অনিরুদ্ধ মহাথেরা

নেপালি বৌদ্ধ সন্ন্যাসী, নেপালের সঙ্ঘনায়ক

অনিরুদ্ধ মহাথেরা (দেবনাগরী: अनिरुद्ध महाथेरा) (জন্ম গজরত্ন তুলাধর) (১৫ ডিসেম্বর ১৯১৫ – ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৩) হলেন একজন নেপালি বৌদ্ধ সন্ন্যাসী, যিনি ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত নেপালের সঙ্ঘনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি নেপালে থেরোবাদী বৌদ্ধ ধর্মের নবজাগরণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর অন্যতম উন্নয়ন এবং এটিকে বৌদ্ধধর্মের একটি অন্যতম প্রধান তীর্থকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন।[১]

অনিরুদ্ধ মহাথেরা
বার্মায় অনিরুদ্ধ মহাথেরা, ১৯৩৭
জন্ম
গজরত্ন তুলাধর

(১৯১৫-১২-১৫)১৫ ডিসেম্বর ১৯১৫
মৃত্যু১৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৩(2003-02-17) (বয়স ৮৭)
জাতীয়তানেপালি
আন্দোলননেপালে থেরোবাদের নবজাগরণ

প্রাথমিক জীবন সম্পাদনা

অনিরুদ্ধ (বিকল্প নাম: অনিরুদ্ধ মহাস্থবির) কাঠমান্ডুর অসন ধলাসিক্বে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা দাসরত্ন এবং মা দিব্যলক্ষ্মী তুলাধর। তার জন্ম নাম গজরত্ন তুলাধর। তার পূর্বপুরুষরা তিব্বতের লাসার একটি ব্যবসায়িক পরিবার ছিলেন। তার পিতা তিব্বতে ব্যবসার সাথে নিযুক্ত ছিলেন। সন্ন্যাসব্রত গ্রহণের পর তিনি ধম্মালোক মহাস্থবির নাম ধারণ করে।

গজরত্নের আট বছর বয়সে তার পিতা দাসরত্ন তাকে লাসায় নিয়ে যান। গজরত্নের মা মারা যাওয়ায় তাকে কাঠমান্ডুতে রেখে আসা সম্ভব ছিল না।[২] তিব্বত থেকে ফেরার পর তাকে বেনারসের কেন্দ্রীয় হিন্দু আবাসিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। এরপর ১৯২৫ সালে গজরত্ন পুনরায় কাঠমান্ডুতে ফিরে আসেন।[৩]

শ্রীলঙ্কা এবং মায়ানমার যাত্রা সম্পাদনা

গজরত্ন তার পিতার সাথে কলকাতায় আরেকবার বাণিজ্যযাত্রা করেন। সেখানে তিনি শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধ ধর্মশিক্ষার সিদ্ধান্ত নেন এবং ১৯২৯ সালে কলম্বোর উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। তিনি বিদ্যালংকার পিরিবেন বৌদ্ধ কলেজে ভর্তি হন এবং শিক্ষানবিশ সন্ন্যাসব্রত গ্রহণ করে অনিরুদ্ধ নামধারণ করেন।[৪][৫] শ্রীলঙ্কায় পাঁচ বছর অতিবাহিত করে সিংহলী, পালি, সংস্কৃত ও ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জনের পর ভারতের কুশীনগরে গমন করেন।

অনিরুদ্ধ বৌদ্ধধর্মের ওপর আরও শিক্ষাগ্রহণের জন্য পরবর্তীকালে বার্মা (বর্তমান মায়ানমার) গমন করেন। এক বছর পর ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে মৌলামাইনে উচ্চ পৌরহিত্যের অধিকার লাভ করেন। তিনি মৌলামাইনে ১০ বছর অবস্থান করে বার্মিজ ভাষা ও বৌদ্ধ সাহিত্য অধ্যয়ন করেন। এর মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আরম্ভ হলে, যুদ্ধ থেকে আত্মরক্ষার জন্য তিনি সে স্থান ত্যাগ করেন।[১]

নেপালে প্রত্যাবর্তন সম্পাদনা

অনিরুদ্ধ ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে নেপালে প্রত্যাবর্তন করেন এবং নেপাল ভাষায় ধর্মোদয় নামক বৌদ্ধধর্মীয় সাময়িকীর প্রথম সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে কালিম্পং থেকে সাময়িকীটির যাত্রা শুরু হয়।

পরবর্তীতে তিনি লুম্বিনীতে আসেন, এবং স্থানটিকে তীর্থক্ষেত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য নিজেকে নিয়োজিত করেন। তৎকালীন লুম্বিনী জঙ্গলাকীর্ণ ভূমি হিসেবে পরিত্যক্ত ছিল। একটি অশোকস্তম্ভ লক্ষ্য করে ১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দে স্থানটিকে পুনরায় আবিষ্কার করা হয়।[৬] অনিরুদ্ধ এখানে একটি মন্দির ও বিশ্রামশালা নির্মাণ করেন এবং তীর্থযাত্রীদের সহায়তা করতে থাকেন।[৭] ১৯৬৭ সালে অনিরুদ্ধ জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব উ থান্টকে লুম্বিনীতে সম্ভাষণ জানান, যা লুম্বিনী উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা গ্রহণের পথ উন্মুক্ত করে।[৮]

অনিরুদ্ধ ৪৬ বছর লুম্বিনীতে কাটিয়ে ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে কাঠমান্ডুতে ফিরে আসেন এবং স্বয়ম্ভুর আনন্দকুটি বিহারের মঠাধ্যক্ষ নিযুক্ত হন।[১] তিনি সিংহলী এবং বার্মিজ ভাষা থেকে বৌদ্ধধর্মীয় পুঁথিগুলো নেপাল ভাষায় অনুবাদ করেন এবং সর্বমোট ২১টি গ্রন্থ রচনা ও প্রকাশ করেন।[৯]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Ven. Bhikkhu Aniruddha: Patriarch of Nepal"। Lumbini Nepalese Buddha Dharma Society (UK)। ২০০৮। ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ মে ২০১২ 
  2. Mahasthavir, Bhikkhu Dharmaloka (1999). A Pilgrimage in China. Kathmandu: Bhikkhu Aniruddha Mahasthavir. Page 127.
  3. Mahasthavir, Bhikkhu Dharmaloka (1999). A Pilgrimage in China. Kathmandu: Bhikkhu Aniruddha Mahasthavir. Pages 1-2.
  4. Mahasthavir, Bhikkhu Dharmaloka (1999). A Pilgrimage in China. Kathmandu: Bhikkhu Aniruddha Mahasthavir. Pages 5-9.
  5. LeVine, Sarah and Gellner, David N. (2005). Rebuilding Buddhism: The Theravada Movement in Twentieth-Century Nepal. Harvard University Press. আইএসবিএন ০-৬৭৪-০১৯০৮-৩, 9780674019089. Page 40.
  6. "Major Events Happened in Lumbini"। Lumbini Development Trust। ২০১১। ২০ জুন ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ মে ২০১২ 
  7. National Spiritual Assembly of the Baha'is of the United States (1968). World order, Volumes 3-4. National Spiritual Assembly of the Baha'is of the United States. Page 23.
  8. "Master Plan"Lumbini Development Trust। ২০১১। ১৩ মে ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ মে ২০১২ 
  9. Bajracharya, Phanindra Ratna (2003). Who's Who in Nepal Bhasha. Kathmandu: Nepal Bhasa Academy. আইএসবিএন ৯৯৯৩৩-৫৬০-০-X. Page 50.