অরুণ লাল

ভারতীয় ক্রিকেটার

জগদীশলাল অরুণ লাল (উচ্চারণ; জন্ম: ১ আগস্ট, ১৯৫৫) উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী সাবেক ভারতীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। বর্তমানে তিনি ধারাভাষ্যকারের দায়িত্বে রয়েছেন। ভারত ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৮২ থেকে ১৯৮৯ সময়কালে ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।

অরুণ লাল
২০১৭ সালের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে অরুণ লাল
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামজগদীশলাল অরুণ লাল
জন্ম (1955-08-01) ১ আগস্ট ১৯৫৫ (বয়স ৬৮)
মোরাদাবাদ, উত্তরপ্রদেশ, ভারত
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি মিডিয়াম
ভূমিকাব্যাটসম্যান
সম্পর্কজগদীশ লাল (পিতা)
মুনি লাল (কাকা)
আকাশ লাল (কাকাতো ভাই)
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ১৫৯)
১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৮২ বনাম শ্রীলঙ্কা
শেষ টেস্ট২৮ এপ্রিল ১৯৮৯ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ
ওডিআই অভিষেক২৭ জানুয়ারি ১৯৮২ বনাম ইংল্যান্ড
শেষ ওডিআই২১ মার্চ ১৯৮৯ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯৮১/৮২ - ১৯৯৫/৯৬বাংলা
১৯৭৭/৭৮ - ১৯৮০/৮১দিল্লি
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট ওডিআই এফসি এলএ
ম্যাচ সংখ্যা ১৬ ১৩ ১৫৬ ৬৫
রানের সংখ্যা ৭২৯ ১২২ ১০৪২১ ১৭৩৪
ব্যাটিং গড় ২৬.০৩ ৯.৩৮ ৪৬.৯৪ ২৮.৯০
১০০/৫০ -/৬ -/১ ৩০/৪৩ -/১২
সর্বোচ্চ রান ৯৩ ৫১ ২৮৭ ৯০
বল করেছে ১৬ - ১৮৫৬ ৬৯৯
উইকেট - - ২১ ১৪
বোলিং গড় - - ২১ ৪০.৭৮
ইনিংসে ৫ উইকেট - - - -
ম্যাচে ১০ উইকেট - - - -
সেরা বোলিং - - ৪/৭৯ ৩/৩৮
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ১৩/- ৪/- ১৪৫/- ২২/-
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ৬ জানুয়ারি ২০২০

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে বাংলাদিল্লি দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন অরুণ লাল

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট সম্পাদনা

আজমিরের মেয়ো কলেজে বিদ্যালয় জীবন শেষ করেন। ভারতীয় ঘরোয়া ক্রিকেটে বাংলা ও দিল্লির পক্ষে খেলেছেন। এ পর্যায়ে ৪৬.৯৪ গড়ে দশ সহস্রাধিক রান তুলেন। ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান করেন ২৮৭। ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবে সর্বশেষ খেলেন।[১]

১৯৭৪-৭৫ মৌসুম থেকে ১৯৯-৯৬ মৌসুম পর্যন্ত অরুণ লালের প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। অরুণ লাল সহজাত ক্রিকেটার ছিলেন না। তবে, পিতা, কাকা ও কাকাতো ভাইদের ন্যায় ঠিকই ক্রিকেট প্রতিভাকে তুলে ধরতে সচেষ্ট ছিলেন। উচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেটে সফলতা না পেলেও ঘরোয়া ক্রিকেটে দূর্দান্ত প্রতাপে খেলেছিলেন। অবসর গ্রহণকালে রঞ্জী ট্রফির সর্বকালের সেরা রান সংগ্রহকারীদের তালিকায় তিনি পঞ্চম স্থানে অবস্থান করেন। ৫৩.২৩ গড়ে ৬,৭৬০ রান তুলেন। দিল্লির পক্ষে ছয় মৌসুম খেললেও নিজের প্রতিভাকে উন্মোচিত করতে পারেননি। ১৯৮০-৮১ মৌসুমে বাংলা দলে চলে আসার পর খেলায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনেন।

১৯৮৬-৮৭ মৌসুমে দিলীপ ট্রফির কোয়ার্টার ফাইনালে ২৮৭ রান ও সেমি-ফাইনালে বেশ ভালো খেলে নিজের জাত চেনান। ফলশ্রুতিতে, সফরকারী পাকিস্তানের বিপক্ষে নিজ শহর কলকাতায় টেস্ট খেলার জন্যে মনোনীত হন। ১৯৮৯-৯০ মৌসুমের রঞ্জী ট্রফিতে বাংলাকে দীর্ঘ ৫১ বছর পর শিরোপা জয়ে প্রভূত ভূমিকা রাখেন। বোম্বের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে ১৮৯ রান সংগ্রহ করেন তিনি।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সম্পাদনা

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে ষোলটি টেস্ট ও তেরোটি একদিনের আন্তর্জাতিকে অংশগ্রহণ করেছেন অরুণ লাল। ১৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৮২ তারিখে চেন্নাইয়ে সফরকারী শ্রীলঙ্কা দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। ২৮ এপ্রিল, ১৯৮৯ তারিখে কিংস্টনে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন তিনি। ১৯৮২ থেকে ১৯৮৯ সময়কালে ভারতের পক্ষে ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেন। তবে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার খেলার মান বেশ দূর্বল পর্যায়ের ছিল। ২৬.০৩ গড়ে টেস্ট রান তুলেছিলেন।[২] টেস্টের পাশাপাশি একদিনের আন্তর্জাতিকের ব্যাটিং গড় আরও দূর্বলমানের ছিল।

১৯৮২ সালে টেস্ট দলে খেলার জন্যে মনোনীত হন। তুলনামূলকভাবে বেশ দেরীতে ২৭ বছর বয়সে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্টে অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয় তার। ১৯৮২ সালে মাদ্রাজে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেট অভিষেকে সুনীল গাভাস্কারের সাথে ১৫৬ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন। তন্মধ্যে, অভিষেক ইনিংসে নিজে করেন ৬৩ রান।

পাকিস্তানের মুখোমুখি সম্পাদনা

পরের টেস্টে পাকিস্তানের মুখোমুখি হন ও ৫১ রান তুলেন। এ পর্যায়ে সুনীল গাভাস্কারের সাথে উদ্বোধনী জুটতে ১০৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ইমরান খানের ন্যায় অভিজ্ঞ নেতৃত্বাধীন দলের বিপক্ষে তেমন সফলতা পাননি। পরবর্তী চার বছর জাতীয় দলের বাইরে অবস্থান করতে বাধ্য হন। ১৯৮৭ সালে কলকাতায় সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ৯৩ রান তুলতে পেরেছিলেন।

পাকিস্তানের বিপক্ষে নিজ গৃহীত শহর কলকাতায় টেস্ট খেলায় অংশ নেন। সুনীল গাভাস্কারের খেলতে অস্বীকৃতির কারণে খেলতে নামেন। দুই ইনিংসেই অর্ধ-শতরান করেন। সানি’র অবসর গ্রহণের পর উপর্যুপরী এগারো টেস্টে অংশ নেন। কলকাতায় নিজস্ব সর্বোচ্চ ৯৩ রান সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিপক্ষে করেন। তবে, ১৯৮৯ সালে একই দলের বিপক্ষে বিদেশের মাঠে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।

ব্যক্তিগত জীবন সম্পাদনা

মার্চ, ২০০১ সালে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণ করেন। খেলার জগৎ থেকে অবসর গ্রহণের পর তার বিশ্লেষণধর্মী ক্রিকেট প্রতিবেদন সংবাদপত্র ও ইন্টারনেটে নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। ১৯৭৯ সালে কলকাতা ছেড়ে দিল্লিতে বসবাস করছেন ও সেখানে একটি ক্রিকেট একাডেমি পরিচালনায় নিযুক্ত রয়েছেন।

দূরদর্শনে কিংবদন্তীসম জাতীয় ঐক্যের প্রতীকিগীত ‘মিলে সুর মেরা তুমারা’র জন্যে বাংলার প্রতিনিধিত্ব করেন। এ সময়ে তিনি কলকাতা মেট্রো রেল থেকে নামছিলেন। সচরাচর তিনি নিজ দেশে ভারতের প্রতিপক্ষীয় দলগুলোর খেলায় স্টার স্পোর্টসের সরাসরি সম্প্রচারিত ধারাভাষ্যকর্মে যুক্ত থাকেন।

২০১৬ সালে চোয়ালে ক্যান্সার আক্রান্ত হবার বিষয়টি ধরা পড়ে। ফলে, জানুয়ারি, ২০১৬ সাল থেকে ধারাভাষ্যকর্ম থেকে বিরত থাকেন।[৩] ৩ আগস্ট, ২০১৯ তারিখে বাংলা ক্রিকেট সংস্থার (কাবস) পক্ষ থেকে অরুণ লালকে আজীবন সম্মাননা পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।[৪]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Arun Lal says good bye to cricket, ESPN Cricinfo
  2. "indianexpress"। ১৯ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ জানুয়ারি ২০২০ 
  3. Arun Lal in recovery after battling cancer
  4. [১]

আরও দেখুন সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা