অগার ক্রিয়া একটি ভৌত ঘটনা যেখানে কোন পরমাণুর অভ্যন্তরীণ শেলের শূন্যস্থান পূরণ করতে একই পরমাণুর ইলেকট্রনের বিকিরিত শক্তির কারণে পরমাণু থেকে অপর ইলেকট্রনের নিঃসরণ ঘটে থাকে। পরমাণুর কেন্দ্রের নিকটবর্তী একটি ইলেকট্রন পরমাণু থেকে নিঃসৃত হলে, একটি শূন্যস্থান তৈরি হয়, তখন উচ্চশক্তি স্তর থেকে একটি ইলেকট্রন এসে এই শূন্যে পড়তে পারে, উচ্চশক্তির অরবিটের বা কক্ষপথের ইলেকট্রন নিম্নশক্তির অরবিটে আসার ফলে শক্তি নিঃসরণ ঘটে। যদিও প্রায়ই এই নিঃসৃত শক্তি নির্গত ফোটনের আকারে প্রকাশিত হয়, তবে শক্তিকণাটি অন্য ইলেকট্রনেও স্থানান্তরিত হতে পারে, যার ফলে শক্তি আপতিত হওয়া ইলেকট্রনটিই পরমাণু থেকে বেরিয়ে যায়; এই দ্বিতীয় ইলেকট্রন যেটি বেরিয়ে গেল একেই বলা হয় অগার ইলেকট্রন। পরমাণুতে এ প্রভাবটি প্রথম ১৯২২ সালে লিজে মাইটনার আবিষ্কার করেছিলেন; পিয়েরে ভিক্টর অগার অল্পসময়ের ব্যবধানে স্বাধীনভাবে এই প্রভাব আবিষ্কার করেন। বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের অধিকাংশ অগারকেই এই আবিষ্কারের জনয় স্বীকৃতি দিয়ে থাকে। [১]

অগার প্রক্রিয়ার দুটি চিত্র। (a) অগার ক্রিয়ায় ক্রমান্বয়ে শক্তি নিঃসরণের ধাপসমূহ। একটি আপতিত ইলেকট্রন (বা ফোটন) 1s অরবিটালে একটি হোল বা গর্ত তৈরি করে। 2s অরবিটালের একটি ইলেকট্রন 1s গর্তে স্থানান্তর হয় এবং অবস্থান্তর শক্তি 2p ইলেকট্রনে প্রবাহিত হয় যার ফলে ইলেকট্রনটি পরমাণু থেকে নির্গত হয়। চূড়ান্ত পারমাণবিক অবস্থায় এরূপ দুটি গর্ত থাকে, একটি 2s অরবিটালে এবং অন্যটি 2p অরবিটালে। (খ) এক্সরে সংকেত ব্যবহার করে একই প্রক্রিয়ার চিত্রায়ন, KL1L2,3 .

অগার ইলেকট্রনের নিঃসরণের ক্ষেত্রে, প্রাথমিক ইলেকট্রনের শূন্যস্থানে স্থানান্তরের শক্তি এবং ইলেকট্রন শেল থেকে নির্গত ইলেকট্রনের আয়নীকরণ শক্তি পরস্পর মিলে যায়। ওই নির্দিষ্ট পরমাণুর এই শক্তির স্তরগুলো পরমাণুর ধরন এবং রাসায়নিক পরিবেশের উপর নির্ভর করে।

কোনো নমুনাকে এক্স-রে অথবা দ্রুতগামী ইলেকট্রন দিয়ে ছুঁড়ে অগার ইলেকট্রনকে নির্গত করা এবং অগার ইলেকট্রনের তীব্রতা পরিমাপের দ্বারা অগার ইলেকট্রনের শক্তি বের করা দুই-ই অগার ইলেকট্রন বর্ণালীর অন্তর্ভুক্ত। এই উদ্ভূত বর্ণালীকে ব্যবহার করে নিঃসরণ ঘটা পরমাণুর পরিচয় এবং তাদের পরিবেশ সম্পর্কে কিছু তথ্য নির্ণয় করা যায়।

অগার পুনঃসমন্বয় অগার ক্রিয়ার অনুরূপ একটি ক্রিয়া যা অর্ধপরিবাহীর ক্ষেত্রে ঘটে। একটি ইলেকট্রন এবং একটি ইলেকট্রন হোল (electron hole) পরিবহন ব্যান্ডের একটি ইলেকট্রনকে তাদের শক্তি ত্যাগ করে দিতে পারে যার ফলে এর শক্তি বৃদ্ধি পায়। এর বিপরীত ক্রিয়াকে বলে ইম্প্যাক্ট আয়োনাইজেশন।

অগার ক্রিয়া ডিএনএর মতো জৈবিক অণুগুলিকে প্রভাবিত করতে পারে। ডিএনএর উপাদান পরমাণুর K-অরবিটাল আয়নীকরণের পরে, অগার ইলেকট্রনগুলি নিঃসৃত হয়ে ডিএনএর সুগার-ফসফেট মেরুদণ্ডকে ক্ষয় বা ধ্বংস করতে পারে।[২]

আবিষ্কার সম্পাদনা

ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী চার্লস ড্রামন্ড এলিসের সাথে পারমাণবিক বিটা ইলেকট্রন খোঁজার প্রতিযোগিতাময় গবেষণার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসাবে অস্ট্রিয়ান-সুইডিশ পদার্থবিজ্ঞানী লিস মাইটনার [৩] ১৯২২ সালে অগার নির্গমন প্রক্রিয়াটি পর্যবেক্ষণ ও প্রকাশ করেছিলেন।

ফরাসী পদার্থবিজ্ঞানী পিয়ের ভিক্টর অগার ১৯২৩ সালে স্বাধীনভাবে এ আবিষ্কার করেন।[৪] তিনি উইলসন ক্লাউড চেম্বার পরীক্ষণের বিশ্লেষণের উপরে কাজ করতে গিয়ে এটি আবিষ্কার করেন এবং একাজটি তাঁর পিএইচডির ফোকাসে পরিণত হয়েছিল। [৫] গ্যাসীয় কণাসমূহকে আয়নে পরিণত করতে উচ্চ-শক্তির এক্স-রশ্মি ব্যবহার করা হত এবং ফটোইলেকট্রিক ইলেকট্রনগুলি পর্যবেক্ষণ করা হত। নির্গত ইলেকট্রনের গতিপথ পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় এরা আপতিত ফোটনের কম্পাঙ্কের সাথে স্বাধীন আচরণ করে। অর্থাৎ ফটোতড়িৎ ক্রিয়ার ন্যূনতম ফ্রিকুয়েন্সির হিসেব এর জন্য প্রযোজ্য হয় না। এ ব্যাপারটি প্রতীয়মান করে যে নিশ্চয়ই শক্তির কোনো অভ্যন্তরীণ রূপান্তর এর জন্য দায়ী। আরও অনুসন্ধান, এবং প্রাথমিক কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের তাত্ত্বিক কাজ, রূপান্তরের প্রোবাবিলিটি ফাংশনের মাধ্যমে দেখা যায় অভ্যন্তরীণ রূপান্তরের চেয়েও এটি আসলে বিকিরণমুক্ত ক্রিয়া।[৬][৭]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Grant, John T.; David Briggs (২০০৩)। Surface Analysis by Auger and X-ray Photoelectron Spectroscopy। IM Publications। আইএসবিএন 1-901019-04-7 
  2. Akinari Yokoya & Takashi Ito (2017) Photon-induced Auger effect in biological systems: a review,International Journal of Radiation Biology, 93:8, 743–756, DOI: 10.1080/09553002.2017.1312670
  3. L. Meitner (১৯২২)। "Über die Entstehung der β-Strahl-Spektren radioaktiver Substanzen": 131–144। ডিওআই:10.1007/BF01326962 
  4. P. Auger: Sur les rayons β secondaires produits dans un gaz par des rayons X, C.R.A.S. 177 (1923) 169–171.
  5. Duparc, Olivier Hardouin (২০০৯)। "Pierre Auger – Lise Meitner: Comparative contributions to the Auger effect": 1162। ডিওআই:10.3139/146.110163 
  6. "The Auger Effect and Other Radiationless Transitions". Burhop, E.H.S., Cambridge Monographs on Physics, 1952
  7. "The Theory of Auger Transitions". Chattarji, D., Academic Press, London, 1976