অ্যান্ড্রু ক্যাডিক

ইংরেজ ক্রিকেটার

অ্যান্ড্রু রিচার্ড ক্যাডিক (ইংরেজি: Andrew Caddick; জন্ম: ২১ নভেম্বর, ১৯৬৮) ক্রাইস্টচার্চে জন্মগ্রহণকারী প্রথিতযশা সাবেক ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের পক্ষে ফাস্ট বোলার হিসেবে অংশগ্রহণ করে বেশ সুনাম কুড়িয়েছিলেন। ৬ ফুট ৫ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী ‘ক্যাডি’ ডাকনামে পরিচিত দীর্ঘদেহী অ্যান্ড্রু ক্যাডিক ইংল্যান্ডের পক্ষে সফলতম বোলার হিসেবে এক দশকেরও অধিক সময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে অতিবাহিত করেন।[] টেস্ট খেলায় অংশ নিয়ে ১৩বার পাঁচ-উইকেট লাভের সৌভাগ্য অর্জন করেন।[] তিনি তার পুরো খেলোয়াড়ী জীবন সমারসেট কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলেছেন। এরপর ২০০৯ সালে উইল্টশায়ারের পক্ষে মাইনর কাউন্টিজে এক খেলায় অংশ নিয়েছিলেন।[] দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। পাশাপাশি নিচেরসারিতে ডানহাতে ব্যাটিংয়ে পারদর্শীতা দেখিয়েছেন তিনি।

অ্যান্ড্রু ক্যাডিক
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নাম
অ্যান্ড্রু রিচার্ড ক্যাডিক
জন্ম (1968-11-21) ২১ নভেম্বর ১৯৬৮ (বয়স ৫৫)
ক্রাইস্টচার্চ, নিউজিল্যান্ড
ডাকনামক্যাডি
উচ্চতা৬ ফুট ৫ ইঞ্চি (১.৯৬ মিটার)
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম
ভূমিকাবোলার
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ৫৫৯)
৩ জুন ১৯৯৩ বনাম অস্ট্রেলিয়া
শেষ টেস্ট২ জানুয়ারি ২০০৩ বনাম অস্ট্রেলিয়া
ওডিআই অভিষেক
(ক্যাপ ১২১)
১৯ মে ১৯৯৩ বনাম অস্ট্রেলিয়া
শেষ ওডিআই২ মার্চ ২০০৩ বনাম অস্ট্রেলিয়া
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
২০০৯উইল্টশায়ার
১৯৯১-২০০৯সমারসেট (জার্সি নং ১০)
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট ওডিআই এফসি এলএ
ম্যাচ সংখ্যা ৬২ ৫৪ ২৭৫ ২৬২
রানের সংখ্যা ৮৬১ ২৪৯ ৪২৫৯ ৮১০
ব্যাটিং গড় ১০.৩৭ ১২.৪৫ ১৪.৮৯ ১০.৬৫
১০০/৫০ ০/০ ০/০ ০/৯ ০/০
সর্বোচ্চ রান ৪৯* ৩৬ ৯২ ৩৯
বল করেছে ১৩৫৫৮ ২৯৩৭ ৫৯৬৬৩ ১২৮২৭
উইকেট ২৩৪ ৬৯ ১১৮০ ৩৪১
বোলিং গড় ২৯.৯১ ২৮.৪৭ ২৬.৫৯ ২৬.৬২
ইনিংসে ৫ উইকেট ১৩ ৭৮
ম্যাচে ১০ উইকেট - ১৭ -
সেরা বোলিং ৭/৪৬ ৪/১৯ ৯/৩২ ৬/৩০
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ২১/– ৯/– ৮৮/– ৪৪/–
উৎস: ক্রিকইনফো, ৩ মে ২০১৭

প্রারম্ভিক জীবন

সম্পাদনা

ইংরেজ পিতা-মাতার সন্তান ক্যাডিক নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে জন্মগ্রহণ করেন।[] পাপানুই হাইস্কুলে অধ্যয়ন করেন তিনি।[] তরুণ অবস্থায় তার বোলিং ভঙ্গীমা অনেকাংশেই রিচার্ড হ্যাডলি’র অনুরূপ ছিল।[] নিউজিল্যান্ডের যুব ক্রিকেটারদের একজন হিসেবে তিনবার খেলেছেন। ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৮ সালে সবগুলো খেলায় অংশ নিয়েছিলেন তিনি।[] তবে তার ক্রীড়াশৈলী অনেকাংশেই অনুল্লেখযোগ্য ছিল। সফরকারী ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সদস্যরূপে প্রথম একদিনের খেলায় ব্যাটহাতে অপরাজিত ২০* ও ১/১৬ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন।[] ভারতের বিপক্ষে পরবর্তী দুই খেলায় মাঝারীমানের ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করার পর ১৯৮৮ সালের ম্যাকডোনাল্ডস দ্বিশতবার্ষিকী যুব বিশ্বকাপের প্রথম খেলায় অংশ নেন। ০/৩৯ বোলিং পরিসংখ্যান গড়ার পর তিনি তার স্থান হারান ও পরবর্তীতে আর তাকে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে খেলতে দেখা যায়নি।[]

ইংল্যান্ড গমন

সম্পাদনা

নিউজিল্যান্ডের টেস্ট দলে অংশগ্রহণের আর কোন আশা না থাকায় ইংল্যান্ডে ভাগ্যান্বেষণে চলে যান।[] পরবর্তীকালে নিউজিল্যান্ডীয় অধিনায়ক কেন রাদারফোর্ড মন্তব্য করেন যে, তাকে অনুশীলনীতেই ব্যস্ত থাকতে দেখা যেত এবং আমরা তার ন্যায় খেলোয়াড়দের হাতছাড়া না করতে অল্পই চেষ্টা চালিয়েছি।[১০] ১৯৮৮ সালের শেষদিকে ও ১৯৮৯ সালের শুরুতে মিডলসেক্স দ্বিতীয় একাদশে বেশ ভালো খেলেন। চার খেলায় অংশ নিয়ে ২৬.৭১ গড়ে ১৭ উইকেট পান।[১১] জুন, ১৯৮৯ সালে সমারসেট দ্বিতীয় একাদশে অভিষেক ঘটে তার। অভিষেক খেলার প্রথম ইনিংসে ৮/৪৬ পান।

১৯৯০ ও ১৯৯১ মৌসুমে জিমি কুক ক্লাবের বিদেশী খেলোয়াড় হওয়ায় দ্বিতীয় একাদশ চ্যাম্পিয়নশীপে খেলার সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ে। ফলশ্রুতিতে ইংরেজ খেলোয়াড় হিসেবে খেলার সুযোগ লাভের জন্য চার বছর অপেক্ষা করতে থাকেন। তাস্বত্ত্বেও মে, ১৯৯১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সমারসেটের সদস্যরূপে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার।[১২] ঐ মৌসুমে আগস্ট মাসে সফরকারী শ্রীলঙ্কা দলের বিপক্ষে আর একটিমাত্র খেলার সুযোগ পান।[]

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট

সম্পাদনা

ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে দূর্দান্ত ক্রীড়ানৈপুণ্য প্রদর্শন করায় ১৯৯৩ সালের অ্যাশেজ সিরিজকে ঘিরে ইংল্যান্ডের টেস্ট ও একদিনের আন্তর্জাতিক দলে খেলার জন্য তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

ওল্ড ট্রাফোর্ডে টেক্সাকো ট্রফি সিরিজের প্রথম ওডিআইয়ে অভিষেক হয় তার। গড়পড়তা বোলিং নৈপুণ্য প্রদর্শন করে ১/৫০ পান। দলের জয়ের জন্য ১১ রান থাকাবস্থায় তিনি ক্রিজে নামেন।[১৩] চূড়ান্ত ওভারের পূর্বে চার রান যুক্ত হয়। রিচার্ড ইলিংওয়ার্থের সাথে জুটি গড়ে লেগ বাইয়ে এক রান তুলে ব্যবধান কমান। শেষ দুই বলে ছয় রানের প্রয়োজন পড়লে লং লেগে বল ফেলে দুই রান তোলার চেষ্টা চালান। কিন্তু ইলিংওয়ার্থ ক্রিজে অবস্থান করেও রান-আউটের শিকার হন।[১৪] ফলশ্রুতিতে ইংল্যান্ড চার রানে পরাজয়বরণ করে।[১৩] দ্বিতীয় ওডিআইয়ে তেমন খেলা উপহার দেননি ও ব্যাটিংয়ের প্রয়োজন হয়নি তার। এজবাস্টনের ব্যাটিং উপযোগী ট্র্যাকে কোন উইকেটও পাননি।[১৫] সিরিজে দল ইতোমধ্যে হেরে গেলেও তৃতীয় ওডিআইয়ে তিন উইকেট পান ও অস্ট্রেলীয়দেরকে ২৩০ রানে আটকিয়ে দেন। ইংল্যান্ডের ধারণা জন্মে যে তারা খুব সহজেই লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছে যাবে।[১৬] কিন্তু, ব্যাটিংয়ে ধ্বস নামলে অস্ট্রেলিয়া দল ৩-০ ব্যবধানে জয় তুলে নেয়।[১৬]

টেস্ট সিরিজে অস্ট্রেলীয়দের শক্ত ব্যাটিং মেরুদণ্ড থাকায় তাকে বেশ কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। কেবলমাত্র ট্রেন্ট ব্রিজে একটি অধিবেশনেই নিজেকে মেলে ধরতে পেরেছিলেন। এরফলে পঞ্চম ও ষষ্ঠ টেস্টে দল থেকে বাদ পড়েন।

তবে, ইংল্যান্ড দলের বাইরে তাকে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়নি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে দলের সদস্য মনোনীত করা হয়। ১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে স্মরণীয় সাফল্য পান। কুইন্স পার্ক ওভালে অনুষ্ঠিত তৃতীয় টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় ইনিংসে ৬/৬৫ পান। কিন্তু খেলায় কার্টলি অ্যামব্রোসের ১১ উইকেটের দূর্দান্ত বোলিং পরিসংখ্যানে ইংল্যান্ড দল মাত্র ৪৬ রানে গুটিয়ে যায়। বার্বাডোসের ব্রিজটাউনের কেনসিংটন ওভালের চতুর্থ টেস্টে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে ৫/৬৩ পান। এবার অ্যালেক স্টুয়ার্টের উভয় ইনিংসে সেঞ্চুরি ও অ্যাঙ্গাস ফ্রেজারের ৮/৭৫ লাভের মাধ্যমে দলকে জয়লাভে প্রভূতঃ সহায়তা করেন। এরফলে অর্ধ-শতকেরও অধিক সময় ব্রিজটাউনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অপরাজিত থাকার রেকর্ডে ছেদ ঘটে। তবে, সিরিজে ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রহকারীর মর্যাদা পান ১৮ উইকেট নিয়ে। ২০০১ সালে উইজডেন কর্তৃপক্ষ তাকে বর্ষসেরা ক্রিকেটার হিসেবে মনোনীত করে।

২০০৭ সালে আটত্রিশ বছর বয়সে এসেও ইংল্যান্ডের শীর্ষসারির উইকেট সংগ্রহকারীর ভূমিকায় ছিলেন। ২৩.১০ গড়ে ৭৫ উইকেট পেয়েছিলেন তিনি।[১৭] ফলশ্রুতিতে, সমারসেট কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের দ্বিতীয় বিভাগ থেকে নিজেদেরকে উত্তরণ ঘটাতে সক্ষম হয়। ঐ বড়দিনে পিঠের আঘাতের কারণে অস্ত্রোপচার করতে হয়েছিল। ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ সালে পুনরায় সমারসেটের প্রস্তুতিমূলক খেলায় যোগ দেন।[১৮] ১৯৯৯ সালে সমারসেট কর্তৃপক্ষ ক্যাডিককে আর্থিক সুবিধা মৌসুমের আওতায় নিয়ে আসে।[] এছাড়াও জুন, ২০০৯ সালে ওয়ালস মাইনর কাউন্টিজের বিপক্ষে উইল্টশায়ারের পক্ষে খেলেন। আগস্ট, ২০০৯ সালের শুরুতে ক্যাডিক মৌসুম শেষে প্রথম-শ্রেণীর খেলা থেকে অবসরের ঘোষণা দেন।[১৯]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "Andy Caddick"। Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৮-০৭ 
  2. "First-Class matches played by Andy Caddick"। Cricket Archive। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৮-০৭(সদস্যতা নেয়া প্রয়োজন (সাহায্য)) 
  3. "Caddick calls it a day"। Western Morning News। ২০০৯-০৮-০৩। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৮-০৯ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  4. Clutton, Graham (২০০৯-০৮-০২)। "Andy Caddick set to call time on his career at the end of the season"। Telegraph.co.uk। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৮-১২ 
  5. "Players: Andrew Caddick"। ECB। ২০০৯-০৯-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৮-১২ 
  6. "Youth One-Day International Matches played by Andy Caddick"। Cricket Archive। ২০১২-১০-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৮-১২(সদস্যতা নেয়া প্রয়োজন (সাহায্য)) 
  7. "New Zealand Young Cricketers v India Under-19s in 1987/88"। Cricket Archive। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৮-১২(সদস্যতা নেয়া প্রয়োজন (সাহায্য)) 
  8. "New Zealand Young Cricketers v Sri Lanka Young Cricketers in 1987/88"। Cricket Archive। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৮-১২(সদস্যতা নেয়া প্রয়োজন (সাহায্য)) 
  9. Longley, Geoff (২০০৯-০৬-২৭)। "County exalts 'old' bowler"The Press। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৬-২৭ 
  10. Moore, Glenn (১৯৯৪-০৪-২৫)। "Cricket:Inexperienced Kiwis ready to test England"। The Independent। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৮-১২ 
  11. "Second Eleven Championship Matches played by Andy Caddick"। Cricket Archive। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৮-১২(সদস্যতা নেয়া প্রয়োজন (সাহায্য)) 
  12. "Somerset v West Indians in 1991"। Cricket Archive। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৮-০৫(সদস্যতা নেয়া প্রয়োজন (সাহায্য)) 
  13. "England v Australia in 1993 (1st ODI)"। Cricket Archive। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৮-১২(সদস্যতা নেয়া প্রয়োজন (সাহায্য)) 
  14. Selvey, Mike (১৯৯৩-০৫-২০)। "England fall short in more ways than one"। Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৮-১২ 
  15. "England v Australia in 1993 (2nd ODI)"। Cricket Archive। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৮-১২(সদস্যতা নেয়া প্রয়োজন (সাহায্য)) 
  16. "England v Australia 1993 (3rd ODI)"। Wisden। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৮-১২ 
  17. "2007 in England – Most first-class wickets"। Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৯-২৪ 
  18. "Bowler Caddick back in training"। BBC News। ২০০৮-০২-০৮। ১১ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০২-১৩ 
  19. "Caddy calls time on first-class career"। Somerset County Cricket Club। ২০০৯-০৮-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৮-০৩ 

আরও দেখুন

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা