অ্যালেন স্মিথ

ইংরেজ ক্রিকেটার

অ্যালেন ক্রিস্টোফার স্মিথ, সিবিই (ইংরেজি: Alan Smith; জন্ম: ২৫ অক্টোবর, ১৯৩৬) বার্মিংহামের হল গ্রীন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী সাবেক ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার, রেফারি ও প্রশাসক।[১] ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৬২ থেকে ১৯৬৩ সময়কালে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।

অ্যালেন স্মিথ
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামঅ্যালেন ক্রিস্টোফার স্মিথ
জন্ম (1936-10-25) ২৫ অক্টোবর ১৯৩৬ (বয়স ৮৭)
হল গ্রীন, বার্মিংহাম, ওয়ারউইকশায়ার, ইংল্যান্ড, যুক্তরাজ্য
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম
ভূমিকাউইকেট-রক্ষক, রেফারি, প্রশাসক
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ৪১৪)
৩০ নভেম্বর ১৯৬২ বনাম অস্ট্রেলিয়া
শেষ টেস্ট১৫ মার্চ ১৯৬৩ বনাম নিউজিল্যান্ড
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি এলএ
ম্যাচ সংখ্যা ৪২৮ ৮২
রানের সংখ্যা ১১৮ ১১,০২৭ ৫৯৪
ব্যাটিং গড় ২৯.৫০ ২০.৯২ ১৪.১৪
১০০/৫০ –/১ ৩/৩৮
সর্বোচ্চ রান ৬৯* ১৪৫ ৩৯*
বল করেছে ৭,১৫৮ ১,০৩৮
উইকেট ১৩১ ১৯
বোলিং গড় ২৩.৪৬ ৩৩.৬৮
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ৫/৩২ ৫/১৯
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ২০/– ৭১৫/৬১ ৫৮/২
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ১ এপ্রিল ২০২০

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ওয়ারউইকশায়ার ও অক্সফোর্ড দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ উইকেট-রক্ষক হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন এ. সি. স্মিথ নামে পরিচিত অ্যালেন স্মিথ

শৈশবকাল সম্পাদনা

বার্মিংহামের কিং এডওয়ার্ডস স্কুলে অধ্যয়ন করেন অ্যালেন স্মিথ। এরপর, অক্সফোর্ডের ব্রাসেননোজ কলেজে পড়াশুনো সম্পন্ন করেন তিনি। ১৯৫৮ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্যরূপে মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) বিপক্ষে খেলেন। ব্যাটিং উদ্বোধনে নেমে ১০৬ রানের ইনিংস খেলেন। এটিই তার প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে প্রথম শতরানের ঘটনা ছিল।[২]

অক্সফোর্ডে থাকাকালে ১৯৫৭ থেকে ১৯৬০ সময়কালে তিন বছরের সবগুলোতেই ব্লুধারী হন। তন্মধ্যে, শেষের দুই বছর অক্সফোর্ড দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। ১৯৫৯ সালে হ্যাম্পশায়ারের বিপক্ষে অক্সফোর্ডের অধিনায়কত্ব করেন। এ পর্যায়ে উইকেট-রক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ব্যাট হাতে উভয় ইনিংসে ১৪৫ ও ১২৪ রান তুলেছিলেন তিনি।[৩]

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট সম্পাদনা

১৯৫৮ সাল থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত অ্যালেন স্মিথের প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। কার্যকর অল-রাউন্ডার হিসেবে খেলেন। ক্ষ্যাপাটে মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান অ্যালেন স্মিথ ডানহাতে ভুলভাবে বোলিং করতেন। দর্শনীয় না হলেও বেশ শান্ত ঢংয়ে উইকেট-রক্ষণে অগ্রসর হতেন। বেশ কয়েকবার পূর্ণাঙ্গ ক্রিকেটারের সম্মাননা পান। খুবই অপ্রত্যাশিতভাবে নিয়মিত উইকেট-রক্ষক হিসেবে কখনো কখনো ওয়ারউইকশায়ারের সম্মুখসারির বোলার হিসেবে খেলতেন।

১৯৬০ সালে ফ্রি ফরেস্টার্সের বিপক্ষে খেলেন। এ পর্যায়ে চার্লস ফ্রাইয়ের সহকারী ছিলেন। বোলিং কর্মে অগ্রসর হন। ৫/৩২ ও ৪/৪৫ লাভ করেন। এরপূর্বে কোন প্রথম-শ্রেণীর ইনিংসেই একের অধিক উইকেট পাননি তিনি।[৪] ১৯৬৫ সালে ওয়ারউইকশায়ারের অধিনায়ক হিসেবে তার সাথে সম্পর্কবিহীন এম. জে. কে. স্মিথের স্থলাভিষিক্ত হন তিনি। ১৯৭৪ সালে অবসর গ্রহণের পূর্ব-পর্যন্ত এ দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৬৫ সালে এসেক্সের বিপক্ষে বোলার হিসেবে হ্যাট্রিক লাভের ন্যায় অবিশ্বাস্য কীর্তির সাথে স্বীয় নামকে জড়িয়ে রাখেন। এ পর্যায়ে প্রথম-শ্রেণীর খেলায় তিনি উইকেট-রক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।[৫]

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে তিনটি শতরানের ইনিংস খেলেন। তন্মধ্যে, দুইটিই করেন ১৯৫৯ সালে অক্সফোর্ডের সদস্যরূপে। ১৯৭০ সালে ইনিংসে ছয়টি ক্যাচ গ্লাভসবন্দী করেন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সম্পাদনা

ইংল্যান্ডের পক্ষে সর্বশেষ শৌখিন খেলোয়াড় হিসেবে অংশ নিয়েছেন। মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাব (এমসিসি) শৌখিন খেলোয়াড়ের মর্যাদা বিলুপ্তির পূর্ব-পর্যন্ত তিনি এ পরিচিতি পেয়েছেন।[১] সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে ছয়টিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণ করেছেন অ্যালেন স্মিথ। ৩০ নভেম্বর, ১৯৬২ তারিখে ব্রিসবেনে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। ১৫ মার্চ, ১৯৬৩ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড দলের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন তিনি।

ইংল্যান্ডের পক্ষে অভিষেক ঘটা উইকেট-রক্ষক জিম পার্কস, জুনিয়রের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হতে হয় তাকে। ফলশ্রুতিতে, ১৯৬২-৬৩ মৌসুমে টেড ডেক্সটারের অধিনায়কত্বে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে সফর শেষে তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণের সুযোগ অনেকাংশেই কমে যায়। অস্ট্রেলিয়ায় চার টেস্টে অংশ নিয়ে ব্যাট হাতে ব্যর্থ হন। তবে, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে দশ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৬৯ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি।[৬] কলিন কাউড্রে’র সাথে নিরবচ্ছিন্ন ১৬৩ রানের জুটি গড়ে দলকে ইনিংস ব্যবধানে জয়লাভে প্রভূতঃ ভূমিকা রাখেন। এটিই এ সফরে তার একমাত্র ব্যাটিং সাফল্য ছিল।

আট টেস্টের ছয়টিতে উইকেট-রক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন। তবে, জন মারেজিম পার্কসের সাথে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হতে হয়েছিল তাকে। তাসত্ত্বেও, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে প্রত্যাখ্যাত হবার পর ওয়ারউইকশায়ারের পক্ষে সুন্দরভাবে খেলা চালিয়ে যেতে থাকেন। ১৯৭২ সালে চ্যাম্পিয়নশীপ ও ১৯৬৮ সালে জিলেট কাপের শিরোপা বিজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

অবসর সম্পাদনা

ওয়েস্ট ইন্ডিজের উইকেট-রক্ষক ডেরেক মারে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত ওয়ারউইকশায়ারের পক্ষে খেলতে থাকেন। ফলে খুব কম সময়ই স্মিথকে উইকেট-রক্ষণে থাকতে হতো। ফলশ্রুতিতে, খেলোয়াড়ী জীবনের শেষদিকে উত্তরোত্তর নিয়মিতভাবে বোলিংয়ের দিকে ধাবিত হন। ১৯৭২ সালে গ্ল্যামারগনের বিপক্ষে ৫/৪৭ পান।[৭] নর্দান্টসের বিপক্ষে ৪০-ওভারের খেলায় ৫/১৯ লাভ করেন।[৮] আরেকবার ওয়ারউইকশায়ারের সদস্য থাকাকালে তিনজন আন্তর্জাতিক মানের উইকেট-রক্ষকের উপস্থিতি ছিল। তবে, কেউ উইকেট-রক্ষণে ছিলেন না। ডেরেক মারে আঘাতগ্রস্ত ছিলেন, রোহন কানহাই উইকেট-রক্ষণের দায়িত্ব ছেড়ে দেন। স্মিথকে বোলিংয়ের জন্যে আমন্ত্রণ জানানো হলে মাঝে-মধ্যে উইকেট-রক্ষকের দায়িত্ব পালনকারী জন জেমসনকে স্ট্যাম্পের পিছনে অবস্থান করতে হয়েছিল।[৯]

ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর প্রশাসন জগতের দিকে ধাবিত হন ও শীর্ষস্থানীয় প্রশাসকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত ওয়ারউইকশায়ারের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর, ১৯৮৬ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত টেস্ট ও কাউন্টি ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব পালনসহ ইংল্যান্ড দল নির্বাচক ছিলেন।[১] ইংল্যান্ড দলের ব্যবস্থাপক হিসেবে বিদেশ গমন করেন।

অবসর সময়ে অ্যাসটন ভিলা’র পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও, ফুটবলে তিনি ব্লুধারী ছিলেন।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

আরও দেখুন সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা