অঞ্জনা (বাংলাদেশী অভিনেত্রী)

বাংলাদেশী অভিনেত্রী

অঞ্জনা রহমান (যিনি পর্দায় অঞ্জনা নামে পরিচিত, জন্ম ২৭ জুন ১৯৬৫) একজন বাংলাদেশী চলচ্চিত্র অভিনেত্রী। তার অভিনীত মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রের সংখ্যা প্রায় ৩ শতাধিক।[১]। ১৯৮১ সালে গাংচিল চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য এবং এবং ১৯৮৬ সালে পরিণীতা চলচ্চিত্রে ললিতা চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি দুইবার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া তিনি মোহনা (১৯৮৩), পরিণীতা (১৯৮৬) এবং রাম রহিম জন (১৯৮৯) চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেত্রী বিভাগে তিনবার বাচসাস পুরস্কার লাভ করেন।

অঞ্জনা
জন্ম
অঞ্জনা রহমান

(1966-06-27) ২৭ জুন ১৯৬৬ (বয়স ৫৭)
পেশাঅভিনেত্রী
কর্মজীবন১৯৭৬-বর্তমান
পুরস্কারজাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (২)
বাচসাস পুরস্কার (৩)

প্রারম্ভিক জীবন

অঞ্জনা ১৯৬৫ সালের ২৭ জুন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) ঢাকার ঢাকা ব্যাংক কোয়ার্টারে এক সংস্কৃতিমনা পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।তারা দুই বোন এক ভাই [২] তার দুই সন্তান কন্যা ফারজানা নিশি ও ছেলে মনি নিশাত।

ছোটবেলা থেকে নৃত্যের প্রতি তার আগ্রহের কারণে তার বাবা মা তাকে নৃত্য শিখতে ভারতে পাঠান। সেখানে তিনি ওস্তাদ বাবুরাজ হীরালালের অধীনে নাচের তালিম নেন এবং কত্থক নৃত্য শিখেন। নৃত্য তিনবার জাতীয় পুরস্কারও লাভ করেন তিনি।[৩]

অভিনয় জীবন

চলচ্চিত্র জগতে আসার আগে তিনি একজন নামী নৃত্যশিল্পী ছিলেন। অঞ্জনার অভিনয় জীবন শুরু হয় ১৯৭৬ সালে বাবুল চৌধুরী পরিচালিত সেতু চলচ্চিত্র দিয়ে।[২] তবে তার মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র শামসুদ্দিন টগর পরিচালিত দস্যু বনহুর (১৯৭৬)। রহস্য ভিত্তিক এই ছবিতে তার বিপরীতে ছিলেন সোহেল রানা[১] ১৯৭৮ সালে তিনি আজিজুর রহমান পরিচালিত অশিক্ষিত চলচ্চিত্রে নায়ক রাজ রাজ্জাকের বিপরীতে লাইলি চরিত্রে অভিনয় করেন। রাজ্জাকের বিপরীতে তিনি ৩০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। রাজ্জাকের বিপরীতে তার অভিনীত অন্যান্য চলচ্চিত্রগুলো হল, অশিক্ষিত (১৯৭৮) জিঞ্জীর (১৯৭৯), আশার প্রদিপ (১৯৭৯), আশার আলো (১৯৭৯) আনারকলি (১৯৮০) সুখেথাকো (১৯৮১) সানাই (১৯৮২) বৌরানী (১৯৮২), বৌ কথা কও (১৯৮৪) অভিযান (১৯৮৫) বিধাতা (১৯৮৮) রাম রহিম জন (১৯৮৯)।[৩] এছাড়া আলমগীর, জসিম, বুলবুল আহমেদ, জাফর ইকবাল, ওয়াসিম, উজ্জ্বল, ফারুক, ইলিয়াস জাভেদ , মিঠুন চক্রবর্তী, (ভারত) ইলিয়াস কাঞ্চন, সোহেল চৌধুরী , রুবেল, সুব্রত বড়ুয়া, মান্না, ফয়সাল, (পাকিস্তান), নাদীম, (পাকিস্তান) জাভেদ শেখ (পাকিস্তান), ইসমাইল শাহ,(পাকিস্তান), শীবশ্রেষ্ঠ, (নেপাল), ভুবন কেসি (নেপাল) সবার সাথে অভিনয় করেছেন। (১৯৮৯) সালে ভারতের সুপারস্টার মিঠুন চক্রবর্তী সাথে (অর্জুন) চলচ্চিত্রে অভিনয় করে তিনি ব্যাপক প্রশংসিত হন।[৪]

তিনি বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক, নেপাল, থাইল্যান্ড ও শ্রীলংকা সহ বহু দেশে ব্যবসা সফল চলচ্চিত্রে অভিনয় করে আন্তর্জাতিক ভাবে ব্যাপক প্রশংসিত হন।

রাজনৈতিক জীবন

অঞ্জনা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয়। তিনি বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং আওয়ামী সাংস্কৃতিক লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। তাকে ২০১৭ সালে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমার নির্বাচনী প্রচারণায় দেখা যায়।[৫][৬][৭]

চলচ্চিত্রের তালিকা

অভিনীত চলচ্চিত্র

বছর চলচ্চিত্র ভূমিকা পরিচালক টীকা
১৯৭৬ দস্যু বনহুর শামসুদ্দিন টগর মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র
সেতু বাবুল চৌধুরী অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র
১৯৭৮ অশিক্ষিত লাইলি আজিজুর রহমান
১৯৭৯ জিঞ্জীর (১৯৭৯-এর চলচ্চিত্র) হেনা দিলীপ বিশ্বাস
রূপালী সৈকতে আলমগীর কবির
১৯৮০ সুখের সংসার নারায়ণ ঘোষ মিতা
শাহী কানুন ইকরাম বিজু
যদি জানতেম শামসুল হক সিরাজী
আখেরী নিশান শামসুদ্দিন টগর
হুরে আরব শামসুদ্দিন টগর
বাগদাদের চোর ইবনে মিজান
গাংচিল রুহুল আমিন
১৯৮১ আলাদিন আলিবাবা সিন্দাবাদ শফি বিক্রমপুরী
মাসুম শেখ নজরুল ইসলাম
সুখে থাকো আজহারুল ইসলাম খান
১৯৮২ সানাই সাইফুল আজম কাশেম
আশার আলো নুরুল হক বাচ্চু
ঈদ মোবারক শেখ নজরুল ইসলাম
নান্টু ঘটক গাজী মাজহারুল আনোয়ার
রজনীগন্ধা বহ্নি কামাল আহমেদ
মোহনা বিজয়ী বাচসাস পুরস্কার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী আলমগীর কবির
১৯৮৩ অন্ধবধূ সুভাষ দত্ত
১৯৮৪ রাজবাড়ী কাজী হায়াৎ
হিম্মতওয়ালী অশোক ঘোষ
অভিযান রিতা রাজ্জাক
শক্তি এহতেশাম
১৯৮৫ প্রেমিক মইনুল হোসেন
পরীস্থান মোঃ শাহজাহান
গুনাই বিবি হারুনর রশীদ
১৯৮৬ নূরী শামসুদ্দিন টগর
চন্দ্রাবতী মতিউর রহমান বাদল
বিচারপতি গাজী মাজহারুল আনোয়ার
বিষ কন্যার প্রেম নূর হোসেন বলাই
ডাকু ও দরবেশ সুভাষ সোম
পরিণীতা ললিতা আলমগীর কবির বিজয়ী: বাংলাদেশ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী
বিজয়ী: বাচসাস পুরস্কার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী
১৯৮৭ সুপারস্টার আবিদ হাসান বাদল
আপোষ নুরুল হক বাচ্চু ও আকবর রুমী
নাগিনা মতিউর রহমান বাদল
মহান আলমগীর কুমকুম
১৯৮৮ হুশিয়ার ফজল আহামেদ বেনজির বাংলাদেশ ভারত যৌথ প্রজোযনা
পথে হলো দেখা হাফিজ উদ্দিন
গ্রেফতার আবিদ হাসান বাদল
১৯৮৯ বিধাতা শেখ নজরুল ইসলাম
রাম রহিম জন সত্য সাহা বিজয়ী: বাচসাস পুরস্কার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী
ভাইজান বেলা রায়হান মুজিব
বিস্ফোরণ এফ আই মানিক
১৯৯০ প্রায়শ্চিত্ত কামাল আহমেদ
প্রতিক্ষা বি এইচ নিশান
দেশ বিদেশ আজিজুর রহমান
হুংকার আবুল খায়ের বুলবুল
১৯৯২ উচিৎ শিক্ষা আওকাত হোসেন
২০০৮ হাঙ্গামা জি সরকার
ভুল রাজু আহম্মেদ
২০১৭ ক্যাথারসিস সালমান সিরাজি নির্মাণাধীন
  • সুখের সংসার
  • যাদু নগর
  • নেপালী মেয়ে
  • রাখে আল্লাহ মারেকে
  • একিরাস্তা
  • অঙ্কুর
  • মাধবীলতা
  • জবরদস্ত
  • জিদ্দী
  • আশীরবাদ
  • শাহীকানুন
  • রুপসী বাংলা
  • বাপের বেটা
  • মরুর বুকে
  • প্রমাণ
  • বিক্রম
  • আকাশপরি
  • রাজার রাজা
  • বিধিলিপি
  • দিদার
  • আনারকলি
  • অগ্নীপুরুষ
  • টার্গেট
  • আন
  • মহারাজ
  • মানা
  • আশার প্রদিপ
  • প্রতিরোধ - বাংলাদেশ ভারত যৌথ প্রজোযিত।
  • বেদনা
  • সোনারপলঙ্ক
  • চোখের মনি
  • যাদুনগর
  • প্রেমের সমাধী
  • ঈমানদার
  • অংশীদার
  • সুখ
  • দোযখ

প্রজোযিত চলচ্চিত্র

অভিনয়ের পাশাপাশি অঞ্জনা চলচ্চিত্র প্রযোজনা ও করেছেন। চলচ্চিত্র গুলো হলো।

  • নেপালী মেয়ে
  • হিম্মতওয়ালী
  • দেশ বিদেশ
  • বাপের বেটা
  • রঙিন প্রাণ সজনী
  • শশুরবাড়ী
  • লালু সর্দার
  • রাজা রানি বাদশা
  • ডান্ডা মেরে ঠান্ডা
  • বন্ধু যখন শত্রু

সন্মাননা

  • এশিয়া মহাদেশীয় নৃত্য প্রতিযোগিতা - প্রথম স্থান - (একবার)
  • জাতীয় নৃত্য প্রতিযোগিতা - প্রথম স্থান - (তিনবার)

এছাড়া তিনি রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক অসংখ্য পুরস্কার সহ, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার
বাচসাস পুরস্কার
  • বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী -মোহনা (১৯৮৩)
  • বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী - পরিণীতা (১৯৮৬)
  • বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী - রাম রহিম জন (১৯৮৯)

তথ্যসূত্র

  1. মিলু, কামরুজ্জামান (১৮ জুলাই ২০১৬)। "স্বপ্ন পূরণের অপেক্ষায়"দৈনিক মানবজমিন। মতিউর রহমান চৌধুরী। সংগ্রহের তারিখ ১০ অক্টোবর ২০১৭ 
  2. চৌধুরী, জিয়াউদ্দীন (৪ মে ২০১৭)। "টাইমস ২৪ ডটনেটের আড্ডায় অঞ্জনা সুলতানা"টাইমস ২৪ ডটনেট। মতিউর রহমান চৌধুরী। ২৫ মে ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ অক্টোবর ২০১৭ 
  3. হক, রুদ্র (২৬ জুলাই ২০১৭)। "'বঙ্গবন্ধু বললেন, প্রাউড অব ইউ অঞ্জনা'"বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ অক্টোবর ২০১৭ 
  4. রহমান, মোমিন; হোসেন, নবীন (১৯৯৮)। "বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে তারকা নায়িকা: পপি থেকে পপি"। অন্যদিন, ঈদ সংখ্যা। মাজহারুল ইসলাম। (২৫): ৩৫২। 
  5. ফাহাদ, হাবিবুল্লাহ (২০ জুন ২০১৭)। "অঞ্জনার দৌড়ঝাঁপ"ঢাকাটাইমস। সংগ্রহের তারিখ ১১ অক্টোবর ২০১৭ 
  6. "আওয়ামী লীগের টিকেটে এমপি হওয়ার দৌঁড়ে অঞ্জনা"দৈনিক কালের কণ্ঠ। ২৭ জুলাই ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ১১ অক্টোবর ২০১৭ 
  7. "সংসদ নির্বাচন করবেন নায়িকা অঞ্জনা"বাংলাদেশ প্রতিদিন। ২৮ জুলাই ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ১১ অক্টোবর ২০১৭ 

বহিঃসংযোগ