেলিং সম্পূর্ণ বিশ্বাসযোগ্য।
  4. এডুয়ার্ড - ইরেনার গোপন প্রেমিক। প্রথম যখন ইরেনা তার কাছ থেকে সরে আসার চেষ্টা করে, তখন তার আচরণ ছিল যথেষ্ট বিশ্বস্ত। কিন্তু মাত্র ক'দিনের মধ্যেই সে অন্য একটি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে।

সমালোচনা সম্পাদনা

বিষয়বস্তু সম্পাদনা

আপাতদৃষ্টিতে গল্পটির বিষয়বস্তু ত্রিকোণ প্রেম ও সেই সঞ্জাত টানাপোড়েন। কিন্তু বাস্তবে এটি একটি সাইকোলোজিকাল নভেলা, যার মূল উপজীব্য মানুষের অন্তরজগতের জটিলতা। বহিরঙ্গের আধুনিক আপাত নিস্তরঙ্গ জীবনের অন্তরালে লুকিয়ে থাকা ঝোড়ো আবেগ, অবদমিত আকাঙ্খা ও এই বাইরের ও ভিতরের দুই বিপরীতমুখী জগতের মধ্যে বোঝাপড়া তৈরির ব্যর্থতা কীভাবে এক একেকটি জীবনকে অন্ধকার খাদের কিনারার দিকে ঠেলে নিয়ে যায়, গল্পটির পরতে পরতে উঠে আসে তারই এক জীবন্ত আখ্যান। ইরেনার জীবন সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ, নিস্তরঙ্গ, সাবলীল। কিন্তু তার অবদমিত প্রেম ও সেই সঞ্জাত রোমাঞ্চের আকাঙ্খা নিরুপায় তাকে বারেবারে টেনে নিয়ে যায় গোপন অভিসারের পথে। কিন্তু, সে জানে, এর ফলে তার সামাজিক অর্থনৈতিক জীবনের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার গুরুতর সম্ভাবনা আছে। আর সেই জানাটাই তার অজানা আতঙ্কের উৎস, যা ব্ল্যাকমেলিং'এর মুখোমুখি হয়ে তীব্র হয়ে ওঠে ও তাকে আত্মহত্যার সিদ্ধান্তের দিকে ঠেলে দেয়। তার স্বামী ফ্রিৎসের ভূমিকা এখানে সিগমুন্ড ফ্রয়েড বর্ণিত সুপার ইগোর। সে স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিয়ে আসে নিজের কাছে, বাচ্চাদের কাছে এবং শেষপর্যন্ত সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধই টিকে যায়, যদিও তার আগে ভিতরের অপূরিত আকাঙ্খা ও বাইরের নিরাপদ সামাজিক জীবনের অসহনীয় টানাপোড়েনে ছিন্নভিন্ন ইরেনা পৌঁছে যায় প্রায় ধ্বংসের কিনারায়। যে ভয়াবহ আতঙ্কের এক আবহ সমগ্র উপন্যাসটির পাঠকালীন ইরেনার মন থেকে উঠে এসে পাঠকমনকেও গ্রাস করে বসে, তা আসলে ভিতরের বাইরের মধ্যে এই চলমান দ্বন্দ্ব্বেরই প্রতীক। এর শিকার আমরা প্রত্যেকেই। আর ঠিক এই জায়গাতে এসেই ব্যক্তি ইরেনা ও তার প্রতিবেশকে ছাপিয়ে গিয়ে এই আতঙ্কের অনুভূতি হয়ে ওঠে সার্বজনীন, দাঁড় করিয়ে দেয় তা আমাদের নিজেদের মুখোমুখি।[৪][৫]

এছাড়াও অন্যান্য যেসব বিষয়বস্তু এই গল্পে উঠে আসে, সেগুলি হল -

  • আধুনিক সভ্যজীবন ও তার সংকট
  • ভালোবাসাহীন বিবাহ বা দেখাশোনা করে বিয়ের সমস্যা
  • আত্মহত্যা
  • ব্ল্যাকমেলিং'এর মুখোমুখি মানুষের আচরণ [৬]

এছাড়াও নারীবাদী ও সমাজতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গীতেও এই উপন্যাসটির অন্যরকম পাঠও সম্ভব।

লিখনশৈলী ও গল্পকথন সম্পাদনা

সমগ্র গল্পটি যদিও প্রথম পুরুষে রচিত ও অ-নামী এক গল্পকথকের (narrator) বয়ানে আমাদের সামনে ঘটনাপঞ্জী উন্মোচিত হয়, পাঠকের সামনে উপস্থিত সমগ্র ছবিটিই ইরেনাকেন্দ্রিক। তার প্রতিটি চলাফেরা, চিন্তাভাবনা, কথাবার্তা অত্যন্ত খুঁটিনাটি সহযোগে বিশদে বর্ণিত হয় - অর্থাৎ এক্ষেত্রে গল্পকথনের রূপ ব্যক্তিকেন্দ্রিক (subjective)। অন্যদিকে ফ্রিৎস বা ব্ল্যাকমেলার মহিলার রূপ, ব্যবহার, আচরণ ও কথাবার্তা তুলে ধরা হয় ইরেনার দৃষ্টিতে। ফলে তাদের আপাত নৈর্ব্যক্তিক বর্ণনার মধ্যেও স্বাভাবিকভাবেই ইরেনার দৃষ্টিভঙ্গীর মিশেল থাকে। অর্থাৎ পাঠকের সামনে সমগ্র ঘটনাবলী উপস্থিত হয় উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র ইরেনার মাধ্যমেই। পাঠক তার ব্যক্তিগত অনুভূতির মাধ্যমেই অন্য সবকিছুকে অবলোকন করে, সেই অনুভূতি পাঠকমনেও সঞ্চারিত হয়। আবার যেহেতু পুরো কথনটিই তৃতীয় এক নামহীন কথকের বয়ানে, যার নিজের অবস্থান গল্পের ঘটনাবলীর বাইরে, একধরনের ব্যক্তি-ঊর্ধ্ব দৃষ্টিভঙ্গীর আভাস একইসাথে প্রতিমুহূর্তে পাঠককে সচেতন করে তোলে সেই ব্যক্তিগত দৃষ্টির সীমাবদ্ধতা সম্বন্ধেও।

অবশ্য গল্পকথনের এই ধরন নিয়েও সূক্ষ্ম এক খেলা চলে। মাঝে মাঝেই সেখানে সামনে চলে আসে সরাসরি ইরেনার নিজের বয়ান, অর্থাৎ কথনের রূপ সেখানে বদলে গিয়ে পরিণত হয় উত্তম পুরুষে, ইরেনার ব্যক্তি আমিতে। বিশেষ করে তার স্বামী বা ব্ল্যাকমেলার মহিলার সাথে কথোপকথনের মুহূর্তে এই বয়ান ব্যবহৃত হয়। ফলে ইরেনার ব্যক্তিগত অনুভূতির সাথে পাঠকের একাত্মতার মাত্রা বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে তার গোপন প্রেমিক এডুয়ার্ডকে আমরা কখনোই তেমন সরাসরি দেখি না, তার আচারআচরণ, কথাবার্তা উঠে আসে হয় রিপোর্টের ভঙ্গিমায়, কথাচ্ছলে অথবা তার স্বামী বা ব্ল্যাকমেলার মহিলার সাথে কথোপকথনের মুহূর্তে প্রসঙ্গক্রমে।[৪] অর্থাৎ, যদিও সমস্ত ঘটনাক্রমের কেন্দ্রে তার সাথে এই গোপন অভিসারটির অবস্থান, পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষিত হয় এই মূল ঘটনাটির চেয়ে বেশি করে ইরেনার মনে তার প্রভাবের উপর। ফলে ঘটনাবিশেষকে ছাপিয়ে সামনে এগিয়ে আসে একধরনের সার্বজনিনতা, পাঠক নিজে যার মধ্যে নিজেকেও আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়।

গল্পটির শিরোনামও আংস্ট বা 'আতঙ্ক'। অর্থাৎ এই সার্বজনীন অনুভূতিটিই এর ফোকাসবিন্দু। ইরেনার ঘটনা শুধুমাত্র তার এক উদাহরণ মাত্র। গল্পকথনের সময়ে নামহীন কথকের ব্যবহৃত বাক্যগুলিও প্রায়শই এমনভাবে সামনে আসে, যেন মনে হয় পাঠককে সরাসরি সম্বোধন করেই গল্পটি বলা হচ্ছে।[৪] অর্থাৎ এক্ষেত্রে গল্পটির বৃহত্তর পরিসীমার মধ্যে পাঠক নিজেও অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ে। ফলে গল্পের সার্বজনীন পরিধিই আরও বৃদ্ধি পায়।

চলচ্চিত্ররূপ সম্পাদনা

এই বড়গল্পটি বহুবার চলচ্চিত্ররূপ লাভ করেছে। এগুলির মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্যগুলি হল -

  1. ১৯২৮ঃ আংস্ট (আংস্ট - ডি শোয়েরা স্টুন্ডা আইনার ফ্রাউ); পরিচালনা - হানস স্টাইনহফ; অভিনয়ে - এলগা ব্রিঙ্ক, হেনরি এডওয়ার্ডস, গুস্তাফ ফ্র্যোলিখ।
  2. ১৯৩৬ঃ আংস্ট (লা প্যোর) পরিচালনা - ভিক্তর তুরজানস্কি
  3. ১৯৫৪ঃ আংস্ট (লা পাউরা); পরিচালনা - রোবের্তো রোসেলিনি; অভিনয়ে - ইনগ্রিড বার্গমান, মাটিয়াস ভিমান, এডিথ শুলৎসা-ভেস্টরুম এবং ক্লাউস কিন্সকি।
  4. ১৯৯২ঃ আংস্ট (লা প্যোর) পরিচালনা - দানিয়েল ভিইন; অভিনয়ে - নিকোলা ফারোঁ, মরিস বাকে, সিনসিয়া দ্য পন্তি এবং হানস ৎসিশলার।

নাট্যরূপ সম্পাদনা

স্তেফান ৎসোয়াইকের লেখা এই উপন্যাসটি ছোট হলেও এর নাট্য সম্ভাবনা বিপুল।[৬] তারই সাথে সামঞ্জস্য রেখে একাধিকবার একে নাট্যরূপদান করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কোয়েন টাখেলেট-এর প্রস্তুত এর নাট্যরূপটি। এই নাট্যরূপটিই আরো কিছুটা পরিমার্জনা করে ২০১০ সালের ২৮ জুন সালৎসবুর্গ নাট্যমেলায় অভিনীত হয়। এক্ষেত্রে পরিচালক ইয়োসি ভাইলার ৎসোয়াইকের মূল গল্পের প্রতি সম্পূর্ণ বিশ্বস্ত থেকেও সময় ও পটভূমিকে ১৯০০ সালের ভিয়েনা থেকে সরিয়ে এনে স্থাপন করেছেন বর্তমানে।[৭] গল্পটির বিষয়বস্তুর সার্বজনিনতা ও কালোত্তির্ণতার এ' এক বড় প্রমাণ।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Angst" - Novelle 1920 (Veröffentlicht) ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩০ এপ্রিল ২০১৭ তারিখে সংগৃহীত ১৫ এপ্রিল, ২০১৬।
  2. Zweig, Stefan. Fear. Tr. Anthea Bell. London: Pushkin, 2010. আইএসবিএন ৯৭৮-১-৯০৬৫৪৮-১৮-৬
  3. Stefan Zweig: Angst (Novelle) সংগৃহীত ১৫ এপ্রিল, ২০১৬।
  4. Wiechert, Carolin. Stefan Zweigs Novelle 'Angst' als typisches Beispiel für das Fin de Siècle. ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৬ মার্চ ২০১৬ তারিখে 2007. আইএসবিএন ৯৭৮-৩-৬৪০-৫৮৬৩২-৫
  5. "Angst - Stefan Zweig". Schreiben10. সংগৃহীত ১৭ এপ্রিল, ২০১৬।
  6. "Angst". ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে Angelfire. সংগৃহীত ১৭ এপ্রিল, ২০১৭।
  7. "Die Wahrheit ist konkret!" FAZ. 28.07.2010. সংগৃহীত ১৬ এপ্রিল, ২০১৬।।