অলঙ্কারশাস্ত্র

‘অলঙ্কার’ শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ সুসজ্জিতকরণ বা বিভূষিতকরণ। শব্দে সাধারণ অর্থের অতিরিক্ত এক চমৎকারিত্ব সৃষ্টিই হলো অলঙ্কার। কাব্যের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য যার দ্বারা কাব্যভাষাকে সৌন্দর্যমন্ডিত করা হয় তাকে অলঙ্কার বলে। সংস্কৃতে একে সাহিত্যশাস্ত্র বা সাহিত্যতত্ত্ব নামেও অভিহিত করা হয়।

নাইট একাডেমিতে একটি বক্তৃতার চিত্র, পিটার আইজাক্স বা রেনহোল্ড টিম দ্বারা রোজেনবার্গ ক্যাসলের জন্য সাতটি স্বাধীন শিল্পকে চিত্রিত করে সাতটি চিত্রের একটি সিরিজের অংশ হিসাবে আঁকা। এই চিত্র অলঙ্কারশাস্ত্রকে ব্যাখ্যা করে।

সংজ্ঞাসম্পাদনা

  • ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে

যেগুণ দ্বরা ভাষার শক্তিবর্ধন ও সৌন্দর্য সম্পাদন হয়, তাকে অলঙ্কার বলে

  • ড. শুদ্ধস্বত্ত্ব বসুর মতে

অলঙ্কার শব্দের একটা ব্যাপক অর্থ আছে যার দ্বারা রস, রীতি, ধ্বনি, গুণ, ক্রিয়া, অনুপ্রাস, উপমা, বিরোধ, বক্রোক্তি প্রভৃতিকে বোঝায়, কারণ কাব্যসৌন্দর্য বলতে এগুলোকে অবশ্যই ধরতে হবে

প্রকারভেদসম্পাদনা

শব্দালঙ্কারসম্পাদনা

শব্দালঙ্কার শব্দের ধ্বনিগত সৌন্দর্যবৃদ্ধি করে। এই অলঙ্কার পুরোপুরি ধ্বনিসুষমার ওপর নির্ভর করে। তাই এই ধরনের অলঙ্কারে শব্দকে বদল করা চলে না। যেমন-
১. এদেশে বিদ্যার মন্দিরে সুন্দরের প্রবেশ নিষেধ।
২. ‘বাঘের বিক্রমসম মাঘের রজনী।’

উপর্যুক্ত উদাহরণ দুটোতে শব্দের ধ্বনির পরিবর্তন করলে শব্দালঙ্কার বিনষ্ট হয়। প্রথম উদাহরণে যদি এদেশে না বলে এ প্রদেশে বা পুরো বাক্য পরিবর্তন করে বলা হয ‘এ প্রদেশে বিদ্যাশিক্ষার প্রথা অত্যন্ত নীরস’ তাহলে শ্লেষ ও অনুপ্রাস থাকে না। আবার দ্বিতীয় উদাহরণে শব্দের আদিতে ‘ব’ ধ্বনি, প্রথমটি ছাড়া অন্যান্য সব শব্দে ‘ম’ ধ্বনি এবং প্রথম পর্বের আদিতে ‘বাঘের’ সাথে মিল রেখে দ্বিতীয় পর্বের আদিতেও অনুরূপ শব্দ ব্যবহৃত হবার ফলে যে ব্যঞ্চনা সৃষ্টি হয় তাই অলঙ্কার। শব্দালঙ্কার ছয় প্রকার। যেমন- অনুপ্রাস, যমক, শ্লেষ, বক্লোক্তি, ধ্বনি্যুক্তি, পুনরুক্তবদাভাস। নিম্নে এই প্রসঙ্গে আলোচনা করা হলো।

অনুপ্রাসসম্পাদনা

একই রকম বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি বারবার ব্যবহৃত হলে তাকে অনুপ্রাস বলে। যেমন-

  • ‘চুলতার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা।’
  • কাননে কুসুম কলি সকলি ফুটিল।

যমকসম্পাদনা

একই শব্দ বা একই রকম শব্দ দুটি দুইবার বা ততোধিকবার উচ্চারিত হয় এবং ভিন্ন ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করে তাকে যমক বলে। যেমন-

  • ভারত ভারত খ্যাত আপনার গুণে।
  • গুরুর কাছে লব গুরু দুখ।
  • সুশাসনের দ্বারা হর্ষবর্ধন প্রজাদের হর্ষ বর্ধন করেছিলেন।
  • আনাদরে আনা যায় কত আনারস।

শ্লেষসম্পাদনা

একটি শব্দ যখন একাধিক অর্থে একবার বাক্যে বসে তখন তা শ্লেষ অলঙ্কার হয়। যেমন-

কে বলে ঈশ্বরগুপ্ত ব্যাপ্ত চরাচর,

যাহার প্রভায় প্রভা পায় প্রভাকর।

ধ্বন্যুক্তিসম্পাদনা

শব্দের উচ্চারণের দ্বারাই যদি অর্থের আভাস ঘটে অর্থাৎ বাক্যের ধ্বনিরূপ দিয়ে অর্থ প্রকাশ করা হলে এবং একটি সুরের ব্যঞ্জনা সৃষ্টি হলে, তা ধ্বন্যুক্তি অলঙ্কার হয়। যেমন-

বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর
বাজছে বাদল গামর গঞ্জর।
টাটুর টুপুর গামুর গুমুর
গামুর গুমুর টাপুর টুপুর
ঝাপুর ঝুপুর ছাপুর ছুপুর
ছাপুর ছুপুর ছাপুর ছুপুর

তথ্যসূত্রসম্পাদনা