অমানুষ (চলচ্চিত্র)

১৯৭৫-এর শক্তি সামন্ত পরিচালিত বাংলা ভাষার চলচ্চিত্র

অমানুষ একটি জনপ্রিয় বাংলা-হিন্দি দ্বিভাষিক সুপারহিট চলচ্চিত্র। এই ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৭৫ সালে। এই ছবির পরিচালক ছিলেন শক্তি সামন্ত[] সুরকার ছিলেন শ্যামল মিত্র। এই ছবির মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেন উত্তম কুমার, শর্মিলা ঠাকুর, অনিল চট্টোপাধ্যায় এবং উৎপল দত্ত[] এই চলচ্চিত্রে বাংলা এবং হিন্দিতে গাওয়া কিশোর কুমারের গানগুলি খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল তখনকার দিনে।[]

অমানুষ
পরিচালকশক্তি সামন্ত
প্রযোজকশক্তি সামন্ত
রচয়িতাশক্তিপদ রাজগুরু
শ্রেষ্ঠাংশেশর্মিলা ঠাকুর
উত্তম কুমার
উৎপল দত্ত
সুরকারশ্যামল মিত্র
মুক্তি
  • ২১ মার্চ ১৯৭৫ (1975-03-21)
স্থিতিকাল১৫৩ মিনিট
দেশভারত
ভাষাবাংলা
হিন্দি

ছবিটির মূল কাহিনীকার শক্তিপদ রাজগুরু। তিনি দীর্ঘদিন সুন্দরবনের বাদাবন এলাকায় ছিলেন। সেখানকার মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপনকে তুলে ধরেছিলেন তার নয়া বসত উপন্যাসে। সেই উপন্যাস থেকেই শক্তি সামন্ত এই ছবি তৈরি করেন। ছবিটি বাংলা এবং হিন্দি দুটি ভাষায় আলাদা করে তৈরি হয়। দুুুুটো চলচ্চিত্রই ভাল সফল হয়েছিল। ছবিটি এদুরিতা নামে তেলুগু ভাষাতেও রিমেক হয়েছিল। নায়কের ভূমিকায় ছিলেন বিখ্যাত এন টি রামা রাও।

কাহিনী

সম্পাদনা

মধুসূদন চৌধুরী (উত্তমকুমার) তার বড়লোক কাকার সাথে থাকে। কাকার বিশাল জমিদারির সে ই উত্তরসূরী। সুন্দরবনের এই এলাকায় মূলত মৎসজীবীদের বাস। বিত্তশালী অভিজাত বংশের ছেলে হয়েও মধু সরল, মিশুকে, গরীবদরদি। কোন রাজকন্যা নয়, সে ভালবাসে এক সাধারন ঘরের মেয়ে গ্রামের ডাক্তার আনন্দবাবুর বোন লেখা (শর্মিলা ঠাকুর) কে। মধুর কাকার বাজার সরকার মহিম ঘোষাল (উৎপল দত্ত) আদতে কুটিল, লোভী ও লম্পট চরিত্র। সে চায় মধুকে বঞ্চিত করে সম্পত্তির দখল নিতে। মধু ও লেখার সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায় তৃতীয় মহিলা সৌরভীর মিথ্যে অভিযোগে, আদতে যা ছিল মহিমেরই চক্রান্ত। মহিম তার কাকার ঘরে টাকা চুরির কেসে ফাঁসিয়ে মধুকে দোষী সাব্যাস্ত করে এবং জেল খেটে যখন সে বাইরে আসে দেখে তার প্রিয় কাকা আর ইহলোকে নেই, সমস্ত সম্পত্তির মালিক হয়ে বসেছে তাদেরই একদা কর্মচারী মহিম ঘোষাল। যার জন্যে আজ তার এই পরিনতি সেই সৌরভী নিখোঁজ। তাকে লেখা অপমান করে তাড়িয়ে দিলেও এক গ্রাম্য সরল মেয়ে মাতন মধুবাবুকে কৃতজ্ঞতাবশত তার ঘরে আশ্রয় দেয়। কারণ একদিন এই মধু চৌধুরীর জন্যই বাঘের হাতে বাপ মা মরা মেয়েটা আশ্রয় পেয়েছিল। লেখার বিরহে মধু হতাশায় মদ্যপান শুরু করে। শুরু করে মস্তানিও। তবে সেটা অন্যায় করতে নয়, ঠেকাতে। এসময় স্থানীয় থানায় নতুন দারোগা ভুবনবাবু (অনিল চট্টোপাধ্যায়) সেখানে বদলি হয়ে আসেন, পুলিশ হলেও যিনি সৎ এবং বুদ্ধিমান। শুরুতে অন্যদের মতো তিনিও মধুকে ভুল বুঝলেও পরে তাঁর সহযোগিতাতেই মধু তার এই অভিশপ্ত জীবন থেকে মুক্তি পায়। ধরা পড়ে মধুর কাকার আসল হত্যাকারী ও সমস্ত চক্রান্তের নায়ক মহিম ঘোষাল। মধু আর লেখা আবার পরষ্পরের কাছাকাছি চলে আসে কিন্তু ইন্সপেক্টর ভুবন বাবুকে চাকরির শর্ত মেনে বদলি হয়ে যেতে হয় যা হৃদয়বান মধুকে যারপরনাই ব্যাথিত করে তোলে। তবে লেখাকে ফিরে পাওয়ার সুখ হয়তো জীবনের সমস্ত ব্যথা জ্বালা কষ্ট আফশোষ ভুলিয়ে দেবে এতে কোন সন্দেহই আর থাকে না। অমানুষ মধুর পরিচয় ভুলিয়ে মানুষের চোখে আবার হয়ে উঠবে এক ভদ্র সভ্য, প্রকৃত মানবিক চরিত্র।

অভিনয়ে

সম্পাদনা

সংগীত - শ্যামল মিত্র, কথা - ইন্দিভর

  • বিপিন বাবুর কারণ সুধা

কন্ঠ - কিশোর কুমার

  • জানি না আজ যে আপন

কন্ঠ - আশা ভোঁসলে

  • যদি হই চোর কাঁটা

কন্ঠ - কিশোর কুমারআশা ভোঁসলে

  • কি আশায় বাঁধি খেলা ঘর

কন্ঠ - কিশোর কুমার

  • না না ওমন করে দাগা দিয়ে

কন্ঠ - আশা ভোঁসলে

হিন্দি গানের তালিকা

  1. "দিল এ্যাসা কিসি নে মেরা তোড়া" - কিশোর কুমার
  2. "কাল কে আপনে না জানে কিঁউ" - কিশোর কুমার, আশা ভোসলে
  3. "তেরে গালো কো চুমু" - কিশোর কুমার, আশা ভোসলে
  4. "ঘাম কি দাওয়া তো পিয়ার হে" - আশা ভোসলে
  5. "না পুছো কোই হামে" - কিশোর কুমার
  6. "নাদিয়া মে ল্যাহরে নাচে" - শ্যামল মিত্র

ছবির শুটিং

সম্পাদনা

এই ছবিটির শুটিং হয়েছিল সুন্দরবনের সন্দেশখালিতে। যে গ্রামে শুটিং হয়েছিল তার নাম ভাঙাতুষখালি। চলচ্চিত্রে সেই গ্রামের নাম দেখানো হয়েছিল ধনেখালি। শুটিং এর প্রয়োজনে এখানে প্রায় চল্লিশখানি ঘর, জমিদারবাড়ি, ডাক্তারখানা, বাজার, রাধাগোবিন্দর মন্দির, থানা , স্কুল তৈরি হয়। সেই রাধাগোবিন্দর মন্দির এবং উত্তমকুমার যে কাঠের বাংলোটীতে থাকতেন সেটি আজো আছে। আছে সেই লঞ্চটিও। শুটিং চলাকালীন সহজেই গ্রা্মের লোকের সাথে মিশে যেতেন উত্তমকুমার। বাচ্চাদের কোলে নিতেন। মানুষকে অর্থ দিয়ে সাহায্য পর্যন্ত করেছেন। তাই তো আজো ২৪ শে জুলাই তাঁর মৃত্যুদিনে সেখানে তার ছবিতে মালা দেয়া হয়, হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "Shakti Samanta was brave, never wanted to compromise: Filmmaker Prabhat Roy"cinestaan.com। ১০ এপ্রিল ২০১৮। ৭ জুন ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুন ২০১৯ 
  2. APS Malhotra (২২ আগস্ট ২০১৩)। "Amanush (1975)"The Hindu 
  3. Nalin Mehta (২০০৮)। Television in India: Satellites, Politics and Cultural Change। Routledge। পৃষ্ঠা 155। আইএসবিএন 1134062133 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা